পোস্ট বার দেখা হয়েছে
নদী আর ষোড়শী
কে দেব দাস
ষোড়শীর- বিভঙ্গ তনু দেহ, আর ভাদ্রের ভরা নদীর কৌমার্য।
নদী আর ষোড়শীর প্ৰাণ চঞ্চল যৌবণ-ছুটছে দূর্ণীবার মহাসাগরের পানে।
ক্লান্ত মাঝি-নৌকা খানি তার ভিরাইল আসিয়া ষোড়শীর তটে- দু-দন্ড শান্তির খোঁজে।
সেথা মাঝি-ওরে মাঝি, কোথা মাঝি-নৌকা খানি ঘাটে বাঁধা।
নৌকা ঘাটে বেঁধে মাঝি, নিয়ে গেলি মন-তোর আশাতে বসে আমার কাটে- সারাক্ষণ।
চারিদিকে চাই-দেখিতে না পাই, কোথায় মাঝি-ওরে মাঝি, হারাইয়াছ কি তুমি দিশা?
মরমে মরমে, ধ্বংসিয়া-পরাণ খানি রাখিয়াছি বান্দিয়া সপিতে তোমারে।
সঙ্গোপনে, করিব দান-মোর এই বুক ভরা যৌবন, তোমার বাহুডোরে- দখিনা সমীরণে।
মম চিত্ত তব জুড়াইবে-তোমার পরশে যেমন, ভাদ্রের উত্তাল জলরাশি হবে শান্ত- যখন মিলবে মহাসাগরে।
*********************
আলোআকাশ
দেবারতি গুহ সামন্ত
আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামছে শহরের বুকে,
ভাঙছে টাকা,উড়ছে পয়সা,
ভাঙছে সম্পর্ক,বাড়ছে একাকিত্ব,
ভাঙছে বিশ্বাস,কোনঠাসা দাম্পত্য।
আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামছে শহরের বুকে,
সূর্য অস্ত যাচ্ছে,জ্বলে উঠছে স্ট্রিটলাইট,
গর্ভে চলছে ভ্রুণহত্যা,বরণ হচ্ছে মালক্ষীর,
ভাটা পড়ছে নদীর যৌবনে,বিয়ের পিড়িতে একাত্তর।
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামছে শহরের বুকে,
বাড়ছে পলিউশন,কমে যাচ্ছে বেঁচে থাকার সীমা,
বাড়ছে টেম্পারেচার,গ্লোবাল ওয়ার্মিং,কমছে সবুজ,
বাড়ছে জিনিষের দাম,কমছে কর্মসংস্থান।
বেড়েই চলেছে হাতে থাকা স্মার্টফোনের রেট,
কমছে সম্পর্কের মূল্যায়ন।
মিলছে না কিছুতেই গরমিলের হিসেব!
এই কি তবে আমাদের ডিজিটাল ইন্ডিয়া??
আলো কোথায়?একফালি হলেও যথেষ্ট।।
******************
প্রকৃতি
স্বপন কুমার ধর
সময় যে চলে নিজের গতিতে,
যায় না তো তাকে রোখা,
নদী ও যে চলে আপন মেজাজে,
যায় না তাকে ও বোঝা।
ভক্তির মাঝে দেবতা যে থাকে,
যায় না তো তাকে দেখা,
অনুভব করি,বিশ্বাস করি,
'তিনি যে আছেন' - এ কথা।
প্রকৃতির মাঝে পর্বত ও আছে,
রহিয়া দন্ডায়মান,
পৃথিবীর বুকে নদী ও যে চলে,
ধরিয়া আবহমান।
মেঘ ভেসে চলে আকাশের বুকে,
ঝরায়ে বৃষ্টিধারা,
খাল-বিল সব,জলে ভরে যায়,
প্রাণীকূল হয় আত্মহারা।
শ্বাসকার্য চলে,বায়ু বহে চলে,
দোলা লাগে মনেপ্রাণে,
সূর্যের আলোয়,আলোকিত এ ধরা,
শস্য শ্যামল হয় বসুন্ধরা।
**********************
স্মরণে ঋতুপর্ণ
তুমি কোথায়
নীলাঞ্জনা ভৌমিক
গতানুগতিকতার বিপরীত এক ব্যক্তিত্বের নাম ঋতুপর্ণ ঘোষ। প্রচলিত ধ্যানধারনা থেকে মুখ ফেরানো বিশেষ দর্শকদের সিনেমা হলের দিকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করার নাম অনিত্যের আঙ্গিক। নিত্য অর্থাৎ যা বহমান, অপরিবর্তন- শীল তাকে বেশিদিন দর্শকদের আকর্ষণ করতে পারে না। তাই বিষয়ভাবনার একমুখীতত্বের দিক থেকে চিন্তা জগতকে একেবারে ভিন্ন বাঁকে মোর ঘোরানোর নাম ঋতুপর্ণ। ' দহন ' - কে নিয়ে তাঁর যাত্রা শুরু হয় ' হিরের আংকি ' যদিও প্রথম চলচ্চিত্র। ' দহন ' - এ দেখা এক দম্পতির ( পলাশ ও রমিতা ) বখে যাওয়া কিছু অভিজাত পরিবারের ছেলেদের আকস্মিক আক্রমণে ঘটে যাওয়া তথাকথিত সুখী জীবনের পরিবর্তন - এই ঘটনা হয়তো আড়ালে আবডালে অহরহ ঘটে চলেছে সমাজে কিন্তু তাকে পর্দায় তুলে ধরার প্রথম সাহসিক প্রয়াস বোধহয় এই স্বনামধন্য পরিচালকের পক্ষেই সম্ভব। আজো নারী স্বাধীনতার নামে যে মিথ্যা অহঙ্কার সমাজের বুকে চেপে বসে রয়েছে তার দিকে কঠোর আঙল তুলেছেন তিনি। তাঁর পক্ষেই বলা সম্ভব-" শিল্পীর কোন লিঙ্গ হয় না।" 'এলজিবিটি ' - সমাজের যে একটা সমস্যা নয় ,বাস্তব সম্পর্ক- এই ধারণাটা যখন কারোর পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব হয় নি তখন কিন্তু ঋতুপর্ণের মতো সাহসি মানুষের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল। কারণ পুরুষ হয়েও অন্তরে তিনি নারীত্বকেই বহন করে চলেছিলেন। তাই এইরূপ লিঙ্গ সমস্যার বাস্তবতা উপলব্ধি করতে তাঁর কোনো অসুবিধা হয় নি। স্টার জলসায় প্রদর্শিত বাংলা টিভি সিরিয়াল " গানের ওপারে "- পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের আরো একটি অসাধারণ প্রতিবেদন। এটিও গতানুগতিকার ঊর্ধ্বে। রবীন্দ্র সংগীতের ধারাকে অন্যখাতে বইয়ে দেওয়া বোধহয় তাঁর পক্ষেই সম্ভব। শিল্পী হতে গেলে আভিজাত্যের প্রয়োজন পরে না সে ধারনাও তিনি এই সিরিয়ালটিতে সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। আধুনিক স্বনামধন্যা লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্য্যকেও আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। সুচিত্রা ভট্টাচার্য্য আর ঋতুপর্ণ ঘোষের অপূর্ব মেলবন্ধন আমরা দেখতে পাই চলচ্চিত্রে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে ঠিক যেমন দেখতে পাই সত্যজিৎ রায় এবং বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের অপূর্ব সৃষ্টিতে। ঋতুপর্ণ ঘোষের মননশীলতা ও সংবেদনশীলতা আপামর চলচ্চিত্র প্রেমীদের হৃদয়ে আজীবন স্মরণ করাবে। তাঁকে আমরা হঠাৎই একদিন হারিয়ে ফেললাম আর সেইসাথে স্পর্শকাতর, হৃদয়গ্রাহী চলচ্চিত্র থেকেও বঞ্চিত হলাম। এই বিশেষ দুঃখের দিনে ( ৩০ শে মে,২০১৩ - প্রয়াণদিবস ) ঋতুপর্ণ ঘোষকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।
*******************
ঝুঁকি
শিবানী গুপ্ত
জীবন জুড়ে চলার পথে
ঝুঁকি থাকে নিত্য,
তাই বলে কি জীবন থামে
কাঁপে সবার চিত্ত!
বলতে ঝুঁকি বেফাঁস কথা
ভেবে চিন্তে বলো,
উদাস চলায় লাগবে ব্যথা
সাধধানেতে চলো।
হাঁটতে গেলে হোঁচট খাবে
ভাবছো বুঝি সবে!
ঝুঁকি যদি নাইবা নিলে
শিখবে হাঁটা কবে?
সাঁতার কাটা শিখতে গেলে
নামতে হবে জলে,
এক আধটু জলটা খেলে
শিখবে দলে দলে।
লেখাপড়া, খেলাধুলা
ব্যায়াম কসরৎ শিক্ষা,
ঝুঁকির সাথেই চললে পরে
সফলতায় দীক্ষা।
সফলতার সোপান পেতে
থাকবে যতো ঝুঁকি,
মনের বলে এগিয়ে যাবে
বুকের পাটা ঠুকি।
*************************
প্রেমের অণুকাব্য
অভিপ্রায়
প্রিন্স এ ওয়াকী
হাঁটছি আদিগন্ত পথের বাঁকে বাঁকে
বেহিসাবি জীবনের হিসাব মেলাতে,
আর অবিরাম প্রেমের রঙধনু আঁকতে
খুঁজে চলেছি অভিযোজিত স্থিরবিন্দু।
নন্দিনীর উষ্ণতম চুম্বনে নিশ্চিত আত্মাহুতি দেবো
প্রেমের বুদবুদ জীবনের সকল ক্লান্তি শুষে নেবে...
৯ নভেম্বর
প্রিন্স এ ওয়াকী
প্রিয়দর্শীনী তোমার বুকের ভেতর বা'দিকটায়
ভীষণ বেসামাল একটা আলোড়ন,বুঝতে পারছো?
আমি এদিকটায় বড্ড নাজেহাল তোমার প্রেমের
বারোমাসি লোহিত প্রস্রবণে,সাঁতার কাটছি কামনার
ঘূর্ণিপাকে নীলাভ প্রেমের অনল অঙ্গে জড়িয়ে!
৯ নভেম্বর মিলনের সৌরভ ছড়াবে অশ্বত্থের ছায়াতলে।
জিরো পয়েন্ট
প্রিন্স এ ওয়াকী
শহরের ঠিক জিরো পয়েন্টে উর্বশীর বসবাস
নাতিদীর্ঘ চুম্বনে শোষিত হতে থাকে আমার দীর্ঘশ্বাস,
অজস্র পাণ্ডুলিপি লিখিত হতে থাকে প্রতিক্ষণ
নিষিক্ত প্রেমাবেগের প্রেক্ষাগৃহে অযুত নিযুত চুম্বনে চুম্বনে,সারিবদ্ধ আলো ছায়ার মৌবনে হারিয়ে যাক
আমাদের সময় জ্ঞান।প্রেমালিঙ্গণ দীর্ঘ মিছিল হোক...
************************
আত্মসুখ
কাকলী দাশগুপ্ত
জেলে নদী থেকে মাছ ধরিয়া আনিলো
এত্তো বড় মাছ! খুশিতে মন ভরিয়া গেলো।
বাড়ী ফিরিয়া আসিয়া গৃহিনীরে বলে - রান্ধো ভালো করিয়া,
পোলাপানদের দিও বেশী করিয়া খাইবো তারা মন ভরিয়া।
মাছটি দেখিয়া আনন্দে উঠিলো নাচিয়া
সকলেই মিলিয়া খাইবে চাটিয়া পুটিয়া।
জেলে কহিলো - আইজ আমরা খামু মন ভরিয়া
শুনো গিন্নি, মুড়ি ঘন্ট করিবা মুড়া দিয়া
পেটিগুলা ভাজা আর দই মাছ করিবা গাদা দিয়া
ঠিক আছে, - গিন্নি কহিল হাসিয়া
কিন্তু চচ্চরি করমু মুড়া দিয়া।
ঠিক আছে! ঠিক আছে! তাই করিও
মোটমাট সবাই মিলিয়া খাইয়া আনন্দ করিও।
পেটি ভাজা, চচ্চরি, দই মাছ - গিন্নি রান্ধিলো ।
সবাই মিলিয়া খাইয়া আনন্দ করিলো।।
************************
মায়ামিতা স্মৃতিমদে শোকের লুটেরা
অসীম দাস
সূর্যের স্বপ্নসুখে ফুটিফাটা খই এর মতন
ছড়িয়ে যাচ্ছি জীবনের দৃশ্যস্বাদ সোনা
পেছনের ছায়াছাপ সময়ের রাজকোষে
নিরাপদে রাজসূয় থাকবন্দী আছে
এই জানা যতদিন পৃথিবীর প্রশ্বাস পাবে
আমার নক্ষত্র আয়ু বেড়ে কমে
সমীচীন শস্য সুধা হবে
উৎস বীজে ঝুলে আছে স্রোতের সমঝোতা
মোহানাও জানে মৃত্যুর মাস্তুল সহজে ডোবে না
স্মৃতিমদে জাতকের উড়ুউড়ু ডানা
মায়ামিতা আমাদের শোকের লুটেরা
************************
বাড়ি
জয়ন্ত অধিকারি
"রাধিকা, রাধা, এই দেখো। কেমন লাগছে এই বাড়িটা? "
"বাহ। এটা তো ভিলা! দুটো ফ্লোর, নীচে দুটো রুম, ওপরে দুটো। এত বড় বড় বারান্দা। তা হঠাৎ? কে নিয়েছে বিহান? তোমার অফিসের কেউ? "
"না ম্যাডাম। এটা আমাদের নতুন ঠিকানা। "
"মমম মানে? আমরা? এত খরচ করে..আর আমাদের তিন রুমের এই ফ্ল্যাট? প্রচুর খরচ তো..."
"তোমার পছন্দ হয়েছে কি'না বলো। ছাড়ো, চলো, ঘুরে আসি একটু। পূজা কি পড়ছে? ওকে ও রেডি হতে বলো।"
অবাক বিস্মিত রাধিকা কিছু আর বলতে পারে না। ঘন্টাখানেক পরেই বিহানের গাড়িটা এসে দাঁড়ায় রাধিকার পুরনো পাড়াতে। ও আমতা আমতা করে বলে, "এ...এখানে?"
বিহান হেসে কিছু না বলে মেয়ে আর স্ত্রীকে সাথে নিয়ে রাধিকার বাপের বাড়ির দরজার সামনে এসে কলিং বেল'এ চাপ দেয়। ভেতর থেকে রাধিকার বয়স্ক বাবা মা বেরিয়ে এসে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক হয়ে। ভেতরে এসে বিহান বলে," রাধিকা অনেকদিন আগে বলেছিল ও সবাইকে নিয়ে, মানে আমার মা বাবা, ওর নিজের মা বাবাকে নিয়ে একসাথে থাকতে চায়। আজ সেই সময় এসেছে। আমি আজ সেই জায়গাতে..."
রাধিকার মা দু চোখভর্তি জল নিয়ে বলে, "আর আমরা ভেবেছিলাম আমাদের ছেলে আমাদের দায়িত্ব নেবে। দেখাশোনা করবে। তা না করে ওরা আমাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে ঠিক করেছে। আমাদের মেয়ে , যাকে আমরা সারা জীবন দূরছাই করলাম, সে আমাদের..."
বিহান শ্বশুর শাশুড়ির পায়ে হাত দিয়ে বলে,"আমিও তো আপনাদের ছেলে। "
**********************
আনমনে চিন্তা ভাবনা
স্বপন কুমার ধর
বুক ভরা সৌন্দর্যের সম্ভারে,
রবি বিলায় স্বর্ণ কিরণে'রে,
উষ্ণতা আপ্লুত করে দেহমন,
ফিরিয়ে আনে সতেজতার লক্ষণ।
খরস্রোতা নদী প্রবহমান অভিমুখে,
মিলিতে যে সে চায় মোহনায়,সাগরে তে,
জোয়ারে করিতে চায় উদ্দাম নৃত্য,
চুম্বনে ভরাতে চায় প্রতিটি তরঙ্গ।
প্রিয়াকে সাজায়ে,প্রিয় সাজে আজ,
রুপোলি বিছানায় অপেক্ষারত চাঁদ,
জোছনার আলো সে ছড়িয়েছে ঘরে,
নক্ষত্ররাজি ও আজ,পাহারায় দোরে।
বাতাসের ঢেউ আনে পবিত্রতা,
মোহময়ী সুবাসে ছড়ায় মাদকতা,
আনমনা মনের সমস্ত চিন্তাভাবনা,
উড়ে চলে মেলে, নিজেদের ডানা।
**************************
ইস্তেহার
কৌশিক গাঙ্গুলি
এক চুমুকে শুষে নিতে চাই
সব বেদনা ,
চোখের আগুনে মুছে দিতে
চাই অন্ধকার ,
ছবি চাই তবে ধ্বংসের
ছবি নয় ,
ও ছবি ছিঁড়ে আঁকো
সুখী গৃহকোণ ,
অসুখী জীবনে সেতো
দেবে ভরাসুখ ,
পাথর ফেটে যায়
শোনো এ চীৎকার ,
হাতে হাতে ঘুরে যাক
প্রকাশ্য ইস্তেহার ,
আমার কুলকুন্ডলিনী থেকে
জন্ম হোক নতুন সত্তার ।
0 মন্তব্যসমূহ