প্রেমের কবিতা || বিশিষ্ট কলম




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 
গোপন প্রিয়া

কাজী নজরুল ইসলাম


চাই না জাগা, থাকুক চোখে এমনি ঘুমের ঘোর!


রাত্রে যখন এক্‌লা শোব-চাইবে তোমার বুক,

নিবিড়-ঘন হবে যখন একলা থাকার দুখ,

দুখের সুরায় মস্ত্‌ হ’য়ে

থাকবে এ-প্রাণ তোমায় ল’য়ে,

কল্পনাতে আঁকব তোমার চাঁদ-চুয়ানো মুখ!

ঘুমে জাগায় জড়িয়ে র’বে, সেই তো চরম সুখ!


গাইব আমি, দূরের থেকে শুনবে তুমি গান।

থামবে আমি-গান গাওয়াবে তোমার অভিমান!

শিল্পী আমি, আমি কবি,

তুমি আমার আঁকা ছবি,

আমার লেখা কাব্য তুমি, আমার রচা গান।

চাইব না ক’, পরান ভ’রে ক’রে যাব দান।


তোমার বুকে স্থান কোথা গো এ দূর-বিরহীর,

কাজ কি জেনে?- তল কেবা পায় অতল জলধির।

গোপন তুমি আসলে নেমে

কাব্যে আমার, আমার প্রেমে,

এই-সে সুখে থাকবে বেঁচে, কাজ কি দেখে তীর?

দূরের পাখী-গান গেয়ে যাই, না-ই বাঁধিলাম নীড়!


বিদায় যেদিন নেবো সেদিন নাই-বা পেলাম দান,

মনে আমায় ক’রবে না ক’-সেই তো মনে স্থান!

যে-দিন আমায় ভুলতে গিয়ে

করবে মনে, সে-দিন প্রিয়ে

ভোলার মাঝে উঠবে বেঁচে, সেই তো আমার প্রাণ!

নাই বা পেলাম, চেয়ে গেলাম, গেলে গেলাম গান

====

কে চায় তোমাকে পেলে 

মহাদেব সাহা


বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অর্থ-পদ চায়

বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণসিংহাসন

জয়ের শিরোপা আর খ্যাতির সম্মান,

কে চায় সোনার খনি তোমার বুকের এই স্বর্ণচাঁপা পেলে?

তোমার স্বীকৃতি পেলে কে চায় মঞ্চের মালা

কে চায় তাহলে আর মানপত্র তোমার হাতের চিঠি পেলে,

তোমার স্নেহের ছায়া পেলে বলো কে চায় বৃক্ষের ছায়া

তোমার শুশ্রূষা পেলে কে চায় সুস্থতার ছাড়পত্র বলো,

বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ চায় শ্রেষ্ঠ পদ

কে চায় তাহলে বলো স্বীকৃতি বা মিথ্যা সমর্থন,

তোমার প্রশ্রয় পেলে কে চায় লোকের করুণা

বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণমুদ্রা কিংবা রাজ্যপাট?

বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অন্য কিছু চায়,

কে আর তোমার বুকে স্থান পেলে অন্যখানে যায়!


====

পরস্ত্রী

শক্তি চট্টোপাধ্যায়


যাবো না আর ঘরের মধ্যে অই কপালে কী পরেছো

যাবো না আর ঘরে

সব শেষের তারা মিলালো

আকাশ খুঁজে তাকে পাবে না

ধরে-বেঁধে নিতেও পারো তবু সে-মন ঘরে যাবে না

বালক আজও বকুল কুড়ায় তুমি কপালে কী পরেছো

কখন যেন পরে?

সবার বয়স হয়

আমার

বালক-বয়স বাড়ে না কেন

চতুর্দিক সহজ শান্ত

হদৃয় কেন স্রোতসফেন

মুখচ্ছবি সুশ্রী অমন, কপাল জুড়ে কী পরেছো

অচেনা,

কিছু চেনাও চিরতরে।


====

তুমি 

 সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


আমার যৌবনে তুমি স্পর্ধা এনে দিলে

তোমার দু’চোখে তবু ভীরুতার হিম।

রাত্রিময় আকাশে মিলনান্ত নীলে

ছোট এই পৃথিবীকে করেছো অসীম।


বেদনা-মাধুর্যে গড়া তোমার শরীর

অনুভবে মনে হয় এখনও চিনি না

তুমিই প্রতীক বুঝি এই পৃথিবীর

আবার কখনো ভাবি অপার্থিবা কিনা।


সারারাত পৃথিবীতে সূর্যের মতন

দুপুর-দগ্ধ পায়ে করি পরিক্রমা,

তারপর সায়াহ্নের মতো বিস্মরণ-

জীবনকে, স্থির জানি, তুমি দেবে ক্ষমা


তোমার শরীরে তুমি গেঁথে রাখো গান

রাত্রিকে করেছো তাই ঝঙ্কারমুখর

তোমার ও সান্নিধ্যের অপরূপ ঘ্রাণ

অজান্তে জীবনে রাখো জয়ের সাক্ষর।


যা কিছু বলেছি আমি মধুর অস্ফুটে

অস্থির অবগাহনে তোমারি আলোকে

দিয়েছো উত্তর তার নব-পত্রপুটে

বুদ্ধের মূর্তির মতো শান্ত দুই চোখে।।


====

ইচ্ছে ছিলো 

 হেলাল হাফিজ


ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো

ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে

শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।

ইচ্ছে ছিলো সুনিপূণ মেকআপ-ম্যানের মতো

সূর্যালোকে কেবল সাজাবো তিমিরের সারাবেলা

পৌরুষের প্রেম দিয়ে তোমাকে বাজাবো, আহা তুমুল বাজাবো।

ইচ্ছে ছিলো নদীর বক্ষ থেকে জলে জলে শব্দ তুলে

রাখবো তোমার লাজুক চঞ্চুতে,

জন্মাবধি আমার শীতল চোখ

তাপ নেবে তোমার দু’চোখে।

ইচ্ছে ছিল রাজা হবো

তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,

আজ দেখি রাজ্য আছে

রাজা আছে

ইচ্ছে আছে,

শুধু তুমি অন্য ঘরে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ