অস্তিত্ববাদ || Who am I ?? ~ রাজীব মাইতি




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

অস্তিত্ববাদ 


Who am I?? অস্তিত্ববাদের বহু পুরনো এই প্রশ্ন। এই প্রশ্নের আদৌও কোনো যথার্থ উত্তর আছে কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের জায়গা আছে।

অস্তিত্ববাদ এমন কিছু নয় যাকে নিয়ে বিস্তর ব্যাখা করা যায়। কারণ ব্যাখা করতে গেলে এর অধিকাংশই হয়ে যায় অনুমান নির্ভর। 

বিজ্ঞান দিয়ে সর্বদা অস্তিত্ববাদ যাচাই করা যায় না। তার কারণ বিজ্ঞান শুধু কোনো বস্তুর ওপরই তদন্ত চালাতে পারে। আবার বাহ্যিক জগতের প্রতি আমাদের যে অনুভব তা আমাদের পঞ্চবোধ নির্ভর হলেও এমন অনেক কিছুরই অস্তিত্ব আছে যার অনুভবটা অতীন্দ্রিয় বলা যেতে পারে।

তবে অস্তিত্ববাদে একটা পর্যবেক্ষণ আছে, এবং এটা একটা কৌতূহলেরও বিষয়।

যদিও সবটাই অনুমান তাও আমাদের অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে অস্তিত্ববাদের একটা কাঠামো তৈরি করা যেতেই পারে।

অন্তর্মুখে অস্তিত্ববাদ অনেকটা একই ধরণের সাদৃশ্যসম্পন্ন অজস্র ছবির মতো, যার প্রধান কেন্দ্র আছে একটা মূল ছবি এবং যা ব্যাখাহীন। তাই আমরা আমাদের ব্যাক্তিত্বের যে ছবি প্রদর্শন করি তা আসলে আমরা নই।

যদি আমাদের ব্যাক্তিত্বের প্রদর্শনটা অচেতন না হয়ে থাকে তাহলে আমরা বুঝতে পারবো আমাদের অস্তিত্বটা আসলে অন্যকারোর ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছে।

Who am I? আসলে এমন একটা প্রশ্ন যা হয়তো এই বিশাল ব্রহ্মান্ডকে একই সূত্রে কোথাও বেঁধে রখেছে।

তাই একটা সময় পর সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা একে অপরের অস্তিত্বে হারিয়ে যেতে থাকি, যেখানে আর আসল আমিটারই কোনো অস্তিত্ব থাকে না।

বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে হয়তো আমরা মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেই আলাদা। কিন্তু এমন কিছু কি সত্যিই নেই যা সকলেরই এক বা অভিন্ন?

কারোর কথায় বা ব্যক্তিত্বে আমরা প্রভাবিত কেন হই বলতে পারবেন? উত্তর হয়তো একটাই। আপনি সেই ব্যক্তির অস্তিত্বে কোথাও না কোথাও নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন।

কাউকে আমাদের কেন ভালো লাগে বা কারোর প্রেমে আমরা কেন পড়ি বলতে পারবেন? এখানেও উত্তরটা আলাদা নয়। আপনি অন্যকারোর মধ্যে দিয়ে নিজেকেই   আবিষ্কার করছেন। যদি শরীর দেখে কারো প্রেমে পড়েন, ঐ একই শরীর কি আপনার নয়??

যদি অন্তরের গুণাবলী দেখে কারো প্রেমে পড়েন, আপনি কি একশো শতাংশ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবেন যে সেই একই সব গুণাবলী আপনার নেই, বা কখনই ছিলনা??

এই প্রশ্নগুলো আছে বলেই বেদান্ত দর্শন বা অদ্বৈত বেদান্তের অদ্বৈতবাদ এতটা interesting. কারণ ওখানেও বলা হচ্ছে আসলে আমরা সবাই এক।

আমাদের বাহ্যিক দেহরুপ ভিন্ন হতে পারে, আমাদের মনের বিচারে ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু এসবের পরেও কোথাও গিয়ে আমরা সবাই এক।

তাই একে অপরের থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে একে অপরকে পর্যবেক্ষণ বা উৎঘাটন করা অনেক বেশি লাভদায়ক হতে পারে। কারণ আত্মজ্ঞান প্রকৃতি থেকে পালিয়ে গিয়ে নয় প্রকৃতির প্রতি তদন্তমূলক মনোভাব থেকেই আসে। ঠিক কোনটা, জানার জন্যে ভুল ও ঠিক দুটোই জানতে লাগে।

যদি আমাদের পেশাগত দিক দিয়ে অস্তিত্ববাদকে একটু বোঝার চেষ্টা করি এখানেও ভাববার মতো জায়গা আছে, এবং একটা মানুষের অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিভাবে আমাদের জীবনে ষড়রিপুর অন্তর্ভুক্তি হতে থাকে যা কোথাও না কোথাও আমাদের সীমাবদ্ধ করে তাও আমরা বুঝতে পারবো।

ধরা যাক, একটি ছেলে বা মেয়ে তার দৈহিক রূপে বা পেশাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সমাজের মাপকাঠিতে খুবই নগণ্য। ধরে নিলাম সে show off করে না এবং জীবনে নিজের কিছু বড় vision থাকলেও শুধু অর্থের জন্যে সমাজের দৃষ্টিতে so called ছোটো একটা job করে।

এক্ষেত্রে সেই ছেলে বা মেয়েটি আসলে নিজের যে অস্তিত্বে আছে সেটা তার বর্তমান অস্তিত্ব মনে হলেও সে কিন্তু আসলে সেটা নয়। In future দুটো পরিবর্তন আসতে পারে। এক, ছেলে বা মেয়েটি যদি mentally tough হয় এবং তার আসল dream কে follow করে তাহলে সমাজের চোখে একদিন তার অস্তিত্বে পরিবর্তন হবে, কিন্তু আসলে নিজের কাছে সে তার প্রকৃত অস্তিত্বই খুঁজে পাবে। দ্বিতীয়ত, কোনো কারণবশত সেই ছেলে বা মেয়েটি যে job এ আছে সেই job যদি চালিয়েই যেতে থাকে একটা সময় পর job increment পেয়ে সমাজের কাছে better হয়ে যাবে কিন্তু নিজের কাছে হবে না। কারণ তার protential অনেক বেশি ছিল এবং সে অনেক বেশি কিছু acheive করতেই পারতো। অর্থাৎ নিজের limited অস্তিত্বের মধ্যেই সে আটকে গেল যা তার প্রকৃত অস্তিত্ব নয়।

সময় এবং অবস্থানের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হিংসা, অহংকার, লোভের মতো ষড়রিপুগুলো ছেলে বা মেয়েটির সঙ্গে সঙ্গে সমাজের মধ্যেও ঘোরাফেরা করতে থাকবে।

__________________________

কলমে - রাজীব মাইতি

ছবি - সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ