বুড়িমার পাগলভিলা || সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

বুড়িমার পাগলভিলা

সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী


 আগের রবিবার বুড়িমার সাথে দেখা হয়েছিল এই একই ট্রেনে। আজও দেখা হোল। বুড়িমা যে স্টেশন থেকে ওঠেন আমি তার চারটি স্টেশন পরে উঠি। ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে দুটি কামরা পরের কামরায় উঠি। করোণা সমস্যা এড়ানোর জন‍্য সাবধানতা সহজে বেরোনো যাবে -বেরোণোর সময় ভিড় হবে না। বুড়িমা আমায় দেখে একগাল হাসি হেসে আমার থুতনিতে আদর করলেন। ---ট্রেন হু হু ছুটছে। বুড়িমা আমায় চকলেট খেতে দিলে। ফাইব স্টার-বেশ বড়, মনে হয় কুড়ি টাকা দাম হবে। --আমি চকলেট হাতে নিয়ে বললাম-বুড়িমা আজ আমায় গল্প বলবে না? বুড়িমা উত্তর দিলে --শুনবে!! আসলে এর পর তো কেবল দূরের আকাশ। আমি তো দেখতে পাই না। কেবল অনুমান করতে পারি। 

---"""পাগলদুটো তো আকাশ পথে চলে গেল। দেশগুলো  নাকি খুব ভালো। পরিস্কার --অনেক নিয়ম--ভালো ভালো খাওয়ার--ভালো ভালো যন্ত্র--সবাই নিজের গাড়িতে চেপে ঘুরে বেড়ায়। আমি তো আনন্দে ভেবে যাই --বাঃ আমার পাগলদুটো তাহলে খুব ভালো আছে। অঙ্কপাগলটা ভারতে খুব দৌড়াদৌড়ি করেছে--উত্তর থেকে দক্ষিণ--এক এক রাজ‍্যে। আর পছন্দ হোল না। অঙ্কগুলো নাকি আরো বড় হয়। সেটা আমাদের ভারতের ব্ল‍্যাকবোর্ডে জায়গা কুলোয় না। তাই যে দেশে আরো বড় ব্ল‍্যাকবোর্ড আছে সেই দেশে অঙ্ক করবে। করুক--ভালো মাথা --বড় বড় অঙ্ক তো করাই যায়। ----কিন্তু বাবা -মায়ের কাছে ফিরতে তো চায়। ---হিমালয়ের বরফ, কাশ্মীরের ফুল, পন্ডিচেরীর সমুদ্র, গোয়ার উত্তাল জনজীবন, কঙ্খলে সতীর দেহ কাঁধে শিব, হৃষিকেশের নীলকন্ঠ মহাদেব, অরুনাচলের সবুজঘেরা খাড়া পাহাড়, আসাম-গৌহাটির নীলাচল পাহাড়ের সবুজ বেয়ে কামাখ্যা চত্বর ওকে হাতছানি দেয়। কিন্তু কই আসতে পারে!!!

---যেখানে বড় বড় অঙ্ক করতে গিয়েছে সেখানে সব বড় বড় সমুদ্র--বড় বড় জাহাজ চলে। সমুদ্রের বুকে বিশাল লোহার সেতু। রাতে সেতু বন্ধ হয়ে যায়। আবার সকালে উঠে যায়। বাঃ বাঃ কেমন দেশ কে জানে!!! আমার তো খুব ভয় করে""।

    বুড়িমা একটু দম নিল। মনে হোল জোরে একটা শ্বাস ও ছাড়লো। আমি জিজ্ঞেস করলাম ও বুড়িমা তুমি কিছু খাবে? বললো --না রে মা। খাওয়ার সাথে আছে। পরে খাবো। আমি দু'প‍্যাকেট বালিতে ভাজা বাদাম কিনলাম। একটি বুড়িমা দিয়ে বললাম --খাও না বুড়িমা। দু'জনে একসাথে খাই। বুড়িমা প‍্যাকেট নখ দিয়ে ছিঁড়ে একটি একটি খেতে লাগলো। আস্তে আস্তে চিবোতে চিবোতেই আরম্ভ করলো----

""এবার শোন্ যন্ত্রপাগলটার যন্ত্র-কেরামতি। কি পাগল কি পাগল---ছুরি-কাঁচি থেকে কম্পিউটার, কম্পিউটার থেকে ফ্রিজ -কাচার যন্ত্র, বড় বড় কারেন্টের উনুন থেকে বাসন ধোওয়া যন্ত্র, আর চারচাকার যতরকম গাড়ি আছে সব খুলে জুড়ে দিতে পারবে। বাঃ বাঃ আমি তো খুব ভয় পাই যদি না জুড়তে পারে!! সব তো খারাপ হয়ে যাবে। না--সব ঠিক হয়ে যায় তো!!! কিভাবে যে করে--আমি তো ভেবে কুল পাই না। আর গাড়ি চালায় --বাবারে সে কি জোরে ছুটে গাড়িগুলো। বলে কি --ঘন্টায় ১২০ মাইল চলে যাবে। তবে কিন্তু বেশ সহবত জানে। কেউ যদি আগে যেতে চায়--নিজের গাড়ির গতি কমিয়ে ছেড়ে দেবে। একবার নাকি ওর গাড়িতে কে ধাক্কা দিয়েছিল। কিন্তু তাকে নিজেই সান্ত্বনা দিয়েছে। আর কি না জানে!! টিভি দেখে কত কি রান্না করে। সারাদিন কত কাজ করতে হয়। তারসাথে পড়ানো -কম্পিউটার শেখানো। বেশ কষ্ট করতে হয়। তা ও খুব খুশি থাকে। সহজে রাগ করে না-বিরক্ত হয় না।

আসতে পারেনি অনেক দিন। কি করছে কি জানি!!!আমি বেশি ভাবতে পারিনা। ফোনে কত কথা বলে। মনে হয় এই তো আমার কাছে আছে। 

---না রে বাড়িটা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। আমরা দুই বাগানপাগল বুড়োবুড়ি বাগানে ও খুব বেশি পাগলামি করতে পারি না। বয়স হচ্ছে তো। গাছগুলো যখন অসহায় হয়ে জল চায় তখন যত কষ্ট হোক না কেন জল দিতেই হয়, গোড়া থেকে আগাছা তুলে দিতে হয়। নতুবা খাদ্য ভাগাভাগি হয়ে যাবে।

----হ‍্যাঁরে মা কোথায় এলো বলতো!!!!""

 আমি বললাম---এবার তো নামতে হবে বুড়িমা। জিজ্ঞেস করলাম আবার কবে দেখা হবে?? ফোন নাম্বার নিলে--বললো তোকে তিনদিন আগে জানিয়ে দেবো। খুব ভালো থাকিস।

ট্রেন হাওড়া স্টেশন ঢুকছে। ব‍্যাগপত্র নামিয়ে নিলাম। বুড়িমার লাগেজ একটি হাতব‍্যাগ। বললাম--আরো শুনবো তোমার পাগলভিলার কাহিনী। ট্রেন থেকে নেমে যে যার পথে এগোলাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ