দর্পণ || গণতন্ত্র সংখ্যা ২০২১ ||গণ তান্ত্রিক অধিকার কি? ~ আরতি মুখার্জী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

গণ তান্ত্রিক অধিকার কি?

আরতি মুখার্জী


অফ দা পিপল, বাই দা পিপল ফর দা পিপল। সংবিধান প্রদত্ত এই নিয়মেই তো চলছি আমরা।

ভোট দিয়ে নির্বাচিত সরকার গড়ি। সে তো আমরাই। জনসাধারণ। আমরাই বিরোধিতা করে সরকার ফেলে দিই।

একজন জননেতা যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন, তাঁর মূল্য বান বক্তব্যের একমাত্র শ্রোতা এবং বোদ্ধা তো আমরাই। সাধারণ জনগন। কোন দলের হয়ে যখন যে নেতা বা নেত্রী বক্তব্য রাখেন, সেই তিনি হলেন ফার্স্ট পার্সন। আমরা যারা লাখো লাখো মানুষ বাসে করে বা ট্রাকে করে এসে বসে বা দাঁড়িয়ে থেকে হা করে

সেই অমৃত বা গরল পান করে থাকি,সেই আমরা হলাম সেকেন্ড পার্সন। আর আসল যে অভিযুক্ত পর্দার আড়ালে থাকেন, তাঁরা হলেন থার্ড পার্সন। ফার্স্ট পার্সন আমাদের কাছে আবেগে, ক্ষোভে, আস্ফালনে ভুরি ভুরি নালিশ জানায় থার্ড পার্সনের বিরুদ্ধে। ভাবা যায়, আমাদের মত সাধারণ জনগণের কী অসীম ক্ষমতা, কী অভাবনীয় সন্মান, কী উচ্চাসনে আসীন আমরা, জনগণ! রাজ তন্ত্রের শাসনে রাজামশাই দরবারে,সিংহাসনে উপবিষ্ঠ থাকতেন, প্রজারা এসে নালিশ জানাতো। এখন রাজতন্ত্র নেই, গণতন্ত্র। জনগণই রাজা উজির। জনগণই ন্যায় বিচার করবেন অর্থাৎ মতদান করবেন। সে কালে রাজা শাস্তি শোনাতেন, গর্দান যাবে, কি শূলে চড়ানো হবে। সেটাই চূড়ান্ত।

জনতার দরবারে? নেতা যখন হাত জোড় করে প্রার্থনা করেন, তখন তো অবশ্যই আমরা জনতা জনার্দন, কিন্তু শুন্ডি বা হুন্ডি রাজ্যের প্রজাদের মত শব্দহীন, ভাবলেশ হীন। গুপী-বাঘার মত কেউ যদি এসে গান শুনিয়ে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে দেন তখন বিভিন্ন দলের প্রতীকের ছাতার তলে জনতা-আমরা জড়ো হয়ে যাই।বিশেষ বিশেষ মতাদর্শে অভিষিক্ত হয়ে আমরা বিভাজিত হয়ে যাই। সেখানে আবার লক্ষণ রেখা থাকে,--ব্যক্তির বিবেক, বা নিজস্ব মতামত বলে কিছু থাকবেনা, দলের কথাই শেষ কথা।যেমন বিজেপি একটি সর্ব ভারতীয় দল। তাদের এজেন্ডা ছিল, ভারত বিভাগের শর্ত অনুযায়ী  পাকিস্তান যদি মুসলিম দেশ হয়ে থাকে ভারত ও হবে হিন্দু দেশ। সুতরাং অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের ফিরে যেতে হবে। জনগণের ও সেই মত। কিন্তু সেই এক ই তত্বে আসামের জনগোষ্ঠীর গরিষ্ঠ সংখক নাগরিক যারা ভারত ভাগের সময়ে বা পরে ওপার,বাংলা থেকে এসে আসামে ভীড় করেছে, যাদের বাইরের মোড়ক, হিন্দু বা মুসলিম, ভিতরের শাঁস বাঙালি ,তাদেরকে

কোন এক কপোল কল্পিত সময় সাপেক্ষ আইন আদালতের ফাঁসে, নাগরিকত্ব প্রমানের অজুহাতে বছরের পর বছর ডিটেনশন ক্যাম্পে পশুর জীবন যাপনে বাধ্য করছে জনগন নির্বাচিত একটি দলীয় সরকার।,-

একটি সর্ব ভারতীয় দল --অসমে তার চেহারা, অসমীয়া ভাষীর পক্ষ নিয়ে  অসমের জন্মগত বাঙালী বিদ্বেষ। আবার

উন্নাসিক উত্তরপ্রদেশে ও গুজরাটে সেই দলের প্রকৃত স্বরূপ বঙ্গশ্রীকাতরতা। পশ্চিম বঙ্গের বিজেপি? সে এক বিস্ময়। সেই দলীয় একজন ব্যক্তির ও প্ৰিয় জন যদি ডিটেনশন ক্যাম্পে শিকলবাঁধা পশুর জীবন নিয়ে প্রাণে বেঁচে থাকে, তাঁর বুক ফাটে তবু মুখ ফোটেনা।

রাজ সভার সেই পারিষদের মত সে সামনে পিছনে মাথা নেড়ে বলে, "জানার কোন অন্ত নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই "।

ছাতার তলায় থেকে গণতান্ত্রিক ক্ষমতার ধ্বজাধারী অতিবড় জনদরদী নেতাও বলতে পারে না, "দড়ি ধরে মারো টান, "সংকীর্ণতা" হবে খান খান।

স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা গুলো কেন ফুট পাথ বাসীদের অন্নসংস্থানের কথা ভাবেন? আশ্রয়ের কথা ভাবেন, কোন ও কোন ও রাজ্যের মুখ্য মন্ত্রী বস্তি বাসী দের  জন্য ঘর করে দেন.। বিপরীতে গণতান্ত্রিক সরকার? নাগরিকের শান্ত ছায়া ঘেরা কুটির থেকে তুলে এনে বিশ্ব জন্মভূমিতে বাস করার অপরাধে ডিটেনশন ক্যাম্পে বস্তাবন্দী রাখে। মানবাত্মা কি


 কেঁদে উঠছে না? গণতান্ত্রিক অধিকার, কার? প্রশাসকের?

দেশ কার? কোন একটি তাত্বিক দলের? গণতন্ত্রের বড়াই কাদের? জনগণের? আমরা কি জনগন?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ