ভারতের যৌনতার ইতিহাস




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

ভারতের যৌনতার ইতিহাস 

প্রথমত সংস্কৃত সাহিত্যচর্চার মাধ্যমেই ভারত যৌনতার ইতিহাসে অবদান রেখেছে, যেখানে যৌনসঙ্গমকে বিবেচনা করা হয়েছে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে; যা নতুন প্রজন্মের যৌন মনোভাবের দর্শনভিত্তিকতার কেন্দ্রবিন্দু। এটা বেলা যেতে পারে যে, ভারতের শিল্প এবং সাহিত্যের মাধ্যমেই যৌনশিক্ষারপ্রবর্তন ঘটেছে। ভারতের প্রায় সব সমাজে, সাধারণ মানুষ এবং শক্তিশালী শাসক গোষ্ঠির মধ্যে যৌনচর্চার পার্থক্য বিদ্যমান ছিলো। 

রহস্যের শেষ নেই প্রাচীন ভারতের যৌনতা নিয়ে। বলা হয়ে থাকে, যৌনতা নিয়ে ভারতের সব হয়। হয় না শুধু আলোচনা। রক্ষণশীল এই দেশটিতে মানুষের দৈহিক সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা অনেকটাই নিষিদ্ধ। সামাজিক পর্যায়ে কেবল স্বামী-স্ত্রীর যৌনতাই বৈধ ভারতের সমাজে। একে বলা হয় ‘পবিত্র বন্ধন’। বিয়ের আগে কুমারীত্ব হারানোকেও দেখা হয় খারাপ চোখে।

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সমকামিতা- এগুলো ঘৃণার বিষয় । বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ আর পুরাণের উদ্ধৃতি দিয়ে যৌনতা রোধ করা হয় । এরপরও ধর্ষণের মতো কদর্য ঘটনা ঘটে ।

খোলামেলা যৌনতা নিয়ে অনেক ধর্মগ্রন্থে আলোচনা রয়েছে। এমনকি বহু স্থাপত্য, শিল্পকলায় এর নিদর্শন ঐতিহাসিকভাবে বর্তমান । এছাড়া বিভিন্ন পুরাণ, বেদ আর মহাকাব্যের পাতায় পাতায় ছেয়ে আছে উদার যৌনতার কাহিনী। 

তেমনই কিছু আশ্চর্য বর্ণনা তুলে ধরা হল এখানে:

১. মহাভারতের একটি অধ্যায়ে অবিবাহিত ঋষি পরাশর ও জেলেকন্যা সত্যবতীর যৌনতার কথা আলোচনা করা হয়েছে খোলামেলাভাবেই।


২. ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ ঋকবেদে উল্লেত আছে, ঋষি দীর্ঘতমস নাকি পুরো বাজারভর্তি লোকের মাঝে এক নারীর সঙ্গে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছিলেন।


৩. বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত আছে মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের অবাধ যৌনতার কথা। জনসমক্ষেই নাকি যৌনকর্মে লিপ্ত হতে বেশি পছন্দ করতেন তিনি। সবাই এই রাজার সেই যৌনকর্ম রাস্তায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করতেন। আর রাজাও নাকি তাতে বেশি তৃপ্ত হতেন।

৪. এমনকি প্রাচীন ভারতে খেলাধূলাও ছিল যৌনতায় পূর্ণ। এমন একটি খেলার নাম ‘ঘাটকাঞ্চুকি’। এই খেলায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক নারী ও পুরুষকে একে অপরের সঙ্গে যৌনমিলন করতে হতো। এটাই খেলার নিয়ম। যতক্ষণ না প্রত্যেকের যৌনক্রিয়া সম্পন্ন হতো, খেলা থামতো না।


৫. এরচেয়েও অদ্ভুত, যাকে অনেকেই আখ্যা দেন ‘জঘন্য’ হিসেবে- এমন যৌনতার কথাও আছে ভারতের প্রাচীন পুঁথিতে। বাবা-মেয়ের যৌনতার কথা বণিত আছে সেখানে। ঋষি বশিষ্ঠ নাকি তার কন্যা শতরূপার সঙ্গে যৌনকর্ম করেছিলেন। তা অবশ্য ইচ্ছাকৃতভাবে নয়। বাবাকে স্বামী বলে ভুল করে নাকি এই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন শতরূপা!


৬. ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ মনুতে আছে নারদের জন্মের এক অদ্ভুত কাহিনী। নারদের দিদিমাই নাকি তার স্বামীর সঙ্গে কন্যার সহবাস ঘটিয়েছিলেন। ফলে নারদের জন্ম হয়।


৭. মহাভারতে বর্ণিত আছে, কোনও অবিবাহিত নারী যদি যৌনমিলনের কামনা করেন, তবে তার কামনা পূরণ করতেই হবে কোনও পুরুষকে। তা যদি না হয়, তবে ধর্মচ্যুত হতেন সেই পুরুষ।

৮. মহাভারতেই আছে পরকীয়ার বর্ণনা। মণিপুরের বিধবা নাগকন্যা উলুপি অর্জুনকে বলেন, কোনও পরস্ত্রীর সঙ্গে রাত কাটানো অধর্ম নয়।


৯. ঋগ্বেদে আছে ভাইবোনের যৌনতার কথাও। একটি অধ্যায়ে যমের সঙ্গে যৌনতায় মগ্ন হতে চাইছেন তার বোন যমী। যম অস্বীকার করায়, যমী বলেন, ‘এমন ভাই ভাই-ই নয়, যে বোনের সামান্য ইচ্ছে পূরণ করতে পারে না।’


১০. এছাড়া প্রাচীন ভারতের যৌনতার উদ্দেশ্যে শিশু ও নারীদের বেচাকেনার কথাও উল্লেখ আছে। মহাভারতে দেখানো হয়েছে অঙ্গরাজ্যে কর্ণের শাসনকালে শিশু ও নারীদের কীভাবে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করা হতো।

আদিকাল 

প্রায় ৫৫০০ বছর আগেকার প্রাচীন মিশরীয় এবং সুমেরীয়সভ্যতার সাথে সমসাময়িক ছিলো। ঐ সময়কালে, সামাজিক যৌন মনোভাব সম্পর্কে অনেকের অজানা ছিলো। যৌনতা সম্পর্কে সিন্ধু সভ্যতার মধ্যেই প্রজজন প্রথার চর্চা পরিলক্ষিত হয়েছে।


পর্ণোগ্রাফ্রি 

ভারতে পর্নোগ্রাফি পরিবেশন এবং নির্মাণ অবৈধ; তবে ব্যাক্তিগতভাবে এর প্রয়োগ বা ব্যবহার বৈধ। কিন্তু ১৯৭০ দশকের পর থেকে সফ্টকোর চলচ্চিত্রের সাধারণ দৃশ্য। দেবনারী, ফ্যান্টাসি, চ্যাস্টিটি, রয়েল ম্যাগাজিন, ডাফা ৩০২ ইত্যাদি ম্যাগাজিন এখনো ভারতে বিদ্যমান।


যৌন শিল্প 

যৌনতার মধ্যে বাণিজ্য প্রাচীন ভারত থেকে সহ্য এবং নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। তবে, আধুনিক সময়ের মধ্যে কলঙ্ক শোষণ ও প্রসারণশীল সংক্রমণের সমস্যার সঙ্গে অনেক দরিদ্র যৌন কর্মীদের ত্যাগ করেছে যেমন, এইডস। অনেক দরিদ্র তমবয়সী নারী গ্রাম থেকে অপহরণ এবং যৌন দাসত্বের জন্যে বিক্রিকৃত হয়। ভারতীয় যৌন শিল্প নিয়ন্ত্রণের জন্যে কিছু সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার গ্রহণ করা হয়েছে।

সকল লজ্জা ত্যাগ করে আমাদের সকলের প্রয়োজন যৌন শিক্ষা আরও বেশী করে ছড়িয়ে দেওয়া, যার সুফল কিংবা কুফল গুলো যুক্তিপূর্ণ এবং বৈজ্ঞানিক ভিক্তিতে আরও বেশী আলোচনা প্রয়োজন | চিরাচরিত ধারা পরিবর্তন হলে এই শিক্ষার মাধ্যমে আমরা যৌনতার গুনাগুন এবং অপঃগুন সম্পর্কে আরও বেশী জানতে পারবো | সেই ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিশু যৌন নির্যাতন, নারী নির্যাতন জনিত ঘটনা দূরীকরণ অনেকটাই সম্ভব হতে পারে আশা করা যায়!  সুষ্ঠ সমাজ নির্ভরশীল, অবশ্যই যৌনতা নিয়ন্ত্রণের উপর | এবং যা তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে ভারতবর্ষে জরুরি | 

_____________________

★তথ্যসূত্র এবং ছবি সংগৃহীত ( Source Google)

★ সম্পাদনা : দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. যৌনতা জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। কিন্ত ভারতে এর ইতিহাস উন্মুক্ত হলেও , সাধারণ সমাজে এর সহজ স্বীকৃতি , আলোচনা বা গ্রহণ কখনও হয়নি। তাই এই বিষয়ের উপর এই পোস্ট আমি সমর্থন করি। এ নিয়ে প্রচুর লেখা হোক , তাই চাই।

    উত্তরমুছুন