দর্পণ | ফেসবুক সাপ্তাহিক নির্বাচিত কলম | কবিতা




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


 
যে লেখা হয়নি এখনও

সঞ্জীব সাহা


সারা জীবন ধরে মন বিশ্বাস করেছে 

বটবৃক্ষের গভীরতম মূলের মত ,

নিশ্চয়ই একদিন আমি

একটা সপ্তকাণ্ড উপন্যাস লিখব ,

যে উপন্যাস উনুনে ফুঁ দিয়ে আগুন জ্বালানো 

মায়ের মুখের বিন্দু বিন্দু ঘামের মতো,

 ফুটন্ত ভাতের শব্দ নিয়ে 

প্রতিটা মানুষের বুকে শব্দ বুনবে, 

বলবে , আমি তোমাকে চিনেছি---

 কিন্তু লেখা হয়নি ।


সুতীক্ষ্ণ বর্শা ভেদ করেছে অন্তর,

আমি যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে

বিশ্বাস করেছি,

 নিশ্চয়ই একদিন এমন একটা গল্প লিখব, 

যে গল্পকে মহাসমুদ্রের অতল থেকে

খুঁজে নিতে পারবে যে কেউ ---

লিখতে পারিনি ।


বিশ্বাস করেছি একটা কবিতা লিখবো ,

যে কবিতা জীবনের অন্তস্তল থেকে উঠে এসে

বুদবুদের মত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে

 ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে ,

প্রতিটা মানুষের মনে বুদবুদ সৃষ্টি করবে ,

ভালোবাসা হয়ে মায়া হয়ে স্বপ্ন হয়ে,

প্রতি মুহূর্তের মৃত্যুকে 

সে দূরে সরিয়ে দিতে দিতে

বাঁচাকে প্রলম্বিত করবে ---

আমি পারিনি ।


ভেবেছি একটা মাত্র বাক্য লিখব আমি,

যা মাটিমাখা গায় গন্ধ ছড়িয়ে দেবে ,

চোখের দৃষ্টি খুলে দেবে সূর্যের আলোয়, 

আমি চাঁদ মাখা জ্যোৎস্না নিয়ে 

সেই বাক্যের সরু পথ ধরে হেঁটে যাবো ---

 লিখতে পারিনি ।


ভেবেছি অন্তত একটামাত্র  শব্দ, 

শুধুমাত্র একটা শব্দ আমি লিখব, 

যে শব্দ সন্ধ্যার আকাশ জুড়ে

 অন্ধকারে অসংখ্য তারা হয়ে ফুটবে ,

 অন্ধকার ভেদ করে আলোকিত করবে পথ,

 তুমি পথ দেখবে, 

সবুজ ঘাসের মাঠে যখন পা ফেলবে ,

যখন শুয়ে থাকবে ,

তখন মনে হবে, 

এই সমস্ত পৃথিবীটা আমার,

আমার ছিল আমার আছে আমার থাকবে,

 সহস্রকোটি বছরের মধ্যে 

এইখানেই আমার জন্ম হয়েছে ,

আমার জন্ম সার্থক ,

আলোয় আলোয় প্রস্ফুটিত হবে

 আমার জন্মভূমি ----


এখনও লেখা হয়ে ওঠে নি সে শব্দ।

--------------------------------------------

.                      •শুদ্ধকথা•

                  অজয় কুমার দত্ত


ভানুবাবু খুব ভালো মানুষ নিপাট ভদ্র অতি

সদাসর্বদা থাকে যে তার ভগবানেই মতি~

বাড়ি ছিল তার পূর্ববঙ্গে কথায় বোঝা যায়

বাঙাল বলে গর্বিত ভানু বোঝান সব কথায়।


বাড়ির কাছে আশ্রমে এক মহাগুরু থাকেন

ভানুবাবু তার শিষ্য হয়ে দীক্ষা নিয়ে নেন~

একদিন তিনি গুরুর কাছে গেলেন সকালবেলা

'পেন্নাম হই গুরুদেব'~শুরু করেন কথাবলা।


গুরুদেব এক বনেদি ঘটি, কোলকাতায়ই বাস

বাঙাল ভাষায় বাক্যালাপে নেই মোটে অভ্যাস~

পছন্দ নয় অমন ভাষা করতে চান না রপ্ত

সাতসকালে বাঙাল কথা শুনেই বিরক্ত।


'পেন্নাম' নয়, কথাটা 'প্রণাম' খেয়াল করে রেখ

একটু শুধু র-ফলা দিয়ে কথাটা বলতে শেখ।'

একহাত বড়ো জিভটা কেটে ভানু লজ্জিত হন~

'আজ্ঞে গুরু ভ্যাম হইছে মাপ কইরা দ্যান!' 


ভ্রু কুঁচকে বলেন গুরু~'বাক্যটা কি রকম?

'ভ্যাম' বলে তো হয় না কিছু, কথাটা হলো 'ভ্রম'!

এতবার তো বলছি তোমায় শুনতে নাহি পাও?

ভ-র নীচে এখানে তুমি আবার র-ফলা দাও।'


বড়োই অবাক হলেন ভানু গুরুর কথা শুনে

এ আবার কি অদ্ভুত কথা ভাবলেন মনে মনে~

'পেত্যেক কথায় র-ফলা লাগান এতো ভারি মজা

আপনেগো ভাষাটা প্রভু নয়তো মোটে সোজা।


সোজা কথারে করতে কঠিন আপনেগো নাই জুড়ি

ভ্যাম কইলে ভুলটা কি হয় কন দেখি তাড়াতাড়ি।'

হাতটা তুলে গুরু করেন আশীর্বাদের ভঙ্গী

মৃদু হাসেন সমস্বরে হাসে তার সব সঙ্গী।


'পেত্যেক' বলে কোন শব্দ নেই তো ডিক্সনারিতে

এখানেও তুমি র-ফলা লাগাও বাক্য শুদ্ধ করিতে~

সঠিক শব্দ হলো 'প্রত্যেক' রাখবে মনে করে

শুদ্ধতাটা বজায় রাখো ভাষায় ও অক্ষরে।'


গুরুর বচন শুনে ভানু অগত্যা শেষমেশ

হাল ছেড়ে দিয়ে ওঠেন বলে~'ব্রেশ-ব্রেশ-ব্রেশ'।

চমকে উঠে গুরু বললেন~'ওরে না না না! 

'বেশ' কথাটাই শুদ্ধ এখানে র-ফলা লাগবে না।'


ভানু বলেন~'কন কি গুরু? আমি আপনের শিষ্য

আপনের কথা সকল সময় শুনুম অবিশ্য! 

এখন থিকা উঠতে বইতে শুদ্ধ কথাই কমু

র-ফলা যখন দ্রিমু তখন সবট্রাইতেই দ্রিমু!'


--------------------------------------------

শয়তানের_শরিয়ত

প্রশান্ত_মুখার্জ্জী



গভীর নিদ্রায় মগ্ন সমাজ! দিবা স্বপ্ন দেখে ঈশ্বর দর্শনের! কিন্তু.... ঈশ্বর.... কোথায় এই ঈশ্বর??

শুরু হয় বিশ্বভ্রমন, মানবজাতি ছুটে চলে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে।।


যাত্রাপথে প্রথম দর্শন আফগানিস্তান।


প্রান্তর মরুভূমি পার করে, অবশেষে পৌঁছে যায় কাবুল কিংবা কান্দাহারের সংকীর্ণ গিরিপথে।।

তীব্র দাবদাহে শুকিয়ে আসে গলা, একটু জল, একটু জল, কেউ একটু জল দাও!!


হঠাৎ.... সম্মুখে দর্শন হয় নরপিশাচ নরখাদকের!


অট্টহাসি হেসে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে সে, কে তুই? আমি....? আমি একজন মানুষ। দেবতার দর্শন করবো বলে বিশ্বভ্রমনে বেরিয়েছি !!

দেবতা......! হা... হা... হা..... দেবতা......!

বল কি বলার আছে, আমিই সেই দেবতা।।


তা কি করে হয়! তুমি..... তুমি যে মানুষ! আমি ভগবান, যিশু, আল্লাহর দর্শনে এসেছি, মানুষের নয়।।


হা... হা... হা..... আমিই তোদের ভগবান, আমিই তোদের যিশু, আমিই তোদের আল্লাহ্।।

আমার শরনাপন্ন হতেই হবে তোদের, মানতে হবে আমার তৈরী করা শরিয়ত। ডাক ওদের, তোদের প্রাণ বাঁচাতে পারবে কি ভগবান, যিশু, আল্লাহ্??


কখনোই তোমার শরনাপন্ন হবোনা আমি, কিছুতেই না!!


তাহলে এই দেখ মৃত্যুবাণ। মৃত্যুর জন্য তৈরী হয়ে যা। কি..... কি এটা....?? এটা.... এটার নাম এ. কে. 47 রাইফেল। এই দিয়ে নিমিষের মধ্যেই আমি তোর প্রাণ নিয়ে নিতে পারি, আবার খুশি হয়ে জীবনদানও দিতে পারি।।

দোহাই..... দোহাই..... আমাকে মেরোনা, আমাকে মেরোনা! আ... আ... আমাকে মুক্তি দাও! আ... আ... আমাকে ক্ষমা করো!!


ক্ষমা..... ক্ষমা আমার ধর্মের বিরুদ্ধে। ক্ষমা আমার বানানো শরিয়তের বিরুদ্ধে। মরতে তোকে হবেই।।


আ... আ... আ... আচ্ছা তুমি কে? ভগবান, আল্লাহ, যিশু-তো কারো প্রাণ নেয়না কখনো, তাহলে তুমি কে? কে তুমি??

আমি.... আমিই তোদের ঈশ্বর। আমি হিংসা।। আমি দম্ভ।। নতজানু হয়ে, নতমস্তকে বল হিংসার জয়।। মেনে নে আমার বানানো শরিয়ত।।


না.... না.... না.... আমি পারবোনা বলতে। কিছুইতেই পারবোনা! পারবিনা?? তবে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে যা।।

কিন্তু এখন নয়! বাঁচিয়ে রাখবো তোকে আরো কিছুক্ষণ। চল তোকে দেখিয়ে নিয়ে আসি আমার ক্ষমতা।।


শুরু হয় মানুষ আর শয়তান হিংসার যাত্রা!!


যাত্রাপথে প্রথমেই একটি প্রত‍্যন্ত গ্রামে পৌঁছে যায় তাঁরা। একটি বাড়ির সামনে গিয়ে দেখে, ছোট্ট বছর পাঁচেকের একটি কন্যা সন্তান চিৎকার করে তার মা'কে বলছে, মা আমিও দাদার মতো পড়াশুনা শিখতে চাই, আমিও ইস্কুলে যেতে চাই... মা!!


মা ছোট্ট শিশুটিকে কাঁদতে কাঁদতে বুঝিয়ে চলেছে, চুপকর.... চুপকর.... মা! শয়তান শুনতে পেলে তোকে মেরে ফেলবে!! এটা শরিয়ত!! আমিও মেনেছি তোকেও মানতে হবে!! আমিও হিজাব পড়ে বন্ধ ঘরে থেকেছি আর তোকেও থাকতে হবে!!


মেয়েটি বলে ওঠে, শরিয়ত....! আমি এমন শরিয়ত মানিনা, আমি হিংসা মানিনা, আমি শয়তান মানিনা, আমি কিছুই মানিনা আর মানবোনা!!


ততক্ষণে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে নরখাদক শয়তান, একটা আওয়াজ....!! মুহূর্তে কেড়ে নেয় প্রাণ!! নিস্তেজ করে দেয় শিশুটিকে!! তার মায়ের কান্না, আর্তনাদ!!


নরখাদক শয়তান বলে ওঠে.... এই মানুষ, এবার বুঝলি আমি কে? আমিই তোদের ভগবান, যিশু, আল্লাহ্।।

চল.... আমার আরও ক্ষমতা দেখাই তোকে; তারপর আবার এগিয়ে চলে তাঁরা।।


সামনে দিয়ে একটি আফগান নারী হেঁটে চলেছে, তাঁর পায়ে ছন্ ছন্ শব্দ...!!

কে..... কে তুই? এখানে কেন? আর পায়ে কিসের আওয়াজ?


মহিলা বলে, কিছুদিন আগে বিয়ে হয়ে এসেছি এই গ্রামে। আমি এই গ্রামের নববধু।।

তোর জানা নেই, পায়ে আওয়াজ করা বারণ!!

কই আমি জানিনা তো এই নিষেধ!!

জানিস না? তবে আর জানার দরকার নেই। হঠাৎ তরোয়ালের এক কোপে মাটিতে ছিটকে পরে নববধুর কাটা মুন্ডুটা!!


মানুষ বলে ওঠে, এ এ এ অন‍্যায়, এ অন‍্যায়, ছেড়ে দাও এদের, ক্ষমা করো এদের!!

ক্ষমা..... ক্ষমা নেই আমার ধর্মে। চল এগিয়ে চল।


আবার শুরু হয় যাত্রা। 


কিছুদূর এগিয়ে যেতেই... দূর থেকে দেখা যায়, কিছু পুরুষ একটি প্রসব বেদনায় ছটফট করা এবং হিজাব না'পড়া মহিলাকে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালের দিকে।।


শয়তান জানতে চায় তাঁদের কাছে, কে এই মহিলা? তোদের সাথে এর কিসের সম্পর্ক?

তাঁরা জানায়, কাজের সুত্রে ওর স্বামী বাইরে থাকে। নিকট আত্মীয় বলে কেউ নেই, তাই পাসের বাড়ির আমরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।।


তোরা এর রক্তের সম্পর্কের কেউ নয়? তোরা পর পুরুষ? ও...ও...ও... তার মানে তোরাও কেউ আমার শরিয়ত মানিস না??


হিজাব না পড়ে, পর পুরুষের সাথে বেরিয়ে যাওয়া এই মহিলা অসতী। এর বাঁচার কোনো অধিকার নেই, এর গর্ভজাত সন্তানেরও বাঁচার কোনো অধিকার নেই।। এই অসতী মহিলাকে ধর্ষণ করে আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে।।


শুরু হয় অত‍্যাচার, প্রথমে ধর্ষণ তারপর তলপেটে ঘুষি, লাথি, সব শেষে গায়ে আগুন!!


চিৎকার করতে থাকে মহিলা, বলে বিশ্বাস করো আমি অসতী নই, আমি সতী, আমি সতী! আমার জঠরে জন্ম তোমাদের! আমিই জন্ম দিয়েছি তোমাদের! আমাকে মেরোনা, আমাকে মেরোনা, আমাকে বাঁচতে দাও, আমাকে একটু বাঁচতে দাও!!


সতীর আর্তনাদে, সারা বিশ্বের মানবজাতির নিদ্রাভঙ্গ হয়! চোখের সামনে উল্কাপাতের মতো নিরিহ মানুষগুলো ঝরে পরতে থাকে আকাশ থেকে!! 


সত্যিই তো....!! কোথায় ভগবান, কোথায় যিশু, কোথায় আল্লাহ্?? কেউতো আসেনি জীবনদান দিতে, কেউতো পারেনি এদের রক্ষা করতে!!


তবে কি এরা সবাই, শুধুই পাথরের মুর্তি? আদৌ বাস্তবে এদের কোনো অস্তিত্ব নেই........??????


--------------------------------------------

           নীরবতার আয়ু

                    মনিকান্ত       

                      

এখন আর আয়নার সামনে আসি না সেভাবে --

সামনে এসে দাঁড়ালেই

চোখের পাশে কেমন যেন ভীড় করে আসে চোরা স্রোত 

আরোও স্পষ্ট হয়ে ওঠে চড়া রঙে ঢেকে রাখা দেওয়ালের ক্ষত, 


অদৃশ্য প্রহর অকারণ মেপে নেয় নীরবতার আয়ু

কিছু ঘাম অজান্তেই ছুঁয়ে যায় অসহায় চিবুক, 


তারপর ফিরে আসা দরজায় জমা হয় অব্যক্ত শোক

মিশে যায় উদ্বায়ী অতীত ও নিথর বর্তমান,  তাই --


আয়নার সামনে দাঁড়ানো হয় না আর -

আসলে নিজেই হয়তো চিনতে ভুলে গেছি নিজেকে ।

       

 --------------------------------------------

আছি স্রষ্টার বাহুডোরে 

   প্রিন্স এ ওয়াকী 

   

কোনো কিছুতেই কখনও 

নিঃসঙ্গ বোধ করি না

ইদানীং! 

যখন তাদের অস্তিত্ব চারপাশ জুড়ে 

কেউ কেউ গোছানো 

কেউ খানিকটা অগোছালো 

কেউ কেউ গড়াগড়ি যায় -

বিছানায় মেঝেতে সারা ঘরময়

শেষ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মননে।


হারিয়ে যাই বৃত্তে বৃত্তে

কল্পরাজ্য থেকে 

মিশরীয় সভ্যতার আদি পাঠ ছুঁয়ে 

ইনকা সভ্যতার দোরগোড়ায়। 

কখনও পথ হাঁটি 

চীনের প্রাচীরের ইতিহাসে।


কবিতার ছন্দে ছন্দে দোলে মন

জাগ্রত হয় মানবতা,

জেগে ওঠে ক্রোধের আগুন 

মিথ্যা জ্বালাতে,

তেপান্তরের কাশবনে সিঁথি কেটে 

ছুটে চলে কুউউ ঝিকঝিক রেলগাড়ি 

অপুর ঘোরলাগা বিষ্ময়ে।

আলাদীনের চেরাগের দৈত্য

বান্দা হাজির ইচ্ছা পূরণের 

নানান আদেশে চোখের নিমিষে। 


ছুটে চলে দুরন্তপনায় 

হাকলবেরিফিন,টমস্যয়ার,গোগল

শ্রীকান্ত আর দস্যি ছেলের দল।

রাজায় রাজায় যুদ্ধ চলে 

প্রাসাদের ভেতরে কুটমন্ত্রণা 

জ্বলে সভ্যতা,অসহায় বসুন্ধরা।


চর্যাপদের কাহিনী ভাসে 

হৃদয়ের চোখেমুখে, 

ছুটির ফাঁদে খোকা হারায় 

অবারিত অজানায় পিছুটানহীন,

পৃথিবীর ছাদে ইস্পাতের কাঠামোয় 

কৃষ্ণাঙ্গ নেতার আহ্বান।

থ্রি-কমরেডস,থ্রি- মাস্কেটিয়ার্স

ত্রিরত্নের নৌবিহার সাথে সিন্দাবাদ,

এবেলাতেও দুর্দান্ত ইচ্ছাটা 

জেগে ওঠে অন্তরে।


দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা

জমিদার দর্পণ,নীলদর্পণ

চিন্তার খোরাক জোগায় ভাবনায়, 

বিষাদ সিন্ধু,মৃত্যুক্ষুধা 

আর শেষের কবিতার ব্যঞ্জনা 

দোলায় আবেগের কান্না।

রবিনহুড,দস্যু বনহুর,বাহারাম 

আর মিথ্যার কাটাকুটি, 

সত্যের জয়গানে 

মানবতার জয় জয়াকার।


কিরিটি রায়,ফেলুদার সাথে 

মাসুদ রানার প্রত্যয়

অপরাধীর নাভিশ্বাস 

ছেড়ে দে মা কাইন্দা বাঁচি 

বিশ্বাসের ঘরে বহে বসন্ত বাতাস।

সুইস ফ্যামিলি রবিনসন,রবিনসন ক্রুসো,

নোঙর ছেড়ার গল্পকাহিনীর 

পদে পদে রোমাঞ্চের স্বাদ।


হ্যামলেট,ওথেলো,দা প্যারাডাইজ অব লস্ট

চিন্তা জুড়ে জমাট গাঁথুনি, 

দা ওল্ড ম্যান এন্ড দা সী 

সাহস যোগায় অকুতোভয় চিত্তে,

দ্যুমো,গোর্কি,ব্যাভেজ,জুলভার্ন

বাদ কেন যাবে এলান পো,শেলী,কিটস, 

আরও আছে জগৎ জোড়া 

রথি-মহারথিদের সৃষ্টির ভীড়ে ভাঙা গড়ার 

রসদ আর ইতিহাসের দায়বদ্ধতা।


আদি রসের গল্পেও আছে নানান প্রেরণা 

হাজার রাতের গল্প যে বন্ধু 

আরব্য রজনী আলিফ লায়লা,

আছ কল্পকাহিনী, প্রফেসর শঙ্কু

কাকাবাবুর তান্ডব, 

নানা অভিযানে কিশোর মুসা রবিন 

আর ইন্ডিয়ানা জোনস,

ভুলে যেতে পারি না আজও 

বনের রাজা টারজানের হাঁক।


ক্লিওপেট্রা, হেলেন ইতিহাসের উপাদান 

কত্ত রকম মিথলজিতে পূর্ণ  আছে সাগর, 

নমরুদের ঔদ্ধত্য, রামাসিসের একচ্ছত্র ঘোষণা 

অরাজকতার অবিশ্বাস্য অবিচার 

আর আস্তাকুঁড়ে ভুলের খেসারত, 

গ্রীক বীরের ভাঁজে ভাঁজে 

রোমানদের উত্থান আর অবিশ্বাস, 

মহাজাগতিক গতিসীমা মেনে 

নিয়তির সূতিকাগার নিয়মের ফাঁদে।


আছে জাগতিক শিক্ষাদীক্ষা 

সৌরজগতের খেল তামাশা,

গানিতিক টেবিলের হিসাবের সাথে 

মানবিক অনুভূতির অনুভব, 

সীমাহীন গন্তব্যে ছুটে চলার

অফুরন্ত সাজসরঞ্জাম, 

পুঁথিতে পুঁথিতে লিপিবদ্ধ 

আচার আচরণের চূড়ান্ত ব্যবহার। 


ধর্মের পথে কতশত পাণ্ডুলিপি 

গোছানো আছে থরে থরে,

ধর্ম শিক্ষায় অন্তর মন অবনত ঈশ্বরে-

"সবার উপর মানুষ সত্য 

তাহার উপর নয়"

অমোঘ সত্য বাণী।


সনাতন বলো,প্রাচীন গ্রন্থ

আছে ঋদবেগ,মহাভারত 

পঠিত হয় ত্রিপিটক, জৈন

ইঞ্জিল,তাওরাত, সকল ঈশ্বরবাদ।


কুরআনের বাণীর আলোয় জ্বলে

আমার অন্তরখানি বিশ্বাসের জোয়ারে,

বারেবারে পঠিত হৃদয় ছুঁয়ে যায়

অলৌকিক আবেগে,

শান্তির সুবাতাসে ধুয়েমুছে যায়

সকল অচ্ছুৎ কুসংস্কার 

সাবলীল উচ্ছাসে ভেসে যায় 

মন প্রাণ ঐশ্বরিক মহিমায়।


নিজেকে মোটেও একা ভাবি না 

গ্রন্থের মাঝেই আছি,

ক্ষুদ্র আমি নিঃস্বতো নই 

হাজার বন্ধুর মাঝে, 

শত শত বছরের অভিজ্ঞতা 

জানান দিয়ে যায় স্বযতনে,

ক্ষুদ্র আমি পথের দিশা পাই 

হাজার গুণীজনে,

সত্যের ধারক মোহাম্মদের 

একনিষ্ঠ অনুরাগী হয়ে। 


হাসিতে খেলাতে বেলা বয়ে যায় 

প্রতিদিন খণ্ডিত গ্রন্থাগারে,

নগন্য আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় 

মহাসাগরের বুকে, 

ডলফিনের ভালোবাসায় 

অলক্ষ্যে আগলে রাখে।


আমি নিঃসঙ্গ নারে বন্ধু

সার্বক্ষণিক অভিযোজনের মাঝেই 

আছি স্রষ্টার বাহুডোরে। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ