জীবনী ও অনুবাদ || জীবনানন্দ_দাশ || সায়ন্তিকা ভট্টাচার্য্য




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 
"তোমার শরীর ,-

তাই নিয়ে এসেছিলে একবার;- তারপর,- মানুষের ভিড়

রাত্রি আর দিন

তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন দিকে জানিনি তা,- হয়েছে মলিন

চক্ষু এই;- ছিঁড়ে গেছি- ফেড়ে গেছি ,- পৃথিবীর পথ হেঁটে হেঁটে

কত দিন রাত্রি গেছে কেটে !"۔۔۔জীবনানন্দ দাশ 


জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। জীবনানন্দের কাব্যচর্চার শুরু অল্পবয়স থেকেই। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী। রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থে যেভাবে আবহমান বাংলার চিত্ররূপ সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ হিসেবে খ্যাত হয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ এবং অন্নদাশঙ্কর রায় ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। জীবনানন্দ দাশ ছিলেন একজন কালসচেতন ও ইতিহাসচেতন কবি।

আধুনিক কালে বাংলার শ্যামল স্নিগ্ধ নরম মাটিতে বাংলার আধুনিক কবিতায় এক নতুন ঢেউ উঠলো।সবাই শুনল নতুন এক কণ্ঠস্বর। বিস্ময়ের সীমা রইল না। হাজার বছর ধরে পথ হাঁটা ক্লান্ত প্রাণ এক কবি। চোখে তার শত শতাব্দীর নীল অন্ধকার। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই কবি ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠল সকলের একান্ত প্রিয়। সেই কবির নাম জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্র যুগের এক ব্যতিক্রমী কবি।


জীবনানন্দ দাশ গতানুগতিক প্রবাহের কবি নন। ‘ সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি,  তিনি সেই বিরল কবিদের একজন। যথার্থই  তিনি দ্বন্দ্ব, কর্কশ পরিবেশকে সম্পূর্ণ বর্জন করে নিজের সৌন্দর্য ধ্যানমগ্ন আত্মার গভীর আশ্রয় নিয়েছেন। তার ভাষা রীতি ছিল বিশিষ্ট।


স্বাতন্ত্র্য শব্দ ব্যবহারে নিজস্বতা আমাদের অভিভূত করে। প্রতীক ও বিকল্প ব্যবহারে তিনি অনন্য। প্রসন্ন বেদনার কোমল উজ্জ্বল বড়ই নতুন এবং নিজস্ব তার লেখা। বাংলা কাব্যের কোথাও তার তুলনা পাওয়া যায় না। জীবনানন্দ দাশের প্রথম ও প্রধান পরিচয় তিনি কবি।


আজ তার জন্মদিবস উপলক্ষে রেখে গেলাম আমার এই প্রচেষ্টা ۔۔۔


------------------

আবার আসিব ফিরে ۔۔

জীবনানন্দ দাশ 


আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে -এই বাংলায়  

 হয়তো মানুষ নয় -হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;  

 হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে  

 কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁলছায়ায়;  

 হয়তো বা হাঁস হব -কিশোরীর -ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,  

 সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধ ভরা জলে ভেসে-ভেসে;  

 আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে  

 জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;  

  

 হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে;  

 হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেচাঁ ডাকিতেছে শিমুলের ডালে;  

 হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে;  

 রূপসা ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক শাদা ছেঁড়া পালে  

 ডিঙা রায় -রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে  

 দেখিবে ধবল বক: আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে।


I will come back again.

Translated by Sayantika


 I will come back to the bank of Dhansiri - this Bengal

  Maybe not a human - maybe in the disguise of a conch shell;

  Maybe as the morning crow in this land of autumn

  One day I will come to this forest shade floating in the mist;

  Maybe I will be a duck - a girl - with red feet in the nest of pigeons,

  The whole day will be spent floating in the water full of the smell of pen;

  I will come again to love the river fields of Bengal

  In this green pit of Bengal wet by the waves of river,

  

  Maybe you'll see the beauty flying in the evening wind;

  Maybe you will hear a lady owl  calling on the branches of the silk tree,

  Perhaps a child spreading chaff on the grass of a yard;

  In the murky red water, maybe a teenager can tear a white fish

  On the banks of the ray of colored clouds swimming in the dark coming to the nest

  You will see a white duck: You will find me in their crowd.


-------------------

-------------------

বনলতা সেন 

জীবনানন্দ দাশ 


আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।  

  

 চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,  

 মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর  

 হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা  

 সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,  

 তেমনই দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’  

 পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে চাওয়া নাটোরের বনলতা সেন।  

  

 সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন  

 সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;  

 পৃথিবীর সব রঙ মুছে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন,  

 তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল।  

 সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী; ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;  

 থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

  

Banalata Sen

Translated by Sayantika


Banalata Sen of Natore gave me peace.

  

 Her hair is dark and strange,

  The face is the work of his art;  After the far sea

  The sailor who broke the ship lost direction

  Land of green grass when he gazes within the cinnamon-island,

  That's how I saw him in the dark;  He said, "Where have you been all this time?"

  Banalata Sen of Natore looking up like a bird's nest.

  

  Like the sound of dew at the end of all days

  Evening comes;  Chill the scent of the wings of the sun;

  When all the colors of the world are erased, arranged by manuscripts,

  At that time, the story was shimmering in the colors of the fire fly.

  All the birds come home — all the rivers;   A-Life deals finishes off..

  There is only darkness, facing Banalata Sen.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ