দর্পণ || সাপ্তাহিক ||পরিচালকীয় কলম




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

       


                     "নবারুণ" কথা 

                          দেবাশীষ 

বিপদগ্রস্থ জনপদ - আমার ভেতর থেকে সভ্যতা পর্যন্ত হারিয়ে গ্যাছে সাইকেল ; 

হারিয়ে গ্যাছে প্রমাণ লোপাট হওয়ার প্রবণতা ;

ধর্মাবতার সেজে সারিয়ে নেওয়া ফুটিফাটা,

প্রবল জলরাশি ছুঁয়ে খটখটে জীবনের গন্ধ শোঁকে।


তছনছ হয়েছে পৃথিবীর শাদা শাড়ি,

টেনে হিঁচড়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে ছুটেছে শোকের সময় ;

অদ্ভুত মেঘলা আকাশ - রংচটা মেঘের বিকেল -

সারাদিন প্রবলেম সয়ে সয়ে -

কবিতায় ঘাড় গুঁজে নিরালায় একগুঁয়ে -

আবেগের ফুটো কলসি আর ফেসবুকে কাটানো সস্তার সময় ;

এভাবেই বয়সের উইকএন্ড আসে - এভাবেই রাজনৈতিক হৈচৈ হয়!


এই শিরোনাম নেশাগ্রস্ত গাথা,

নেই অনিচ্ছুক পথচারী - সবই আসলে জনসংখ্যার কথা ;

যে কেরানী ঘুষ নেয় - যে বেশ্যা স্তনে স্তনে জমিয়ে রাখে সবুজ ধুলো -

ওদেরও শীতল বাতাস ছিলো -

ঘুম ছিলো - স্লিপিং পিল ছিলোনা শিক্ষার।


এখনও পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা -

সোসাল মিডিয়ায় জমাপুঁজি রাখা ;

জেদেরও পাশ ফিরে শুতে ইচ্ছে হয় -

সৃষ্টিরা অবুঝ বোধদয় -


ভাগ্যের গলায় ঝুলছে ইচ্ছে -

কোমর পর্যন্ত ভাবনা কাদাজল মেখে -

সবরকম নিষ্কাশন প্রণালী কবিতার কাছে এসে থমকে যায় -

নতুন পথের দিশায় -

দেখতে পাচ্ছি ঠিক - জানতে বুঝতে পারছি -

একরোখা '' নবারুণ " কথা !

আমায় আজও জাগায় ....

 *******************************************

                     সুগন্ধি রূমাল 

                          জয়তী 


মনেহলো এই যে ঢেউ ছুঁয়ে গেলো মুহূর্ত 

তাকে লিখে ফেলি -


এইমাত্র যে অনুভূতি সমস্ত বোতাম খুলে, 

প্রতিটি শিরায় শিরায় রোমাঞ্চিত!

তাকে লিখে ফেলি -


সে কেবল হাসতে হাসতে দূরে পালায়... 


সেই যে কষ্ট প্রতিমা বানায়

সেই যে দুঃখটা ঠোঁটের কাছে আদর জানায় 

তাকে খুব পুষতে ইচ্ছে করে --


সে কোথাও পালায় না, ভীষণ কাছের 

বুকপকেটে লুকিয়ে থাকে -


********************************************

                  "বদলে গেছে সময়!!

                     স্বপ্না চ্যাটার্জি 


অনেক দিন পরে লিখছি ভাবছি কোথা থেকে শুরু 

করি অনেক কিছু তো ঘটে গেলো এই কিছু দিনের মধ্যেই,কোথায় কখন সময় নাগালের বাইরে চলে গেছে। 

দুপুর গড়িয়ে বিকেল বৃষ্টি ভেজা শরু মাটির রাস্তাটা

নেমে গেছে দূরে বাড়িগুলোর গা ঘেঁষে।

স্মৃতির জানালায় এক ছুটে মনটা, এই বুঝি তুমি ফিরেছ! তুমি অফিস থেকে ফিরেই পাশে বসে বললে কি হলো আজ কেনো এমন আনমনা এলোমেলো হয়ে 

বসে আছ কেন!

এক টুকরো আকাশ আমার মুঠোয়, তুমি এলেই

তো আমার উৎসব প্রতিদিন আর

রাত স্বপ্নদোলায় ছুঁয়ে থাকি আলিঙ্গনে।

গোধূলি বেলায় ব্যালকনিতে সূর্যডোবা সাঁঝে এক 

কাপে দুটো ঠোঁট চোখে চোখে প্রশ্ন করা, 

রাতের আকাশ শিশিরে ভেঁজা লনের ঘাসে

তারাদের সাথে আলাপচারিতার গল্প, 

তোমাকে লিখছি কেন জানিনা,সেই সময় আর 

এই সময়ের মধ্যে কোথায় যেন আটকে গেছি।

সব যদি কোনদিন মুছে যায় লেখাগুলো স্মৃতিস্বরূপ থাকবে,সাঁঝের বারান্দায়,

লানের ঘাসে,তারাদের আঙিনায়,ব্যালকনিতে,

লিখতে লিখতে যখন চোখ ঝাপসা হয়ে আসে

ভাবলাম চশমাটার পাওয়ার কমে গেছে।

দুচোখ ভিঁজে গেছে চশমাটা তো ভালই আছে,

আমার পৃথিবীতে এখন আমি একাই ফিরে এলাম

বৃষ্টি থেমেছে জানালার কার্নিশের জলে বইগুলো ভিজে গেছে ডাইরির লেখা ধুয়ে নীল জল।

চশমার কাঁচে নীল জলের ফোটায় চোখদুটো

অচেনা। 


*************************************

                       এই হেমন্তে

                    শিবাজী সান্যাল


এসেছে হেমন্ত , চারদিকে খুশির অনুরণন

এখন যেয়ো না কোথাও । ধানের গৈরিক শীষে

অনেক অপেক্ষা শেষে স্বপ্নের ছবি —লাঙল , পান্তা

প্রতিদিন আকাশ চেয়ে থাকা , চারার রোপন  

সন্ধ্যার প্রার্থনা মিশে আছে এই আনন্দ হিল্লোলে

                এখন যেয়ো না কোথাও । 


দূর্বাতে শুয়ে থাকে রাতের শিউলি , সমীরণে খুশি

গন্ধরাজ , মল্লিকা, কামিনী, হেমঝুরি , দেবকাঞ্চণ

সাজিয়েছে উৎসব প্রকৃতির , গাঁয়ের ছোট ছোট ঘরে। 

শ্বেত শাপলার পাশে জাগে পদ্মের শান্ত শুদ্ধ শোভা

মাছরাঙার ডাকে বিভোর বিলের কম্পিত জলাশয় । 

                 এখন যেয়ো না কোথাও । 


এখন সময় নবান্নের , ধানকাটা শেষে

বাতাসে তাজা গন্ধ ভাতের , পিঠে পায়েস

বাজবে একতারা বাউলের সুর , মোহন সঙ্গীতে

মাটির নরমে , বীথিকার সবুজে , আকাশে বলাকার ডানায়

সাজবে বাংলা গন্ধে , ছন্দে , চন্দনে , লাল আলতায়

               এখন যেয়ো না কোথাও ।

*************************************

     টুকরো যাপন 

        অরিজিৎ 

         

ভাঙতে পারো অনেক কিছুই 

ভাবনা থেকে বোধ , ইচ্ছে হলেই! 

ইচ্ছেগুলো অচিরেই প্রাণ পেলে

মাতাল সমীকরণে সাজিয়ে নিই 

আগামীর জীবনবোধ! 

তারপর দেখা হলে অসম্মানে ভরাই না 

তোমার ভালোবাসা, শেষ পর্যন্ত। 

বন্ধুতা শব্দবন্ধে বিশ্বাসী হলে 

তুমি থেকে আপনি সম্বোধনে হাসি পায় , 

আসলে কবিজন্ম লেখা থাকে গ্রহণযোগ্যতায়! 

                                     

*************************************


**************************************

                      ছেঁড়া পাতা 

                        দেবলীনা


একটা একটা ঘুম কোড়ক খুলে ফুটে ওঠে কুসুম আলো আর সাথে সাথেই হাওয়ায় বেজে যায় লতায় পাতায় জলতরঙ্গ। ঘাসের চিবুক আলতো ছুঁয়ে যাওয়া শিশির বিন্দু আহ্লাদে গলে পড়ে। আর দেখতে দেখতেই শুরু হয়ে যায় চতুর্দিকে দোয়েল, ফিঙে, চড়াই এর ডাক ।ওদের প্রশিক্ষণের পাঠশালা শুরু হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। নানা রঙের ছানা পোনা নিয়ে তারাও তৈরি। শিখবে আজ ওড়ার কৌশল , ডানার আড় ভাঙার প্রশিক্ষণ, খুদ্ খুঁটে খাওয়ার চালাকি আরো কত কি।ছানাগুলি নড়বড়ে তাও মনে দুরুদুরু ভয় নিয়ে ঝাঁপ দেবে ভেবেও ভয়ে পিছিয়ে যায়। ঠোঁট বুলিয়ে পালক মসৃণ করে। এরই মধ্যে যেগুলো সাহসি উড়ে এসে বসে মা পাখির পাশে, সেই দেখে অভিভাকদের গম্ভীর পরিশীলিত মুখচোখ। এভাবেই চলে ওদের নজরদারির সুচারু প্রশিক্ষণ।

ওদিকে টলমল পায়ে সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট শিশুটির শব্দ ভেসে আসে, তারও বারবার বেসামাল পদস্খলন সাথে আধো আধো বোল সকাল থেকে বেলা গড়ানোর কালকে ভরিয়ে রাখে। নিত্য নতুন স্বর ও শব্দকে আমিও আবিষ্কার করি আবার নতুন করে।

আর এখন তো আমাদের এই একফালি চৌকো খোপের সংসারে সেধিয়েছে সারাবিশ্ব। এককোণে স্কুল তো অন্য কোণে অফিস। গুগল মিটে এখন দেখা যায় এর ওর অন্দরমহল, ঘরের সাজসজ্জা না হয় সুসজ্জিত ব্যাকগ্রাউন্ড আর অবধারিত কুক টপে বসানো প্রেসারের সিটির চাঁচাছোলা আওয়াজ নাহয় কড়াই খুন্তির শাণিত স্বর। 

এখন জীবন হয়েছে যেন অন্ধ বাউল , গেয়ে চলে আপন মনে মেঠো সুরে , মিঠে বোলে কিন্তু তার সাধ্য নেই চোখের গন্ডি পেরিয়ে অচেনা - অজানায় পাড়ি দেওয়ার , চেনা চৌহদ্দির মধ্যেই ঘুরে বেড়ায় আর তার হাতের দোতারা রোজ বেজে ওঠে ... কখনই তাতে ধুলো পড়ে না।

*************************************


*************************************

                         অপেক্ষা

                       তন্ময় রাণা 


তুই বুঝবিও না কোনো দিন জানি! 

যে শুধু তোর জন্যই রয়েছি আমিl

একদিন ঠিক ফিরবি,সে বিশ্বাসেই     

রোজ চাতকের মতো মরে-মরেও   

দিন গুনে গুনে অপেক্ষায় বেঁচে থাকি l


যদিও বাঁচা একে বলেনা জানিl

মারা'তো গেছি বহু আগেই অলীক 

দিশার মোহে ছুটে যেদিন আমায় 

ছেড়ে গেলি!


তবুও তোর জন্যই আমি থাকিl 

অপেক্ষার মিষ্টি প্রহর গুনে,যেন 

নিজের শব কাঁধে নিয়ে রোজ 

জীবনের দুর্গম পথ হেঁটে চলি l


নইকো আমি অঘোরী কোনো যোগী l

তবুও আকাঙ্খার লাশের ওপর বসে 

মৃত ভালোবাসার ছাই মেখে গায়ে  

রোজ প্রেমের উপাসনা করে চলি l


মুখ মুখোশের আড়াল খুলে গেলেl 

কোনো নরম ভোরের মিঠেল আলোর 

দূত্যিতে রেঙে,কখনো অলীক মোহের 

ঘোর যায় কেটে,হয়তো তখন থাকবো 

আমি অনেক দূরে,মিসে যাবো কোনো 

মলয় সাগরে l 


পারলে তখন একবার ফিরে দেখিস l

ছড়ানো ছেটানো পড়ে থাকবে হয়তো তখনো,আমার উপাসনার সকল সামগ্রী l 


মন মাঝারের ভাঙা মেঘের বৃষ্টিতে,

সেদিন না'হয় একটু,একলা একলাই  

ভিজিস l  


**************************************

   ঘরোয়া 

   সায়ন্তিকা 

  

যা কিছু ঘরোয়া ۔۔এই যেমন আমার কবিতারা , আমার কুয়োতলার এঁটো বাসন, আর একটা বাঁশি 

সব তোমার শরীরে মাখিয়ে দেবো আজই !


তারপর তুমি সম্পাদ্য আর উপপাদ্যের মতন হয়ে উঠবে অবশ্যম্ভাবী !


তারপর একদিন বৃষ্টি থেমে গিয়ে মিথ্যে হবে পৃথিবীর সব ভালোবাসাই ۔۔۔


এক সমুদ্র জলের মধ্যে বাসি কচুরিপানা সাঁতরে পেরিয়ে যাচ্ছে , পুরোনো বাঁশিটা সারাদিন ধরে বেজে চলার পরে একটা সময় রাইকিশোরীর বিরহে সুর তোলে ۔۔۔۔۔


কিন্তু যে ভালোবাসার জন্য একদিন কানাই আমার কুঞ্জবন ছেড়ে নগরবাসী হয়েছিলো ,

সেটা তো কোনকালেই মরে গ্যাছে !


তুমি আমাকে একটু ভালোবাসো !

আমি একটু একটু করে নদী হয়ে উঠতে চাই !


যা কিছু ঘরোয়া ۔۔۔۔۔

এই যেমন আমার সব দুঃখ , আমার কান্না۔۔۔۔

সব কিছুতে তুমি পা ডুবিয়ে থেকো !


আমি তোমাকে আরও আরও আরও ভালোবাসবো !


*************************************

           মেঘেদের অনশন

             রতন চন্দ্র রায়


আবাদি জমির মাটি করছে

       খাঁ-খাঁ জলের তৃষ্ণায়.....

বঙ্গোপসাগর তাকিয়ে আছে

       আকাশ পানে।


মেঘেদের অনশন চলছে

        আকাশ পথে......

তপ্তরোদে পুড়ে ছাই হচ্ছে

        আবাদি জমির ফসল।


মানুষের আর্তনাদ

       অলৌকিক শক্তিতে শেষ হলো

মেঘেদের অনশন।


       মেঘেদের একতা ভেঙ্গেছে

পড়ন্ত বিকেলে শীতলবাতাসে

       পথ-ঘাট জলে থৈ-থৈ

করছে চারপাশ।


      নদীর জল ফুলে উঠছে

গঙ্গার তীরে.......

      জলের স্রোতে ভাঙ্গছে পাড়

ভাসছে ঘর-বাড়ি।


       বানবাসী মানুষের হা-হাকার

আশ্রয় জুটছে খোলা আকাশের নীচে

       না হয় কোন স্কুল ঘরে।


কর্মহীন জীবন-যাপন চলছে

       অনেক দিন.......

ত্রাণের আশায় বসে থাকে

       সকাল হতে রাত্রি.....

*************************************

*আমার আপু* 

 মঙ্গল মিদ্যা (রিপল)


ও পাখি আমার মনের ঘরের,

উড়ে যা তুই এবার যারে।

কাঁটাতারের সীমানা ছাড়িয়ে,

একবার দেখে আয় তারে।।

পুতুল পুতুল ভাগ্নিদের নিয়ে,

আপু আমার কেমন আছে।

ভোরের ফুলের সুবাস ছড়িয়ে,

জানিও দূরে থেকেও রয়েছি কাছে।।

আপু আমার ভালো থেকো,

এই পাগোল টারে মনে রেখো !!


ও পাখি সাবধানে দেখিস আগে,

ভুলে গেছে কি আপু মোরে।

তারপরে তুই আসিস ফিরে,

স্মৃতিগুলো দিসনা ফিরিয়ে তারে।।

পাখি তোরে নিয়ে রবো একা।

লিখবো শুধু আমি তোরই কথা।।

পাখি তুই যে আমার প্রিয় সখা।

তুইই শুধু জানবি এই মনের ব্যথা।।


জানি পাখি, এ আমার মনের কল্পনা। 

দেখো আপু আমায় কখনো ভুলবে না।।

দেখো পাখি, আপু আমার সেই আপু আছে।

মরার পর দুজনে যখন যাবো আপুর কাছে।।


আপু তুমি সবসময়ই ভালো থেকো,

আমার আর পাখিকে মনে রেখো.....!!

আপু তুমি ভালো থেকো।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ