দর্পণ | ধারাবাহিক দৈনিক কলম | একগুচ্ছ কবিতা ~ দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 

     ।। একগুচ্ছ কবিতা ~ দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য ।।


   রাতের চাদর

      

( বি.দ্র : রাশিয়ান সাহিত্যের আদলে আমার একটি প্রয়াস)


এবার আয়েশে শোবার মতো ঘরে - 

তোমার বিনিদ্র যাতায়াত গানের সুরে সুরে!  

এলোমেলো ক্যানভাসে উঁকি দিয়ে টেবিল ল্যাম্পের আলো,  

ঘুরন্ত পাখার শব্দে যেনো জীবন কেটে গেলো!  


দু'চোখ জড়ো হয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছে ক্লান্তির ঈশ্বর তুমি,  

আঙুল বোঝেনা সময়, চলেছে - চলছেই তালে তালে!


স্বয়ংক্রিয় ঘড়ির দিকে চেয়ে রয়েছে যে টেবিলের বসে থাকা,  

সব আকাশ যেনো পর হয়েছে চাদরে চাদরে, ঝিমিয়ে রয়েছে জ্যোৎস্নারা একা একা!  


জানলা বোঝেনি এখনও - 

কে আসবে বলেও আসেনি এই রাতে,  

কথা রাখেনি দূরের বটগাছের ছায়া,  

ট্রেনের হুইসেল কুড়িয়ে নিয়েছে নিঃশ্বাস রাতের - 

বিলিয়ে দিয়েছে অজানা স্টেশনের মায়া ! 


এতো সহজ ভাবে বুকে - 

গজলের চলমান শোকে,  

আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে জলবায়ু এই রাত,  

তোমার কথা বলে শোনো,  

একাকী ঘর আমার -

তোমার- শুধু তোমারই থাক!



আবার এসো

        

ঘুম ভাঙলেই তোমায় দেখতে পাবো না আর ,

ঘুমের বুকে তুমি জড়িয়ে ছিলে - 

সবুজ ঘাসে যেমন শিশির ঘুমায়!  

যেমন ঘুমায় শোকের শান্ত নদী পাড়ে পাড়ে - 

স্বপ্নে শুধু তোমার কথাই ভেবেছি!  


পরিচ্ছন্নতা নিয়মিত আসে ঘরের মেঝেতে ঝাঁটার মতো , 

তুমি এসেছো আমার পরিচ্ছন্ন ভালোবাসায় - 

আঁৎকে উঠেছি নরম পরশ গুলোয় - 

বসে আছে আজও বিছানা তোমার ছায়ায়!  


ভাবনার ঝড়ে- উড়েছে গাছের মতো ঘুম - 

আঁকড়ে তবু হাতের নির্ভেজাল বলিরেখা,  

ভয় পাইনা , কষ্ট পাচ্ছি মনে -

ছোট্ট শিশু যেমন খেলে আনমনে!  


কবে আসবে আবার?  

ওভাবে অভিমানে নুয়ে বসে বসে আমার ভালো লেগেছে বেশ - 

নির্মম ঠোঁটে উদ্গ্রীব চুমুরা যেমন - 

সময় ছোটে সব টুকু কাঁধে - সময় ছোটে অকারণ!  


নিলোফার, আবার এসো!  

এসো আমার হয়ে দূরেও যেমন তুমি,  

কথা কম বলে কাজের মানুষ শরীর,  

শুকনো আবেগে দুপুর ফাল্গুনী!



নজরানা

     

আমার ভেতর আমি ঘুমাতে পারেনা এখনও,

রাশিফলে জ্যোতিষ বোধহয় পরের জন্ম খুঁজে দিয়ে গ্যাছে,

সেই অবুঝ পথে ঘর বেঁধেছে হাজার দুঃখ গুলো,

চারপাশে চারাগাছ তোমার অবয়বে পেয়েছে পরকীয়া!


-ইয়াদ ফিরসে স্বপ্না তেরী হ্যর কৌশিশ এয় গালিব;

 লায়া , লায়া মেরা জানাজা ছুঁকে তেরা সায়া!


পবিত্র শরীর যেখানে বিমর্ষ মুচলেকা পদক্ষেপে সচল,

সেই পাঁচিলে পাঁচিলে ঘুটের মতো জড়িয়ে রয়েছে প্রেম,

বোধ হয়তো সেই শেষের কবিতার মতো সচল,

তোমায় না পেয়ে তোমার মতোই দোলাচল !


- ভুল কে ভুলা দিয়া নজরানা উদাসী পহচান পহলেই,

  আজ তো সির্ফ তেরী বারিশ মেঁ আঁখ ভর আয়া!



ফিরে'আসা

    

( রাশিয়ান কবি আনা আখমাতোভার কে পড়তে পড়তে কয়েকটা লাইন লিখে ফেল্লুম)  


কতবার আমি মৃত্যু দেখতে গিয়ে জীবন হাতে ফিরি,

কত সুড়ঙ্গপথ আমার আস্তানা খুঁজে -

গঙ্গা পেরিয়ে মেট্রো সম্প্রসারণের কাজে মাথা ঝুঁকিয়ে কাঁদে,

আমি ঘুরে মরি , সাজানো মুড়ির টিনের মতো দাঁড়িয়ে সময়, 

আমি ঘুরে মরি , নেশার গেলাসের নাচ থেমে থাকে!


তবু টেবিলে রাখা নীল খাম,  

জ্বলন্ত মোমবাতি খবর রাখে - দরদাম করে বাতাসে মিশে , 

জানলা গুলো ঝরা পাতার মতো মুমুর্ষু ; তবু ডাকে; 

চেয়ে থাকে ওভার হেডের বৈদ্যুতিক তার,  

সিনেমা চলতে চলতে হঠাৎ লোডশেডিঙের মতো মন,

বিদ্রুপ সয়েছে কতকাল, তবু আপন!


ফিরে আসে জীবন,  

চাষা নেই, বন্ধ গেটের বাইরে ঝাণ্ডায় মিশে শ্রমিকের দেহ নেই, 

নেই খিদে পেটে সাইকেলের শুকনো খটখটে চেন,  

ফুটপাতে পরে রয়েছে ভাঙা বাঁশির পুরানো আশ্বাস ,

নেই ব্যানার, নেই হোডিং - বিপ্লব - ধর্ষণ - নিন্দা - 

কেউ কোথাও নেই - 

সকলকে শ্মশানে রেখে -

জীবন ফিরে আসে! আমাকে সাথে নেবে বলে!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ