দর্পণ || ধারাবাহিক || এক সমুদ্র অনেক নদী ~ প্রদীপ গুপ্ত || পর্ব ( দুই)




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

আজ দুবছর হয়ে গেলো শ্রেয়ান একা। ভীষণভাবে একা। জন্মে থেকে শ্রেয়ান কখনওই এরকম একা থাকে নি। ইচ্ছে করে চাকরীটাও ছেড়ে দিয়েছে। একটা গভীর অভিমানবোধ ওকে দিনরাত্তির তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। সারাটাদিন নিজেকে কাটাছেঁড়া করে, কিন্তু...

ও তো বারণ করেছিলো, বারবার করে বারণ করেছিলো, পত্রালী  শোনে নি, কানই দেয় নি ওর কথায়। কত দিনেরই বা জানাশোনা ছিলো ওদের, দেড় বছরও না। মাত্র এটুকু সময়ে কতোটুকুই বা চিনে ওঠা যায়? এছাড়া একজন চটকল শ্রমিকের ছেলে হয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রীর ভাইঝিকে কি করেই বা ভাঙাচোরা ঘরে তুলবে ও? অথচ পত্রালী একরোখা। কোনো কথা শুনবে না কারো। একদিন তো ওদের বাড়ি ছেড়ে যাবেই না। সেদিন থেকেই থেকে যাবে বলে নাছোড় বায়না ধরেছিলো ও। ওকে নিয়ে যে একসাথে থাকবে সেরকম আলাদা কোনো ঘরও নেই ওদের। দুটো মাত্র ঘরে ওরা পাঁচজন। শ্রেয়ান, ওর ভাই কিন্নর, বোন ববি আর বাবামা। ওই বাড়ি থেকেই নিজের মাকে ফোনে ধরেছিলো পত্রালী।

--- হ্যালো মামনি, আমি এখন শ্রেয়ানদের বাড়ি আছি। আমি আজ থেকে এখানেই থেকে যাবো ব্যাস। না -- কোনো কথা শুনবো না। ওর বাবামাও খুব করে বুঝিয়েছে, কিন্তু আমি একদিনও শ্রেয়ানকে ছাড়া থাকতে পারছি না। তোমাকে এটুকু জানিয়ে রাখলাম।

শেষে ওর কাকামণি, সেই মন্ত্রীর ফোন পেয়ে সেদিনকার মতো শ্রেয়ানদের বাড়ি ছেড়েছিলো পত্রালী।

বাবা পরের দিনই কারখানায় পিএফ থেকে লোনের এপ্লাই করে দিয়েছিলেন আরেকটা ঘর বানানোর জন্য। শ্রেয়ান তখন গ্রাজুয়েশন করার পর ইলেক্ট্রিকাল ডিপ্লোমা করে বাবার কারখানাতেই ইলেক্ট্রিকাল ডিপার্টমেন্টে ঢুকেছে। সেও মাত্র মাস ছয়েক হবে।


সুবর্ণরেখার সঙ্গমের দিকটা ছাড়িয়ে অন্যদিকের তটে গেলে বেশ সুন্দর একটা জঙ্গলে ঘেরা জায়গা। এ জায়গাটা শ্রেয়ানের খুব পছন্দের। সন্ধ্যাবেলাটা নানান ধরনের পাখিদের কলকাকলিতে ভরে থাকে গাছগুলো। গাছগুলোর মাথা সাদা করে বসে থাকে পরিযায়ী পাখির দল। আর ওদের গা ঘেঁষে সূর্যদেব অস্ত যান। যে ওয়াটার বাইকগুলো ভ্রমণবিলাসী মানুষজনকে এদিকটায় ঘোরাতে নিয়ে আসে তাদের অনেকেই চিনে গেছে শ্রেয়ানকে। পৌঁছে দেওয়ার সময়ই ওরা শ্রেয়ানকে বলে যায় বেশী দেরী না করার কথা। রাত নামার আগেই ফিরতে হবে এই পাখির রাজ্য ছেড়ে। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে,  পিকনিক পার্টিদের কাঠ পুড়িয়ে রান্না করার চিহ্ন। ঝোপড়া ঝোঁপের ভেতর সুড়ঙ্গপথের মতো করে প্রেমিকপ্রমিকাদের বিনোদনের জায়গাগুলোর কোনোটাতে সদ্য উঠে যাওয়ার চিহ্ন। ফেলে যাওয়া দৈনিক খবরেরকাগজ অথবা চিপসের ছেঁড়া প্যাকেট, ওকে পত্রালীর স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়। ও সেসব জায়গায় এসে কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর দুহাত ওপরে তুলে নীরবে চিৎকার করে ওঠে -- ইউ দ্য ট্রেইটর...


( ক্রমশ )

______________

প্রথম পর্ব পড়ুন ......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ