শারদ সংখ্যা ২০২০ || গল্প || সোমা মুখার্জী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


বুদ্ধিতে যার ব্যখ্যা চলে না 
সোমা মুখার্জী

আজও তো সেই দিন.. সেই জনু মাসের  বারো তারিখ..বছর চলে যায় গড়ানে জলের মত..প্রতি বছর এই বিশেষ দিন টা ফিরে আসে শ্রীতমার জীবনে..
আকাশ জুড়ে মেঘের ঘনঘটা.. ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে ঘরের দরজা জানলা গুলো ক্যাঁচকোঁচ শব্দ করেই চলেছে। এতো বড় বাড়িতে লোক বলতে শুধু শ্রীতমা নিজে আর তার বৃদ্ধা মা..
মা তো সন্ধ্যে হতেই আধো ঘুমে। 
সদর দরজায় যেন টোকা পড়ল..বারান্দা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে শ্রী। কই নীচেতো কাউকে দেখা যাচ্ছে না...
তার অবচেতন মন যেন কিসের প্রতীক্ষায় কাল গুনছে..কিছু কি ঘটবে..হবে কি সেই প্রতি বৎসরের মত একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি...আবারো যেন সেই শব্দ..এবার সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নেমে আসে সে.. এক ঝটকায় দরজা টা দু হাত দিয়ে খুলে ফেলে..কিন্ত না, কেউ তো সমানে নেই..
দোরগোড়ায় চৌকাঠ এর কাছে চোখ চলে যায় নিজের অজান্তে..ঠিক সেই একই ঘটনা.. যার জন্য তার মন অপেক্ষা করে ছিল..জায়গাটা স্বর্ণচাঁপার মিষ্টি গন্ধে ভ'রে উঠেছে..  লাল রিবনে বাঁধা এক গোছা স্বর্ণচাঁপা ফুল কে যেন দরজার কাছে রেখে গেছে। আকাশ বাতাস তার সৌরভে আকুল।
ফুল গুলো কে বুকে চেপে ধরে আকুল হয়ে কাঁদতে 
থাকে শ্রী..মনে মনে বলে..  "আজ  কত বছর ধরে আমি এর #উত্তর_খুঁজে_ফিরি.., কোথায় আছো তুমি দেবেশ..সত্যি কি আছ তুমি আমাদের   পাশে এই মাটির পৃথিবীতে? তাহলে কেন তুমি দূরের থেকে এভাবে বুঝিয়ে দিয়ে যাও তোমার ভালোবাসার আকুতি..কেন সামনে এসে দাঁড়াও না.."
এই ঘটনার মূলস্রোতে ফিরতে গেলে  অতীত এর দিকে ফিরে তাকাতে হয়..আজ থেকে ছ'বছর আগের কথা..এমনই এক জুন মাসের বারো তারিখ , সেদিন টা ছিল শ্রীতমার জন্মদিন..
দেবেশ আর শ্রীতমা তখন পরস্পরের ভালোবাসায় 
মগ্ন...একসাথে ঘর বাঁধবার স্বপ্ন দেখছে তারা...
 আজ তারা প্ল্যান করেছে জন্মদিন টা সেলিব্রেট করবে কলকাতা থেকে দূরে কোনো নির্জন নদীর পারে..কোনো হোটেলে ক্যান্ডেললাইট ডিনার দিয়ে..
তার প্রিয় চাঁপা ফুল রঙ এর শাড়িতে সেজে .. এলোখোঁপায় চাঁপার কলি লাগিয়ে শ্রীতমা নিউ আলিপুরে মোড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল দেবেশের জন্যে..
কিন্তু সে অপেক্ষার আর শেষ হবে না কোনো দিনও..
সেদিন  দেবেশের দেখা না পেয়ে উদভ্রান্ত চিত্তে  ঘরে ফিরে আসে শ্রী...
রাতের দিকে পুলিশের নাম্বার থেকে ওর ফোনে ফোন আসে যে সে দেবেশ নামে কাউকে চেনে কিনা...দেবেশ বসু নামে এক যুবক কয়েক ঘন্টা আগে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর মুখ থেকে  নামতে গিয়ে অ্যাকসিডেন্ট করেছে। সাথে একটি স্বর্ণচাপার তোড়া ছিল লাল রিবনে বাঁধা.. তাতে কর্ডে নাম লেখা ছিল" শ্রীতমা'কে ভালোবেসে"।
তাই শ্রীতমা কে জানানোর জন্য দেবেশের মোবাইল খুঁজে বের করে পুলিশ তাকে ফোন করছে..
এই খানেই সেই প্রেমের গল্পের পরিসমাপ্তি ঘটতেই পারতো। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে বুদ্ধি দিয়ে যার ব্যখ্যা চলে না...
আজ পাঁচ বছর ধরে শ্রীতমার জন্মদিনে সন্ধ্যে বেলায় লাল রিবনে বাঁধা স্বর্ণচাঁপার তোড়া কোথা থেকে যে  কে রেখে যায় তার খোঁজ কে দিতে পারে ???

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ