দর্পণ || ধারাবাহিক উপন্যাস || পর্ব -৫ || কংসাবতী ~ মহুয়া




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

কংসাবতী 

(পর্ব --৫)

মহুয়া 


রিক্সাওলাকে ভাড়া মিটিয়ে সুচেতা রাস্তার ঢাল বেয়ে নিচের দিকে নামতে থাকলো ।  বাহ্ দারুন তো !! আগের মত নদীর পাড় এবড়োখেবড়ো নেই , বেশ বসার জায়গাও রয়েছে । যাতায়াতের পথে কখনো কখনো চোখে পড়েছে নদীর পাড়ের সৌন্দর্যায়ন ,তবে মন দিয়ে দেখেনি কখনোই । ঘাটের ধারে লাইটের পোল আর মেন ঘাটে নদীতে নামার জন্যে সিঁড়ি ।©️ অনেকদিন পর কাঁসাইয়ের কাছে এলো কিন্তু যে কাঁসাই কে ছেড়ে গিয়েছিলো শেষবারের মত তেমন আর পেলো না । সুন্দর অথচ হৃদয়হীন মনে হলো । এসব ভাবতে ভাবতে সুচেতা সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে জলে পা ডুবিয়ে বসলো । ঠিক যেমনভাবে প্রতুল আর ও বসতো । পা দিয়ে খেলত জলের শরীরে নিজেদের শরীর ছুঁয়ে । সেই সাতদিন যেনো স্বপ্নের মধ্যে বাস করেছিল সুচেতা । যে মেয়েটা শহরে গিয়ে কলেজের সবার কাছে হাসির পাত্রী ছিল তার ভাগ্যে প্রতুলের মত ছেলে সোনায় সোহাগা । যদিও প্রতুল যতই বলুক না কেন ব্ল্যাক বিউটি , নিজের গায়ের রং নিয়ে যথেষ্ট হীনমন্যতায় ভুগত সুচেতা । কিন্তু আয়নায় দাঁড়ালেই প্রতুলের কথা মনে হলেই নিজেকে সুন্দরী ভাবতে ও দ্বিধাবোধ করতো না । কাঁসাইয়ের পাড়ে বসে প্রতুল বলতো , "জলের দিকে তাকা , একটা কালো হীরে দেখতে পাবি " । ওর কাছে বসলেই চুলটা খুলে দিত আর বলতো "আমার কাছে©️ যতোক্ষণ থাকবি চুল খুলে রাখবি । তোর চুলগুলো উড়ে এসে আমার মুখে পড়লেই মনে হয় মেঘ করেছে , বৃষ্টি নামবে । চুলের বৃষ্টির গন্ধে তোর শরীরের সোঁদা গন্ধটা আমাকে পাগল করে । যেদিন আমি তোর কাছে থাকবো না তুই চুলটা ছোট করে ফেলবি । আর কেউ যেনো তোর চুলের বৃষ্টিগন্ধ না পায় " ।  নদীর জলে প্রতুলের মুখটা ভেসে ওঠে সুচেতার চুল ছোঁবার আগ্রহে । নিজের মনেই হেসে ওঠে সুচেতা । চুলগুলো আর প্রতুলের বৃষ্টিগন্ধ মাখা মেঘ নেই । কাঁধ পর্যন্ত ছাঁটা ব্যস্ততার কাঁচিতে ।অবশ্য শহুরে ছোঁয়ায় সুচেতা খানিকটা রূপচর্চা ও শিখে ফেলেছিল । প্রতুল অনেক কিছু গিফট করতো । মুকুটমনিপুরে বেড়াতে গিয়ে শুধু প্রথম চুমুর অনুভূতি নয় পুরুষ শরীরের ছোঁয়াও অনুভূত হয়েছিল সুচেতার । ভীষন লজ্জার মধ্যেও শরীরের শিরশিরানি উপভোগ করেছিল আরক্ত মুখে । এভাবেই হঠাৎ একদিন প্রতুলের সাতদিন শেষ হয়ে যায় । কলকাতায় ফিরে আসে প্রতুল । এসেই চিঠি দিয়ে তাড়া দিতে থাকে সুচেতা কে ফেরার জন্যে । প্রতুল ফিরে আসার পরে সুচেতার ও মন বসে না আর গ্রামে কিন্তু মা বাবার কাছে কিছু বলতেও পারে না  ফিরে যাবার কথা । ব্যাপারটা সুচেতার মায়ের চোখে ধরা পড়ে । ©️

টগরি বলে ," আমাদের মিয়াছেনাটোর  মুখে আমদ নাই কেনে ? কি দুঃখ আছে  ? " 

------ ন রে মা , আমি ঠিকই অছি । তুমি কি দেখইতে কি দেইখছ ? আমার কিছু হয় লায়।  "

------ দেখিস কুনো কাউকে ভালোবাস্যে ফেলিস লাই , ওরা সহরের লুক বটে । 

------ হ মা , তুই  চিন্তা করিস নায় , আমি ঠিক আছি । 

এভাবেই  প্রেমের ভেলায় ভাসতে ভাসতে সুচেতার একমাস শেষ হয়ে গেলো । প্রতুলের কাছে ফেরার আনন্দে গ্রাম , বাবা মা কে ছেড়ে  যাবার দুঃখটা প্রকট হোলো না । সুচেতা কি আর জানত তখন শহরের লোক কোনোদিনই প্রান্তিককে  ঘরে ঠাঁই দেয় না । প্রান্তিক ফুল ঔষধি গুনে ভরপুর হলেও তা কখনোই ঘরের শোভা বর্ধন করে না । 


 দিদিমণি হামার রুপেয়া ? ভীষন ভারী গলার আওয়াজে সুচেতার ঘোর কাটল । কখন যে সুয্যি ডুবেছে খেয়ালই করেনি । খুব খিদেও পেয়েছে ।

----- হ্যাঁ এনেছি ,তুমি ওই ঝোপটার কাছে যাও আমি আসছি । আমার সাথে কোনো কথা বলবে না । আমি একটা কাগজের টোঙ্গা ঝোপ টাতে ছুঁড়ে ফেলবো । তুমি কুড়িয়ে নিও । পরে ফোন করে জানিয়ে দিও । আর হ্যাঁ , তুমি যা চেয়েছিলে তার থেকে  বেশি আছে । মনে থকে যেনো , আমি তোমাকে চিনি না । ©️

(চলবে)

©️আগের পর্ব পড়ুন .....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ