দর্পণ || আলোচনা || ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত - তন্ময় রাণা




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত 

তন্ময় রাণা 


বসন্ত কথাটা উচ্চারণ করলেই মনের 

মধ্যে যেন একটা আলোড়ন বয়ে যায় 

সাধারণত ফাল্গুন ও চৈত্র এই দুই মাস 

বসন্ত কাল। 

প্রকৃতির মাঝে এই দুই মাস, বসন্ত যেন 

নিজের ওপার রূপের মহিমা ছড়ায় 

গাছেরা সেজে ওঠে নতুন সবুজ পাতার চাদরে  আম্রকুঞ্জে বিকশিত হয় আমের মুকুল। 

বসন্ত মানেই জুঁই, হাস্নেহানা,শিমুল আর কৃষচূড়ার সবুজ ডালের লাল,সব মিলিয়ে সুরভিত ফুলের সমাহার বসন্ত মানেই হাজার রঙের বাহার।

বসন্ত মানেই আনন্দ উৎসবের এক অদ্ভুত মাদকতায় ভেসে চলা মন 14ই ফেব্রুয়ারী পয়লা ফাগুন হিসেবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ,ত্রিপুরা আসাম, উড়িষ্যা,ঝাড়খন্ড সহ বিভিন্ন দেশ কাল ভেদে বিভিন্ন রূপে এই বসন্ত উৎসব পালিত হতে দেখা যায়। 

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় ভারত বর্ষের প্রাচীন আর্য জাতির হাত ধরে এই উৎসবের সূচনা হয় খ্রিস্ট জন্মের তিনশো বছর আগে থেকে এই উৎসব পালন হয়েছে আসছে বলে প্রমান পাওয়া গেছে। খ্রিষ্ট পূর্বের ৩০০ অব্দের  খোদাই করা এক পাথরে এই উৎসবের তথ্য পাওয়া গেছে। 

১৫৮৫ সালে মোঘল সম্রাট আকবর বর্ষ পূর্তি হিসাবে আকবরি সন বা ফসলি সনের প্রবর্তন করেন।  পরিবর্তিত হয় ১৪ উৎসব পালনের রীতি তার মধ্যে বসন্ত উৎসব অন্যতম। সেই মতো বাংলাতেও পরিবর্তিত হতে থাকে উৎসব পালনের রেওয়াজ। 

বাংলায়  বসন্তকালে রাশ মেলা বা 

রাশ যাত্রার প্রচলন হয় মধ্যযুগে। 

নবদ্বীপ চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান 

সেখানে রাশ যাত্রার সূচনা হয় এই 

সময়। 

মধ্যযুগে বৌদ্ধ ধর্মাবলীরা ফাল্গুনী পূর্ণিমা উৎযাপনের মাধ্যমে বসন্তকে বরণ করে নিত। ফাল্গুনী পূর্ণিমার দল উৎসব এই সময়ের অন্যতম।  যার নেপথ্যে আছে বৈষ্ণব ধর্মাবলী মানুষের কিছু আদি বিশ্বাস। 

সেই বিশ্বাস অনুসারে বৃন্দাবনে এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের নিয়ে রঙ ও গুলাল ছোড়াছুড়ির  খেলায় মত্ত হয়েছিলেন তাই এই সময় বৃন্দাবনে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি নিয়ে রঙ গুলাল মেখে শোভাযাত্রা বের হয় এবং তার পর ভক্তরা নিজেদের মধ্যে রঙ মাখামাখির খেলায় মত্ত হন। 

এই সময় রাঙা হয়ে ওঠে রবীন্দনাথের শান্তিনিকেতন।  "ওরে গৃহ বাসি খোল দার খোল লাগলো যে দল  " গানের গুঞ্জে ও আবির রঙে রেঙে ওঠে পথ ঘাট।

মনে করা হয় শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৭ সালে বসন্ত পঞ্চমীতে শান্তিনিকেনে যে  উৎসবের সূচনা করেন তারই পরিমার্জিত রূপ আজকের শান্তিনিকেতনের এই বসন্ত উৎসব। 

বেশ কয়েকটি দেশেও বিভিন্ন রূপে এই সময়ে বসন্ত উৎসব পালিত হয় যেমন জাপানে এই উৎসব বহুদিন ধরে তাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের এই বসন্ত উৎসব পালন সারা বিশ্বে নজর কেড়েছে প্রকৃতি যেন এই সময় সেখানেও নানান ফুলের রঙে রাঙে সে জন্য এই ঋতু তাদের খুব প্রিয়।  চেরি ফুলের উৎসব কে তারা সাকুয়া নামে ডাকে সারা বসন্ত জুড়ে তারা পিকনিক করে আনন্দে মেতে থাকে। 

সে সময় জাপানের ঐতিহ্য বাহি খাবার তৈরি করা হয় সবাই একসাথে মিলে গাছের নিচে বসে সেই খাবার খেতে খেতে  আনন্দে মেতে ওঠে।

এই সময় স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় বসন্ত উৎসবের নাম লাস ফালেস মা মেরির স্বামী স্টেইন জোসেফের স্মরণে তারা 

এইসময়ে ঐতিহ্যবাহি উৎসব পালন 

করে থাকেন।  

সে সময় প্রতিটি সেন্টারে কাঠ,কাগজ ও মম দিয়ে বড়ো বড়ো পাপেট সাজানো  হয় পাপেট গুলোই মূলত ফালেস। 

এগুলো বিভিন্ন চরিত্র হিসাবে তৈরি হয়। 

সে এক দেখার মতো দৃশ্য হয় ফালেসের 

চার পাশে থাকে কামরাঙা আগুন ওয়ার্ক। সে আগুন ছুঁই ছুঁই করেও যেন ছুঁতে পারেনা তাদের।  ওখান কার মানুষ সারামাস ধরে এই ফালেস বানায় খরচ হয় দশ হাজার ডলারের বেশি। 

নাচ গান সাজসজ্জা সভাযাত্রা কোনো কিছুরই অভাব থাকেনা। 

চিনে নববর্ষ ও বসন্ত একই সাথে আসে 

তারা অধিবাসীরা বিভিন্ন সাজ পোশাকে 

সাজতে বলেন না থাকে নানান ভোজ।

চিনে 22শে জানুয়ারি থেকে 28শে জানুয়ারি পর্যন্ত বসন্ত উৎসব পালিত হয় তার পর সবাই যে যার ঘরে ফিরে যায়।  

তাদের এই উৎসবের নাম চনুইয়ন। 

থাইল্যান্ডেও বসন্ত উৎসব পালিত হয় থাই নববর্ষ দিনের  সাথে। 

এই দিন তারা সুন্দর জলকলি খেলায় মত্ত থাকেন এই খেলার উদ্যেশ্য হলো নিজেদের পরিশোধিত করা। ছোটরা গুরুজনদের সন্মান প্রদান করে। বিশেষ পানীয় প্রদান করে।  বড়োরা ছোটদের  আশীর্বাদ করেন। ওখানকার মানুষ বৌদ্ধ ভিক্ষুক দের রান্না করে মঠে গিয়ে দিয়ে আসে।  বৌদ্ধ মূর্তিকে অতি যত্ন সহকারে স্নান করানো হয়।  সবাই রাস্তার ধারে জল পিচকারি নিয়ে জলকলি খেলায় মত্ত থাকে। 

 এই সব তথ্য বিচার করলে বলা যেতেই পারে যে বসন্ত উৎসব দেশ কাল ভেদে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রূপে পালিত হয়ে এসেছে যার মূল জায়গাটা কিন্তু একই রয়ে গেছে সেটা হলো আনন্দ,বাঁধন ছাড়া উচ্ছাস, রঙ আর নানান ফুলের সমাহার। তাই বোধহয় মনে আনন্দ আসলেই একটা প্রচলিত কথা বলতে শোনা যায় যে ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ  বসন্ত।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ