শারদ সংখ্যা ২০২০ || নিবন্ধ || অরিজিৎ রায়




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

তারার পানে চেয়ে চেয়ে খুশি থাক
অরিজিৎ রায়

মাথার ভিতর ঘুরপাক খেতে খেতে "খুশি" শব্দটা সজোরে আছড়ে পড়ল মাটিতে! ফিতে জড়ানো লাল লাট্টুটা তখন বন্ বন্ করে জানান দিচ্ছে এক নির্ভেজাল বিকেলের জলছবি। আরও কিছু লাট্টু ছড়িয়ে রয়েছে ইতস্ততঃ। আকাশ মাটিও- যেখানে জল রং হয়, সেখানে খাতার পাতায় ফুটে উঠছে আকাশে ছড়ানো রঙ বেরঙের ঘুড়ির সংসার । বসন্ত যে খুশিকে ছুঁতে পারে না তা অনায়াসে দখল নেয় কচি কাঁচার নির্ভেজাল কলরবে।  পানকৌড়ি ডানায় ভিজে গন্ধ মেখে দীঘির জলে খেলা করে একজোড়া ছেলেমানুষি। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত কাঁধে চড়ে যে বর্তমান বয়ে যায়, না ফেরার দেশে, কোনও রকম পিছুটান না রেখে চিতায় পুড়ে যায় অশীতিপর বিছানায় মিশে থাকা বিন্দুবালা - সেখানেও কোথাও "খুশি" লেখা হয় সংসারের আনাচে কানাচে। সারা রাত শবদাহ ঘেঁটে আর পুড়িয়ে পূব আকাশের কোণ যখন ধীরে ধীরে লালচে আভায় ভরে উঠতে থাকে, তখন ডোমেরা লাল রঙের দু-পাত্র খুলে বসে! দু এক পেগে ভেসে যায় "খুশি" শব্দের আন্তরিকতা। আত্মিক আকাশ দু হাত ভরে, ভরে দেয় রোদের উষ্ণতা । উষ্ণতা সঞ্চয় করে বয়ে যায় কচুরিপানার দল, ফুল ফোটা খুশিতে। আবহাওয়া যতই বহমান বাস্তব হোক, খুশির অনুরণন তুলে ডিঙি নৌকা ভেসে বেড়ায় নদীর বুকের উপর। হাত জাল আর ইলশে গুঁড়িকে সঙ্গী করে  সন্ধ্যায় ঘাটে ফিরে আসা ডিঙি গুলোর খোলের ভিতর তখন কিলবিল করে জীবনের আস্বাদ, কেনা বেচা সাঙ্গ হলে জীবনের উত্তাপ ফুটতে থাকে চাল হয়ে-- খুশিতে ভরা ঐ ডিঙি গুলোর খোলের ভিতর ।
অঙ্কন  উষসী রায়

বর্ষা এলে কাঠ পিঁপড়ের দল মাটি থেকে উঠে আসে গাছের কোটরে, ঢিবি হয়ে ঝুলতে থাকে বন জঙ্গলের গাছের থেকে। এক অদ্ভূত নিয়মানুবর্তিতায় কোটরে কোটরে সংগৃহীত খাবারে বড়ো করে তোলে সদ্যোজাত শিশু শ্রমিক পিঁপড়েদের। কাঠ পিঁপড়ের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে ছোট ছোট খুশির রোশনাই।
যে বাবা তার পুত্রীকে সু-সজ্জিত করে তুলে দেয় অন্য এক পুরুষের হাতে, বিদায় বেলা তার বুক ভেঙে কান্না আসে চোখের পরে, মনের ঘরে তখন জন্ম নেয় - এক তৃপ্ত আনন্দ, অহর্নিষ  খুশির জোয়ার।
জীবনের প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যখন পুত্র এসে হাত ছোঁয়ায় বাবা-মার পা'য়ের পর, এক গর্বিত খুশির বন্যা ছুঁয়ে যায় সংসারের প্রতিটি দায়বদ্ধ মননকে। খুশি শব্দটা অনুভবের, খুশি শব্দটা যাপনের। মৃত্যু মিছিলের মধ্যে দিয়ে যখন অসুখের বার্তা প্রকট হয়ে ওঠে, পৃথিবীর বুকে উন্মাষিক ক্ষত- আহ্বান করে ধ্বংসের, তখন একমাত্র পারস্পরিক সহমর্মিতা ও পাশে থাকার অঙ্গীকার মানুষকে মানুষ বলে চিনতে সাহায্য করে।
সাদা পাতায় "খুশি" আঁকতে আঁকতে তুলির নরম আঁচড়ে এক জীবন্ত শিশু মুখ যখন হাতড়ে ফেরে তার বাবার হাতের আদর, বাবারা তখন গাছ হয়ে জাপটে ধরে এ প্রজন্মকে, চুমু এঁকে দেয় আগামীর কপালে! খুশিতে নত এ শিশির সময় ধুয়ে দিয়ে যায় এ অসুখ বেলা, চারিদিকে ঝরে পড়ে খুশির শিউলি বেলা। অস্থির সময়ের বুকে লেখা হয় এক মধুময় খুশি যাপন ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

5 মন্তব্যসমূহ

  1. খুশির উত্তাপ ফোটে চাল হয়ে
    প্রাণীর জীবনের প্রত্যেকটা পর্যায়ের খুশি সে খুঁজে নেয় তার যাপনে

    মন ভালো করে দেওয়ার মত লেখা ৷ এই বিপর্যয়ের সময় আমরা যাতে ভেঙে না পড়ি ৷
    আশাবাদি লেখা উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ
    উপদেষ্টা অরিজিৎ দা-র কলম কে

    উত্তরমুছুন
  2. অনেক ভালোলাগা অলিপা । এই দুঃসময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের যে আশাবাদী হতেই হবে।

    উত্তরমুছুন
  3. খুব ভালো লাগলো দাদা। আশা নিয়েই আমরা বেঁচে আছি

    উত্তরমুছুন