পোস্ট বার দেখা হয়েছে
ধারণাদ্ ধর্ম ইত্যাহুধর্মেণ বিধৃতাঃ প্রজাঃ।যঃ স্যাদ্ ধারণসংযুক্তঃ স ধর্ম ইতি নেতরঃ ॥
অর্থাত্ ধারণ ক্রিয়া (ধৃ+মন্) থেকে ধর্ম শব্দের উত্পত্তি। ধর্ম সৃষ্টিকে বিশেষভাবে ধারণ করে রয়েছে ।সংক্ষেপে যা কিছু ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন, তাই ধর্ম, এছাড়া অন্য কিছু ধর্ম নয়।
আত্মা যা গ্রহনযোগ্য বলে মনে করে সাধারণত তা ধর্ম বলেই গৃহীত। এখানে ঈশ্বরের নানাবিধ রূপকল্প বিদ্যমান। যে শক্তি জীব শরীরের ভেতরে তা সঞ্চালনের ধারক হিসেবে গন্য হয় তা হলো বিশ্বাস। বিশ্বাসের এই চুড়ান্ত তৎপরতা মানুষকে সঠিক এবং ভুল কর্মে লিপ্ত করে। ধারণ ক্রিয়া এবং বিশ্বাস চিরাচরিত যুগ্ম ধারায় কর্মকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। এবং এই ধারণ ক্রিয়া এবং বিশ্বাস নানাবিধ আচার আচরণের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করে। তা আমরা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হিসেবে বর্ননা করতে পারি। শুধু তাই নয় এই আচার অনুষ্ঠান একটি সঠিক পন্থায় সম্পন্ন করা হয়ে থাকে, যাকে শাস্ত্রীয় অনুশাসন বলা হয়।
ধৃতিঃ ক্ষমা দমোহস্তেয়ংশৌচমিন্দ্রিয়-নিগ্রহঃ।ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধোদশকং ধর্মলক্ষণম্॥
(মনুসংহিতা)
অর্থাত্ সহিষ্ণুতা,ক্ষমা ,চুরি না করা ,শুচিতা ,ইন্দ্রিয়সংযম,শুদ্ধ বুদ্ধি,জ্ঞান,সত্য এবং ক্রোধহীনতা-এইটি দশটি লক্ষণের মধ্যে সনাতন ধর্মের স্বরূপ প্রকাশ পায়।
শাস্ত্রীয় অনুশাসন মানুষকে সঠিক লক্ষে পৌঁছাতে সক্ষম। যেখানে ধর্মীয় মতাদর্শের চুড়ান্ত ফলাফল সঠিক কর্ম এবং সুষ্ঠ জীবনবোধ জাগ্রত করা। তবু কোথাও যেনো পারিপার্শ্বিক চাপে কখনও কখনও কর্মের গতিধারা বিঘ্নিত হয়। মানুষ সঠিক ভুল বিচার করতে পারে না। এবং সেখানেই তৈরী হয় কর্ম জটিলতা অর্থাৎ কর্ম বিভাজন। মানষিক ও শারিরীক বিকাশ শক্তিকে কর্মের বিভাজক হিসেবে পরিচালিত করে। এবং নানা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে ভালো - মন্দের পার্থক্য তৈরী হয়।
শরীরের মৃত্যুর পরেও কর্ম তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলে অনেক সময়। এবং আগামী প্রজন্মের কাছে সেই উদাহরণ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । আরেকটি জীবন বা একাধিক জীবন প্রণালী একটি মৃত্যুর পরেও তার কৃত কার্যের স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। ঠিক যেমন জলবাহিত রোগ অথবা বায়ু বাহিত সুগন্ধি,উৎস থেকে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যেতে সক্ষম, ঠিক সেভাবেই কৃত কার্যের ফলাফল / গুনাবলী এক জীবন থেকে অন্য জীবনে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। আসলে আত্মার সন্ত্যুষ্টি এখানে চরম লক্ষ । বোধ ও বুদ্ধির বিকাশ শিক্ষা এবং নানান গ্রন্থাবলী নির্ভর।
খ্রীষ্টান এবং মহম্মদীয় ধর্ম শাস্ত্রেও আমাদের পৌরাণিক ইতিহাসের ন্যায় অনেক অদ্ভুত ঘটনার বর্ণনা আছে । এবং এই সমস্ত ঘটনা আমাদের বোধ এবং জীবনধারণ প্রণালীকে তরঙ্গায়িত করতে সক্ষম। আসলে ধর্ম এবং কর্ম একে অপরের পরিপূরক বিশেষ।
তবে সমাজের এবং জীবনের অবক্ষয় ত্রুটিপূর্ণ জীবন প্রণালীর উপর নির্ভরশীল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীতে বিরাজিত মোট ধর্মের সংখ্যা ৪,২০০টি, যার মধ্যে প্রধান পাঁচটিকে বলা হয় বিশ্বধর্ম বা World Religion. এবং এই ধর্ম ও তার অনুশাসন মানুষের জীবনযাপনকে সুগঠিত করতে প্রতিষ্ঠিত। তবে নানান ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যা ও সামাজিক প্রতিপত্তি জনিত কারণে মানুষের জীবন বোধ বিকৃত হয়ে চলেছে। এবং কর্মের প্রতিরূপ বিভাজিত হয়েছে।
তবে প্রতিটি ধর্ম গ্রন্থের একটিই সুর সুষ্ঠ এবং সঠিক জীবন ধারণ। মানুষে মানুষে ভালোবাসা, সম্পর্কে ত্যাগ ও সু'কর্মের বিধান।
পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বলেছেন,
“তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়হস্তে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।”
(সুরা এমরান ১০৩)
বেদে বলা হয়েছে,
“হে মানবজাতি! তোমরা সম্মিলিতভাবে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হও, পারস্পরিক মমতা ও শুভেচ্ছা নিয়ে একত্রে পরিশ্রম কর, জীবনের আনন্দে সম অংশীদার হও। একটি চাকার শিকগুলো সমভাবে কেন্দ্রে মিলিত হলে যেমন গতিসঞ্চার হয়, তেমনি সাম্য-মৈত্রীর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হও, তাহলেই অগ্রগতি অবধারিত।
(অথর্ববেদ, ৩/৩০/৬-৭)
বাইবেলে ঈসা (আ:) বলেছেন,
“যে রাজ্য নিজের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় সে রাজ্য ধ্বংস হয়, আর যে শহর বা পরিবার নিজের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় সেই শহর বা পরিবার টেকে না।” (মথি ১২:২৫) ।
চলবে .........
1 মন্তব্যসমূহ
উত্তরমুছুনবলিষ্ঠ কলমকে শুভেচ্ছা
অসাধারণ বিশ্লেষণের মাধ্যে এগিয়ে চলুক কলম