দর্পণ পত্রিকা || সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সংখ্যা, ২০২৩




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

: কলমে :

সায়ন্তিকা, সুশান্ত সেন, পাপু মজুমদার , শ্রী অভিষেক অধিকারী, প্রণব কুমার বসু , চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য্য, দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য, শিবানী গুপ্ত , সোনালী সরকার 
=========================

সুনীল۔এ 
সা য় ন্তি কা 

যারা এই শহরে মাথা গুঁজে পড়ে আছে ,
তাদের মধ্যে কোনো সুনীল নেই !
কাল সারারাত জেগে থেকে এই দেশটা কিছুটা পুরোনো হয়েছে ,
হলুদ ঘাসের ওপর গজিয়েছে গাছ ,
আর আলো۔ফুল ফুটে উঠেছে আঙুলের ছোঁয়ায় !

সুনীলরা প্রতিবার কোনো এক বর্ষা ডিঙিয়ে চলে আসে আমার ঘরে ,
শব্দের ওড়াউড়িতে ভেসে যায় নামহীন সংসার,
বৃদ্ধ মানুষের ছায়ায় ঢেকে যায় মাঝির নৌকা ,
ধানের গন্ধে ম ম শরীরে আটকে যায় সুনীল ,
ঘুমের আঠা গড়িয়ে পড়ে কবিতার গা বেয়ে ۔۔۔۔

আর এভাবেই প্রতিটা জন্মদিন আসলে প্রিয় পুরুষের মায়া ত্যাগ করা বৈষ্ণবী আঁকড়ে ধরে জীবনের পদাবলী ,
অচেনা নারীর বুকে বিদ্ধ হয় হরিণ ,
শৈল্পিক সুখে জন্ম নেয় আমার সেই পুরোনো আদিমতা ۔۔۔
অনন্তের পথে লেখা হয় ۔۔
"সুনীল সাগরে আমিও যে কূল খুঁজে পাই ۔۔۔"
=====
 সুন্দর
সু শা ন্ত সে ন

ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুম রাত্তির রাত্তির সংবিধান
আকাশের মেঘ পার্লামেন্ট
আনন্দবাজার গলা কেটে খুন
বিবস্ত্র নারী নয়ানজুলিতে
কাল ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা
এই সব ও নানান কারণ
ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুম রাত্তির রাত্তির।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি
পাশের দালান জাফরী কাটা রোদে ভরিয়ে
বাগানে দুটো সূর্যমুখী ফুল ফুটেছে
মৃদুমন্দ বাতাস ভেসে আসছে ।

নীলু বলেছিল - সুন্দর লুকিয়ে আছে মানুষের মনে
মানুষ দেখে না।

চলো বেরিয়ে চলো বাগানে নতুন গাছ লাগাই।
====
 তোমার কবিতা
পা পু ম জু ম দা র

সেদিন রাত বিকেলে
শূন্য ঘরে
একা বসেছিলে
আমি প্রথমে ভেবেছিলাম
অন্ধকার
তারপর
আলো জ্বেলে দিতেই
অসংখ্য কবিতা হয়ে
তুমি কেমন যেন নীরবে 
হেসেছিলে! 
আমি তোমায় দেখে
খুশি আর ভয়ে যেন
অবাক হয়ে চেয়ে ছিলাম
তোমার দিকে
তোমার কবিতার দিকে
এক এক করে
তোমার কবিতা ও তুমি
কেমন যেন হারিয়ে গেলে
টেবিলে রাখা ডাইরীতে তোমার ছোঁয়া পেলাম
তুমি লিখেছিলে-----
"শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম"..... 
তুমি তো এক বিশাল সমুদ্র
যাঁর প্রতি ঢেউয়ে
উড়ে বেড়ায় কবিতা। 
তুমি শব্দ ছন্দের পূজক
আমরা তোমার কবিতা
পড়ে জীবনের
না-পাওয়া দের ভুলে
কবিতার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই  ! 
এই যেন চাওয়া
তোমার কবিতার কাছে...... 
===
 এই পৃথিবীর পাঠশালায়
 শ্রী অ ভি ষে ক অ ধি কা রী

প্রথম আলো  যখন ধুইয়ে দেয় এই পৃথিবীর
সকল কালিমা,
আমি তখন দেখি, 
পিছন ফিরে।
পিছনে থাকে কুয়াশা ঘেরা অতীত।

নবজাগরণের একপাশে পড়ে থাকে কালীপ্রসন্নের প্রতিভা।
নবজাগরণের নায়করা আলো ফেলে নিজের দিকে।
তবুও প্রতিবাদী হয়ে ওঠে কালীপ্রসন্ন সিংহ।

সেই সময়ের কথকতা বলতে গিয়ে হুতোমের মশকরা
আমার পিছনে আবার আলো ফেলে।

অতীতের কুয়াশা  কাটতে থাকে।
ওই তো আমি।
অতীতের প্রথম আলোর যুগেও তো আমি ছিলাম।
আজও আমি আছি আর......
আমি হেঁটে চলি নিজের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্যকে সম্বল করে।

এই পৃথিবীর পাঠশালা....
আমাকে শিক্ষা দেয় ভালোবাসার।
আমি আজ যুদ্ধ ভুলে গেছি।
বেদনাকে ফেলে দিয়েছি অতীতের কোন রহস‍্যময় কোনে।

আমি আজও আছি নিজের অতীত সৌন্দর্যকে সঙ্গে নিয়ে.....
এই পৃথিবীর পাঠশালায়।
====
 অণুকবিতা
প্র ণ ব কু মা র ব সু

সুনীলবাবুর লেখালেখি
সব‌ই কেমন জমকালো
পড়তে বসলে হারায় যে মন
লেখক কেমন জ্বালায় আলো -
জন্মদিনে স্মরণ করি 
নমস্য ঐ প্রতিভাকে
কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়ি
ব‌ইগুলো সব রাখি আগে
=====
স্মৃতিচারণ- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় 
চ ন্দ্র শে খ র ভ ট্টা চা র্য্য 

 "স্মৃতির ঝাঁপি থেকে উঁকি দেয় তোমার কবিতারা"
তখন আমি কিশোর 
তখন আমি তরুণ,
তখন আমি তোমার কবিতায়
ডুবে আছি নিদারুণ। 

এই চার লাইনই যথেষ্ট সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রভাব আমার মধ্যে তখন কতটা তা বোঝানোর জন্য। 

তখন মানে ২০০৫ সাল । তখন আমার লেখা কবিতা কিছু লিটল ম্যাগাজিনে সবে দুটো একটা প্রকাশ পেয়েছে । কোনো বিশেষ নামী কবি লেখকের সঙ্গে পরিচয় ছিল না । পত্রিকার ঠিকানা দেখে লেখা পাঠাতাম। একদিন আনন্দবাজার পত্রিকার একটা কর্নারে দেখলাম  কবিতাপাঠের আসরের বিজ্ঞাপন - "বুধসন্ধ্যার আসর" উপস্থিত থাকবেন সাহিত্য জগতের জ্যোতিষ্করা । প্রবেশ আমন্ত্রণ মূলক।  ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ঠিক মাঝখানে  গোল ফাঁকা যায়গায় তখন বসত বুধসন্ধ্যার আসর । তখন আমার মাথার ভিতর "হঠাত নীরার জন্য ", "নীরা হারিয়ে যেও না" র কবিতাগুলো পাগলের মত ঘুরপাক খাচ্ছে ।  ছবিতে, টিভিতে তাকে দেখেছি এবার মানুষ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে সামনে চাক্ষুষ করার ইচ্ছা হল । যথারীতি পৌঁছে গেলাম ভিক্টোরিয়া । কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ আর ব্যাগের ভিতর আমার লেখা কবিতার ডায়েরী। ভিতরে ঢুকতে যাবো কিন্তু আমন্ত্রণ পত্র না থাকায় নিরাপত্তারক্ষীরা ঢুকতে দিলেন না । আমি কিছুটা বিমর্ষ হয়ে ফিরে আসছিলাম এমন সময় দুজন ফটোগ্রাফার খবর কভার করার জন্য ভিতরে যাচ্ছিলেন।  তারা যদিও আমন্ত্রিত ছিলেন।  আমি তাঁদেরকে বললাম আমাকে আপনাদের সঙ্গে নেবেন? আমি ভিতরে কবিতা শুনতে যাবো । কিন্ত আমন্ত্রণ পত্র নেই বলে নিরাপত্তারক্ষী ঢুকতে দিচ্ছে না । ভদ্রলোক দুজন বললেন- এসো আমাদের সঙ্গে , একটু কবিতাই তো শুনবে ।  অবশেষে ফটোগ্রাফার পরিচয় দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। 

ভিতরে তখন নক্ষত্রের ছড়াছড়ি কে নেই সেখানে - পূর্ণেন্দু পত্রী,  নবনীতা দেবসেন, পঙ্কজ সাহা, জয় গোস্বামী,  কৃষ্ণা বসু, মল্লিকা সেনগুপ্ত,  সুবোধ সরকার,  শ্রীজাত এবং আমার প্রিয় কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এছাড়াও আরো সম্মানীয় কবি সাহিত্যিকরা । কয়েকটা কবিতা শোনার পর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চেয়ারের সামনে হাঁটুমুরে বসলাম । তখনো সিনিয়র কবি সাহিত্যিকদের দাদা বলে ডাকায় অভ্যস্ত হইনি। প্রণাম করে বললাম - স্যার, আমি চন্দ্রশেখর, কবিতা লিখি । উনি বললেন - বেশ তাহলে শোনাও একটা কবিতা ।
আমি আমার ডায়েরী টা খুলে কাঁপা কাঁপা গলায় একটা কবিতা শোনালাম । উনি শুনে বললেন- "বাহ্ । দারুণ লিখেছ । আরো লেখ । লিখতেই থাকো । মনে রেখো কবিতার মাধ্যমেই মানুষ তোমাকে চিনে নেবে"। 
এই শব্দগুলোই আমার পরম প্রাপ্তি । সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এমন একজন মানুষ যিনি তরুণ অনামী লেখকদের স্পর্ধা । তাদের লেখার সাহস । তাদের কাছে ইন্সপিরেশন। সেদিনের উপহার হিসেবে আরও এক প্রাপ্তি , যে কবিতাটা সেদিন শুনিয়েছিলাম সেই কবিতার নিচে ওনার শুভেচ্ছা স্বাক্ষর করে দিয়েছিলেন।  একজন তরুণ অনামী কবির কাছে এ এক অসীম আশীর্বাদ। 

আপনার জন্মদিনে আমার প্রণাম।  শ্রদ্ধা । ভালো থাকুন স্যার।  ভালো থাকুন সুনীলদা। 
=======

 সুনীলবাবু বলেছিলেন - কেউ কথা রাখেনা ;
দে বা শী ষ ভ ট্টা চা র্য্য


সুনীলবাবু বলেছিলেন - কেউ কথা রাখেনা ;
তারপর হিসেব মতো বছর শতাব্দী পার,
ঢিলেঢালা পোষাক হাতড়ে প্রচন্ড গরমে কোনমতে বাঁচা ,
রফিকের সমাজতন্ত্র বাউল গানের মতো সজল,  
এমন পথে চলতে গিয়ে সাধন কে বলেছিলো তোমার শহরে গেলে পা ছুঁয়ে প্রণাম করবো,
হিসেব বহির্ভূত হয়ে যায়,
আমাদের আপন পর স্টেজের লাইটে হারিয়ে যাচ্ছে,
হারিয়ে যাচ্ছে পুরষ্কার - সুনামের ছোঁয়ায় ছোঁয়ায়! 
রফিকের ঘরে রঙিন ফুলদানি,  আসবাব আর টেবিল ছোঁয়া বইয়ের ভিড়ে হারিয়ে গ্যাছে সাধনের ভবিষ্যতবাণীগুলো -

সুনীলবাবু বলেছিলেন - কেউ কথা রাখেনি
এর ভিতরেই মৃত্যুর বিতর্ক -
কম বয়েসী জেদ আঁকড়ে ঠেলে থাকা দালান
আজ আরও শক্ত হয়েছে - 
চুন সুড়কির গায়ে প্রবল সুরঙ্গ
সাধন বেঁচে আছে, বেঁচে আছে রফিকের প্রবল ইচ্ছে গুলো

বার্ধক্যের খাতিরে নড়তে চড়তে চাওয়া ইচ্ছেরা 
কোনমতে প্রবেশ করে আগামীর ভিতরে 
সাধন সেই আগামী ছুঁয়েই এগিয়ে চলে নিরপেক্ষ নিদানে
রফিকের সময় হয়নি আর - 
বিধিবদ্ধতায় হিসেব বিলিয়ে উপর দিকে তাকায়
কবিতাকে নিয়ে যেতে চাওয়ার দলাদলিতে
সময় চলে গ্যাছে,

দুজনের কেউ কাউকে চিনতে পারছেনা - 
ছুঁতে পারছে না, দেখতে পারছেনা,  জানতে বুঝতেও পারছেনা - 
সুনীলবাবু বলেছিলেন - কেউ কথা রাখেনা ;
====
চেতনা মননে  কবি কথা
 শি বা নী গু প্ত

সাহিত্যের সর্বস্তরে সাবলীল তব বিচরণে,
পড়েছি মত ঋদ্ধ তত চেতনা ও মননে।
লিখনী আঁচড়ে ফুটায়ে তুলেছো মানব চরিত্র কত,
' কাকাবাবু ও এক ছদ্মবেশী'- পাঠে
মুগ্ধতা বেড়েছে যত।

ভারতীয় উপ মহাদেশের ইতিহাস রচে উপন্যাসের পাতায়,
অনেক অজানা তথ্য জেনেছি আমরা সকলে তায়।
'সেইসময়, 'প্রথম প্রেম' তোমার ক্লাসিক উপন্যাস পাঠে,
গভীর ভাবেতে ডুবে গেছে মন কাহিনীর ছায়াবাটে।

অনামিকা নীরা তোমার কবিতায় পড়েছি মগ্ন মনে,
ভাবের গভীরে নীরাকেই ঘিরে রয়েছি তন্ময়তা সনে।
দেশ সমাজের পথিকৃৎ কবি  চেতনার রুদ্ধ দ্বারে,
তুখোর লিখনী হেনেছে আঘাত জাগাতে সবাকারে।

জীবনের জটিলতা ,ভ্রান্তি ,অসমতা
বুঝাতে দক্ষ হাতে,
নিয়েছো মসি লিখেছো গো বসি দরদী হৃদয় সাথে।
জানতে বুঝতে চিনতে শেখা তোমার লিখনী পড়ে,
রুদ্ধ মনের দুয়ার  গেছে খুলে নিজেকে চেনার তরে।

মানুষ কখনো বুঝে নাকো কভু  নিজের ক্ষমতা কত,
কত সুন্দর রয় লুকিয়ে নিভৃত গহনে যত।
সত্যসুন্দর দৃষ্টি তোমার আত্মোপলব্ধির মাঝে,
গর্বিত মন তোমাকে পেয়ে গো
জ্ঞানের বিভায় রাজে।
====
 সর্বত্রই বিচরণ 
সো না লী দা স স র কা র

তোমার আত্মপরিচয় ঘাটতেই তোমার সাথে মুখোমুখি  অভিভূত হই তোমার প্রথম প্রেমিক কবিতাকে জেনে!

প্রতিলিপি গুলো তান্ডব করে ছাঁইগুলো আকার নেবে গদ্যে 
আর অস্তিত্ব ঘুমে অলস কাহিনীরা উন্মুক্ত হতে চলে পদ্যে।

প্রকৃতি প্রকৃত নিত্য অনিত্য মিলেমিশে কথা বলে
তাদের আলাদা জানতে এই  প্রজন্মর কাছেবস্বীকৃতি মেলে।

নীল আকাশ টাকে বেঁধে ফেলেছিলে তোমার  ড্রইংরুমে 

নীরার সাথে বৈঠকের আলোচ্য  পুঙ্ক্ষানুপুংখ হয় কথপোকথনে। 

হলুদেভাব মণি ঘিরে লক্ষণ চিহ্ন গভীর চিন্তায় রাত জেগে
ভেদাভেদ ভ্রান্ত,নেতৃত্ব উড়িয়েছো অন্যায় দেখে রেগে।

বড্ড সত্য ভীষণ কঠিন সহজ ব্যঞ্জনবর্ণ ধরে হৃদয় ছুঁয়েছে

আমি তুমি সবাই বুঝে গেছি
শিশুর মত করে যে বুঝিয়েছে।
 
কৃত্তিবাসের পৃষ্ঠায় মুখ খুলে গ্যাছে বিস্তৃতিতে অনুপ্রবেশের 
উপন্যাস ধরে পরিচয় প্রকাশে মেতেছে আত্মপ্রকাশের।

এই দিন তো আসবেই তুমি জেনে এগিয়েছো সবে
সুনীল আকাশের বিশালে ঘর তোমার জানোই এটা হবে।

তুমি তুমিই তোমার যমজ নেই 
আধার ঘেঁটে দেখা
সেরা বাঙালির জয়ের শিরোপা কিভাবে পান তা দেখে শেখা!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ