শব্দমালা || ধারাবাহিক কবিতাগুচ্ছ || কবি জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়




পোস্ট বার দেখা হয়েছে
অঙ্কন : রিয়া চক্রবর্তী 

কবিতা নিয়ে মিছিলে বেরোবো একদিন

কবিতা নিয়ে মিছিলে বেরোবো একদিন
রাজপথ থেকে হেঁটে যাবো লালমাটি
আলোর শপথ গর্জে উঠবে জেহাদে
উদাত্ত স্বরে প্রত্যয় পরিপাটি

পরশমণির ছোঁয়ায় জাগবে মানুষ
ভুবনগ্রামে একটাই হবে জাতি
ইতিহাস থেকে জীবনের দিশা নিয়ে
হবেই মানুষ সফরের প্রিয় সাথী

অত্যাচারীর হাজার মিনার ডঙ্কা 
ঘৃণার শ্যাওলা মেখেছে আবহমান
মিছিলে মানুষ মাটিতে রেখেছে পা
প্রতিবাদী হাতে মহাকাশ খান-খান

একটা জীবন বহু জীবনের দ্বার
অমোঘ মন্ত্র তোমার অজানা নয়
বন্ধুর পথ হাতে হাত বেঁধে রেখো
তুচ্ছ বিপদ তুচ্ছ অজানা ভয়

গহণে তোমার অমরাবতীর আলো
ব্যস্ত সময়ে হয়তো ভুলেছ তাকে
অবসরে যদি তার চোখে রাখো চোখ
বাড়াও দু'হাত রাঙা নদীটির বাঁকে

কবিতামন্ত্রে উল্কি আঁকবো সকলে
বারুদ সরিয়ে ফোটাবো গোলাপ লাল
ঐক্যের সুরে জনগণেশের গানে
তোমার দু'পায়ে হাটবেই মহাকাল

কবিতা নিয়ে মিছিলে বেরোবো একদিন
রাজপথ থেকে উড়ে যাবে সব ধুলো
সীমান্ত ছোঁয়া গ্রাম থেকে তুমি এলে
কুড়োব আবার ঝরে যাওয়া ফুলগুলো ৷
==
 সম্পর্ক

অমীমাংসিত সম্পর্কের হালকা রোদ এখনও খেলা করে আমাদের মধ্যে। সবুজ
গালিচায় ঝরে পড়ে শুকনো পাতা। স্বচ্ছ জলে কাঁপে স্মৃতিসৌধ। আমরা দু'জনেই
মুঠোফোন বন্ধ রেখে মুখোমুখি বসি।

শহরের রাস্তায় এখন ম্যাস্টিক অ্যাসফাল্ট এর প্রযুক্তি চাদর। পাতা হচ্ছে আধুনিক 
ট্রামলাইন। ঝাঁ চকচকে শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, হাইরাইজ ফ্ল্যাট, ফ্লাইওভার, নতুন
করে সেজে উঠেছে তিলোত্তমা।

তবু রাতে হাওয়ায় যেন ভেসে আসে তির্যক ইশারার ফিসফাস, ভিত থেকে মাটি
সরানোর শব্দ৷ নীল কুয়াশার এক অলীক চাদরে যেন ক্রমাগত ঢেকে যাচ্ছে 
স্বপ্নের অবয়ব৷

আমরা আগের মত আর হাসতে পারি না, কাউকে বিশ্বাস করতে ভয় পাই৷
আমাদের ভালোবাসাবাসিও ক্রমশ যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে ইদানিং৷ আমাদের 
হৃদপিন্ডে অজস্র ছিদ্র এখন, একজন ঝালাইওয়ালার বড় প্রয়োজন আজ৷

তোমার চোখে চোখ রাখলে আমি বুঝতে পারি প্রাচুর্যের সোনালি সংসারেও
বড় নিঃসঙ্গ তুমি৷ অনায়াসে তুমিও আমার সমস্ত গোপনীয়তা পড়ে নিতে পারো
অনুভবী মেধায়৷
 
অমীমাংসিত সম্পর্কের হালকা রোদ এখনও খেলা করে আমাদের মধ্যে৷
পরস্পরের চোখে চোখ রেখে আমরা শুনতে পাই অন্তর্গত প্রবাহের কলতান...
কুয়াশাদিনে পরস্পরের হৃদয়ে আমরা জ্যোৎস্নার প্রলেপ মাখাই৷
===
 রক্তগোলাপ

প্রথম পরিচয়েই তুমি হাতে তুলে দিয়েছিলে রক্তগোলাপ ৷
প্রথম উচ্চারনেই তুমি বুঝিয়ে দিয়েছিলে
তোমার আসা সূর্যনদীর দেশ থেকে ৷
নিভন্ত দিনে রোদ্দুর ছড়িয়ে বলেছিলে
এসেছো তুমি সকলের মুখে রামধনু দেখতে ৷
তোমার নিরুচ্চার লাবণ্যে ধ্বনিত হচ্ছিল
কুয়াশাভেদী আলোকিত প্রত্যয়,সুগন্ধ ৷

ফেলে আসা পথে 
এখনও লেগে আছে শতাব্দীর পলিমাটি 
শব্দরঙের তুলি নিয়ে ভাষাহীনা
দুচোখে বহমানা নদী...

মানচিত্রের সামনে স্থির
ক্যানভাসের রঙ ছুঁয়ে কেবলই উঠে আসেছে
তাজা রক্তের দুঃস্বপ্ন...দীর্ঘশ্বাস...

মায়া আগুন সমুদ্রে তোমার
ক্যানভাসে তুমি রেখে যেতে চাও
উত্তরণের সোনালি স্বপ্ন, ভালোবাসার বীজমন্ত্র ৷
===
 রক্তলেখা

কেমন আছো একলা তুমি বৃষ্টিদিনে!
এখনও কী মেঘকে নিয়ে ছবি আঁকো!
ভাসাও নৌকো দূর ঠিকানায় মনে মনে!
এখন তুমি রাইকিশোরী পরিণত!

কেউ কখনো ভুলতে পারে অতীতকথা!
স্মৃতির পলি খুঁড়ে দেখো দিব্যি আছে
যতই তুমি বদলে ফেলো প্রাচীন পোশাক
ফল্গুধারায় আজো যেন সে সুর বাজে।

কখনও কি ভেবেছিলে বর্ষাদিনে
এক মুসাফির লিখবে তোমায় রক্তলেখা
চিঠি যদি নাই বা লেখো মেঘকে বোলো
বৃষ্টি হয়ে ঝরবে তোমার একলা কথা।

বৃষ্টি রাতে কেমন আছি জানতে কি চাও
বুঝতে কি চাও কেমন থাকে একলা কবি
মেঘলা দিনে সূর্যমুখীর হৃদয় জুড়ে
একলা করে কাছে পাবার প্রতিধ্বনি।
===
 অনুবাদ 

নিবিড় চয়নে তুলে আনা শব্দে
অনুবাদ করতে চাই তোমাকে...

তোমার চোখের নীল অতলান্ত
মেধার অনুচ্চার বিকিরণ
স্বপ্নের রামধনু উড়ান
ঠোঁটের অলীক ইশারা
উষ্ণ শরীরের প্রত্ণ ঘ্রাণ
চিবুকের কালো তিল
আমার কবিতায় মিশেছে বারবার ।

আমি বুঝি, তোমার বহিরঙ্গ অনুবাদ সহজ
আমি তোমাকে অনুবাদ করতে চাই
অস্তিত্বের মর্মমূলে, চৈতন্যের জাগ্রত সত্তায় ।

তোমাকে যত দেখি মুগ্ধতায়
পরতে পরতে খুলতে থাকে রহস্যের দরজা...

আমি জানি, তোমার নীরবতার ভাষা
সহস্র শব্দের থেকেও ধ্বনিময়...
তোমার শুভেচ্ছা অন্তঃসলিলার মতো আমোঘ...
ভালোবাসা শিশিরের মতো পবিত্র...

আমি অনুবাদের অছিলায় কখনো 
ডুব দিই অতলান্তে...
দেখি সময়প্রবাহে বদলে গেছে পোশাক
একই আছে তোমার সুগন্ধ...

জন অরণ্য থেকে ডাক দিলে
আমি ঠিক চিনতে পারি তোমাকে ।
তুমি নির্দ্বিধায় আমার দিকে হাত বাড়াও ।
তোমাকে অনুবাদ করতে করতে একদিন
আদিম প্রকৃতিতে হারিয়ে যাই আমি ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ