জাতীয় ডাক্তার দিবস | অলিপা পাল




পোস্ট বার দেখা হয়েছে
                                                                      ছবি সংগৃহীত 

১লা জুলাই জাতীয় ডাক্তার দিবস ২০২০

বিশ্বে ডাক্তারী পেশা এক মহান পেশা ৷

সেবা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিসেবার ক্ষেত্রে ডাক্তার রোগীর সম্পর্ক হচ্ছে অন্যতম প্রধান বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দিবসটি পরিচিতি পায়30th মার্চ 1933সালে। সেই অনুষ্ঠানেই  স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ডাক্তার রোগীর সম্পর্কের বিষয় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ 30 মার্চ কে জাতীয় চিকিৎসক দিবস পালনের জন্য আইন পাশ করেন৷ ভারতে এই দিনটি 1 জুলাই তারিখে কিংবদন্তী চিকিৎসক তথা  পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম-মৃত্যু দিবসের( 1জুলাই,1882 —1জুলাই1962 ,) সম্মানার্থে, 1লা জুলাই তারিখকে জাতীয় ডাক্তার দিবসের দিন হিসাবে পালন করা হয়। 
নাগরিকের সুস্বাস্থ্য যেমন দেশের অগ্রগতি আনে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার শৈথিল্যে কমে যায় উন্নয়নের গতি ৷
ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে সাধারণ মানুষের সুস্থ স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা  দারিদ্রতা ৷ তেমনই আর একটি অন্যতম প্রধান বাধা সচেতনতার অভাব।
                                                                         ছবি সংগৃহীত 
1লা জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ প্রতি বছর সংস্থাটি এমন একটি বিষয় বেছে নেয় যা সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। 1946 সালের ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রসঙ্ঘ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয়। জুন ও জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাংগঠনিক আইন গৃহীত হয়। । 
মূলত জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে প্রচারের জন্য 1লা জুলাই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। সর্বস্তরের মানুষের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা ঠিক সময়ে ঠিক ভাবে পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ।ডাক্তার নার্স,ধাত্রী বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের কী ভূমিকা, সে বিষয়ে সবাইকে জানানো ও তাঁদের কাজে উৎসাহ দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য। করোনার আক্রমণে বিশ্ব আজ ঘরবন্দি এই পরিস্থিতিতেএই স্বাস্থ্যকর্মীরা কী ভাবে নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন,আজ আর অজানা নয় আমাদের। যে কয়েক প্রকারের মানুষ এই যুদ্ধে সহজে হার স্বীকার করতে রাজি নয় তাঁরা হলেন চিকিৎসক, নার্স ও  স্বাস্থ্যকর্মী।তাই ভাইরাস ঠেকানোর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না নিয়েই এই যুদ্ধে নেমেছেন তাঁরা। মৃত্যুর ঝুঁকির কথা জেনেও স্বেচ্ছায় তাঁরা মারণ ভাইরাসের মোকাবিলা করতে এগিয়ে এসেছেন ৷ তাঁদের পরিবারের সদস্য অপেক্ষায় থাকেন উদ্বিগ্নে থাকেন কখন তাঁরা হাসপাতাল থেকে ঘরে ফিরবেন।
                                                                         ছবি সংগৃহীত 
আমেরিকায় ইতালি সব অন্যান্য অনেক দেশে অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বেচ্ছায় হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন করোনাকে পরাজিত করার জন্য। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে সবাই বাহবা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে থাকার জন্য ৷পিছন ফিরে অতীতের পৃষ্ঠা উল্টালে দেখতে পাব কিছু অসহায়তা ,মর্মাহত বেদনাদায়ক দৃশ্যের কিছু বাস্তব রূপ ৷ এখনও হয়তো এনআরএস-এর জুনিয়র ডাক্তারের চোখে-মুখে কালশিটে ছোপ বা মনে আতঙ্কের ছাপ কাটেনি। রাজ্য থেকে দেশ, দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ছিল এনআরএস কাণ্ড। ইটের ঘায়ে ভেঙে  যাওয়া মাথার খুলিটা এখনও দুঃস্বপ্ন ডেকে আনে। টেবিল তুলে ডাক্তারের মাথায় মারা বা গায়ে বিষ্ঠা ছুঁড়ে দেওয়া, কর্তব্যরত নার্সকে বিপদের হুমকি দেওয়া, এমন ঘটনা ভারতের মাটিতে অহরহ ঘটে চলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার স্তরে স্তরে এই পেশার প্রতি ছড়িয়ে পড়েছিলো ঘৃণা-বিদ্বেষ। যাঁরা ডাক্তারি পেশাকে ‘ব্যবসা’ বলে মন্তব্য করেন, ডাক্তার টাকা ছাড়া কিছুই বোঝে না,আজ তাঁরা দেখছেন ডাক্তারেরা নিজেদের জীবনকেও বাজি ধরতে পারেন রোগীর সেবায় উৎসর্গ করতে পারেন ৷
                                                                            ছবি সংগৃহীত 
 সেই মহৎ পেশায় নিযুক্ত মানুষেরা পায়নি এখনো পর্যাপ্ত সিকিউরিটি ৷  চাহিদা অনুযায়ী পূরণ করা যাচ্ছে না পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট, গ্লাভস বা মাস্ক,ফলে অনেক হাসপাতালে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মবিরতি করার ডাক দিয়েছেন। অথচ, আমরা সাধারণ মানুষজন সরকারের এই ভূমিকা নিয়ে  ভুলে গিয়েছি প্রতিবাদের ভাষা। কিন্তু এই স্বাস্থ্যকর্মী দের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠতে ভুলিনা চিকিৎসক হেনস্থার খবরে ৷সময় এসেছে নিজের  বিবেককে প্রশ্ন করার জাগ্রত করার।  যদি এই স্বাস্থ্যকর্মীরা আমাদের মতো ঘরের দরজা বন্ধ করে আজ বসে থাকতেন, তা হলে  ভারত সহ গোটা বিশ্ব এত দিনে মৃত্যুর মিছিল দেখত ৷
                                                                    ছবি সংগৃহীত 
ইটালিতে যত জন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন তার মধ্যে প্রায় ১০%শুধু স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা সব চেয়ে বেশি রোগীর সংস্পর্শে যান।  সে জন্য সর্বপ্রথম কর্তব্য হল, স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত প্রোটেকশন দেওয়া।  বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর রিপোর্ট অনুসারে ভারতে চাহিদা অনুপাতে নেই ডাক্তার ৷এই পরিসংখ্যান প্রকাশ পেতেই আঁতকে উঠেছে ভারতের বিভিন্ন মহল। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে এই মুহূর্তে দেশে প্রায়১০ লক্ষ বেশি অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দৈনিক প্রায় ৮০ শতাংশ চিকিৎসক কাজ করলে প্রতি ১ হাজার জন মানুষের জন্য ০.৬২ জনকে পাওয়া যায়। বর্তমানে ভারতের জনসংখ্যা ১৩৩ কোটির বেশি। বিশ্বে অন্য দেশগুলির মধ্যে আনুমানিক হিসাবে অস্ট্রেলিয়ায়  ব্রাজিলে জার্মানি রাশিয়াতে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে  পাকিস্থান প্রভৃতি দেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে জনগণ পিছু ডাক্তার সংখ্যা বেশি এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ইতালি বা আমেরিকার মতো দেশে চলছে মৃত্যুমিছিল। কোনও ভাবে আটকানো যাচ্ছে না এই অদৃশ্য মারণ রোগকে। ভারতের পরিস্থিতি এখনও এত ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেনি। তবে ভবিষ্যতে যদি ইতালি বা আমেরিকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় তা হলে নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, শেষকৃত্যের জন্য সে দিন কেউ থাকবে না,হয়তো হতে হবে বেওয়ারিশ লাশ ৷
                                                                  ছবি সংগৃহীত 
নাগরিকের সচেতনতার উপর স্বাস্থ্যব্যবস্থা অনেকাংশে নির্ভরশীল ৷ তাই এখনি ভাবার সময় এসেছে স্বাস্থ্যকর্মী সহ হাসপাতাল চাই । তবে কি দেরি হয়ে গেল! দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার আগে এই ভেঙে পড়া পরিকাঠামো নিয়ে  ঘুরে দাঁড়াতে হবে আমাদেরকে৷ তা নাহলে,ভেঙেপড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও প্রকট হয়ে উঠবে, পরিনত হবে ভগ্ন স্তুপে মানুষের আর্তনাদে ৷



 
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ