পোস্ট বার দেখা হয়েছে
দাগ থেকে গেছে
নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত
মাকে সঙ্গে নিয়ে তার নিজস্ব নার্সিংহোমে একটা বেডের সামনে এসে থমকে দাঁড়াল শীরীন দাস। শয্যায় শায়িত রয়েছে দীর্ঘদেহী বয়স্ক এক ব্যক্তি।নিদ্রিত অথবা সংজ্ঞাহীন।
: দাঁড়ালি কেন?কোথায় যাবি চল্।কী যেন দেখাবি বললি।
: দেখাব মা,দেখাতেই তো এনেছি তোমাকে।নার্স.....তার ডাক শুনে এক তরুণী নার্স এগিয়ে এল।
: এঁর মাথাটা হালকা হাতে একটু সরিয়ে দিন তো,যাতে মুখটা ভালোভাবে দেখা যায়।
নার্স নির্দেশ পালন করল।
: ভালো করে দেখ তো মা,এঁকে চেনো কি না।শয্যাশায়ী ব্যক্তিটির দিকে ইঙ্গিত করে বলল ডাক্তার শীরীন দাস।
শায়িত ব্যক্তির মুখের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন বিভা দেবী। এক পলক স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে কেমন কেঁপে উঠলেন।পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে তীব্র কণ্ঠে বলে উঠলেন, না তো। তুই কি এঁকে দেখাবার জন্যেই আমাকে জোরজুলুম করে বাড়ি থেকে নিয়ে এলি?
নিজের ভুল বুঝতে পেরে মুচকি হেসে শীরীন বলল,না মা।তোমার কথামতো গোপাল ঠাকুরের একটা মূর্তি আনিয়েছি। সেটা কোথায় বসালে ভালো হবে তা বলে দাও।এসো...
সেখান থেকে চলে আসতে গিয়ে পা দুটো কেমন ভারী ভারী মনে হল বিভার।আচ্ছন্নের মতো ছেলেকে অনুসরণ করে সবকিছু করলেন কিন্তু মন পড়ে রইল নার্সিং হোমের কেবিনের তিন নম্বর বেডে যেখানে দীর্ঘদেহী এক অশীতিপর বৃদ্ধ অসহায় শুয়ে আছেন।বুঝতে পারলেন যতই চেষ্টা করা যাক সব দাগ সবসময় সম্পূর্ণ মুছে ফেলা যায়না ।তাঁর চোখের গোপন পর্দায় বার বার ভেসে উঠছিল প্রায় চল্লিশ বছর আগের একটা ছবি।সেটাও একটা কেবিনের। তবে নার্সিংহোমের নয়,সরকারী হাসপাতালের।
# # # # #
হাসপাতালের বিছানায় দরজার দিকে পিছন ফিরে শুয়ে আছেন বিভা দেবী।স্বামী ঘরে ঢুকে গলা খাকারি দেন ।বিভা ধিরে ধীরে পাশ ফেরেন।
: কেমন আছো বিভা?
: ভালো।ও কোথায়?
: কার কথা বলছো?
: আমার বাচ্চা। ওকে আমার কাছে দেবে না?
: কেন দেবে না? তুমি সুস্থ হলেই তোমার বাচ্চা তোমার কাছে দেবে।
: আচ্ছা তুমি জানো,আমার কী হয়েছে? ছেলে,না মেয়ে?
: তুমি দেখো নি?
: আমি শুধু ওর মুখ দেখেছি।গোটাটা দেখি নি।ওরা তাড়াতাড়ি ওকে সরিয়ে নিয়ে গেলো।এক সিস্টারকে জিজ্ঞেস করলাম, সিস্টার আমার কী হয়েছে, ছেলে, না মেয়ে? তা উনি কোনো উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন।
: তখনো তুমি সুস্থ হও নি,তাই হয়তো বলেনি।
: মানে?ও বেঁচে আছে তো?সুস্থ আছে তো? উদ্বিগ্ন জিজ্ঞাসা বিভার।
: হ্যাঁ, হ্যাঁ, বেঁচে আছে।সুস্থ আছে।কিন্তু....
: কিন্তু? কিন্তু কী গো?
: তুমি ওর কথা ভুলে যাও বিভা।
: ভুলে যাবো! ভুলে যাবো মানে?
: ও তোমার কেউ নয়।ও আমাদের কেউ নয়।ও মুস্তফি বংশের কেউ নয়।
: এসব কী বলছো! তোমার কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে?মেয়ে হয়েছে, তাই না?তাই বুঝি এসব আবোলতাবোল বকছো?
: না গো, না। তোমার মেয়ে হয়নি।তোমার ছেলেও হয়নি।হয়েছে একটা ট্রান্সজেন্ডার।একটা হিইই....
: কী! কী হয়েছে?
: ছেলেও না,মেয়েও না। একটা হিজরে।ভালো বাংলায় বৃহন্নলা।তাই তো বল্লাম,ও আমাদের কেউ না।ওকে ভুলে যাও।
বিভা স্তম্ভিত হয়ে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ বসে থাকেন।
: খুব আঘাত পেলে,তাই না বিভা?তবে চিন্তা কোরো না কয়েক দিনের মধ্যেই ওকে ওদের হোমে পাঠাবার ব্যবস্থা করবো।
: না।কিছুতেই না। চীৎকার করে ওঠেন বিভা।
:ও আমার গর্ভের সন্তান। আমি ওকে মানুষ করবো।
: তা তুমি পারবে না বিভা।হিজরে....আই মিন বৃহন্নলারা খোঁজ পেলে ওকে জোর করে নিয়ে যাবে।
: আমাদের....আমার সন্তানকে ওরা জোর করে নিয়ে যাবে? মগেরমুলুক নাকি?
: এসব ক্ষেত্রে তাই হয়।ওদের জোরটা সবাই মেনে নেয়।আমাদেরও মানতে হবে।
: না,কিছুতেই না।
: আচ্ছা সে দেখা যাবে।তুমি অতো উত্তেজিত হোয়ো না।চুপ করে শুয়ে বিশ্রাম নাও।
সুনীল বেরিয়ে যায়।ছাদের দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে এক কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তরুণ ডাক্তার সুনীল মুস্তফির সুন্দরী সহধর্মিণী বিভা দেবী।
# # # # #
শীরীনের নার্সিং হোম থেকে বেরিয়ে কীভাবে কখন নিজের বাড়িতে এলেন বিভা কিছু মনে নেই।শুধু মনে আছে তিন নম্বর কেবিনে রোগ শয্যায় শায়িত লোকটার দিকে ইঙ্গিত করে শীরীনের উক্তি : দেখো তো মা,এঁকে চিনতে পারো কি না।এবং উত্তরে তাঁর নিজের বলা কথা--না তো।স্মৃতির পর্দায় বারবার ফিরে আসছিল সেই খণ্ড চিত্র। এবং তার আগমন পথ ধরে প্রায় চল্লিশ বছর আগেকার কিছু ঘটনার চিত্রমালা।
এক বাল্যসখির ঠিকানা সম্বল করে মাস খানেক বয়সের শিশু সন্তানকে বুকে আঁকড়ে ধরে দুঃসাহসে ভর করে সেদিন ঘর ছেড়েছিলেন বিভা মুস্তফি।পথে এয়োতির যাবতীয় চিহ্ন মুছে ফেলে ক্যান্সারাক্রান্ত প্রত্যঙ্গের মতো মুস্তফি উপাধি ছেটে বাদ দিয়ে আবার বিভা দাস হয়ে সখির কলকাতার বাড়িতে গিয়ে উঠবেন।কিন্তু ভাগ্য বিরূপ।উল্টোডাঙ্গার কাছাকাছি তাঁর ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।দুটি বগি লাইনচ্যূত হয়।বিভা যে কামরায় ছিলেন তার অনেকেই অল্পবিস্তর আহত হন।আহত হন বিভাদেবীও।তবে তাঁর কোলের বাচ্চাটি ছিল সম্পূর্ণ নিরাপদ। বিভাদেবীকে রেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দিন কয়েক পরে ছাড়া পেয়ে মহা আতান্তরে পড়েন বিভাদেবী। কোথায় যাবেন?হাসপাতালের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন।কিন্তু বিভাদেবীর বাল্যসখির দেওয়া ঠিকানায় কাউকে খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন।অসহায় বিভা বাচ্চাকে বুকে আঁকড়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠেন। তাঁকে ঘিরে ছোটখাটো একটা ভিড় জমে যায়।পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন প্রৌঢ় চিকিৎসক গণেশ রায়। সব শুনে এবং মহিলার কেউ নেই জেনে তিনি তাঁকে সঙ্গে করে তাঁর কোয়ার্টারে নিয়ে আসেন।
বিভাদেবীর বুকের সিন্ধুকে সযত্নে তুলে রাখা সেসব স্মৃতি এখনও অমলিন। সময় তাতে দাঁত ফোটাতে পারেনি।নিঃসন্তান চিকিৎসক দম্পতি ধীরে ধীরে আঁকড়ে ধরলেন বিভা ও তাঁর সন্তানকে।আজকের ডক্টর শীরীন দাস অনেকটাই সেই গণেশ রায়ের নির্মাণ।
বিভাদেবীর অতীত জীবনের এসব কথা শীরীনের জানার কথা নয়।বিভা তাকে কখনও কিছু বলেন নি।মা অনিচ্ছুক জেনে শীরীনও কোনোদিন তাঁকে পীড়াপীড়ি করে নি। তাহলে আজ কেন শীরীন তাঁকে সুনীল মুস্তফির রোগ শয্যার পাশে নিয়ে গিয়ে এমন প্রশ্ন করে বসল?কী করে জানল সে? নিশ্চয়ই জেনেছে। কে জানাল তাকে? কাকাবাবু ডক্টর গণেশ রায়?তাঁর দরদী মনের পরিচয় পেয়ে একদিন একমাত্র তাঁকেই সবকথা খুলে বলেছিলেন বিভা।সঙ্গে সঙ্গে অনুরোধ করেছিলেন এসব কথা তিনি যেন শীরীন বা অন্য কাউকে কখনও না জানান।কাকাবাবু কি তাহলে তাঁর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন?
মৃত্যুর কয়েক দিন আগে কী এক কর্তব্যবোধে ডঃ গণেশ রায় একলা পেয়ে শীরীন কে জিজ্ঞেস করেছিলেন : তুমি কি তোমার পিতৃপরিচয় জানো দাদুভাই?
: না,দাদূ। মা জানান নি।ছোট বেলায় জিজ্ঞেস করেছিলাম।।উত্তরে মা বলেছিলেন আমাকে তিনি কুড়িয়ে পেয়েছেন। কোথায় কীভাবে কুড়িয়ে পেয়েছেন তার উত্তরে এক একসময় এক এককথা বলেছেন। আরও বড় হয়ে বুঝতে পেরেছিলাম মা এ প্রশ্নে বড়ই বিব্রত বোধ করেন।তাই আর কোনোদিন জানতে চাই নি।
: জানতে চাও তোমার বংশ পরিচয়, পিতৃপরিচয়? যদিও বিভাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সে-সব কথা কখনও তোমাকে জানাব না।কিন্তু সে তো প্রায় চল্লিশ বছর আগের কথা।সেই সময়ের রাগ অভিমান এতদিনে নিশ্চয়ই স্তিমিত হয়ে গেছে। অতঃপর বৃদ্ধ গণেশ রায় শীরীনের জন্মকথা সবই ব্যক্ত করে বলেছিলেন, সুযোগ পেলে জন্মস্থান ও যদি বেঁচে থাকেন তবে জন্মদাতা মানুষটিকে একবার দর্শন করে এসো।সেই থেকে ওপার বাংলার নীলফামারি, কুখাপাড়া, সুনীল মুস্তফি ইত্যাদি নাম তার স্মৃতিপটে একেবারে মুদ্রিত হয়ে আছে।
তাই উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবা পেতে বাংলাদেশ থেকে আসা এক রোগীর নাম ও রোগের বিবরণ পড়তে পড়তে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল বিশিষ্ট হৃদরোগ চিকিৎসক শীরীন দাস। এই লোকটিই নিশ্চিত ভাবে তার ঔরসদাতা সুনীল মুস্তফি।রোগীর সাথে আসা তাঁর এক আত্মীয়ের কাছে থেকে তাঁর বাসস্থানের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে যায় সে।মনে পড়ে যায় গণেশ দাদুর কথাগুলো: সেই সময়ের রাগ অভিমান এতদিনে নিশ্চয়ই স্তিমিত হয়ে গেছে। তাঁর কথার ওপর নির্ভর করে মাকে নার্সিং হোমে নিয়ে গিয়ে শীরীন বুঝতে পারল বিভার রাগ অভিমান কিছুই স্তিমিত হয় নি।বরং নিষ্ঠুর সেই মানুষটার প্রতি তাঁর রাগ অভিমানের সাথে তাঁর ঘৃণা ও বিদ্বেষ দলা পাকিয়ে দুটি মাত্র শব্দে শীরীনের দিকে ছু্ঁড়ে মেরেছিলেন।তীব্রকণ্ঠে বলেছিলেন : না তো।
বাড়ি ফিরে এসে নিজের মুখোমুখি বসল শীরীন। :লোকটা কে শীরীন?
: কেন? আমার বাবা।
: বাবা! হা-হা-হাঃ-হাঃ(অট্টহাস্য)মানে পিতা? কাকে পিতা বলে জানো তুমি? সংস্কৃত পা+তৃ---তাই তো?যার অর্থ পালনকর্তা। তা সুনীল মুস্তফি কবে তোমাকে পালন করলেন?তিনি তো তোমার পিতৃত্বই অস্বীকার করেছেন।
: না,না,ঠিক অস্বীকার করেন নি...
: করেন নি? তাহলে তোমাকে নিয়ে তোমার মা পালিয়ে অজ্ঞাতবাসে গেলেন কেন?
: আমাকে বাঁচিয়ে রাখবেন বলে।
: অজ্ঞাতবাসে না গেলে বুঝি বাঁচান যেত না?
: তা কেন,তা কেন?
: আসলে তাই?তোমার মা তোমার বাবার মনোভাব ঠিক ধরতে পেরেছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন, তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তাঁকে অজ্ঞাতবাসে যেতেই হবে।চেহারায় ভদ্রলোক হলেও সুনীল মুস্তফি মানসিকতায় একজন ঘাতক। এটা হয়ত তোমার মা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তোমাকে বাঁচানোর স্বার্থেই তাঁকে অচেনা অজানা মানুষদের মাঝে নিজের বাসস্থান খুঁজে নিতে হয়েছিল। এমন একজন বিশ্বাসঘাতকের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার কোনো যুক্তি নেই।
: রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল না হলে চিকিৎসা হবে কী করে?
: সুনীল মুস্তফির চিকিৎসা করতে কে তোমাকে মাথার দিব্যি দিয়েছে? এখনও সরে পড়।নয় প্রতিশোধ নাও।প্র-তি-শো-ধ...।বিশেষ পরিস্থিতিতে হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া শীরীনের অন্তর্ধান।
: সে কী!আমি যে একজন চিকিৎসক। একজন রোগীর প্রতি একজন চিকিৎসকের মনে যতটুকু সহানুভূতি থাকে,থাকা উচিত, আমার মনেও ততটুকু...... কিন্তু, কিন্তু মা?মায়ের মনেও কি.......আমি তো মায়ের মুখের কথার সাথে তাঁর চোখের ভাষা মেলাতে পারছি না। আমি কি.......
সেদিন ডক্টর শীরীন দাসই প্রভাবিত করেছিল বিভার সন্তান শীরীন দাসকে।জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুস্থ করে তুলেছিল নীলফামারির ধনী ব্যবসায়ী সুনীল মুস্তফিকে।
প্রায় বছর খানেক পরের কথা।নিজের বাড়ির চেম্বারে রোগী দেখছে শীরীন। আজকাল সকাল বেলাটা নিজের বাড়িতেই রোগী দেখে। দশটার আগে নার্সিং হোমে যাওয়া হয়ে ওঠে না। রোগী দেখা শেষ করে উঠি উঠি করছে এমন সময় একটা স্লিপ এলো।তাতে লেখা সুনীল মুস্তফি, নীলফামারি।ভেতরে আসার অনুমতি পেয়ে শীরীনের চেম্বারে প্রবেশ করলেন সুনীল মুস্তফি। সঙ্গে তাঁর ভাইপো অনিল মুস্তফি।
: এ কী! আপনি? আবার কেন? দু',দুবার তো চেক আপ হয়ে গেছে।
: আমি আমার ভগবানের সাথে দেখা করতে এলাম। সুনীল বলেন।
: ভগবান! কে সে?
: আপনি।আপনিই আমার ভগবান ডাক্তারবাবু।বয়সে ছোট,নইলে আমি আমার ভগবানের পদস্পর্শ করে প্রণাম করতাম।
ঈষৎ রুক্ষ স্বরে শীরীন বলে: এসব কী বলছেন বলুন তো? আমি ভগবানও নই,ভগবতীও নই।আমি নিছক একজন ডাক্তার। আর ডাক্তার বলেই মানুষ কিছুটা কদর করেন।এই যা।
: সত্যি ডাক্তারবাবু,আপনার মতো মানুষ....
: মানুষ!আপনি আমাকে মানুষ বলছেন?এই ডাক্তারি বিদ্যাটুকু পেটে না থাকলে আপনি আমাকে মানুষ বলে মেনে নিতেই পারতেন না।এখন আপনি আসুন,আমাকে এক্ষুনি নার্সিং হোমে যেতে হবে। অনেক দেরি হয়ে গেছে।আসুন প্লিজ।
বিস্মিত অনিল মুস্তফি জানতে চান : ডঃ দাস,আপনি হঠাৎ এতটা উত্তেজিত হয়ে পড়লেন কেন বুঝতে পারছি না।আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে বেহালায়। গতকাল ছিল তার ছেলের অন্নপ্রাশন।মেয়েটা ছিল তার সুনু দাদুর অর্থাৎ আমার কাকুর ন্যাওটা। তারই আবদারে তার ছেলের অন্নপ্রাশনে যোগ দিতে কাকু কলকাতা এসেছেন। অন্নপ্রাশনের হুল্লোড় মিটতেই কাকু আপনার সাথে দেখা করার জন্য উতলা হয়ে ওঠেন।কাকু কিন্তু সত্যি আপনার গুণমুগ্ধ। নতুন জীবনদানের জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।তাই আপনাকে....
: বাস্ বাস্।আর না। আসুন প্লিজ।
এরপর কাহিনি অতি সংক্ষিপ্ত।নতমস্তকে হতভম্ব অনিল ও সুনীল মুস্তফির নিষ্ক্রমণ।সহসা শীরীন লক্ষ করে দরজার বাইরে কে যেন দাঁড়িয়ে।
: কে ওখানে ?কৌতূহলী শীরীনের কথা শুনতে পেয়ে বিভাদেবী ছুটে চলে যেতে উদ্যত হন।শীরীন তাঁকে ধরে ফেলে।তারপর মায়েপোয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘক্ষণ অশ্রু বর্ষণ।
************************
মরীচিকা
জয়ন্ত অধিকারি
-কত বছর কমপ্লিট হল যেন?
-এই তো , নয় বছর।
-ন বছর? বাহ। তাহলে তোদের বিয়ের ন বছর পূর্ণ হল। খুব ভাল । খুউউউইউব ই ভাল। কী খাওয়াচ্ছিস আজকে?
-সব কথা বাইরে দাঁড়িয়ে বলবেন নাকি দাদা। ভেতরে তো আগে আসুন। আর রানু'দি কোথায়?
-ওই তো...আসছে। তোদের জন্য যা একখানা গিফ্ট নিয়ে এসেছি...হেহেহে। সে কোথায়? অফিস থেকে ফেরেনি?
-ফিরে এসেছে। তারপর আবার বসেও গেছে কাজ নিয়ে। ওই একটা প্রেজেন্টেশন পাঠাতে হবে। কাল করলেও চলত। কিন্তু ওকে তো জানেন। আপনি যান। ভেতরেই আছে ও। আর আজ আপনাদের পছন্দের সব কিছু রান্না করেছি , আমি। নিজের হাতে।
আর ও কয়েকজন চলে আসে কিছু সময়ের মধ্যে। হাসি ঠাট্টা আড্ডা আনন্দে উল্লাসে কেটে যায় সুন্দর সন্ধেটা। খাওয়া দাওয়া শেষে রানু'দির সাথে বারান্দায় কথা বলছিল উমা।
রানুদি হাসতে হাসতে বলে ওঠে,
-তোকে, তোদের দুটিকে দেখে খুব ঈর্ষা হয় রে। এত প্রেম তোদের দুটোর মধ্যে! তোদের বাচ্চাটাও এত মিষ্টি...মনে হয় চটকে দিই।
দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে উমা বলে,
- নয় বছর। খুব একটা কম সময় তো না, তাই না রানু দি? আজ ও কিন্তু আমার কাছে প্রেম, ভালবাসা আসলে মরীচিকা।
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রানু'দি...
সমাপ্ত
0 মন্তব্যসমূহ