শারদ সংখ্যা ২০২০ || অনুগল্প (কল্পবিজ্ঞান) || প্রতিমা বসু




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


লুকিয়ে আছে
প্রতিমাবসু

একটা তিনতলা বাড়ী ছোটোবেলা থেকেই দেখে আসছি ইঁটগুঁড়ি রঙের সামনে দুটো সিংহ বসানো থাম।
লোহার দরজা আর রেলিং দিয়ে ঘেরা মস্ত বাগানটি। পুরোটাই জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। শীতকালে পাতা ঝরে গেলেই বাড়িটার দেখা পেতাম।
বাঁকুড়ার পাহাড়ী জায়গায় বাড়িটা সকলেই ভূতের বাড়ি বলেই জানতো।
একবারই মাত্র পিকনিক করতে গিয়ে চরম শিক্ষা পেয়ে আর কোনোদিন ওই বাড়ির ধারেকাছেও কেউ যাই নি।
চমৎকার পিকনিক হচ্ছিল ।ভেতরে একটা কুয়ো আছে, আছে পুকুর ও। আমরা চা  খেয়ে রান্না চাপাতে কূয়ো থেক বালতি করে জল তুলে নিয়ে আসছি । হঠাৎ দেখলাম বালতিটা কুয়ো পাড়ের ধপাস করে বিনা হাওয়ায় নীচে পড়ে গেলো।
চমকে তাকিয়ে দেখি ছোটোখাটো অদ্ভুত দুপেয়ে পোকা ওই বালতি থেকে গড়িয়ে পড়া জল খাচ্ছে যেন।
হাতে জলের জগ বাটি ঘটি ছিলো তাই দেখতে পারিনি।
যাইহোক মাংসের গন্ধে মম করছে ।
আমাদের পুকুরে নামা বারন ছিলো তাই আবারও কুয়োর জলে চান সেরে খেতে বসলাম।
রান্না যেন অমৃত হয়েছিল চেটেপুটে খেয়েদেয়ে,, বাড়তি খাবার একটা কলাপাতায় রেখে ছিলাম ।যে বাসন ধুয়ে দেবে ওকে দেবো।
আমরা গল্পে মশগুল ছিলাম।  হঠাৎ দেখি খাবার শুদ্ধু কলাপাতা পড়ন্ত বিকেলে ওই অদ্ভুত পোকারা ওই বড় বাড়ির দরজা দিয়ে নিয়ে চলেছে সারি দিয়ে।
আমাদের মধ্যে তরুন ছিলো খুব সাহসী। ও দৌড়ে ওই কলাপাতাটা নিতে যেতেই বাড়ির মধ্যে ঢোকা মাত্রই দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো।
আমরা তাড়াতাড়ি দৌড়ে যেয়ে দরজাটা খুলতে গেলাম।  পারলাম না কিছুতেই।
তখন গ্রামের লোকজন ডেকে জড়ো করে নিয়ে যেতে যেতে রাত হয়ে গেলো। দরজা কুড়ুল দিয়ে কাটতে যেতেই খুলে গেলো সেটা।কিন্তু কোথাও কেউ নেই ।তরুণ যেন উবে গেছে।

পরের দিন ওই বাগানের সামনে তরুনকে অক্ষত অবস্থায় খুঁজে পাই ।
ও তখনও বিড়বিড় করে বলছে, " কি অদ্ভুত কি অদ্ভুত, ছোট্ট হয়ে আছে ।"

যাইহোক ও একটু প্রকৃতিস্থ হলে যা বললতাতে অবাক হলাম। এটা ভৌতিক না ওই কল্পবিজ্ঞান বলবো জানিনা।একটা গবেষণাগার দেখেছে ভেতরে আছে। ওখানে নাকি পরিবারের কেউ গবেষণা করতে গিয়ে এক অদ্ভুত জিনিস আবিষ্কার করে ফেলে। যার শক্তিতে সবকিছুই খুব ছোটখাটো হয়ে যায়। ফলে একদিন বাড়ির সকলকে দেখাতে গিয়ে সকলকে ই ছোট্ট করে ফেলেছে।
আর কেউ মানুষের মতো থাকলেও বড়ো আকৃতির হতে পারেনি। ওরা তাই রাতে ছাড়া বের হতে পারে না।খুবই স্বল্প খায়। ওই যেগুলো পোকা বলে ভুল করছিলাম ওগুলোই নাকি ও বাড়ির মানুষজন। বাগানের ফল খেয়েই থাকে ওরা। আমাদের খাবারের গন্ধ পেয়ে ওরা লোভের চোটে চুপিসারে নিয়ে যায়।
এসবই লিখে জানিয়েছে তরুনকে।
এখনও গবেষণা চলছে নাকি কিন্তু ফল হচ্ছে না।ওকে গোপন রাখতে বলেছে এসব কথা।
আমরা শুনে অবশ্য কেউ ই বিশ্বাস করি নি।
বাড়ির লোক শুধু বললে ওখানে ভূত আছে আমরা জানি।
গাছ থেকে ফল পড়লেই অদৃশ্য হয়ে যায় এটা নাকি অনেকের নিজের চোখেই দেখা।
এখনও ভাবি সত্যি কি আছে ওই বাড়িটা?
সেদিন আমার এক দাদার সাথে দেখা হতে জিজ্ঞেস করতে বললে ওটা নাকি বাঁকুড়ার এক নাম করা গভর্নমেন্ট রিসোর্ট হয়েছে।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ