দৈনিক কবিতা গুচ্ছ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে
                                                 অঙ্কন : লাবনী সরকার 



স্মৃতির লাল শালু
এ কে আজাদ

জানি আজ ভেঙে গেছে অপেক্ষার শরীর,
রাত্রির গা বেয়ে শিশিরের সাথে মিশে গেছে
মন ও মননের সব পাঁচালী।

আবেগের ফুলগুলো কী অবলীলায় তুলে দিয়েছো রাত্রির অন্ধকারে ধেয়ে অাসা অস্ত্রধারী খুনীর হাতে, 
কী লীলাতেই না মেতেছো ওগো লীলাময়ী!
বুঝে গেছি - লোভের নাগরদোলায় বড্ড মজা পেয়েছো নন্দিনী!

বেশ তবে সেই কেলিতেই মেতে উঠুক তোমার রজনীগন্ধা শরীর!
সেই অন্ধকারের গলিতেই হারিয়ে যাক মায়ার মন্দিরে সাজানো তোমার প্রতিমা হৃদয়।

একবুক রক্তাক্ত হৃদয় নিয়ে এইবার না হয় ফিরেই গেলাম ধুলোমাটির সংসারে, 
সেই ভাল;
নিদারুন সময়ের ঝুল বারান্দায় শুটকি মাছের মতন 
না হয় বেঁধে রাখবো ভালবাসার সব উষ্ণ নিশ্বাস।
বাতাসের সাথে এইবার উড়িয়ে দিলাম বিশ্বাসের সব বুদবুদ।

যাক, হাওয়াই মিঠাইয়ের মতন নীরবেই মিশে যাক, মুছে যাক সম্পর্কের সব ফুল।
মনের মাজারে সাজিয়ে নিলাম এতদিন করে অাসা সব ভুলের তসবী-দানা।

আর কোন দিন তোমাকে ডাকবো না নন্দিনী,
অার কোনদিন হৃদয়ের বাঁধনে জড়াবো না দিবস ও রজনীর প্রহর।

বুকের ভেতরে এই সেলাই করে নিলাম ফেলে আসা স্মৃতির লাল শালু,
ওটাতেই চুমু দিয়ে না হয় কেটে যাবে সারাটি জীবন।

===
মানুষের ছবি
এ কে আজাদ

এক ফুলে মধু পিয়ে দশ ফুলে ওড়ে,
পদাঘাতে মন ছিঁড়ে ফুলে ফুলে ঘোরে।

বিক্ষত ফুল জানে - বোল্লাই ওটা
মৌমাছি হলে মধু দিত এক ফোঁটা।

বিষমাখা হুল আছে, চোখ দুটো লোভী,
মুখজুড়ে ধরে রাখে মানুষের ছবি।

===

                                                  অঙ্কন : লাবনী সরকার 

প্রকৃতিটার বাঁচার কান্না
পিন্টু বেতাল


আকাশে'র ডাক, শুনেছো কখনো?
শুনেছো কখনো? বাতাসের কান্না!
দেখেছো কি কভু? অন্দরে ঝাঁকি,
মেঘেদের ঘরকন্না!..
তুমি তো! ব্যস্ত শুধুই নিজের কাজে,
অবাধ চলা'র রণসাজে!
প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়ে,
স্বপ্ন-গড়া'র মেকী লাজে!

কখনো দেখেছো? মাটির মলীন মুখ!
তার ভগ্ন প্রাণে- ব্যাথার বুক!
দেখেছো কি কভু? শিকড় ছেঁড়া--
আলগা মাটি'র নষ্ট সুখ!
তুমি তো! ব্যস্ত শুধুই এগিয়ে যেতে,
ঘড়ি'র কাঁটা'র তাল মেলাতে!
গুঁড়িয়ে মাটি'র স্কন্ধ পাহাড়--
বুলডোজার-এর ক্ষমতা'তে!

কখনো বলেছো কথা? গাছেদের সাথে!
রেখেছো কি হাত? তাদের বাড়ানো হাতে!
বুঝেছো কি? সে কাঁপছে ভয়ে--
তোমার, কুঠারাঘাতে'র ছলনাতে!
তুমি তো! মত্ত নেশায়, নতুন খেলায়,
লিপ্ত শুধুই অবহেলায়,
কেমন করে জানবে বলো!..
কি আছে, ওই মেঘে'র ভেলায়?...

সময় যদি, পাও কখনো!
ইচ্ছা যদি, জাগে তখনো!
বিবেক-চক্ষু'র দৃষ্টি দিয়ে--
ওই মেঘ-পরী'দের, দুঃখ গুনো!
দেখবে সেথায়, সব'ই আছে--
ছেদন, পীড়ন, ব্যাথা, কান্না!
আকাশ, বাতাস, বৃক্ষ, মাটির--
ভাঙা স্বপ্নে'র ঘরকন্না!

আকাশ সেথায়, শান্তি খোঁজে!
বাতাস! বিষে'র জ্বালায় কাঁদে!
বৃক্ষ সেথায় নিঃস্ব প্রাণে--
মাটি'র ব্যাথায় স্তব্ধ,   শোকে'...!

এখনো কি, উদাস তুমি?
চাও কি হতে, ঘৃণ্য খুনী?
চাও কি ওদের প্রলয় রোষে,
পৃথিবীটা হোক, বধ্যভূমি?

এখনো সময় আছে হাতে,
যদি, শুনতে পারো ওদের কান্না!
তোমার দয়া'র প্রায়শ্চিত্তে--
ওরা, করবে সুখে ঘরকন্না!
যদি পারো, শোনা'র চেষ্টা কোরো!
প্রকৃতিটা'র, বাঁচার কান্না ।।

===

ব্যতিক্রম
পরিতোষ জানা

অবশেষে তুমিও----
তুমিও রাখলে না কথা।
সেই কবে শরতের ধানক্ষেতে
আলপথের নরম ঘাসের শিশিরে
ভিজিয়েছি পা,হেঁটেছি দু'জনে
ধানের শীষে শিশির বিন্দু তে
ভিজিয়েছি মন,তখন তোমার আমার দুজনের ছিল বয়ঃসন্ধি ক্ষণ।

তারপর, কেটে গেছে কত দিন
ঋতুচক্রের কত পরিবর্তন।
সভ্যতার নব দিগন্তে কতই বিবর্তন।
পরিণত তুমি, শহরের মিছিলে,
আমি কিন্তু ভালোবেসে রয়ে গেছি ধানক্ষেতে মাটির গন্ধ মেখে।

অকস্মাৎ গত গ্রীষ্মের দহন দিনে
তোমার আমার আবার সাক্ষাৎ।
তুমি এসেছিলে শহুরে দহন দগ্ধ
শরীর ও মন ভেজাতে আমাদের সবুজ বনবিথিকায়।
বকুলের ঘ্রাণে ভরিয়ে নিয়ে বুক
কথা দিয়েছিলে আসবে তুমি
শ্রাবণের এক ভরা সন্ধ্যায়,
একসাথে বৃষ্টিতে শরীর ভেজানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে তুমি।

কিন্তু,কেন কথা রাখলে না
কেন কাছে আসলে না
শ্রাবণের এই ভরা সন্ধ্যায়।
তুমি কিন্তু কথা দিয়েছিলে 
বলেছিলে ভিজবো দুজনে
শ্রাবণের এক ভরা সন্ধ্যায়।
কথামতো মেঘেদের আয়োজন ছিল,
সঠিক সময়েই বর্ষা গান ধরেছিল,
তালে তালে নেচেছিল অশনি,
মেঘের বাদ্যযন্ত্রের সুরের মূর্ছনায়।

দূর বহুদূর, যতদূর চোখ যায়
টান টান উত্তেজনায়
চেয়ে চেয়ে কাটিয়েছি ক্ষণ,
আসর ভাঙ্গলো যখন
একরাশ ব্যর্থতার চাদরে
নিজেকে লুকিয়ে রাখি গোপন আদরে।
মনে মনে বলি,ঠিকই তো করেছ তুমি,
বোষ্টুমীও আসেনি আর,রাখেনি সে কথা তার,শোনায়নি গান।
তাই তোমার মনেও হয়তো আজ
পরিবর্তনের লেগেছে জোয়ার।
মানুষের প্রতি হয়তো তুমিও আজ
হারিয়েছ মনের বিশ্বাস।

অকস্মাৎ, দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ---সেই অতি পরিচিত
চেনা কণ্ঠ স্বর---
বেনীমাধব বাড়ি আছো?
সে আমার প্রতিবেশী গুরুজন
অতি প্রিয়জন।
প্রতিদিন একই সময়ে খোঁজ নিতে আসে,
তার কিন্তু কখনোই হয়নি ব্যতিক্রম।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ