পোস্ট বার দেখা হয়েছে
বাতাসে বারুদের গন্ধ
এতগুলো বছরে তোমাকে আমি একবার ও ভুলিনি কবি,
ক্লান্ত বিষন্ন তুমি এসেছিলে নাটোরে।।
তুমি চেয়েছিলে শান্তি, আমি তোমাকে তাই দিয়েছি কবি।।
সেদিন তুমি বলেছিলে, তোমাকে নাকি দুদন্ড শান্তি আমি দিতে পেরেছিলাম।
তবে আজ তোমাকে এত ক্লান্ত, বিধ্বস্ত কেন লাগছে কবি?
দেখ কবি ওই সূর্যদয় কে, কেমন রক্তিম আভা মিশিয়ে আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে,
কবি বনলতার দুহাত শক্ত করে ধরে বলল, কিন্তু আমি যে তাতে পৈশাচিক রক্ত দেখতে পাচ্ছি বনলতা!
সেকি কবি! ভাল করে আরও ভাল করে কান পাতো কবি, শোনো মন্দিরের ঘন্টার আওয়াজ, শোনো নবজাতকের কান্নার আওয়াজ।। শুনতে পারছো কবি, শুনতে পারছো না।।
না, না, কি বিকট আওয়াজ বনলতা, কয়লা খনি থেকে শিশুদের আওয়াজ, ধর্মের নামে মিথ্যে কথা বলা কিছু মানুষের আওয়াজ!বেকার যুবকের ভাত কাপড়ের অভাবে কান্নার আওয়াজ।
আমি তোমার মতো করে কেন কিছু শুনতে পারছি না বনলতা?
তুমি তৃষ্ণার্ত, ক্ষুধার্ত তাই হয়তো শুনতে পারছো না। দেখো কবি, নতুন ধান দিয়ে আমি তোমার জন্য পরমান্ন রেঁধেছি ।।
কিন্তু তোমার পরমান্ন তে আমি যে শত শত ক্ষুধার্ত শিশুর মুখ দেখতে পাচ্ছি বনলতা।। খাদ্যের অভাবে, অপুষ্টির অভাবে রোগগ্রস্ত, জীর্ণ অসহায় অসংখ্য শিশু,।।
তুমি আমাকে এমনভাবে বলো না কবি, আমি ভেতর থেকে শত ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি কবি।।
দেখো, আমার দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখো কবি।।
আজ আমি তোমার জন্য সেজেছি!
চুল চন্দনের ধোঁয়ায় সুগন্ধি করেছি, ললাটে দিয়েছি লাল সিঁদুরের ফোঁটা।। চোখ এঁকেছি ঘন কালো মেঘের কাজল দিয়ে।। ভাল করে দেখো কবি, তুমি আমার দিকে একবার দুচোখ ভরে দেখো।। কি হলো কবি! কি দেখছো!
সরে যাও বনলতা, সরে যাও!
তোমার স্নিগ্ধ রূপে আমি দেখতে পাচ্ছি অসংখ্য দগ্ধ গৃহবধূ, অজস্র ধর্ষিত নারীর আর্তনাদ।
অঝোরে কেঁদে উঠলো বনলতা।।
কবি বনলতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, দেখো বনলতা সূর্য অস্ত যাচ্ছে। সন্ধ্যা নামছে।। তোমার আমার প্রেমের ছন্দ যে সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে বনলতা।।
বাতাসে যে বারুদের গন্ধ, ।। তোমার আমার প্রেম শুধু কবিতার ছন্দে থেকে যাবে চিরকাল বনলতা।।
কবি আর বনলতা দুজনেই পশ্চিম আকাশে সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে রইল।। আজ দুজনের চোখে অশ্রু বাঁধ মানে না।।।
=====
এক গুচ্ছ চাবি,
সে সময় পুকুর ঘাট ছিল, মাটির কলসি,
মাটির হাঁড়ি ছিল,
একান্নবর্তী পরিবার ছিল,
হিজলের ছায়ায় মাটির বাড়ি ছিল,।
এক প্রৌঢ়া তুলে দিয়েছিল একগুচ্ছ চাবি
কখনো ,
সদ্য আসা এক বালিকা বধূ কে ।।
আরো কিছুটা সময় এগিয়ে গেল,
শান বাঁধানো পুকুর ঘাট হলো,কাঁসা পিতলের
বাসন এলো,
মাটির বাড়ি বদলে গেল ইঁট,বালি, সিমেন্টের
তৈরি একতলা বাড়িতে।
কখনো নববধূ হয়ে আসা নারী তখন প্রৌঢ়া ,হাতে দিলো সেই এক গুচ্ছ চাবি
তাঁর পুত্রবধূ টিকে।
তারপর সময় বেশ বদলে গেল,শান বাঁধানো ঘাট বদলে,
পাথরের স্নান ঘর হলো,
রঙিন টিভি, রেফ্রিজারেটর, ল্যাপটপ,দামি আসবাবে
ঘর সুসজ্জিত।
সিমেন্টের মেঝের জায়গায় বসেছে টাইল্স বসানো
ঝকঝকে মেঝে।
সত্তোর বছর আগে আসা নববধূ টি আজ প্রৌঢ়া,
যাবেন তিনি মহাপ্রস্থানের পথে,
সেই একগুচ্ছ চাবি স্বযত্নে হাতে তুলে দিলেন
তাঁর পুত্রবধূ টিকে।।
ভীষন ক্ষীণ স্বরে বললেন প্রৌঢ়া, সামলে রেখো তিন দশকের এই একগুচ্ছ চাবির থোকা।।।
তিনটে দশক পেরিয়ে গেছে
একটুও মরচে পড়েনি,তিনটে হাত বদলে গিয়েও
সেই একগুচ্ছ চাবি।।
তবে আজ দুই আত্মজা,তারা কি পারবে আগলে রাখতে,
তিনটে দশক পেরিয়ে যাওয়া,
একটুও মরচে না পরা, সেই একগুচ্ছ
চাবির থোকাগুলো কে?
"ছেলে মেয়ে আজ তো সবাই সমান,
আত্মজারা পারবে আগলে রাখতে
তাদের বংশের একগুচ্ছ চাবির থোকাগুলো কে ?"
আয়না কে রোজ প্রশ্ন করে,
কখনো বধূ হয়ে আসা আজকের এক নারী।।
হয়তো সময়ের কাছে পাবে নারী
এর সঠিক উত্তর।।।
=====
কথোপকথন,(নারীর কবি)
নারী ।।। ভালবাসো আমাকে?
কবি।।।না !
নারী।।।।তবে রোজ রোজ কেন আসো?
কবি।।জানি না।
নারী।।।জানো না যখন আর এসো না।।
কবি।।।শব্দ হারায় যদি!
নারী।।সঞ্চয়িতায় চোখ রেখো।।
কবি।।।বিরহ ভাসায় যদি!
নারী।।।নজরুল কে স্মরণ করো।
কবি।।বাতাসে প্রেম খুঁজে না পেলে?
নারী,।।জীবনানন্দ কে মনে করো।।
কবি।।।তাও যদি ছন্দ না মেলে?
নারী।।।রামধনুর সব রঙগুলো মাখিয়ে নিও তোমার কলমের মুখে।।
কবি।।।তোমার কথা মনে পড়লে,
নারী।।।গুলজার কে সাথী করো।।
কবি।।।দুরত্ব আনছো কেন?
নারী।।। ভালো না বেসেও আসার জন্য।।
কবি।।।তবে ভুলতে বলছো।।
নারী।।।হ্যা বলছি।।
কবি।।।তোমার আবেগ জমাবে কোথায়?
নারী।।।।পাহাড়ের গায়ে।।
কবি।।।তোমার অশ্রুতে ভরাবে কাকে?
নারী।।।নদীর জলধারা কে।।
কবি।।।।তোমার কখনো না বলা কথাগুলো রাখবে কোথায়?
নারী।।।। অরন্যের বুকে।।
কবি।।।।এত যন্ত্রনার পরেও আমার জন্য হৃদয়ের দরজা বন্ধ করছো নারী!
নারী।।। করছি কবি!আমরা কেউ কারুর জন্য নই। তুমি আপন সৃষ্টি তে মত্ত হয়ে শিখর ছোঁও। আমি প্রকৃতির কোলে চিরতরে হারিয়ে যাই।।
কবি।।। এই কি আমাদের ভবিতব্য তবে নারী!
নারী।।। জানি না! বিদায় কবি!
কবি।।।। দাঁড়াও নারী,যদি মনে পড়ে খুঁজবো কোথায়?
নারী।।। খুঁজে নিও তোমার বেনামী কোন কবিতার পাতায়।।
0 মন্তব্যসমূহ