সংক্ষিপ্ত "সময়ের" ডায়েরী ~ সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

সংক্ষিপ্ত "সময়ের" ডায়েরী

সাবিত্রী জানা ষন্নিগ্রহী


সময়ের অতীত

আমরা মুখে কথা বলি। তার তো কোন সংখ্যা নেই। নেই সব কথার সার্থকতা। সময় ভেবেছিল যা কথা বলছি তা সত‍্যি। সময় তো ভবিষ্যৎ ভাবতে পারে না। সময় কেবল অতীতের হিসেব দেয়। আমি যার সময়ের কথা বলছি তার জীবনের "একটাই ব্রত ছিল সে কোন অন‍্যায়ের সাথে হাত মেলাবে না---কাউকে এক পয়সা ঠকিয়ে নেবে না---কাউকে কষ্ট দেবে না। যদি কারোর সাথে কোন দ্বন্দ্ব আসে তো অন‍্যায়ের প্রতিবাদ অন‍্যায় করবে না। যুক্তি দিয়ে বোঝানো--ঠিক---ভুল। জীবনে চলার পথে আর একটি ব্রত ছিল--কারোর নামে মিথ্যা কথা বলে অন‍্যের কাছে ভালো না সাজা"।। এটা কি বাস্তবে সম্ভব হয়????  একমাত্র ইচ্ছে ছিল আমৃত্যু পড়াশোনার মধ্যে সময় কাটাবে। আর শেষ জীবনে দিনের একটু সময় ঘরের এককোণে বসে "কৃষ্ণের সাথে অন্তরের কথা বলবে"। কি কথা বলবে????----

//আমি যদি কারোর কাছে জ্ঞানতঃ অপরাধ করে থাকি তো তাকে বলো আমায় ক্ষমা করে দিতে।

//আমার সংসারে যারা আমার সাথে থেকেছে তাদের কোন অন‍্যায় করতে দিও না।

//যারা আমার সাথে অন‍্যায় করেছে আমার দ্বারা তাদের কোন শাস্তি দিও না। তারা তাদের ধর্ম রক্ষা করেছে। তোমার কাছে তাদের জন্য কোন শাস্তি আমি চাই না।

//আর চাইবে ভুলঠিক সিদ্ধান্ত নিতে যাদের পাশে দীর্ঘদিন থেকেছি তারা সহজ--সহজ অসহায়। তারা পড়াশোনা, পরোপকার ছাড়া আর কিছু জানে না---তাদের দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দিও না।

//আর চেয়েছে "শাশুড়ির দেওয়া মৃত্যু সজ্জায় আশির্বাদ নিয়ে যেন শ্বাশুড়ীর সন্তানের সেবা করতে পারে"।


সময়ের বর্তমান

       সময়ের মানুষটির বয়স হয়েছে মাত্র ৬৭ বছর। ৪০ বছর অতিক্রম করেছে একটি মানুষের সাথে--যে কিনা কেবল বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিজেকে ব‍্যাপ্ত রেখেছে কেবল সমাজের উপকারের জন্য। বহু আঘাত পেয়েছে মানুষটি--কিন্তু সামলে নিয়েছে--সামলে দিয়েছে পাশে থাকা "সময়ের মানুষটি"। কত মানুষের দেওয়া কত অপবাদ--কত মানুষের দেওয়া অপমান মাথা পেতে বরণ করেছে। বুকের ভেতর পাথরচাপা দিয়ে রেখেছে কিন্তু মুখ ফুটে কিচ্ছু বলতে পারেনি। বুকের বামে তিনটি স্টেন নিয়ে আজ অসহায় "সময়ের মানুষটির" জন‍্য-- জীবনসঙ্গিনীর জন্য। 


       সময়ের মানুষটির "বুকের দুটো ফুসফুস "বিশ্বে পরিচিত দুটো অসহায় সন্তান--যারা কোভিড পরিস্থিতিতে বাইরে আটকে আছে। চাকরি হারাণোর ভয়ে বাবা মায়ের কাছে ফিরতে পারছে না। এ হোল সময়ের মানুষটির --বর্তমান সংসারের খবর। সময়ের বর্তমানের আর একটা ছোট্ট কথা আছে। সে হঠাৎ কোন এক ছোট্ট ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। আশেপাশে আছে পুরুষ--মেয়ে মিলিয়ে দশজন। তার নিজের একটি আড়াইফুট--সাতফুটের একটি বিছানা। টাকা দিয়ে কেনা। তার নিজের বাড়ি--স্বামীর দেওয়া। সব ফেলে আজ এই আড়াই ফুটের বিছানাটাই তার সবচেয়ে আপন। আর স্বজন?????? বলতে অপরিচিত বয়স্ক কিছু বৃদ্ধ--বৃদ্ধা--দু'জন সেবিকা--আরো কয়েকজন---তাদের পরিচিতি জানা নেই। সময়ের মানুষটি--কোন একদিন যাদের পাশে ছিল---এখনো আছে----আর যারা তার একেবারেই নিজস্ব----সবাই কায়মনোবাক্যে সময়ের মানুষটির সুস্থ কামনা করছে। আর "যারা আন্তরিকভাবে মানুষটির মৃত্যু চেয়েছে---হ‍্যাঁ চেয়েছে--কেবল নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য--চেয়েছে সম্পদ পাওয়ার লালসায়--চেয়েছে ভোগ দখলের তীব্র চাহিদায়"--তারা তাদের জীবনের সাথে সময়ের মানুষটির জীবনের সম্পর্ক এখানেই দাঁড় করিয়েছে"। আচরণে---কথাবার্তায় ---বুঝিয়ে দিয়েছে---তারা না শিক্ষা--না চায় যুক্তি--না চায় কোন সম্পর্ক--- কেবল চায় অন‍্যের সম্পদ অন‍্যায়ভাবে ভোগ করতে-।।

তাদের দোষ ও তো দেওয়া যায় না। চাহিদার বিবাদ---কেউ চেয়েছে কেবল শিক্ষা--সৎ জীবনযাপন--অসৎসঙ্গ ত‍্যাগ----আর কেউ চেয়েছে--এর বিপরীতে যেনতেন প্রকারেন অন‍্যের সম্পদ ভোগদখল। অন‍্যের সম্পদ ভোগদখল করা সবথেকে সহজ যারা নিজের সম্পর্কযুক্ত বা পাশের প্রতিবেশীদের। যতই সৎ থাকার চেষ্টা করেছে ততই শত্রু বেড়েছে। এ তো তথাকথিত বিশ্বের নিয়ম।

আসলে সময় তো অনেক কথা বলে। ভুল--ঠিক তার তো সীমানা নেই।  চল্লিশ বছর পর নিজের বাড়িতে ঢোকার প্রবেশপথ বন্ধ। 

কি হোল?????? ""ঠিক যেন উত্তর পেলাম---হেথা তোমার নাহি ঠাঁই""----সময়ের মানুষটির যে "বনভিলা" বাড়িটার গেটে ঢোকার জন্য কোনদিন কোন বাধা পায়নি--হঠাৎ বাধা। ব‍্যাপারটি বুঝতে একটু সময় নিতে হোল। ----অন‍্যেরা এসে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে গেল।

সময়ের মানুষটি বাড়িতে ঢুকেই ছুটেছে তুলসীমঞ্চের দিকে। তুলসী গাছ বলছে ""তোমার বিপদ""।----গাছের পাতাগুলো নেই। সবুজকান্ড আছে। পরদিন সকালে বাগান থেকে তুলসী চারা তুলে পাশেই লাগিয়ে দিলে। তখনো মাথায় আসেনি কি বিপদ আসতে চলেছে। বিপদ এলো সম্পদে নয়---শরীরে। অজান্তে ভেতরে আশ্রয় নিয়েছে এক অবাঞ্ছিত ধন। ----"পাথর"। তাকে নাকি উপড়ে ফেলতে হবে। তা কয়েকদিন অপেক্ষা করলে ও চলবে। না শরীর উত্তর দিল---আর দেরী নয়। কোথায় ডাক্তার, টাকা পয়সা, অ্যাম্বুলেন্স, লোকবল--দু'দিনের মধ্যে সব ব‍্যবস্থা করে অ্যাম্বুলেন্স চলেছে--কলকাতামুখী  চিকিৎসার বিখ্যাত জায়গায়। সাহায্য করলেন দেড়বছরের আলাপী কিছু মানুষ। 

"ফিরবো কি ফিরবো না জানি না"---সাত থেকে চৌদ্দদিনের অস্থায়ী আবাসে সময়ের মানুষটি নিজেকে গুঁজে দিলে। ---আরে এ কি বিপদ!!!! শরীরকে নাকি বিশ্ববিখ্যাত কোভিড ভালোবেসেছে। শরীরে তার ভালোবাসার তো কোনরকম প্রকাশ নেই। সাতদিনের সাথী হলেন কয়েকজন বৃদ্ধ--বৃদ্ধা। কেউ অজস্র ভুল বকে যাচ্ছে। কেউ বা রাগারাগি করছে কেউ বা নার্সদের বলছে দেখে নেবো তোমাদের। কোভিডবাবুর ভালোবাসার অন্ত নেই। এতো ভালোবাসা কোথা থেকে পেল কে জানে। সময়ের মানুষটি অপেক্ষা করতে জানে, জানে মেনে নিতে--সবকিছু। কারণ "সময়" তার সাথী।


সময়ের ভবিষ্যৎ

বলতে পারছে না। সময়ের মানুষটি এসেছিল শরীর থেকে পাথর ছুঁড়ে ফেলতে। না হোল না। শরীর থেকে কোভিডবাবুর ভালোবাসা ত‍্যাগ করার পর ফিরে যাও নিজগৃহে। ফের চেষ্টা করো--দেখো পাথরটা কিভাবে বাইরে যাবে। সময় বলবে----কি হবে!!!!

---আগামী দিনের জন্য অপেক্ষা----

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ