পোস্ট বার দেখা হয়েছে
আজ বিশ্বকর্মা পুজো। আকাশ জুড়ে উড়ছে রঙ বেরঙের ঘুড়ি। আমার কিন্তু নজর পেটকাটা চাঁদিয়ালটায়। টেক্কা দিচ্ছে মিশকালো একটা ঘুড়ির সাথে। যাকে বলে একেবারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। যখন তখন ভোকাট্টা হল বলে।।ঘুড়ি ওড়ানোর বড্ড নেশা ছিল ছোটবেলায় আমার। বিশ্বকর্মা পুজোর একহপ্তা আগে থেকে চলত তোড়জোড়।
আমি, চিকু, মনাই,পটলা, রাজু। চিকু ছিল মাঞ্জা দেওয়ায় ওস্তাদ। ভাত, কাঁচের গুঁড়ো সব জোগাড় করে দিতাম আমরা। এরকম কত রঙিন, সাদা,কালো ঘুড়ি কিনতাম। লাটাই কিনতাম। সারাটা বিকেল ভোকাট্টা চেঁচিয়ে গলা ভেঙে যেত। বাড়ি ফিরলে মা গরম গরম দুধ দিত....
- কিরে ওঠ।
চিন্তাটা ছিঁড়ে গেল জগাদার গলায়।
- কিছু বলছো?
- বলছি ওঠ। সব হয়ে গেছে। এবার মুখে আগুন ঠেকিয়ে দে।
- ও।
উঠলাম। এগোলাম আস্তে আস্তে। সস্তা কাঠের ওপর শুয়ে আমার মা। অপেক্ষায়, আমার হাতের আগুন নেবে। ঠাকুরমশাই এগিয়ে ধরল জ্বলন্ত কাঠের টুকরোটা। ওটাই ঠেকাতে হবে? কিভাবে করব এটা?মায়ের মুখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া যায়?
- কি হল টা কি? নখরা করছিস কেন? আমাদের অত সময় নেই।
খেঁকিয়ে উঠল পাশে দাঁড়ানো কনস্টেবলটা।
- কই দিন।
ঠাকুরমশাই আমার হাতে দিল কাঠটা। লকলকে আগুন ওটার মুখে। শেষবারের মতো মায়ের মুখটা দেখলাম।ঠোঁট দুটো পুড়িয়ে দিতে হবে এবার। বড্ড পান খেত মা।এখনও লাল ঠোঁটদুটো।
- নে চল। ওখানে বস।
জগাদা নিয়ে গেল আমাকে। বসে আবার আকাশের দিকে চোখ গেল আমার। এখনও লড়ছে ওইদুটো ঘুড়ি।
- মা আমি কদিন বাইরে যাচ্ছি।
- বাইরে? কোথায়?
- বন্ধুর বাড়ি। সুন্দরবনের ওদিকে।
- কেন? হঠাৎ?
- আহ্ মা,এত প্রশ্ন কোরোনা তো। চটপট খেতে দাও।
মা বেড়ে এনেছিল সেদিন, ভাত আর পুঁইশাকের চচ্চড়ি।
- খা, আমি ততক্ষণে একটা ডিম ভেজে আনি।
- না না। এতেই হবে। তাড়া আছে।
কোনও রকম নাকেমুখে গুঁজে ব্যাগে কটা জামা ঢুকিয়ে নিলাম।
- এত রাতে যাবি? কিসে?
- গাড়ি বলা আছে।
মাকে তো বলা যায়না, রাতের অন্ধকারেই পালাতে হবে আমাকে। পুলিশ পাগলা কুত্তার মতো খুঁজছে। বড় মাঠের ধারে রাজু গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। সোজা সুন্দরবন। রাজুরই এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় থাকে।কাকপক্ষীতেও টের পাবেনা।
টের পায়ওনি কেউ। দিব্যি আছি গা ঢাকা দিয়ে। নতুন একটা সিমকার্ড দিয়েছে রাজু, যেটার নম্বর ওই জানে একমাত্র। সব খবর পাই ওর থেকে। ওরা নাকি পুলিশকে বলেছে,আমি খুব বিরক্ত করতাম রুমিকে। আসতে যেতে আওয়াজ দিতাম। ও নাকি আমার ভয়ে কলেজ যেতে পারতনা। যত্ত ঢ্যামনামো। এটা বলতে পারেনি,বিয়ে করতে চেয়েছিলাম ওকে? পাগল হয়ে গেছিলাম ওকে দেখে। মাজামাজা গায়ের রং, একটু ভারী কোমর। পেছন দুলিয়ে হাঁটত যখন,দুলে যেতাম শালা। খাঁচায় পোষ না মানা যৌবন ছিল শালির। দেমাকে পা পড়তনা মাটিতে। পাত্তাই দিতনা। কম বুঝিয়েছি? শেষকালে কিনা সবার সামনে চড় মারল!এত্ত সাহস!
সেদিন রাতের দিকে দাঁড়িয়েই ছিলাম। ওর ওই চিকনি চামেলী বন্ধুটার বিয়ে ছিল জানতাম। ও যাবে সেটাও জানতাম। তবে একা ফিরবে সেটা সিওর ছিলাম না।একগলা ধেনো গিলে দাঁড়িয়েছিলাম। ভেবেছিলাম দেখব এক ঝলক। মায়ের দিব্যি,আর অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিলনা। কিন্তু একা রুমিকে দেখে কি যে হল?
ঝিলিরমিলির শাড়ির আড়ালে থাকা পেটটা চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। আর কিছু মাথায় রইলোনা। ছুটে গিয়ে চ্যাংদোলা করে সোজা পাশের মাঠে। ছটকাচ্ছিল খুব। কিন্তু আমার সাথে পারবে কেন?জামাটা খুলে ওর মুখে গুঁজে দিলাম। তারপর ওর ওসব শাড়ি, ব্লাউজ, সায়া ছিঁড়ে ছুঁড়ে ফেললাম। সমানে ছটফট করছিল শালি। কয়েকটা কষিয়ে চড় দিলাম।নৌটঙ্কি যত। চুপচাপ মজা লুটবি তা না... আধঘণ্টা পর যখন হাঁপাচ্ছি ওর নরম শরীরটার ওপর, তখনও বুঝিনি মাল খালাস। গলাটা অতটাও জোরে টিপতে যাইনি। হয়ে গেছিল। হিঁচড়ে নিয়ে গেলাম রুমিকে। ছোট্ট গর্ত মতো যে জায়গাটা, ওখানে মুখটা গুঁজে দিলাম ওর।পড়ে রইল, ক্ষতবিক্ষত উদোম রুমি।
পুলিশ আমার বাড়িতে গেছিল শুনলাম। মা বলেনি কিছু। কটাদিন যাক, সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। কত হচ্ছে এরকম। একটা রুমিকে কোন শালা মনে রাখবে?
- শোন একটা খবর আছে।
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। অসময়ে রাজুর ফোন পেয়ে অবাক লেগেছিল।
- কি? পুলিশ কিছূ্...
- না। ওসব না। মাসিমার শরীরটা ভালো নেই।
- কি হয়েছে মায়ের?
জন্ম থেকে বাপ ভাগলবা। মা ই তো সব। মায়ের একটু কিছু হলেই অস্থির লাগে।
- ইয়ে মানে লেগেছে।
- লেগেছে? পড়ে গেছে? মাথা টাথা ফাটেনি তো? সব কিছুতেই হুটোপুটি মায়ের।
- না মানে ঠান্ডা মাথায় শোন।
- ভ্যানতাড়া মারছিস কেন?
- তোদের ঘরের পেছনের কচুবনটায় পড়েছিল...
- মানে?
- হাসপাতালে দিয়েছি।ডাক্তার বলল কারা মানে ইয়ে...
- কি!কারা কি করেছে?
- উফ্। কি বলি বলতো? সবাই বলাবলি করছে রুমির বাবা ই কাউকে দিয়ে... মানে রেপ... ডাক্তার বললো একজনের বেশি...
- রেপ! মাকে!
- শান্ত হ। আমরা আছি।
- আমি যাব। এখনই।
- পাগলের মতো বকিসনা। পুলিশ ওত পেতে আছে।
- শালা তুই ব্যবস্থা কর এখনই।
মায়ের কাছে পৌঁছতে পরদিন বেলা হয়ে গেল অনেকটা।খুব দেরি হয়ে গেল। মাকে আর বলা হলনা,আমার পাপের ফল তোমাকে ভুগতে হল মা। ক্ষমা করো। বেডে শুয়ে থাকা রক্তাক্ত মাকে দেখে পলকের জন্য মনে পড়ল সেদিনের রুমিকে। মাকেও কি ওরা ওভাবেই...?
ভাবার আগেই ছেঁকে ধরল পুলিশ।
- চ রে হারামী। তোর মা ছাই হয়ে গেছে। বেঁচে গেছে। চ এবার শ্বশুরবাড়ি। জামাই আদর করব।
ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে চলল পুলিশ।
পেছন ফিরে তাকালাম আকাশের দিকে। পেটকাটা চাঁদিয়ালটা ঘুরতে ঘুরতে নীচে নামছে।।
0 মন্তব্যসমূহ