দর্পণ || সাপ্তাহিক ফেসবুক সেরা || ডিসেম্বর ২০২০




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

শেকড়ের টান

স্মরণ মজুমদার 


সেই সব নতুন নতুন পাতার দিন আমাদের ও ছিল !  

কল্পনায় আমাদের সেই সব বসন্তের

রাতে আর দিনে - 

কত চিত্রকল্প ! সবুজ সবুজ ছিল তারা সব - 

ক্লোরোফিলে ভরা ! হৃদয় শেকড়  নিয়েছিল হৃদয়কে চিনে । 


তারপর পৃথিবীর বয়স বেড়েছে যত অনাদরে - উষ্ণতায়, 

লবনাক্ত জলে, তলিয়ে গিয়েছে এই পৃথিবীর ম্যানগ্রোভ হৃদয় ।    

ক্ষুধার্ত পশুদের খিদে পেলে তাঁরা এসে অন্ধকারে

ওৎ পেতে ছিল । তারপর থেকে চন্দ্রলেখার রক্তে স্নাত সব লোকালয় । 


তারপর ও বহুকাল জড়াজড়ি করে থাকা শেকড় মরেনি - 

আমাদের হৃদয়ের মত ! অন্ধকার রাতে তাঁরা স্বপ্ন বোনে  

আকাশে, মাটিতে । শেকড়ে নূপুর ধ্বনি ঠিক শোনা যায় । 

চন্দ্রলেখা ফিরে এসে চুপিচুপি প্রেমিকের দীর্ঘশ্বাসে তার প্রতিধ্বনি শোনে ।  


কল্পনার চন্দ্রলেখা, কুয়াশায় ভেজা তাঁর আসক্ত চুল আর 

শাড়ির আঁচল । লবণাক্ত অশ্রুতে, ভেজায় সে প্রেমিকের বুক নির্দ্বিধায়। 

ম্যানগ্রোভ ভরে ওঠে সবুজে সবুজে । আশ্বাসে বুক খুলে প্রেমিক দাঁড়ায়। 

চন্দ্রলেখা, এক হাত ব্যবধান  রেখে আজো রাতে রাতে শেকড়ে জড়ায়।

====

মেঘমল্লার

 চন্দ্রনাথ অধিকারী


মেঘেদের সঙ্গম শেষে

অফুরান বারিধারা পৃথিবীর বুকে

শব্দেরা উন্মুখ অঙ্কুরোদগমে


আলাপিত বাতাসে-

ফুলের স্তনে ;

আশ্লেষে চুম্বন প্রজাপতির! 

লাভ ওঠায় - পরাগমিলন। 


একটা নামহীন ঝড়ের খুব দরকার

কতদিন কথা হয়নি, পাশাপাশি

দুই মহীরুহুর! 


সময় শুধু থমকে দাঁড়ায়--

বাকী সব ভঙ্গুর! 


উড়ন্ত ঘুমে কচুরস পান - হলদে ফড়িং 

ঘাসের আগায় তবু নিশ্চুপ স্ফটিক হীম  ! 


জলজ প্রেমে অস্থির তবু স্তন্যপায়ী -

চুম্বন দেয় না বুঝেই তাই -  শালুকতায়! 

                                       বড় পাপ হে!! 


শব্দেরা সব লাইনে দাঁড়ানো বিপ্লবী--

বালুচরে খোঁজে ' বালু শিল্প ' এ তোমার ছবি।।

===

বিবর্ণ পাতা

পলাশ মন্ডল 


যে দিন সবুজ ছিল সেদিন বর্ষা কিম্বা শরৎ;

সোনালী রোদের ডানা নেমে আসে 

ক্ষয়ে যায় পৃথিবীর প্রান্তরে উত্তাপ

নীলাকাশের পাহাড়ি মেঘ ছুঁয়ে

ঝরে পড়ে থোকাথোকা কুয়াশা 

শীতের সকাল জাগে বিষণ্ণ ভোরে।


হেমন্ত হেঁটে যায় ইঁদুরের মতো, 

অজস্র পত্র-পল্লব, অজস্র বাকল

অজস্র অজস্র মোচন

সহস্র বিবর্ণ পাতা

ঝরা পালকের মতো 

পড়ে থাকে। 


কেউ তো স্থায়ী নয়, কোন কিছু স্থায়ী নয় 

এক নিঃশ্বাসে এই সত্যকে মেনে নিতে হয়,


কোন আকাঙ্খা নয়

কোন উচ্চাশা নয়

বিবর্ণ পাতার স্তুপে বিষণ্ণ বাতাস খেলা করে


নিভে আসা সূর্যের হেলে পড়া কিরণ অখণ্ড শীত নিয়ে আসে

কেউ তো স্থায়ী নয়, কোন কিছুই স্থায়ী নয়

দিনান্তের শীতলতায় এই বোধ কাজ করে

তার নিয়মেই সুখী 

অরিজিৎ দাস


যখন কারন ছাড়াই লাগছে ভালো ভাঙতে রীতি

ভাঙছি যখন লোক দেখানো নিয়ম নীতি, 

তখন বুঝি এইতো আমি,

এই আমিটাই আমার কাছে ভীষণ দামী, 

আত্মা যদি সায় দিলো আর কিসের ভীতি ? 


যখন মখমলি এই দূর্বা সবুজ মাখছি গায়ে 

হিমেল ভোরে শিশির কণা চুমছে পায়ে, 

তখন আমি দারন সুখী, 

মুচকি হেসে দুহাত দিয়ে দুঃখ রুখি,

ইচ্ছে জাগে বাঁধতে বাসা তরুর ছায়ে। 


যখন আমার নিয়ম তোমার নিয়ম লাগছে ফিকে

তার নিয়মেই পড়ছি বাঁধা চতুর্দিকে,

করছি গ্রহন শির ঝুঁকিয়ে,

নিয়মনীতি সমাজভীতি থাক লুকিয়ে, 

করবো কি আর মিথ্যা নিয়ম বৃথাই শিখে ।

===

ক্ষুদে মশা

মীরা দত্ত


ছিল এক খ্যাত নামা

হীরা সিং পালোয়ান, 

শীতকালে খোলা বুক

গায় নেই আলোয়ান।

          পাঁচ সের দুধ, সাথে

          লুচি খেত একরাশ, 

          ছানা খেয়ে তিন সের

           সেরে নিত প্রাতরাশ। 

দুপুরেতে বাঁধা ছিল

কচি পাঁঠা একখানা, 

 ডিম অগণিত

যত দাও নেই মানা। 

              খেয়ে দেয়ে কলেবর

              বানিয়েছে দশা স ই, 

              পালোয়ান হীরা সিং

               আখরায় জুরি ক ই? 

এতসব দেখে দেখে

হাসছিল পাজি মশা, 

এরপর ঘটেছিল

নিদারুণ দুর্দশা। 

                ম্যালেরিয়া হল তার

                লেপ চাপা রাত দিন, 

                তিন মাস ভুগে ভুগে

                হীরা সিং হলো ক্ষীণ। 

নাম খ্যাতি ঘুচে গেল

কুপোকাত পালোয়ান, 

মেনে নিতে বাধা নেই

ক্ষুদে মশা বলীয়ান।।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ