পোস্ট বার দেখা হয়েছে
অপালা
পাহাড়টার চিরদিন দাঁড়িয়ে থাকাই অভ্যাস,ও উড়তে পারেনা....
ওর বয়স একসময় থমকে যায় আকাশ মাটির মাঝখানে
মেঘ দাপাদাপি করে, বৃষ্টি ভেজাতে থাকে, সূর্য রাগ দেখায়,
ও বিরক্ত হয়না...
ওদের বসতে দেয়, ঘুমাতে দেয়, জমাতে দেয় বিভিন্ন ছাঁচের পোশাকের ওম
পাখিটা মাঝেমাঝে এসে ওর চোখে চোখ রাখে, ঠোঁটে করে আনে দেবদারু বীজ, জ্যোৎস্নার গান...
পাহাড়টা সারাদিন ভাঁজ করে রাখে ডানার কস্তুরি সুগন্ধ, অজস্র মায়াবী হরিণ ঢেউ খেলে
চলে যাওয়ার আগে বলে ওঠে "ও পাখি থেকে যাও এখানে"
পাখির ডানায় খিলখিল হাসি, দূরের আকাশ ডাকলেই বলে "আসি"
গাঢ় সবুজ হয়ে ওঠে ওর বুক, পশমে পশমে হেঁটে বেড়ায় রোদেলা ঝিঁঝিরা
বাতাসের জানলা পেরিয়ে চুপিসারে সমুদ্রের সামনে এসে বসে
ভেসে থাকে উঁচু উঁচু ঢেউয়ের কাঁধে, নিজেকে ভীষণ হালকা লাগে
দূরে সবাই ঘুমায় ঘরে, পাহাড়টা নীল অক্ষরেখা ধরে পেরিয়ে যায় বহুদূরে...
কোথায় যায়? কোথায় ফেরে!! কেউ জানিনা...
====
Mocking Life!
ডঃ অলকানন্দা গোস্বামী
সেই প্রথম আলো, প্রথম দেখার সাথে-
তার নীলাম্বরী আঁচল উড়ছিল হাওয়ায়-
তার সূর্যাস্ত রঙে রাঙানো কেশ-
কপোলে সূর্যোদয় গোলাপী আভায়।
তার বাহুলতা এসে গলে পেঁচিয়ে-
বুকে রাখা শিরোঃস্হানে আজো সেই সুগন্ধ-
মুখ তুললে সেই গভীর নীলাভ সমুদ্র রঙে-
নিজের প্রতিচ্ছবি দেখার মূহুর্ত।
ঝিন ঝিন হাসি তরঙ্গে বয়ে যায়-
অভিমানে মেঘ ঘনায় কি সমুদ্রে?
রিনরিনে ভাললাগায় তবু চিনচিনে অন্তর্লীন-
তবু ছেয়ে থাকা মধুরতম তরঙ্গে।
একা বসে আজ অন্তরলীনা মনে ভেসে আসে-
ছিটকে উঠেছিল বুঝি সমুদ্র চোখের থেকে রক্তমণি?
মন জানতে চায় কোন বাতাসের অভাবে?
মক টেষ্টে থেমে যায় ঝিনুকের ধুকপুকুনি???
====
আমার শহরের বুকে
সোমনাথ ঘোষাল
সেদিন শহর জুড়ে কালো মেঘ ছিল !!!
হয়তো যুদ্ধের প্রস্তুতি,
আমি আমার আমিতে এঁকে চলি মেঘের গায়ে তোমার ছবি।
এক হতাশা, এক বিষণ্নতায় তুমি তাকিয়ে আছো জল ভরা সে মেঘের দিকে।
মেঘ ছুঁয়ে আছে তোমার শরীর জুড়ে,
এই বুঝি ভাসিয়ে দিতে পারে আমার এ শহর।
এ শহরে ভালোবাসা কংক্রিটে মোড়া,
তবুও ভাঙা পাঁজরে শতাব্দীর গান ছুঁয়ে আছে।
আর তোমায় ছুঁয়ে আছে আমার রং তুলি মেঘের ক্যানভাসে।
তুমি নেমে এলে কালো মেঘ ছেড়ে শহরের বুকে, এক অন্ধকারে !!!
দেখলে, হাহাকার পাঁজরে পাঁজরে ফুটপাতে !!!
অক্সিজেন বাতাস খুঁজে চলে,
প্রেম ছুটে চলে ট্রাম লাইনের গা ঘেঁষে।
আমিও ছুটে চলি কালো পিচ মোড়া রাস্তার স্লোগানে ভিড় ঠেলে।
তুমি হাঁপিয়ে ওঠো এই পরিবেশে।
বেশ তো ছিলে তুমি জল ভরা কালো মেঘ ছুঁয়ে,
তবে কেন,
কেন নেমে এলে এ শহরের বুকে ???
এখানে প্রেমে আছে যন্ত্রণা,
ভাঙা পাঁজরে ভালোবাসা আছে বধিরের রূপে।
এখানে প্রতিদিন প্রত্যাশা মরে,
বারুদের ঘ্রাণ জমে বুকে,
মৃত্যু মিছিলে মৃতরা স্লোগান তোলে।
ভুকা পেতে চলে লড়াইয়ের ছক !!!
ফিরে যাও,
ফিরে যাও তুমি সেই মেঘের গায়ে,
আমি প্রতিদিন এঁকে যাবো তোমার ভিন্ন রূপ,
ভিন্ন প্রেমে, ভিন্ন ভালোবাসার ছবি, কালো মেঘের গায়ে।
শুধু সময়ে, আমার আঁকার শেষে তুমি পরিপূর্ণতার রূপ নিয়ে ঝরে পোড়ো উদাসীন বিষণ্নতা ভরা আমার এই শহরের বুকে বৃষ্টি হয়ে......
====
বিশ্বাস
শ্রাবন্তী ঘোষ বহ্নি
হটাৎ ভীড় করে আসে
বসন্ত বাতাসে রঙীন খামের মধ্যে ভরা
শব্দের গাঁথুনিতে তোমার ডাক নামটি
নদীর স্রোতে ধুয়ে গেছে আমার জাগতিক অভ্যেস গুলো,,,
বৃষ্টি আঁকা পথে,এখনও খুঁজি জলতরঙ্গে তোমার আঁকা পায়ের ছাপ ছন্দে ছন্দে
নদী তীরে উষ্ণ ভালোবাসা নিয়ে
ব্যাথাহীন প্রাণে উদাসীন
দুটি চোখ হতে ঝরে পড়ে স্বচ্ছ
মুক্তারাশি,,,
তাই আজ মোহনার পরবাসে হয়েছি উদাসী উজান নীল সীমানায়,,,
যে নীল সীমান্তে ফিরে গেছে আমাদের পিছুটান ভালোবাসার অপেক্ষায়,,
হয়তো দেখা হলে করবো আবার অভিমান
শুধুই কি কথা ছিল বলেই,,
,, তোমাকে নিয়ে বিশ্বাসে
বেঁচে আছি
শত দুঃখের বর্ষার মাঝে হৃদয়ে শব্দের গাঁথুনি পূর্ণতা পায়,,
নিরালায় সাদা পাতাগুলি ভরে যায় অনুভবের অবিশ্বাসের ছন্দময়,,,
হৃদয়ের পঙক্তি গুলো
আত্মার উপলব্ধিতে
প্রতিমুহূর্তে ভাঙে গড়ে,,,
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া
স্বপ্নগুলো
পুরনো অভিমান কে বিশ্বাসের সাথে জড়িয়ে রাখে,,,
আজ আরও একবার
অস্তিত্বহীন ভোরেরা দুচোখে
বৃষ্টি নামাক,,,
নতুন করে নতুন রূপে সমাপ্তি হোক
বিচ্ছেদের মিলন সৃষ্টি হোক
বিশ্বাসের মধ্যেই বিশ্ব কে সাথে নিয়ে
====
সময়
চন্দ্রনাথ অধিকারী
সময় তো এমনই দাবি করে সুতনিকা-
ভুল সময়ে বৃষ্টি হলে আর্দ্রতা'য় বাড়ে শুধু
অথচ বর্ষা'র গোধূলি ই তো ছিল সেদিন!
এখন বন্দরে সিটির আওয়াজ! এতই সহজ ফিরে যাওয়া!
তবুও ঘণ্টা বেজেই যায়!
ঢেউ এর উৎসব সমাগত
এ সমুদ্র যাত্রা হয়ত মিশবে কোন মরুভূমিতে ;
এযাবৎ কালের যত অপ্রকাশিত চাওয়া--
প্রকাশ হবে কোন ধূ-ধূ মরুপ্রান্তরে, হয়ত ঠিক তখনই উঠবে মরুঝড়!
আর তো কোন বাঁধা থাকার কথা না তখন - সুতনিকা!
মাথার উপর আদিম নীল-
নীচে ধূ-ধূ বালিয়ারি -
আর তুমি ; আর আমি!
সব শোক, সব না পাওয়া, সব পেয়ে যাওয়া...
মিলেমিশে একাকার!!
তুমি বলবে, " আমার অবেলার যত চাওয়া সব সব তোমায় দিলাম ".....
====
রিঞ্চেংপং
অয়ন দাস
এখানে এখানে এখানে
মেঘ পাহাড়ের পাথরের
কন্যারা কোলে খাঁজে
গল্প লুকোচুরি খাঁজে
করতে খেলে ভেজা
আসে জলরং গাছের
জানলায় আলোর মৃতদেহ
জানলায় নিশান শুয়ে
থাকে
ঝর্ণা
মেঘ
আর
কুয়াশা
গন্ধের
নেশায়
ছুটে
যাই
মেঘমেদুর
পাহাড়ের
কাছে
(পাঠক, আপনারা কবিতা টি পাশাপাশি না পড়ে উল্লম্ব ভাবে পড়ুন।এই আঙ্গিকে প্রথম কবিতা লেখেন বিখ্যাত ফরাসি কবি গীয়ম এপোলোনিয়র।পরবর্তী কালে অনেকে তাঁকে অনুসরণ করেন।আমি সেই মহান কবি কে অনুসরণ করেছি মাত্র।যেহেতু কবিতাটি একটি নিসর্গের কবিতা,তাই কবিতার বুননেও আমি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি পাইন,ফার দেবদারু,ওক পপলার গাছ সমৃদ্ধ সেই পাহাড়টি কে।
রিঞ্চেংপং সিকিমের এক ছোট্ট গ্রাম।চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। তারই মধ্যে পাহাড়ের বুক চিরে শিশু'র উল্লাসের মত নেমে আসছে কিশোরী ঝর্ণা।সমস্ত চরাচর জুড়ে বিরাজ করছে অপার শান্তি ও নিস্তব্ধতা। বৌদ্ধ গুম্ফা গুলি থেকে ভেসে আসা সমবেত প্রার্থনা'র সুর আর ঘন্টাধ্বনি মনকে আবিষ্ট করে রাখে।মনে হয় এই শান্তির নীড় ছেড়ে আর কোত্থাও যাবোনা।রিঞ্চেংপং এর এক মনাস্ট্রি তে বসেই এই কবিতাটি লিখেছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তটি ধরা আছে এই কবিতায়।
0 মন্তব্যসমূহ