দর্পণ || জীবাণু- হল্ট স্টেশন ~ সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

জীবাণু- হল্ট স্টেশন

সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী


জীবন এক চলমান যান। চোখে দেখা যায় না,  ব‍্যাকরণের ভাষায় কেবল কাজ করে। দিনরাত অবিশ্রান্ত গতিধারা। অতীতে আঞ্চলিক ভাবেই  জীবন মাঝে মাঝেই বিশ্রাম নিয়েছে। সে প্লেগ বা গুটি বসন্ত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ কারণে। থমকে গিয়েছিল যা হচ্ছিল তার ধারা। না এভাবে জীবন কখনো বিশ্রাম নেয়নি। ২০২০ সাল--জীবন হল্ট করলো এক স্টেশনে যার নাম করোণা। হঠাৎ এক ছোট্ট জীবাণু জীবনকে থামতে বললে।  কখনো জীবনের এত বিশ্রাম দরকার। কেবল বাড়িতে নিজেকে আটকে রাখো। স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি-সিনেমা হল-জিম-স্পা -শপিং মল-অফিস -আদালত -এয়ারপোর্ট -স্টেশন-চত্বরের জীবনগুলো উধাও। জীবন থেমেছে হল্ট স্টেশনে --"করোণা হল্ট স্টেশন‌"। কেবল হাসপাতাল-স্বাস্থ্য কেন্দ্র--চত্বর-কর্মীদের জীবনের কোন স্টেশন ছিল না। অপেক্ষা-অপেক্ষা-অপেক্ষা--কবে হল্ট স্টেশন থেকে জীবন এগোবে!!! এর মাঝেই অগনিত জীবন হল্ট স্টেশনেই হারিয়ে গেছে। সংসারের মানুষগুলো হারিয়ে যাওয়া মানুষের জড় দেহটা হল্ট স্টেশন থেকে তুলে আনতে পারে নি। --২০২০ ডিসেম্বর --জীবন একটু নড়াচড়া করলো। ছাড়তে হবে স্টেশন--নতুন উদ‍্যেমে জীবন এগোবে। সমস্ত চত্বর গুলো আবার নড়েচড়ে এগোবে। কর্মরত -কর্মরতাদের মুখে হাফ খুশির আমেজ। কচিকাচাদের উদ্দাম আনন্দ--জীবন আবার স্টেশন ছেড়েছে-- চলেছে-এগোবে। মাত্র মাসদুই এগোলো। ---হোল মিটিং -মিছিল -পছন্দ -অপছন্দের যজ্ঞ। --হঠাৎ কি যে হোল-- আবার থমকে গেল। জীবনের এতো ক্লান্তি কিসের? এবার হল্ট স্টেশনটা মনে হচ্ছে মেরামত করতে হবে। আবার জীবন বিশ্রাম নিল। শুধু বিশ্রাম নয় সাথে নিল বহু তাজা প্রাণ। হাসপাতালে জায়গা নেই -প্রকৃতির অক্সিজেন নিতে পারছে না। কেন নিতে পারছে না!! অনেকেই বলছে--সবুজের অভিশাপ-

সবুজ ধ্বংস--সবুজ ক্ষমা করেনি। প্রতিশোধ নিচ্ছে। না না--করোণা জীবানু জীবনের অক্সিজেন ধারণযন্ত্রকে বাড়ি বানিয়েছে। ওখানেই বংশবিস্তার-- তারপর সারা দেহে। সে যাক্--যা বলছিলাম --আবার সব চত্বর থেকে জীবন উধাও। ঐ যে পড়ুয়ারা বিশ্রাম নেওয়া জীবনে একটু আশার আলো দেখতে চাইছিল---দেখতে পাচ্ছিল --আবার দুরুদুরু বুকে পেন হাতে হলে ঢুকবে--লিখবে -নম্বর পাবে--উপরে ওঠার সিঁড়ির ধাপে পা দেবে--মনে মনে কত পরিকল্পনার ডালপালা। না--থমকে দিলে সেই করোণা--জীবন থেমে গেল হল্ট স্টেশনে। যে স্টেশনের নাম "জীবাণু"। সত্যি কি জীবন থামতে চেয়েছিল!!না তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে!! এ প্রশ্ন আজ দিকে দিকে--আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। সত‍্যি কি এমন হতে পারে! জীবন কেবল হল্ট-হল্ট-হল্ট।

     কোন বড় বড় সম্মিলিত জীবনের অন্দরে অন্দরে কি কোন বড় বড় ভাবনা ছুটে বেড়াচ্ছে না। তাদের জীবনের কি হল্ট স্টেশন আছে? লকডাউন তথা জীবনের হল্ট তো চুপি চুপি কতকিছু পাল্টে দিচ্ছে। কারা করছে!!! কেন করছে!!! সবাই বলছে --জীবাণু। সূচের আগাসম ঐটুকু এক উপাদানের এতো শক্তি!!! কি জানি --জীবন তুমি এত থেমে থেকো না। সব পড়ুয়াগুলো করজোড়ে প্রার্থনা করে-- জীবনের হল্ট স্টেশনটা ধ্বংস হয়ে যাক্। কোন স্টেশনে "জীবন"--হারিয়ে না যায়--যেন থমকে না যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ