দর্পণ ॥ সুমিত ও গ্রাম ॥ মঙ্গল মিদ্যা(রিপল)




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 

                       সুমিত ও গ্রাম

                             ( ভূত ও পর্ব )    

                        মঙ্গল মিদ্যা (রিপল)


একদিন সন্ধ্যায় সুমিত ডাক্তারী চেম্বার থেকে ফিরেছে, বড়ো বউদি বলল "ঠাকুরপো কাল একটু আমার সাথে যেতে হবে, শুনলুম আমার বাবার শরীরটা নাকি বেশ খারাপ "!

সুমিত "আচ্ছা ঠিক আছে বউদি " বলতে তিনি চলে গেলো কিন্তু অল্প খানিকক্ষণ কি যেনো ভাবলো।

পরেরদিন সকালে বউদি রান্না-বান্না করে তবেই বেরবে বললো তাই সুমিত দু, একজন রুগি দেখে নেবে এই সময়ে। প্রীতি প্রথমে তাদের সাথে যাবে যাবে বললেও শেষে সে আর গেলো না কলেজ বেরিয়ে গেলো। ১১টা নাগাদ দেওর বউদি তে বেরিয়ে পড়লো। মিষ্টি ফলমূল কিনে ১২:৩০মিঃ নাগাদ বউদির বাপেরবাড়ি পৌঁছে গেলো। ১তলা ছাদ ফেলা বাড়ি, বউদির ১দাদা ও ১ভাই বিয়ে হয়ে গেছে।

বউদির বাবাকে সুমিত দেখলো অসুখ বলতে ফুসফুসটা দুর্বল তারউপর সুগার আছে তাই খাওয়া-দাওয়া উল্টোপাল্টা হলে যা হয় আর কি। যাইহোক দুপুরের খাওয়া সেরে ভাতঘুম দিয়ে বিকালে সুমিত যখন বললো "বউদি বাড়ি যাবে তো এবার "?  উত্তর আসে আজ নয়, কাল সকালে যাবো কারণ তোমার দাদা অফিস থেকে সোজা এখানে আসবে বলেছে। সুমিত একটু মনটা খারাপ করে বললো "কিন্তু আমার রুগিরা....."!

কথাটা শেষ হলো না, তার আগেই বউদি সুমিতের হাত ধরে একটু অন্যরকম ভাবে বললো - "কেনো আমার বাপেরবাড়ি ভালো লাগছে না বুঝি ঠাকুরপো.... চল তোমাকে আমাদের গ্রাম দেখিয়ে আনি "!

সুমিত একটু ইতস্তত বোধ করলো কারণ বউদি আগে কখনো হাত ধরা তো দূরের কথা, এমন আচরণ করেনি। অবশ্য দেওর বউদির মধ্যে এরকম খুনসুটি তামাশা স্বাভাবিক, কিন্তু.....।

না, সুমিত আর বেশিকিছু ভাবলো না। বউদির দাদার ছেলে আর তারা দুজনে গ্রাম দেখতে বেরিয়ে পড়লো। বউদিকে সুমিত নুতন আর অন্যভাবে আবিষ্কার করলো। প্রানখোলা, মুক্ত পাখির মত নিজেকে মেলে ধরলো। কোন গাছের আম তেঁতুল চুরি থেকে খেলাধূলায় নিজের আধিপত্র সুমিতের সামনে তুলে ধরলো। তারপর গোধুলীবেলায় ধান মাঠের আলে বসে সুমিতের হাত ধরে বলে উঠলো - "জানো ঠাকুরপো, তোমার দাদার আমাকে খুব ভালোবাসে আর আমিও, কিন্তু.....

তুমি হয়তো জানো না আমি তোমার প্রতি কতোবার আকৃষ্ঠ হয়েছি, কিন্তু তোমার দাদার ভালোবাসা প্রতিবার আমাকে বাধা দিয়ে বলেছে এটা পাপ..... ঠাকুরপো, একটা মেয়ের নারী জীবন সার্থক হয় সন্তান হলে !"

সুমিত দেখলো বউদির চোখ জলে ভিজে গেছে। সুমিত ভাবছিলো বউদিকে শান্তনা দেবে কিন্তু সে চুপচাপ বসে রইলো কিছু বললো না। অল্প খানিক পরে সুমিত বলল - "বউদি, আমাকে আর কিছুদিন সময় দাও, দাদার কয়েকটা টেস্ট করবো তারপর দেখা যাবে "।

বউদি সুমিতের দিকে তাকালো তারপর হাতটা ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো "চলো বাড়ি যাই"!

          বাড়ি ফিরে দেখলো দাদা চা খাচ্ছে। সুমিতকে দেখে বললো - "কিরে এখানেও তোকে দিয়ে রুগি দেখাতে বেরিয়ে ছিলো বুঝি "!  সুমিত হেসে বললো - "না না, বউদি আমার জন্য মেয়ে দেখেছে তাই....!"

দাদা - "খবরদার এ গ্রামে বিয়ে করিস না ভাই, আমি ১টাকে নিয়ে গিয়ে ভুগছি, তুই আবার এরকম ভুল করিস না "!   বউদি মুখ বাঁকিয়ে বললো - "ঢং কতো, আমি বলে না বেঁচে গেছো, অন্যকেউ হলে বুঝতে ঠ্যালা, হাড়ে আগুন জ্বালিয়ে দিতো তোমার "!

সবাই মিলে হেসে উঠলো। এভাবেই সন্ধ্যাটা ও রাতের খাওয়া সেরে উপরের ১টা ঘরে সুমিত ও দাদা শুয়ে পড়লো আর বাকি ঘরে অন্যরা আর বউদি নীচে তার বাবা-মার সাথে।


রাত কটা বাজে সুমিত ঠিক বুঝলো না। ১টা ফিসফিস শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো। "এই তুমি কি করছো, পাশে ভাই শুয়ে আছে তো নাকি"!

"ঠাকুরপো আছে তো থাক, তুমি চুপচাপ কাজ করো তো....!"

সুমিত মরার মত শুয়ে রইলো। ঘর অন্ধকার, সুমিত বুঝতে পারলো বিছানা থেকে ওরা নেমে গেলো। সুমিত চোখ বন্ধ করে রইলো।

ঘুম ভাঙতে সুমিত দেখলো পাশে দাদা খালি গায়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে, বউদি এখানে নেই। ঘড়িতে পৌণে ৫টা বাজে। সুমিত উঠে পড়লো জল খেয়ে ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতে থাকে। আকাশে তারা দেখা যাচ্ছে, অল্প ভোরের আলো ফুটছে সবে, হাল্কা বাতাশ বইছে। সুমিত পায়েলের কথা মনে করলো - "এরকম যদি সে দেখতো তবে বেশ কয়েকটা কবিতা লিখে ফেলতো "।

হঠাৎ সুমিতকে পিছন থেকে কে যেনো জড়িয়ে ধরলো। ঘুরে চমকে উঠলো সুমিত, আরে বউদি !  নিজের শাড়ির আঁচলটা ফেলে দিয়ে সুমিতকে আরো জড়িয়ে ধরলো। বুকে ঘাড়ে তারপর ঠোঁটে চুমু দিতে যেতে সুমিত ঠেলে সরিয়ে দিলো। বউদি সুমিতকে আবারো জড়িয়ে ধরলো। সুমিত প্রথমে বাঁধা তারপর চুপ হয়ে গেলো। বউদির পিঠে আসতে আসতে হাত বোলাতে থাকে। বউদি এবারে সুমিতের ঠোঁটে চুমু দিতে গিয়ে চমকে ওঠে আর পিছুনে সরে গিয়ে "কে, কে তুমি" বলে ওঠে।

সুমিত - "আমি পায়েল, আর এটা আমার ২য় শরীর, কিন্তু তুমি কে ওই শরীরের ভেতর !" বউদি কিছু বলে না, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।

সুমিত বউদির চুলগুলোকে মাথার পিছুনে নিয়ে গিয়ে খোঁপা বেঁধে দেয়, তারপর শাড়ির আঁচলটা তুলে শাড়ি ঠিক করে দিয়ে দু গালে হাত দিয়ে বলে - "এই বোনটার কাছে মনের কথা বলবে না দিদি !"

বউদি কেঁদে ওঠে আর সুমিতকে জড়িয়ে ধরে বলে - "ওই যে ছাদ ফেলা বাড়িটা, এটা আমার। বিয়ের পর ওই সংসারে আমি মানিয়ে নিতে পারিনি তাই শ্বাশুড়ির সাথে ঝগড়া করতাম প্রায়। আমার ইচ্ছা ছিলো ১টা ঘর হবে সেখানে আমি আমার মত থাকবো তাই শ্বাশুড়িকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিলাম আর পুরনো ঘর ভেঙে নিজের মত ওই ঘরটা বানাবো বললাম। বর ভালো পদে সরকারি চাকরি করে তাই ঘরটা বানিয়ে দিলো সাজিয়ে দিলো কিন্তু আমার শরীরের খিদে মেটালো না। প্রায়দিন বাইরে রাত কাটানো, বাজে পাড়ায় যাওয়া এমনকী কলকাতায় আলাদা ফ্লাট নিয়ে বাজে কাজ করে। আমি যতোবার মিলন করতে আকৃষ্ট করেছি ততোবারই সে বলেছে আমার মধ্যে সেইরকম নেশা নেই তাই যা দূর গো এখান থেকে, তারপর দূরে সরিয়ে দেয়। আমি একসময় আত্মহত্যা করি। আজ সন্ধ্যায় এর শরীরে ডুকেছি এর আর আমার শরিরের চাহিদা মেটাতে, আর এর বরের সাথে সারারাত মিটিয়েও নিয়েছি, ৩বছরের সাধ একরাতে পূরণ করে নিয়েছি.....!"

সুমিত মানে পায়েল বাঁধা দিয়ে বললো - "দিদি, দিদি শোন, এই বোনটার কথা রাখো, তোমার সাধ তো পূরণ হয়েছে এবার মুক্তি দাও, প্লিস দিদি !"

           খানিকক্ষণ সবকিছু চুপচাপ তারপর বউদি মুচকি হাসলো আর সুমিতের মাথায় হাত দিয়ে বললো - "তুই একে খুব ভালোবাসিস না রে, যে ভালোবাসা শরীর দেখে না, যে ভালোবাসা একে অন্যকে ভালোরাখা বোঝে, ঠিক আছে তোরই জিত হোক "।

তারপর বউদি জ্ঞান হারায় আর সুমিতও আগের অবস্থায় ফিরে আসে। সুমিত বউদি বউদি বলে কয়েকবার ডাকলো তারপর কোলে তুলে সিঁড়ির কাছে আসতে বউদির মাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলো।


সেদিন আর সুমিতদের বাড়ি ফেরা হলো না। দাদাকে সেদিন অফিস ছুটি করে নিতে বললো। বউদির শরীরের খবর বারবার নিতে থাকে। আর বউদির মায়ের থেকে ছাদের সবকথা শুনে আগের "ভবিষ্যৎ" থেকে আসা কেটিক ও প্যামের কথা ভাবলো। তারা এই বিপদের কথাই তো বলেছিলো । সুমিত সেই মতই বউদিকে ওষুধ খাইয়েছিলো যাতে রাতের দাদা বউদির মিলনের ফলে কোন সন্তান না হয়, কারণ অশরীরির সাথে মিলনের ফল কখনো শুভ হয় না।

 

         সপ্তাহ খানেক পর একদিন সুমিতকে বউদি বললো - "ঠাকুরপো তুমি তোমার দাদাকে কি ওষুধ খাওয়াচ্ছো, আগের থেকে বেশি সময় দিচ্ছে আমাকে "।

সুমিত বউদির গাল দুটো টিপে দিয়ে বলে - "ওষুধ আমি দিইনি, তুমি তোমার বাপেরবাড়ি তে সেই রাতে দিয়েছিলে, নিজে জোর করে এতোবার যা করেছো তাতে দাদার কয়েকটা জটিল যৌন সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে বুঝলে আমার মিষ্টি বউদি "!

বউদি "ঢং" বলে ওখান থেকে চলে যায়।

প্রীতি ওভাবে চলে যাচ্ছে দেখে সুমিতকে জিজ্ঞাসা করে - "কি ব্যাপার রে দাদা, তোদের আজকাল বেশ ইয়ারকি তামাশা চলছে দেখছি "।

সুমিত উত্তর দিয়ে বলে - "ডিয়ার বোনটি, দেওর বউদির মধ্যে হবে নাতো কি তোর বন্ধু প্রিয়ার সাথে হবে নাকি?"

প্রীতি হেসে ওঠে।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ