দর্পণ || গল্প || চেতনার- রঙে - মেখলা ঘোষদস্তিদার




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

চেতনার- রঙে

মেখলা ঘোষদস্তিদার 


ষড়ঋতুর আবর্তনে বদল হয় প্রকৃতির রূপ- রং-রেখা, মরশুমি ফুল বাসর সাজায় ভৈরবী আলোয়,নাগরিক ভীড়ে ছায়াছবি ফুরোয় না, ছবি ও ছায়া নতুন ভাবে উজ্জীবিত হয় উদ্দীপিত কিরনে।

সীমান্তবর্তী এলাকার লাচিয়া গ্রামে লেপচ- ভুটিয়া - খাসিয়া নানান জাতি- উপজাতির বসবাস, এখানে শহুরে কোলাহল নেই কিন্তু মন্ত্রমুগ্ধ কলতান আছে,

গ্রামের মানুষের সহজ - সরল জীবনে ছাপ ফেলেনি সভ্যতার দাম্ভিকতা,বিজ্ঞান - প্রযুক্তি- শিক্ষার আলো না পৌঁছালেও ওরা অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে নেই, প্রকৃতি এদের পাঠশালা,এরা শহরের লোকেদের মতো বুদ্ধি নিয়ে চলে না,এরা বোধ নিয়ে এগিয়ে যায় সূর্যের মতো দৃপ্ত - উজ্জ্বল, বোধহীন অহং- এর সুবাস এখানে নেই, হিংসা - কলহ  কি এরা জানে না, লাচিয়ার প্রত্যেকে বেঁচে থাকে স্বতস্ফূর্তভাবে লড়াকু মন নিয়ে, এদের খোঁজ কে আর রাখে! 

অসহায়, নিষ্পাপ মানুষগুলোর জীবন - জীবিকা চলে কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে, এরা ভেঙে না পড়ে ঝলমলে ভোরের স্বপ্ন দেখে সংগ্রামী ও সাহসে ভর করে।

সৌম্য ও দীপ দোল পূর্ণিমার ঊষালগ্নে গিয়ে পৌঁছায় লাচিয়া গ্রামে ওদের সঙ্গে বসন্ত উৎসবে কিছুটা সময় কাটাবে ওদের মতোন করে এই আশায় নির্ভেজাল খুশীর তরঙ্গে,দখিনা বাতাসে তখন মদ- বিহ্বল রেশ, অশোক, শিমুল,পলাশের রঙের আভায় লাচিয়া ভেসে যাচ্ছে প্রকৃতির বর্ণময় বিচ্ছুরণে, শত দুঃখের মধ্যেও গ্রামের প্রতিটি মানুষের মধ্যে এক প্রাণোচ্ছল ভাব ছড়িয়ে পড়ছে কিশলয়ের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে, কচিকাঁচারা এসে ঘিরে দাঁড়িয়েছে সৌম্য ও দীপকে। 

দোলের এমনই এক পুণ্য দিনে সৌম্য ও দীপ ছোটোদের হাতে কেক,চকোলেট, পিচকিরি তুলে দিলো,মহিলা পুরুষদের বস্ত্র, চাল,ডাল,ফল,মিষ্টি বিতরণ করলো আরো কিছু সামগ্রীর সঙ্গে।

ছোট্ট মেয়ে ফুলিয়া ছুটে এলো গ্রামেরই মেয়েদের হাতে তৈরি বিশেষ এক ধরনের আবীর নিয়ে সৌম্য ও দীপকে রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য। 

পরব শুরু হলো,নারী পুরুষ সকলে হাত ধরে নিয়ে এলো সৌম্য ও দীপকে পরবের মাঝখানে, খাটিয়ার উপর বসিয়ে দিলো,

মাদলের তালে নাচ শুরু হলো জোড়ায় জোড়ায়,আকাশে বাতাসে আবীর উড়তে লাগলো এক মনোময় বাতায়নে,মহুয়ার সুরা পানে মাতাল হতে থাকলো বর্ণময় আবেশ,

পরব শেষ হলো এক নৈসর্গিক আবেগী ছন্দে। 

নিষ্পাপ,অসহায় মানুষগুলোর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গন্তব্যের দিকে পা বাড়ালো সৌম্য ও দীপ কিন্তু এক অমোঘ আকর্ষণে বার বার পিছু ফিরে চাইলো ওরা।

পাতার ভার কমলে সৌম্য ও দীপের মনে ভাবনার ভার বেড়েই চললো নানারকম প্রশ্নের দাঁড়িপাল্লায়, বার বার উদাসীন হয়ে গেলো এই ভেবে যে চেতনার রঙে রাঙানো সৎ পরিশ্রমী সাহসী অথচ পীড়িত মানুষগুলোর নিশ্বাসে বিশ্বাসে শুধুই অমলিন সবুজের স্পর্শ আলাপে আচারে ব্যবহারে যেখানে কালিমালিপ্ত ভব্যতা নীলরং ছড়াতে পারেনি গ্রাম্য মানুষগুলোর নিষ্কলুষ জীবনে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ