গনেশ অনুভব শক্তি বাড়াতে হবে ~ অমলেশ কুমার ঘোষ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

গনেশ অনুভব শক্তি বাড়াতে হবে

অমলেশ কুমার ঘোষ


ঝর ঝর বৃষ্টি সকাল থেকে,তবুও বাড়ি থেকে বেরোনো, টোটো থেকে নেমে বীমা অফিসের দিকে জয়ন্ত। অনেক দিন ধরে টাকাটা দিচ্ছে না, কেওয়াইসি নাকি বাকি আছে। এই অফিসে কাগজ জমা দিলেও ম্যাপিং করে টাকা ব্যাঙ্কে জমা হবে, আজ আসতে হয়েছে। জয়ন্তর মনে হোলো কেউ পিছন থেকে ডাকছে। ঘাড় ঘোরাতেই সদাব্যস্ত গনেশ।


জয়ন্তদা ও জয়ন্তদা কতক্ষণ ধরে ডেকে তোমার পিছনে দৌড়াচ্ছি, এত কি আনমনা ছিলে(?)।

ও গনেশ, তুই। না, কিছু না, বল। এত উতলা কেন? বয়স হচ্ছে, শান্ত হতে হবে। যখন আমাকে দেখলি, ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতি না দৌড়ে। যাক বল, অনেকদিন বাদে দেখা আমাদের। 

আধ/ এক ঘন্টা সময় দেবে, জানার ছিল চন্দ্রায়ন তিন অভিযান নিয়ে, তোমারতো অনেক জ্ঞান। জয়ন্তদা বার বার বলছিলো, কঠিন বিজ্ঞানের কথা ওসব। হাসপাতাল, ডাক্তার, ঔষধ এসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারে। “বাড়িতে আসিস একদিন গল্প হবে” বলেও এড়াতে পারে নি। অবশেষে জয়ন্তদার থেকে চন্দ্রায়ন তিন নিয়ে বিশদে জেনে মনের দ্বন্দ্ব দূর করতে চায়ের দোকানে অপেক্ষায় গনেশ।

গনেশের মনে পড়ছে, জয়ন্তদা ভয়ানক ডানপিটে ছিল, খেজুর গাছের মাথায় খালি পায়ে উঠে যেত। বদমাইশ বলে বড় পরিচয়ের সাথেও আরেকটা পরিচয়, অঙ্কে একশ তে একশ পেত সবসময়। ফিজিকস নিয়ে কলকাতার কলেজে পড়তো, বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সদস্য ছিলো, বিজ্ঞানের একজিবিশনে অংশগ্রহণ করতো। ন্যাশনাল লাইব্রেরী ছাড়াও অনেক নামী লোকের সাথে যাতাযাতের মধ্যে অল্প বয়সে চাকরী পাওয়ায়, ছিল এলাকার খুব পরিচিত মুখ। আর্থিক কারণে টিউশনি করতো ওরা। জয়ন্তদা চাকরীর পর ওদের পরিবারের নামডাক অনেক। ওদের পরিবারের কয়েকজন বিজ্ঞান চর্চা করে সুনামের সাথে ।

গনেশের হুঁশ এলো ডাক শুনে, “বল গনেশ, এত উত্তেজনা কিসের”? 

আমার কথা শুনবে, মাঝখানে কথা বলবে না। 

আচ্ছা বল। 

বলা শুরু, গত একমাসের বেশী রোজ চন্দ্রায়ন তিন নিয়ে খবর রাখি, রাশিয়ারটা যেতে পারলো না, আমাদের চন্দ্রায়ন তিন চাঁদে পৌঁছে গেল । বেশ আনন্দ। দেশের উজ্জ্বল। টিভিতে মলে ক্লাবে সবাই উৎসব করছে। আর কিছু নেই, একটাই খবর, আমার উত্তেজনা আনন্দ বুঝলে জয়ন্তদা।

গনেশ শরীর ঠিক আছে তো, চল হাঁটতে হাঁটতে কথা শুনি।

শোনো আমার কথা। বলে যা, আমি শুনছি। জয়ন্তদা টোটোতে চড়ে গনেশের কথা শুনছে। 

কালকে সকালে মর্নিং ওয়াকে মাঠে শরীর চর্চা ছেড়ে সবাই চন্দ্রায়ন তিন নিয়ে আলোচনা, কেউ লাডডু তো কেউ পতাকা মালা ছবি নিয়ে সকালটা বেশ উৎসব উৎসব ছিল। বাড়ি ফিরে বাজার ঘুরে বেলার দিক থেকে নজরে আসে, সেসব খবর কম, রাজনীতির কথা জুড়ে যায় চন্দ্রায়ন তিন অভিযান নিয়ে। টিভি চায়ের দোকান সব জায়গায় একটা অস্বচ্ছতার দলাদলি চোখে পড়ে। বাঙালী কজন বিহারী কজন দক্ষিণ ভারতের উত্তর ভারতের কজন বা রাজনীতির নেতা কে কি করেছে আলোচনায়। উৎসবটা কেমন জানতে আমার মনে তোমার কথা আসে। এইভাবে সময় কেটে গেলে, অনেক বন্ধুদের সাথে কথায় চন্দ্রায়ন তিন থেকেছে গতকাল।

আজ সকালে মর্নিংওয়াকে চন্দ্রায়ন তিন নিয়ে আলোচনায় দু তিনটে আলাদা আলাদা দল। পিয়াজ আলুর টমাটোর দাম থেকে চাঁদে বাড়ি বানানো চন্দ্রায়ন তিন অভিযানের সঙ্গে জুড়ে যায়। তুমি একটু বোঝাবে, তোমার তো অনেক জ্ঞান আর তুমি অনেক বেশী খবর নিশ্চয় রাখো।

তোর বলা শেষ, শোন আমি তোর মতো এতো খবর রাখি না। টিভি দেখি না বললেই চলে, সংবাদপত্র পড়ি না। বাড়ির কাজ থাকলে করি, বাজার, ব্যাঙ্ক এসব। না হলে বই পড়ি, খাই ঘুমোই। আত্নীয় স্বজনের বিয়ে জন্মদিনের নেমন্তন্নে যাই, সময় চলে যায়। 

বিজ্ঞান পড়তাম চাকরী পাওয়ার আগে, চাকরীর জন্য পড়তাম, ওসব নিয়ে এগোনো হয়নি। বেশ আনন্দ হোতো বটে জটিল অঙ্কের সমাধানের পর, তবে সেসব গল্প গাথা। 

গনেশ চাঁদে অনেক দেশ গেছে, মানুষ গেছে, ঐ সব পড়েছিস। আমাদের দেশও আগে দু বার চেষ্টা করেছে নামতে, এবার নেমেছে ঠিকমতো। মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে সেসব পড়েছিস। 

না না জয়ন্তদা, বিজ্ঞান কঠিন বিষয়, ওসব কি করে পড়ে বুঝবো(?)। গনেশ, টোটো থেকে নাম। চল ওখানে বসি। দেখ গনেশ, ও সব গল্পের মতোও পড়া যায়, সেরকম বই পাওয়া যায়, যেটা থেকে সব জানা যায়। ওটা পপুলার সায়েন্স।

মনে রাখবি, চাপ নিতে নেই, অযথা উতলা হলে শরীরের সমস্যা হয়। গনেশ ঠিক করে বল, ঠিক কি জানতে চাইছিস (?) বা তোর মনের প্রশ্ন কি (?)।

জয়ন্তদা আমার মনটা উতলা, সেটাতো তুমি বুঝলে।

তোর মনের কথা বুঝতে পারছি, এই অবস্হায় তোকে বোঝানোর মতো চেষ্টা করতে পারি, অন্য ভাবে। বলছিস বটে, আমাদের এতো সমস্যা এসবে লাভ কি ? আর দু বা অধিক মত পক্ষে বিপক্ষে, এসব নিয়ে মানসিক বিড়ম্বনায় আছিস তো। একটু শান্ত থাকবি। শোন … ……….

বিজ্ঞানের অনেক দিক, অঙ্ক ভৌত বা জীবন বিজ্ঞান পরে অনেক ভাগে ভাগ হয়েছে। পরের দিকে অঙ্কের অনেক ভাগের সাথে

ফিজিক্স কেমেস্ট্রি জীব বিজ্ঞান মিলিয়ে এত ভাগ আর বিষয় সহজে বলা অসম্ভব, তবে অঙ্ক অ্যাসট্রো জিও ফিজিক্স বা ফিজিক্যাল কেমেস্ট্রি বা মেটেরিয়াল সায়েন্সের অংশটা এখানে প্রধান। 

সার্বজনীনভাবে বিজ্ঞানকে অন্যভাবে ভাগ করা যায় (১) পপুলার সায়েন্স (২) একাডেমিক সায়েন্স (৩) রিসার্চ সায়েন্স। যখন কেউ কেউ পপুলার সায়েন্স, একাডেমিক সায়েন্স, রিসার্চ সায়েন্স তিনটে অতিক্রম করে যায়, আর বিজ্ঞান চর্চা তারপরও করে, তাদের বলে বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীরা সরল ভাবনায় অনেক অজানা পথের কথা ভাবে বা অভিযানের চিন্তা করে। সেরকম একটা অজানা পথ মহাশূন্যের পথে চলা, যার একটা চন্দ্রায়ন তিন অভিযান। অজানা পথের অভিযানে কি পাওয়া যাবে বা যাবে না বা কতটা কি ধীরে ধীরে বোঝা যায়। এই চন্দ্রায়ন তিন অভিযান যেহেতু সূর্যের আলোয় শক্তি পাবে যন্ত্রপাতি, তাই এক চান্দ্র দিনের সূর্যালোক সময় আনুমানিক আমাদের ১৪ দিন যন্ত্র সব ভালো কাজ করার শক্তি পাবে।


গনেশ বেশ জটিল প্রক্রিয়া পৃথিবী থেকে চাঁদের দেশে যাওয়া। আর চন্দ্রায়ন তিন অভিযানে যন্ত্রপাতি যেখানে নেমেছে সেটা আরও কঠিন জায়গা। অজানা পথে প্রতি মুহুর্তে আপাত সাফল্য ব্যার্থতা জড়িয়ে থাকলেও, বিজ্ঞানীরা সব সময়ে সেটাকে সাফল্য হিসেবে দেখেন (আপাত ব্যার্থতা জড়িয়ে থাকলেও)। চন্দ্রায়ন অভিযান এক দুই থেকে পাওয়া তথ্য অভিযান তিন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি চাঁদের বুকে নামাতে পেরেছে। এর থেকে কি পাওয়া যাবে বা যাবে না বা কি লাভ সেটা বোঝা যাবে অনেক অনেক পরে। অজানা মহাশূন্যের পথের অভিযানের মৌলিক দিক,

(১) পরিকল্পনা 

(২) জটিল অঙ্ক 

(৩) জটিল যন্ত্র তৈরী 

(৪) পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ছেড়ে বেরোনো

(৫) মহাশূন্যে থাকা

(৬) চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে থাকা 

(৭) চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে থেকে চাঁদে অবতরণ


তোর বোঝার জন্য GMS এর কথা বলি, গলপ বলে ধরে নিস। তোর খারাপ লাগবে না। পপুলার সায়েন্স নিয়ে অনেক বলতো, সবাই যাতে বুঝতে পারে।

কথায় কথায় আমরা গঙ্গার ধারে বসে আছি, খেয়াল নেই। তোমার GMS কি গো জয়ন্তদা(?)

ওটা একজনের নাম, তবে একটু বলি M - মুখার্জী আর S- স্যার।

GMS  ফিজিক্সে মাস্টার আবার চার্টাড একাউন্টটেন্ট বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদে পরিচয়। দেশ প্রথম রকেট পাঠালো, অনেক টাকা খরচ করে, গরীব দেশ। সবাই বলতো রাস্তা হাসপাতাল পানীয় জল ব্রীজ না বানিয়ে ভুল কাজ হচ্ছে। তারপর স্যাটেলাইট অনেক আলোচনা সমালোচনা, তখন টিভি মানুষের সাধ্যের বাইরে, মোবাইল ছিল না, ইন্টারনেট জানতো না। GMS রকেট স্যাটেলাইট পাঠানোর বড় সমর্থক ছিলো, বলতো বিশাল কাজ, একদিন আমাদের অনেক কাজে লাগবে। 

১৯৯৭ সালে দেখা হয়েছিল, আমার হাতে মোবাইল। GMS আমাকে রকেট স্যাটেলাইট মনে করিয়ে দিয়ে বলেছিলো, সাফল্য কি জিনিস, তখন ইনকামিং কলের জন্য এক টাকা ২০ পয়সা দিতে হোতো ৪/৮ সেকেন্ডের জন্য। গনেশ অনুভব শক্তি বাড়াতে হবে।

জয়ন্তদা উঠে দাঁড়িয়ে সোজা বাড়িতে যেতে বলে নিজে চলে গেল। এখন বাড়িতে মনে হচ্ছে, একদিন দেশ ও দশের অনেক কাজে আসবে এই চন্দ্রায়ন তিন অভিযানের সাফল্য। জয়ন্তদা আজও অনবদ্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ