দর্পণ || অণুগল্প || রঙ মাখাবো - কৃষ্ণা আল্পনা মণ্ডল




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

|| অণুগল্প ||

"রঙ মাখাবো"

কৃষ্ণা আল্পনা মণ্ডল 


রেখা আর রমেনের মেয়ে হলো পিয়াস। ওদের আগের সন্তানটি ভূমিষ্ট হবার পরই মারা যায়।কিছু মাস যাবার পরই পিয়াস পেটে আসে।তাই খুব আদরের নীলমণি হল এই মেয়ে। মেয়ের মুখ থেকে কথা বের হবার আগেই সব চলে আসে।ধীরে ধীরে বড় হতে  থাকে।মেয়েও তেমনই খুব বাধ্য হয়েছে।বাবা মা যা যা বলে সব কথাই শোনে। দেখতে প্রায় অনেকটা বাবার মত।পড়াশোনাতেও ভালো, গান জানে।পিয়াসের ঠাম্মি প্রায়শই বলে,তুই খুব সুখী হবি,তোর বর খুব ভালো হবে।বাবা মুখী মেয়েরা একটু সুখী হয়।পিয়াস বলে ঠাম্মি বর কতটা কেমন হবে জানি না তবে আমার বাবার মত হওয়া চাই।যে আমার যত্ন করবে,খেয়াল রাখবে।আমি মুখে কিছু বলার আগেই বুঝে যাবে আমি কি চাই।তাহলেই  হবে।বাবা যেমন করে আমায় বোঝে।


পিয়াসের পড়াশোনা প্রায় শেষ।এবার একটা সৎ পাত্র দেখে বিয়ে দিতে হবে।এমন সময় একদিন রমেনের বন্ধু বিকাশ একটি পাত্রের সন্ধান আনে। ছেলে ইলেকট্রনিক  ইঞ্জিনিয়ার।একটি বোন আছে, আর মাবাবা। ছেলের নাম তমাল।রমেন বলে,তাহলে সামনের রবিবার দিন কর।ওরা মেয়ে দেখে যাক।তুই তো সব জানিস,পিয়াস আমাদের বড়ো আদরের। বিকাশ বলে জানি তো, ঠিক আছে সামনের রবিবার ওদের আসতে বলে দিচ্ছি। আজ আসি রে বলে বিকাশ চলে যায়। রীতিমতো রবিবার ওরা পিয়াস কে দেখতে আসে। পিয়াস কে দেখেই ওদের পছন্দ হয়ে যায়।তমালের মা বলে আমি এই রকম মেয়েই খুঁজছিলাম। হোলির আগেই একটা দিন স্থির হয়। তারপর ওরা মেয়ে দেখে চলে যায়। মেয়ের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়।হাতে বেশি সময় নেই, 

নাতনিকে ডেকে ঠাম্মি বলে,দেখলি দিদিভাই কি বলে ছিলাম তোর বর খুব ভালো হবে।  আমার দেখার দরকার নেই,তুমি দেখো তাহলেই হবে।


বেশ কয়েকদিন যাবার পর,ল্যান্ডফোনে ফোন আসে।ফোনটা পিয়াস ধরে,ধরেই বলে হ্যালো কে কি চাই কাকে চাই বলে একনিমেষে বলে যায়। ওদিক থেকে বলে আমি তমাল বলছি, তোমাকে চাই,কিছু কথা বলবো। শুনে লজ্জা পায়,বলে হ্যাঁ বলুন আমি পিয়াস বলছি।সে আমি বুঝতে পেরেছি। বলছি আজ বিকেলে  একটু সময় হবে দেখা করার। তাহলে দেখা করো প্রিন্সেফঘাটে। একটু ধরুন বলছি,বলে ফোন নামিয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করে বাপি তমাল বাবু আমার সাথে বিকেলে প্রিন্সেফ ঘাটে দেখা করতে চাইছে। রমেন হেঁকে রেখাকে বলে দ্যাখো মেয়ের কান্ড,তমাল দেখা করতে চেয়েছে তাও আমাকে জিজ্ঞাসা করতে এসেছে।আজ বাদে কাল ওর সাথে তোর বিয়ে----থামিয়ে দিয়ে পিয়াস বলে ঠিক আছে বলে দিচ্ছি।হ্যালো, হ্যাঁ বলুন বাবাকে জিজ্ঞাসা করা হল,বিকালে তাহলে দেখা  হচ্ছে,বাই বলে ফোন রেখে দেয়। 


বিকেলে যথা সময়ে দুজনের সাথে দেখা হয়। একথা সেকথা হতে হতে তমাল, পিয়াসের মনের কোন ইচ্ছা আছে কি না জানতে চায়। আছে তো,আমার মনের একটা বড়ো ইচ্ছা আছে,আমার যে বর হবে বিয়ের পর প্রথম হোলিতে আমি আমার মনের রঙে মনের মতো করে রঙ মাখাবো। দুহাত তুলে তমাল বলে ঠিক আছে কন্যে তোমার মনের ইচ্ছাপূরণ আমি করবো।পিয়াস বলে তোমার ইচ্ছার কথা বললে না তো।কথা বলতে বলতে কখন যে আপনি টা তুমি হয়ে গেছে ওরা নিজেরাই টের পাই নি।যখন পেল তমাল বলে ঠিক আছে,তুমিটাই ভালো লাগছে।চল তোমায় বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসি।সন্ধ্যে সাতটার আগেই বাড়িতে নামিয়ে তমাল চলে যায় নিজের বাড়ির দিকে।


রাতে হঠাৎ আবার ফোন আসে,এবারে ফোন টা রেখা ধরে। হ্যালো, কে বলছেন।আমি বিকাশ বলছি একটু গলার স্বরটা যেন কেমন লাগছে শুনে বলে কি হয়েছে দাদা আপনার গলার স্বরটা কেন এ রকম লাগছে। বলে আমাদের বড়ো সর্বনাশ হয়ে গেছে রেখা তমালের বাইকের সাথে ট্যাক্সির ধাক্কা লাগে

 আর হসপিটালে ভর্তি করা হয়,সাথে সাথেই

মারা যায়। রেখা আর ঠিক থাকতে না পেরে চিৎকার করে ওঠে।শুনে ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে আসে। ফোন টা রমেন নিয়ে বলে হ্যালো, বিকাশ আবার সব বলে। শুনে রমেন বলে রাখ আমরা যাচ্ছি। পিয়াস চল এখুনি আমাদের হসপিটালে যেতে হবে।এখান  থেকে যাবার সময় তমালের অন্য গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে। সবাই গিয়ে হাজির হয় গিয়ে দেখে তমালের মা খুব কাঁদছে আর বোনটা দাদাকে ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে পিয়াসের তখনই সন্দেহ হয় তমাল আর বেঁচে নেই।সে ধীরে ধীরে তমালের পায়ের কাছে গিয়ে বলে  আমি যে কত আশা নিয়ে বসে আছি,আমাদের বিবাহিত জীবনের  প্রথম হোলিতে রঙ মাখাবো বলে।একান্ত নিজের রঙে নিজের মতো করে  আমাকে রঙ মাখিয়ে দিও, কিন্তু তুমি আমার ওই ইচ্ছাপূরণ না করেই চলে গেলে বলে সেই যে জ্ঞান হারালো।আজ দুদিন হলো তার জ্ঞান ফেরে নি।ওখানেই ভর্তি হয়েছে পিয়াস। ডাক্তাররা বলছেন ও কোমায় চলে গেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ