পোস্ট বার দেখা হয়েছে
অ্যানড্রয়েড
অরিজিৎ
মির্যর সোস্যল মিডিয়াতে অ্যালেক্সার প্রোফাইলটা চোখে পড়তে আকাশ থেকে পড়লো রিপন। গত এক সপ্তাহ ধরে নতুন অফিসে ঠিক তার পাশের ডেস্কের মেয়েটার প্রতি তার আবেগ ঘনীভূত হওয়ার পর এখন কিনা জানতে পারলো সে আসলে মানুষই না। প্রোফাইলে বায়োমেট্রিক / মেকানিকাল ডিটেইলসে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে - অ্যানড্রয়েড জেনারেশন ডেলটা রোবট, ম্যানুফ্যাকচার্ড বাই রোবোকর্প, জুন ২১১৮। " ইশ, অ্যত্তো বড় ভুলটা আমি করলাম কি করে ? আমার জেনে নেওয়া উচিৎ ছিলো সে মানুষ না মেশিন। " - মনে মনে ভাবলো রিপন। পরক্ষণেই রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো, " সেও বা কেন বলবে না, সে তো নিশ্চই বুঝতে পেরেছে যে আমি তার প্রতি ইন্টারেস্টেড। নাহ্, এর জবাব চাইতেই হবে। "
মিনিট দুয়েক পরেই অ্যালেক্সাকে ঢুকতে দেখে একটু সোজা হয়ে বসে নিজেকে তৈরী করে নিলো রিপন। একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে গোছের ভাব নিয়ে এলো মনে। এর আগেও একটা অ্যানড্রয়েডের প্রেমে পড়েছিলো, তবে সেটা জেনে বুঝে, ইউ এস ট্যুরে টাইমপাস করার জন্য, কিন্তু অ্যলেক্সার ব্যাপারে সে সিরিয়াস ছিলো। এসব ভাবতে ভাবতেই অ্যালেক্সা সামনে এসে তার স্বভাবসিদ্ধ মুচকি হাসি নিয়ে যেই বললো - " হাই রিপন, গুড মর্নিং ", রিপন যেন আবার সব ভুলে গেল। কি মিষ্টি দেখতে মেয়েটাকে। নীল চোখ, বাদামী চুল আর টুকটুকে ফরসা অ্যালেক্সার প্রেমে যে কোনো ছেলে পড়ে যাবে। এতক্ষণ রাগে গজগজ করা রিপনের যেন সব রাগ গলে জল। হোক না সে অ্যানড্রয়েড, হোক না রোবট, আমি তো মানুষ, আমি ভালোবাসতেই পারি। মানুষ তো পাথরকেও ভালোবাসে, আর অ্যালেক্সা তো কথা বলে আমার সাথে, আমার কথায় হাসে, লজ্জা পায়।
লাঞ্চ টাইমে ছুটি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো রিপন, কারন সে জানে তার আজ কাজে মন বসবে না। মনটা দ্বিধায় ভুগছে। অফিসে একটা কথাও বলেনি অ্যালেক্সা বা অন্য কারো সাথে। কার্ড পাঞ্চ করে ম্যাগনেটিক ট্রেনের স্টেশনে একটা সিটে গিয়ে বসলো রিপন, চারিদিকে তাকিয়ে সবার আনাগোনা দেখে বোঝার চেষ্টা করলো কোনটা মানুষ আর কোনটা অ্যানড্রয়েড রোবট। পারলো না হিসাব করতে। দেখে কাউকেই বোঝার উপায় নেই। তার বন্ধু দের মধ্যেই দুজন অ্যানড্রয়েড, তার বাড়ির হেল্পিং স্টাফও তাই, সেগুলো কিন্তু এতদিন সহজ ভাবেই নিয়েছে। বছর দুয়েক আগে যখন সমাজের একদল বুদ্ধিজীবি রোবটদের মানুষের সমান প্রাধান্য দেওয়া নিয়ে আন্দোলনের ঝড় তুলেছিলো, তখনও সে সব বিতর্ক গায়ে মাখেনি রিপন, কিন্তু আজ যেন কিছুতেই মনটা স্থির হচ্ছে না। দুটো ট্রেন ছাড়ার পর তৃতীয় ট্রেনে উঠতেই হলো, কারন স্টেশনে বেশীক্ষণ বসা যাবে না, সিকিউরিটি হ্যাপা আছে। সিটে বসতেই কব্জির স্মার্ট ওয়াচটা ভাইব্রেট করলো, ইনকামিং থ্রি ডি কল ফ্রম অ্যালেক্সা, লেখা দেখে রিসিভ করলো রিপন। থ্রি ডি ইমেজের অ্যলেক্সা ভেসে উঠলো স্মার্ট ওয়াচ থেকে -
- হে রিপ, এনি প্রব ? আর ইউ ওকে ?
- ইয়া, অ্যা'ম অ্যাবসোলিউটলি ফাইন।
- শিওর ?
- ইয়া ডোন্ট ওরি, ওকে আই উইল টেক্সট ইউ লেটার, ইন ট্রেন নাউ।
- ওকে টেক কেয়ার।
কল কেটে দিলো রিপন । ডালহাউসি স্কোয়্যার থেকে নিউ টাউন মাত্র ১৫ মিনিটের পথ। তাই বেশীক্ষণ এসি ট্রেনে বসা হলো না, বাইরের প্রচন্ড গরমে হাঁটতেই অসহ্য লাগছে। শীতকালের গল্প তো এখন শুধু ইতিহাসে পাওয়া যায়, এই ডিসেম্বারেও তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। রোজ রাতে ফেরা হয় বলে এই ঝক্কি পোহাতে হয় না। কোনো রকমে বাড়ি গিয়ে স্নান সেরে অক্সিজেনের মেশিনটা অন করলো রিপন, তারপর অ্যালেক্সাকে টেক্সট - ইন হোম, মিনিট খানেকের মধ্যেই জবাব এলো - ওকে, টেক রেস্ট ।
- নো, ওয়েট, কথা আছে,
- বলো,
- তুমি আমাকে বলোনি কেন, দ্যাট ইউ আর আ মেশিন ?
- তুমি জানতে চাওনি রিপ, ইউ নেভার আস্ক মী,
- তুমি কি বুঝতে পারোনি যে আমি প্রতি ইন্টারেস্টেড ?
- হুম পেরেছি
- দেন হোয়াই... ?
- বিকজ তোমরা অ্যানড্রয়েডদের ভালো চোখে দ্যাখো না রিপ
- হাও কুড ইউ সে দ্যাট অ্যালেক্সা ?
- তোমরা শুধু ইউজ করতে জানো, তোমরাই আবার বলো অ্যানড্রয়েডরা হার্টলেস মেশিন , নো রিপ, আমরা হার্টলেস নই। হার্টলেস তোমরা...
- অ্যালেক্সা.....!
- লেট মী টেল ইউ ওয়ান মোর থিং রিপ..... আরও একটা কারন আছে তোমাকে না জানানোর, তুমি তো শুধু ইন্টারস্টেড, বাট আই লাভ ইউ।
- হোয়াট ? আর ইউ সিরিয়াস অ্যালেক্সা ?
- অবাক লাগছে, তাই না রিপ ? তা লাগতেই পারে, কারন তোমরা হিউম্যান বিং, লাভ - এ বিশ্বাস করো না। বাট আমি করি, আমরা করি। বাই রিপ, ভালো লাগছে না, চ্যাট ইউ লেটার।
রিপনের পৃথিবীটা যেন থমকে গেল, মাথা পুরো শূন্য, কি করা উচিৎ ভেবে কুল কিনারা পেলো না। নাহ্, সম্পর্কটা টিকিয়ে দেখাতে হবে। একটা রোবটের কাছে প্রমান করতেই হবে যে মানুষের মন মরে যায়নি। ভালোবাসবে অ্যালেক্সাকে। একসাথে থাকবে। আবার বহু যুগ পর একটা প্রেমের যুদ্ধ দেখবে সমাজ। কারন আইন মানলেও তার বাবা মা কখনোই এমন একটা মেয়েকে ছেলের সঙ্গী হিসাবে মেনে নেবে না, যার শরীরে মানুষের রক্ত না, কৃত্রিম প্লাজমা ছোটে।
0 মন্তব্যসমূহ