প্রেমের কবিতা || পাতা ~ ১২




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 

ব্যার্থ প্রেম

জয়দেব সরদার


আমি তখন পুরসভার চুক্তিভিত্তিক নতুন কর্মচারী, 

অজান্তে হৃদয়ে পুষ্ফুটিত হয়ছিল প্রেমের ফুল। 

গলির রাস্তা, টিউশন কিংবা স্কুলের পথে, 

দূর থেকে দেখতাম তুমি যে কতো আপন, কতো দিনের চেনা। 


তুমি আমার দেখে যখন মুচকি  হেসে ছিলে, 

তোমার মিষ্টি হাসি দুষ্টু চাউনিতে।

বুকের মধ্যে ছলাৎ করে উঠতো জ্বলে, 

দুজনে মনের কথা কয়ে ছিলাম সূক্ষ্ম চালে। 


আমার বয়স তখন কুড়ি - বাইস ছিল, 

ধীরে ধীরে আমাদের প্রেমের সম্পর্ক হল। 

তোমার নিয়ে স্বপ্ন দেখা হলো শুরু, 

বুকের মধ্যে মাঝে মাঝে করত দুরু দুরু। 


কল্পনাতে এঁকেছি তোমার কতো ছবি, 

রূপকথার ন্যায় একে একে মিলে গেল সবই। 

আমার পাশ দিয়ে তুমি যখন যেতে স্কুলে, 

কিছু বলার আগে ভয়ে বুকের ভিতর উঠত দুলে দুলে। 


এমনি ভাবে কাটছিল বেশ দিন গুলি, 

রাস্তার পাশে কিংবা কোন গোপন স্থানে দুজনাতে মিলি। 

আমাদের প্রেমালাপ চলত নিরিবিলি, 

তুমিই ছিলে আমার প্রেমের পূজার ডালি। 


কাদম্বরীর কোলে সৌদামিনীর দেখার আশে, 

আকাশ পানে থাকতাম চেয়ে বসে। 

এক পলকে হৃদয় আনন্দে যেত ভেসে, 

তুমি আমার মুচকি দিতে হেসে! 


অবশেষে দীঘার সৈকত তটে, 

একান্ত ভাবে গেলাম মিলেমিশে। 

সারাদিন কাটিয়ে দিলাম হাতে হাত রেখে, 

সময় কখন অতিক্রান্ত হলো নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে। 


দিনের শেষে রবি যখন দিগন্তে  মেশে, 

ফেরার জন্য স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম শেষে। 

বিদায় জানালাম, দীঘার স্মৃতি চারণের রেশে,

হঠাৎ মা, দিদি ও দাদার কথা উঠল মনে ভেসে। 


ট্রেনের যাত্রা পথে ভ্রমণের রোমন্থনে, 

খুন- সুটি ও হাসি- ঠাট্টায় ফিরলাম অবশেষে। 

যতই থাকি তবো সোহাগ সাগরে ভেসে, 

পরিবেশ ও পরিস্থিতি মোদের ব্যাঘাত ঘটায় শেষে। 


স্বপ্নে শয়নে হৃদয়ে আঁকাতাম তবো প্রতিকৃতি, 

ভেবেছিলাম সারা জীবন হৃদমাঝারে করবো বহন তবো স্মৃতি। 

ওগো দিগম্বরী পলকে হারাই পলকে খুঁজে মরি, 

তুমি ছিলে ধনীর দুলালী, ভেবে না পাই কি করি। 


দিয়ে ছিলে কথা চিরসাথী হয়ে থাকবে ওগো সখী, 

সহমত দিয়ে হতে চেয়েছিলাম তবো সখা। 

আলাপ- চারিতায় জ্ঞাত হলে মোর পারিবারিক ছবি, 

স্বার্থপরের ন্যায় ধীরে ধীরে সম্পর্ক করলে শেষ সবই। 


ওগো কাজল নয়নী তবো বিহনে, 

শান্তির শয্যা কণ্টকাকীর্ণ শয়নে। 

গগন পানে চেয়ে থাকি ভেসে ওঠে তবো অবয় নয়নে, 

কি যে করি হায় ভেবে না পাই জীবনে। 


ঘুম আসে না নিশীথে চুপটি করে শুয়ে রই, 

তুমি কেন এসেছিলে আমার জীবনে সই? 

এমনি ভাবে কতো দিন, মাস কতো বছর গেল কেটে, 

ধীরে ধীরে তবো স্মৃতি বিস্মিত হতে চেষ্টা অবশেষে। 


যেদিন বাজলো তোমার বিয়ের সানাই, 

ভেবেছিলাম তবো সম্মুখে গিয়ে প্রতিবাদ জানাই। 

অসহায় আমি পারিনি, তুমি সুখে থাক এই শুধু চাই, 

কন্টক শয্যায় অতিবাহিত হলো কালরাত্রি তবো প্রতিকৃতি দেখে। 


দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত, মোদের সম্পর্কের ইতি, 

আমার হৃদয় ক্যানভাসে আজও ভাসে তবো ছবি ও স্মৃতি। 

জানি তুমি ফিরে আসবেনা কোন দিন, 

আমি রাজা নয় কো আমি দীন, তবো স্মৃতির ফোকাস আজ অতি ক্ষীণ। 

====

 ভালোবাসা  তোকেই ভালোবাসি 

রত্না রায়


তোর বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুটোগলি পরেই চাচার চায়ের দোকান ।

আবছা কাঁচের শোকেসের মধ্যে সাজানো 

চটপটা সবুজ ঈর্ষার চাটনি মাখানো  সিঙ্গাড়া।

ফুটন্ত গরমে ফটিকজল মেশানো চায়ে চুমুক দিয়ে

চোরাচাউনির গজ ফিতে মাপ নেয় মেঘলাআঁচলের।

গলির মোড়ে একঝলক তুই।

প্রশয় অমৃতফোঁটা ঠোঁটে সেই সোনারঙা মেয়ে।

 তখন চাচার দোকানে উপছানো ভিড়ের হাতে হাতে শেষ সিঙারা।

  ফিসফিসানির বাতাসে তখন জলস্তরের আলাপন।

  নীলাভ শৈত্যের ফ্যাকাশে কণা জমা হয় তোর‌ও চোখে।

  মন বলে চুপকথা তুই একবার শোন,

 লাল কার্পেট সীমান্তে ডুবে যাওয়া ময়ূরকন্ঠী আকাশটার দিব্যি, এখানে এখন‌ও আসেনি  কোনো কেমিক্যাল ফার্টিলাইজারের লিফলেট। 

শুধুমাত্র তোর চন্দ্রমেদুর আলোর স্পর্শেই চকোরজমিন  হয়ে উঠবে একমুঠো সোনালী রোদ্দুর।

====   

সোহাগ মাখা হৃদয়

 বিলকিশ বেগম

            

সোহাগ মাখা হৃদয় আমার 

ঘুম আসে না চোখে


কোকিলের কুহু তানে তুমি বাঁশি বাজাও

হৃদয়ে আমার

তোমার আবেশ জড়ানো ছন্দে জেগে ওঠে প্রাণ


তুমি ছুয়ে দিলে আমি জল

তুমি ছুঁয়ে দিলে আমি ফাগুন। বসন্ত উৎসব


তোমার বুকে মাথা রেখে আমি

স্বপ্ন সাজাই রোজ

মনের সায়রে ভাসাই সোনালী রোদের দুপুর 

 

 বুকের ভেতর জমে থাকে মেঘ

 অজানতে ঝরে পড়ে মিহিন বৃষ্টির সুবাস


 নিঃসঙ্গ গাছ। চাঁদনী রাত

 পাশে তুমি। তুমি আমি একাকার


বাউল গানে ভাসে প্রেম 

মন বাগিচায় শান্তির নীড় বাঁধি আমরা দুজন

====

 ভালোবাসি ভালোবাসি

 সবুজ পরিমল


যদি তোমার চোখ টলটলে নাইতে চাই!

তুমি না করবে?

নাকি পায়ের ছন্দে পিয়ানো বাজাবে দুর্নিবার...


যদি অরণ্যভূমের দুর্গমে পথ হারাই!

চিৎকার করি, বাঁচাও! বাঁচাও!

হাত ধরবে না?

নাকি চৌরাশিয়ার বাঁশি হয়ে চোখ জুড়াবে...


যদি দুঃস্বপ্নে পাশের বালিশে খুঁজে বেড়াই!

নিরাশ করবে?

নাকি এই ছোট্ট নদীর লাভ-ডুবটা আটক করবে!

আটক করবে ওই প্রবল সমুদ্রচ্ছ্বাসে...

জলতরঙ্গে বলবে, "ভালোবাসি ভালোবাসি..."

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ