চলতি পথের ডায়েরি || সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 চলতি পথের ডায়েরি

সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী

বুড়িমার স্মৃতি


ফিরছিলাম ট্রেনে। রিজারভেশন টিকিট। ট্রেন হাওড়া ছেড়ে থামবে খড়্গপুর। মুখোমুখি অন‍্য সিটে এক বয়স্কা মহিলা। বয়স ষাট থেকে পঁয়ষট্টির মধ্যে। আলাপ করাই যায়। ভদ্রমহিলা নিজেই আলাপ করলেন। আলাপ বলতে কোথায় নামবো-কোথা থেকে ফিরছে-এই আর কি! উত্তর দিয়ে আমি ও জানতে চাইলাম কোথায় যাবেন! উত্তরে বললেন যাবো তো অনেক দূর। ট্রেন ফাঁকা হয়ে যাবে। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার বাড়িতে কে আছেন -ছেলেরা কোথায় থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ও একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম। ---উত্তরে উনি যা বললেন তা একটি মাঝারি উপন্যাস হয়ে যাবে।

         বুড়িমার একটা বাড়ি আছে। বর্তমানে বুড়িমা তার বাড়ির নাম রেখেছে -"পাগলভিলা"। বাড়িটির আগের নামটি খুব সুন্দর- "বনভিলা-ফুলভিলা"। কারণ হিসেবে শোনালেন নিজের স্মৃতিচারণ। আমি উনাকে ইতিমধ্যে বুড়িমা বলেই সম্বোধন করে ফেলেছি। খুব খুশী হয়ে আমার থুতনিতে ডানহাতের চারটে আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে আদর করলেন।

*আমি উনার মুখের বলা কথাগুলোই লিখছি। *ট্রেন ছুটছে হু হু করে--বুড়িমা ধীরে ধীরে বলে যাচ্ছে তাঁর মনে লুকিয়ে থাকা পাগলদের গল্প। বুড়িমার বাড়িটা যে মাটির উপর তৈরী সেটা ছিল পতিত -লাল কাঁকুরে মাটি, করলা চাষ হোত। আশেপাশে লোকজন বিশেষ কেউ ছিল না। এক-দু'ঘর অতি গরীব মানুষের বাড়ি --জানালা দরজাহীন -উইধরা খড়ের চালা। --সেই  উনিশ' আশি-নব্বইয়ের কথা। চৈত্র-বৈশাখের রাঙামাটির উপর বসানো টিউবকলের জল নেমে যেত গভীর পাতালে‌। ভরা বর্ষায় পায়ে কাদা লাগতো না। বর্ষার জল গড়িয়ে মেটাতো পাতাল পিপাসা। সূর্য ডোবার সাথে সাথেই ঘুটঘুটে অন্ধকার -মনে হোত মধ‍্যরাত্রি হয়ে গেছে। গরীব পুরুষ মানুষগুলো বাড়ির তৈরী হাঁড়িয়া খেতো আর বৌকে চড় মারতো -পিঠে পেটাতো আর অকথ্য গালাগালি দিত। বৌগুলোর কানে তালা লেগে কিছুই শুনতে পেতো না। --বুড়িমার বনভিলা -ফুলভিলাটার আকার ছিল খুবই ছোট্ট। এককুঠরী, পলেস্তারাহীন, পরিত্যক্ত সরষের তেলের শূন্য টিন কেটে বাথরুমের দরজাওয়ালা ছোট্ট একটি বাড়ি। সাধের বাড়ি-নিজের বাড়ি-নামটা তখন বনভিলা-ফুলভিলা ছিল না। সামনে বিশাল এবড়ো খেবড়ো উঠোন। উঠোনের মাঝে তুলসীমঞ্চ। তুলসীমঞ্চের পেছনে দু'দিকে দুটো দেবদারু গাছ। গাছদুটো ক্রমশঃ বড় হচ্ছে একই উচ্চতায়। আগায় টিয়াপাখির ডানা রঙের পাতা-কচি সবুজ-চকচকে। রোদ পড়লে ঝলমল করতো। দিনের প্রথম সূর্যের আলো ঐ গাছের আগায় পড়লে বুড়িমার মনে হোত -- "কাঞ্চনজঙ্ঘার"  উপর আলো পড়ছে। আসলে বুড়িমা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেনি। দেখার কোন আগ্রহ ও হয়নি। ঐ গাছের আগায় আলো দেখেই মনে মনে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেতো।--মন খুব খুব খুশিতে ভরে উঠতো। চকচকে সোনালী রঙের নরম পাতা ফাল্গুনের মৃদু হাওয়ায় দোল খেতো আর বুড়িমা মনে মনে গান গাইতো--সোনা ঝরছে-ঝরে পড়ছে--কি মিষ্টি এ সকাল। 

----এমনি মনের ছন্দে দুটি মানুষের ঘরে এলো একটি ফরসা ফুটফুটে ছেলে। একবছর বয়স হয়ে গেল- মা কে মা বলে ডাকে না --মুখে কোন কথা বলে না। একদিন হঠাৎ সবকথা একসাথে আউড়ে দিল কত কত কথা--হাত, পা, মাথা, গাছ, পাতা। কিন্তু মাকে মা বলে না--বলে "বিগা"। আড়াই বছর বয়সে প্রথম শ্রেণীর সব বই মুখস্থ। মুখে মুখে অঙ্ক করে। খাতায় যোগ-বিয়োগ করতে পারে না। ঝাঁটার কাঠি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো দিয়ে যোগ-বিয়োগ করে। মুখ থেকে আধো আধো কথা বেরোয়--হারমোনিয়ামের প্রথম পাঠ শেষ--খেয়ালের তাল কাটে না। ক্রমশঃ প্রকাশ পেতে লাগলো বাচ্চাটা পাগল--পড়া পাগল -অঙ্ক পাগল-শেখা পাগল-। বাড়ির বাইরে একা একা বেরোয় না --মায়ের পাশে পাশে ঘুরঘুর করে‌। মায়ের রান্নার পাশে পাশে বই নিয়ে ঘোরাঘুরি করে-বসে পড়াশোনা করে -মায়ের মশলার কৌটৌ এগিয়ে দেয়-অত‍্যন্ত বাধ‍্য। রোগা পটকা চেহারা- -প্রাইমারি পাঠ মায়ের কোলেই শেষ। মায়ের চারপাশটাই ওর স্কুল--মা পড়া দিয়ে দেয় -প্রাইমারি স্কুলে যায়। -স্কুলে বাউরি-হরিজন-দুলে-

আদিবাসী বাচ্চাদের সাথেই একসাথে চটে বসতো --মায়ের দেওয়া পড়া মুখস্থ করে আসতো।  সব পড়া ঝরঝরে মুখস্থ করে আনতো। সন্ধ্যায় মা কে পড়া ধরে নেওয়ার জন্য বায়না নিত। সাতবছর বয়সে চতুর্থ শ্রেণীর সমস্ত বই শেষ।

----এরপর বাড়িতে বন্দি --বয়স হয়নি বড় স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার। বাচ্চাটির মনে কোন কষ্ট নেই। কেবল বায়না--অঙ্কবই কিনে দাও। বাড়িতে কেবল অঙ্ক করবো। বাবা যখন স্কুলে যেতো বাবার পেছন পেছন গেট অব্দি ছুটতো--বাবা আমায় অঙ্ক দিয়ে যাও- অঙ্ক করে রাখবো। বাবার সাথে বিকেলে বল খেলতে যেতো পাড়ার কাস্ট -ট্রাইবাল বাচ্চাদের সাথে।

---ইতিমধ্যে একটি ছোট্ট ভাই এসেছে। ভাইকে অসম্ভব ভালোবাসে। ভাইএর কান্না একটু ও সহ‍্য করতে পারতো না। কাঁদলেই মা কে বলতো ভাইকে খাওয়ায়। ভাইটা খুব ছটফটে-বয়স আটমাস -গ্রীলের পাত ধরে ধরে উপরে উঠে যেতো। দাদার পড়ার সময় দাদাকে খুব বিরক্ত করতো--দাদার বইটাই চাই। পেন দিয়ে হাবিজাবি লিখবে। দাদা পড়ার সময় ভাইয়ের উৎপাত একদম বরদাস্ত করতো না। মা কে বলতো ভাইকে গল্প শোনাও।---

ক্রমশঃ প্রকাশ পেতে লাগলো ভাইটা ও পাগল --গাড়ি পাগল। বাসের শব্দ -ট্রাকের শব্দ-মোটর সাইকেলের শব্দ অনুকরণ করে মুখে শব্দ করতো।

     যে কোন মেলায় একটিই বায়না নিত-একটি গাড়ি কিনে দেওয়ার জন্য। দু'দিনেই ভেঙে ফেলতো- দেখতো ভেতরে কি আছে। বাবা-মায়ের  আর্থিক  অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না যে অনেক কিছু কিনে দেবে। অবশেষে দড়ির খাটিয়ার উপর ভাঙা ঝুড়ি দুইহাতে ধরে স্টিয়ারিং করতো আর মুখে ভু ভু শব্দ করতো।

---শুধু তাই নয়--

বই পড়তে ভালোবাসতো দাদার মতোই। কেবল দাদার বই পড়বো--নিজের বই পড়বো না। শ্লেটে লিখবো না--দেওয়ালের গায়ের--মেঝের উপর অ-আ-ই-ঈ -নামতা-লিখেই হাতেখড়ি হয়ে গেল।

---দুটো ছোট্ট পাগল নিয়ে কেটে যাচ্ছিল নিজেদের- -স্বামী, স্ত্রীর।

ছোট্ট বাড়িটা ছিল স্বর্গ -বাড়ির ভেতরে জায়গা সঙ্কুলান-গরমে খাটের তলায় মাদুর পেতে বাচ্চাদুটোকে গল্প-কবিতা বলতে বলতে ঘুম পাড়াতো --রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প, কবিতা। ছুটির দিনে একচিলতে বারান্দায় ছোট্ট তক্তপোষে বসে বাচ্চাদুটো গান করতো আর মা দেবদারু গাছের আগাগুলোর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। মনে মনে মেপে দেখতো-কোনটা কতটা ছোট-কতটা বড়। শুধুই কল্পনা করতো--দুটো বাচ্চাই যেন শিক্ষায় সমান হয়। আসলে মায়ের মনে ও পাগলামি কাজ করতো।

  বাচ্চাদুটোর বইপড়ার আগ্রহ আর মায়ের শেখানোর আগ্রহ সমান তালে চলতে লাগলো।

-----ঐ বাড়িটার নাম তখনো বনভিলা-ফুলভিলা হয়নি। বাচ্চাদুটির তদারকির সাথে সাথে বাগান তৈরির আগ্রহ হোল বাবা-মায়ের। কেনা আরম্ভ হোল বিভিন্ন ফুলের চারা। বিশেষ করে বিভিন্ন গোলাপ চারা। সংখ‍্যায় বাড়তে বাড়তে প্রায় চল্লিশ রকমের গোলাপ---কেউ বা একফুট বেড়ের তাজমহল গোলাপ, কেউ বা রক্তরাঙা লালবাহাদুর। কি তাদের রূপ--শীতের ভোরে শিশিরবিন্দুতে স্নাত পাঁপড়িগুলো ঠিক যেন খিলখিল করে হাসছে। ----

বাগান পাগল হোল বাবা। বিভিন্ন রকমের ফুলের চারা আসতে লাগলো। মাথার উপর বাড়ি তৈরির ঋণের বোঝা। বুড়িমার শাঁখাবাঁধানোর সোনা, নোয়ার সোনা সব ব‍্যাঙ্কে জমা দেওয়া আছে। স্কুলে যাওয়ার জন্য বুড়িমার তিনটি বই চারটি শাড়ি নেই। বাচ্চাদুটির কোন জামাপ‍্যান্ট কিনতে হোত না। মামা, মাসী, মামাদিদা যা দিত ওতেই সারাবছর চলে যেতো। এতো অসুবিধা সত্ত্বেও কেনা হোত বাচ্চাদের জন‍্য নতুন নতুন ছড়ার বই, ইংরেজি 

বই আর অংকের বই। তারসাথে ফুলের চারা, ফলের চারা।  অর্থাৎ চার পাগলের সংসার ---বাগানপাগল বাবা-মা, বাচ্চাপাগল মা, অঙ্কপাগল বড়ছেলে, যন্ত্রপাগল ছোটছেলে।

বুড়িমা একটু থেমে বললো--জান তো মা - ওদের পাগলী মা জটিল কিছু ভাবতে পারতো না। বাচ্চাদুটো খেলতে খুব ভালোবাসতো। তবে বুড়িমা সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে থাকা পছন্দ করতো না। একদিন দেরী করে ফিরেছিল -বুড়িমা মেরেছিল। সারারাত বুড়িমা কেঁদেছে-ঘুমোতে পারেনি। বাচ্চাদুটো  আর কখনো খেলতে যাওয়ার বায়না নেয়নি। বুড়িমা খুব কষ্টে ওদের মানুষ করেছে। শিক্ষিত হয়ে অজগাঁয়ে না থেকে বাইরে পড়াশোনা করুক-এটাই চেয়েছে। তাই একটু শাসনের মাঝে রেখে গড়ে তুলতে চেয়েছে। বাচ্চাদুটি, স্কুল, আত্মীয় স্বজন নিয়ে বেশ খুশিতে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো বুড়িমার। -----গাছপালা বাড়তে বাড়তে বাগানটা জঙ্গল হয়ে গেল। মেহগনি, সেগুন, গামার, আম, জাম, কাঁঠাল, আতা, পেয়েরা, লিচু, নারকেল, গোলাপজাম, সবেদা ইত‍্যাদি গাছে দিনের বেলায় আঁধার নেমে আসতো বাড়িটার চারদিকে। পরে পরে জঙ্গলের যত আগাছা ছিল বুড়িমা এনে বাগানে লাগিয়ে দিলে। অবশ‍্য সাহায্য করতো বাচ্চাগুলোর বাবা। কতরকমের পাখি ঝগড়া করতো--বাসা বাঁধতো-ডিম পাড়তো-বাচ্চা বড় করে তুলতো। দুটি বাঁদর মাঝে মাঝে এসে বারান্দায় বসে থাকতো। বেড়াল আসতো। ছোটপাগলটা মায়ের চোখের আড়ালে নিজের দুধমুড়ি বেড়ালকে খেতে দিত আর মাকে মিথ্যা বলতো সব খেয়ে নিয়েছে বলে। বেড়ালটার জন্য আলাদা বাটি থাকতো --খাওয়ার দেওয়ার জন্য। মাংসভাত আগে বেড়ালকে দিয়ে নিজে খেতো। -তারপর থেকেই খুব আদর করেই বুড়িমা বাড়িটার নাম দিলে "বনভিলা-ফুলভিলা"।

 -----ছেলেরা বড় হয়ে গেছে। অঙ্কপাগল অঙ্ক ছাড়া কিছুই জানে না। যন্ত্রপাগলটা কম্পিউটারের খুঁটিনাটি নখের আগায় আটকে নিল। বাড়ি ছেড়ে--যেতে হোল বহুদূর --পাড়ি দিল বহুদূরে। অঙ্কপাগল কেবল অঙ্ক করা ও অঙ্ক শেখানো আর যন্ত্রপাগল যন্ত্রের খুঁটিনাটি সবাইকে বোঝাবে---এই আশায়। ---কখনো সখনো দুইপাগল বাবা মায়ের সাথে মিলিত হয়। উপায় নেই যে যখন তখন বাড়ি ফেরার --পড়ানোর চাপ--। বাগান পাগল বাবা মা আর বাচ্চাপাগল মা হাসিমুখে সব মেনে নেয়। কিন্তু মনে মনে আশা করে কবে পাগলদুটো আসবে--একটু ভালোমন্দ খাওয়াবে--বাবা কিনে আনবে জ‍্যান্ত বড় পোনামাছ-রুই, কাতলা। আর আনবে গলদা চিংড়ি। বাইরে তো ভালো করে ঐগুলো খেতেই পায় না। মুখের সামনে ধরে দেওয়া হবে--জ‍্যান্ত মাছের ভাজা, লুচি-আলুরদম, একটু পিঠে, টাটকা খেজুরগুড়, পায়েস, গাছের নারকেল, আম, কাঁঠাল, লিচু, সবেদা, কলা ইত্যাদি।

----বছরে একবার আসতোই --সে কি খুশী-বাবা-মায়ের মনে। চারদিক গোছগাছ-বিছানা পত্র ঠিকঠাক করা --থালাবাসন হাতের কাছে রাখা ইত্যাদি ইত্যাদি। পাগলদুটো এলে যেন প্রচুর গল্প করতে পায়। --পাঁচছয় বছর পরপর দুইপাগলের সাক্ষাৎ হোত। হলে কি হবে!!খুনসুটি লেগেই থাকতো--মায়ের অগোচরে কাগজের গোলা করে দোতলার বারান্দায় ক্রিকেট খেলতো। মারামারি করতো---চুপিচুপি। যাতে মা না জানতে পারে। বড়টা মাঝে মাঝে ভাইকে মারতে যেতো-- যন্ত্রপাগলটা দাদা মারতে এলেই চেঁচাতো --মা---দেখ---দাদা--মারতে আসছে। তারপর সব চুপ। পাগলদুটো বাবা মাকে কলকাতার নিউমার্কেট বা বিগবাজারে নিয়ে যেতো আর কত কি দামি দামি জিনিস কিনে দিতো --জুতো, মোজা, সোয়েটার, টুপি, ব‍্যাগ ইত্যাদি। -----হঠাৎ বুড়িমার গলাটা ধরে এলো। চোখের নিচে চকচক করছে জলবিন্দু- আঙ্গুল দিয়ে মুছলো। বুঝলাম উনার কান্না পাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম বুড়িমা জল খাবে? বললো না রে মা। হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন হ‍্যাঁরে মা আকাশে সব উড়ানগুলো কবে চলবে বলতে পারিস্?? আমি বললাম খুব শীঘ্রই চলবে। জিজ্ঞেস করলাম কেন?? তুমি কোথাও যাবে নাকি বুড়িমা!!!বিষন্ন হাসি হেসে বললো-না রে মা। আমার পাগলদুটো আসতে পারতো। একটা দেড়বছর আর একটা একবছর আমাদের দেখেনি। ওদের ও তো কষ্ট হচ্ছে বল্ মা। আমি সান্ত্বনা দিয়ে বললাম --বুড়িমা মন খারাপ করো না -ওরা ও কষ্ট পাবে।-

---আসবে তো ওরা--কিন্তু ২০২০ কেড়ে নিয়েছে সব আশা-- ফ্লাইট বন্ধ-কবে আসবে ওরা!!! ---আমার বনভিলা-ফুলভিলাটা পাগলভিলায় ভরে যাবে-- আবার হট্টগোলে ভরে উঠবে --চারজনের পাগলামিতে ভরে উঠবে বনভিলা-ফুলভিলার সতেজ প্রাণ!!!!

হঠাৎ ট্রেনটা থেমে গেছে। কোথায় এলো??খড়্গপুর--আমি এবার নামবো। কোথা দিয়ে দু'ঘন্টা কেটে গেছে। ---বললাম-আমার স্টেশন এসে গেছে। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন তোমাকে খুব বিরক্ত করলাম বলো!!!--আমি বললাম না না---আমি তো একটা জীবন্ত গল্প শুনছিলাম। বুড়িমা তুমি খুব ভালো থেকো। তোমার পাগলদুটো ও খুব ভালো আছে। বললাম---ওরা ঠিক আসতে পারবে। মায়ের টানেই আসবে ওরা। ঠিক আসবে ওরা ওদের মায়ের হাতের রান্না খেতে--ওদের বাবা মাকে পোষাক কিনে দিতে--ওদের মাটির টানে --ওদের শৈশবের টানে-- বনভিলা-ফুলভিলার টানে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ