দর্পণ || গল্প || রাগ দীপকের কাহিনী - সোমা মুখার্জী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

রাগ দীপকের কাহিনী

সোমা মুখার্জী 


আকবরের নবরত্ন সভায় তো রত্নের সম্ভার। সেই রত্নদের একজন অন্যতম নক্ষত্র হলেন জগত বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ তান সেন..যিনি নাকি গান গেয়ে ছবি আঁকতে পারেন, মেঘ মল্লার গেয়ে শুষ্ক দিনেও নামাতে পারের অঝোর ধারায় বৃষ্টি ।দীপক রাগের আলাপে জ্বালাতে পারেন লক্ষপ্রদীপ শিখা

আগুন জ্বলে ওঠে বন বনান্তে।

মহামতি আকবরের  একদিন ইচ্ছে হল লোকে যা বলে তা সত্যি কিনা পরখ করে দেখার ...

যেই কথা সেই কাজ .. তিনি তাঁর প্রিয় রত্ন বয়স্য তানসেন কে ডেকে পাঠালেন, বললেন আচ্ছা তুমি নাকি গান গেয়ে আগুন জ্বালাতে পার...তানসেনের মত রাজভক্ত রত্ন তো আর রাজ আজ্ঞা অমান্য করতে পারেন না। করজোড়ে বিনীত ভাবে  বললেন, হ্যাঁ মহারাজ আপনার আদেশ হলে অবশ্যই পারি।  সেই কথাই রইলো, নির্দিষ্ট দিনে বসবে সেই সঙ্গীত সভা..সকল লোকজন হল আমন্ত্রিত। সকলেই দেখতে চায় তানসেন  রাগ দীপক গেয়ে কি ভাবে আগুন জ্বালান।

এদিকে রাজ আজ্ঞা ফেলতে না পারলেও তানসেন মনে মনে ভীত হয়ে পড়লেন, কারন যিনি জানতেন

রাগ দীপক গেয়ে যদি আগুন জলে ওঠে সে আগুন সহজে নিভবে না। তা ছড়িয়ে পড়বে দিকে দিগন্তে এবং সেই আগুনে পড়ে তাঁর নিজের মৃত্যু হবে। তিনি রাজার কাছ থেকে কয়ক দিনের সময় চেয়ে নিলেন। ইত্যবসরে তিনি তাঁর মেয়েকে শেখাতে লাগলেন মেঘ মল্লার রাগিনী, যা গেয়ে নামানো যায় অঝোর ধারায় বৃষ্টি, যে বৃষ্টি নেভাতে পারে দীপক রাগের প্রজ্জ্বলিত সেই অগ্নিশিখা...

নির্দিষ্ট দিনে ফতেপুর সিক্রীর সেই রাজমহলে খোলা আকাশের তলায় বসল মহামতি আকবরের  সেই বিখ্যাত সঙ্গীত সভা। তানসেন সুমধুর কন্ঠে দীপক রাগের আলাপ বিস্তার চারিদিক উজ্জীবিত করে তুললো, সামনে রাখা শত শত প্রদীপ  জ্বলে উঠলো এক এক করে..সে আগুন ক্রমে স্পর্শ করল চার দিকে রাখা দ্রব্য সম্ভার ক্রমে এগিয়ে চললো তানসেনের দিকে..রাগ তখন  শেষের পর্বে, গায়ক নিমগ্নচিত্ত।  

সভা আতঙ্কে স্থির। এমনটা যে ঘটতে পারে ভাবেনি তো কেউ...

দীপক শেষ হতেই তানসেন কন্যার ব্যাকুল সুললিত কন্ঠে বেজে উঠলো মেঘমল্লার, সেই সুরের আর্তি যেন আকাশ ছুঁলো..অসময়ে শুরু হল অঝোর ধারায় বর্ষণ...আলাপ বিস্তার দ্রুতলয়ে ধীরে ধীরে বাড়িয়ে তুললো ধারাজলের প্রাবল্য ।  প্রজ্জ্বলিত অগ্নি হল নির্বাপিত।..ইতিহাস বিখ্যাত এই মহান গায়কের নাম রেখা রইলো স্বর্ণাক্ষরে  যিনি রাজ আজ্ঞা পালন করতে নিজের জীবন বাজি রেখে ছিলেন। 

মহামতি আকবর বোঝেন নি তাঁর একটা কৌতুহলের বশে প্রিয় রত্ন কে হারাতে বসে ছিলেন।

সিংহাসন থেকে উঠে এসে দুই হাতে বুকে টেনে নিলেন তাকে।

 এই হল সত্যি কারের সাধনা যা অসম্ভব কে সম্ভব করে তোলে...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4 মন্তব্যসমূহ