দর্পণ | ধারাবাহিক কলম | কংসাবতী { পর্ব - ১৩ } মহুয়া




পোস্ট বার দেখা হয়েছে


কংসাবতী
 { পর্ব - ১৩ } 

  মহুয়া


কলকাতা শহরের একটা সরকারি হাসপতাল "ডক্টর নীলরতন সরকার হাসপাতাল" ।অসহ্য যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে মেয়েটা । মাথায় ব্যান্ডেজ , একটা ঘোরের মধ্যে কঁকিয়ে যাচ্ছে । কলেজের কিছু ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছিল ভর্তি করতে ।ভর্তি করে দিয়ে সবাই ফিরে গিয়েছিল নিজেদের গন্তব্যে কিন্তু একটা ছেলে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে বসেছিল ভিজিটিং আওয়ার্স শেষ হয়ে যাবার পরেও । বারবার জিজ্ঞেস করছিল মেয়ে টির কথা ।  ছেলেটির ও সারা শরীরে ছোটখাটো জখম রয়েছে ।চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে মাথার বাঁ পাশে অপারেশন করতে হবে শুনে খুবই মুষড়ে পড়েছিল । একটা ফোন নং দিয়ে গিয়েছিল যোগযোগ করার জন্যে । শেষে চিন্তাগ্রস্ত মুখে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলো । পরেরদিন হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছিল মেয়েটির কাকা ।  কিন্তু দেখে খুব বিত্তবান মনে হলো না বরঞ্চ একটু নিম্নবিত্ত ঘেঁষা বলেই মনে হোলো। না নিজের কাকা নয় , মেয়েটি র বাবার বন্ধু । তবে নিজের না হলেও ভদ্রলোক মেয়েটির শহরে না থাকা বাবার অভাব পূর্ণ করেছিলেন তার মেয়েটির প্রতি তার ভালোবাসার টানে । মেয়েটির তখনও ঠিকভাবে জ্ঞান আসেনি । ভদ্রলোক নার্সকে জিজ্ঞেস করলেন --©️

----- কিভাবে এমন হোলো ? এখনো তো জ্ঞান আসেনি , ভালো হয়ে যাবে তো ? 

----- দেখুন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটা অপারেশন খুব প্রয়োজন । মাথার আঘাত টা যথেষ্ট । রক্তপাত বন্ধ করা গেলেও ভেতরের ইনজুরি টা তো রয়েই গেছে । তাই অপারেশনটা জরুরি ।

----- কিন্তু ওর নিজের কোনো আত্মীয় স্বজন শহরে নেই । মানে অপারেশন করাতে গেলে নিজের আত্মীয়স্বজন দরকার । আমি ওর বাবাকে খবর দিয়েছি । জানিনা খবরটা ঠিকসময় পেলো কিনা ? গ্রামে বাড়ি তো , খবর পেলে বিকেলের মধ্যেই চলে আসবে । চিন্তা , চিন্তা মা ,কষ্ট হচ্ছে ? কিভাবে এমন হোলো বলুন তো ? মেয়েটা কাল কলেজে গেলো রেজাল্ট আনতে , আর তারপর ই এই অঘটন । আমি কি করে ওর বাবার কাছে মুখ দেখাব ? 

---- শুনুন এই ওষুধগুলো এক্ষুনি এনে দিতে হবে  । আর এই চারটে ইনজেকশন । 

----- দিন , যতোক্ষণ ওর বাবা না আসে ততক্ষণ ওকে দেখে রাখতে হবে । আচ্ছা বলতে পারবেন ওকে কারা নিয়ে এসেছিল ? 

----- হুম ওর ই বয়সী কিছু ছেলেমেয়ে , মনে হয় তারা ওর বন্ধুবান্ধব । তবে একটি ছেলে অনেকরাত অবধি বসেছিল আর ওই ছেলেটাও অল্পবিস্তর জখম ছিল । বারবার জিজ্ঞেস করছিল ওর কথা । ছেলেটির নাম যতদূর সম্ভব প্রতুল । 

নার্সের সাথে কথা বলতে বলতে ইউনিভার্সিটির বেশ কিছু টিচার ঢুকলো ওয়ার্ডে । 

----- কেমন আছে ও ?

নার্স আবার সব কথা পুনরাবৃত্তি করে । তখন একজন টিচার বলেন "কত টাকা লাগবে অপারেশন করতে "?

------ লাখখানেক তো লাগার কথা , তারপর ওষুধ ,ইনজেকশন তো আছেই । সরকারি হাসপাতালে তো আর সবরকম ওষুধ আপনারা পাবেন না । কিনতে হবেই ।

----- একজন টিচার এগিয়ে এলো সুচেতার কাকার দিকে । আপনি ওর বাবা ? 

---- না  না , আমি ওর কাকা । আমি ছাড়া এই শহরে ওর আর কেউ নেই । ওর বাবাকে খবর দেওয়া হয়েছে । আপনারা বলতে পারবেন কলেজে রেজাল্ট আনতে গিয়ে আমাদের মেয়েটার  

এমন অবস্থা কি করে হোলো ? ওর মত শান্তশিষ্ট একটা মেয়েকে এভাবে কারা মারলো ? কলেজ কি এর কোনো দায়িত্ব নেবে না ? আমি কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের করবো । ওর অপারেশনের দায়িত্ব কে নেবে ? আপনারা জানেন ওদের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো নয় ? অথচ এই অপারেশন টা না করালে ওর জীবনসংশয় হবে । কোথায় পাবো বলতে পারেন এত টাকা ? 

টিচাররা এর ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকেন । এর মধ্যেই একজন টিচার বলেন , ওর চিকিৎসার খরচ যদি কলেজ বহন করে তাহলে প্লিজ আপনি থানাপুলিশ করবেন না । ©️

------ আগে ওর বাবা আসুক ,তারপর ঠিক করবো আমরা । শুনুন , নার্স দিদি আপনি ওর অপারেশনের ব্যবস্থা করুন ।

----- ওকে , তাহলে আপনি সুপারের ঘরে আসুন । ওখানেই সব কথা হবে আর কিছু পেপারে সাইন করতে হবে ।

----- আচ্ছা , যত দ্রুত পারেন সব ব্যবস্থা করুন । আমি এখন বাড়ি গিয়ে কিছু পয়সার জোগাড় করি । 

এই বলে সুচেতার কাকা হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন । একজন টিচার নার্সকে জিজ্ঞেস করলেন --

----- আচ্ছা প্রতুল বলে ছেলেটিকে ও তো এখানে নিয়ে এসেছিল । তার কি অবস্থা ? 

----- হ্যাঁ নিয়ে এসেছিল । কিন্তু তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে । 

----- আচ্ছা , ঠিক আছে আমরা এখন যাই ,আবার পরে আসবো । দেখে রাখবেন সিস্টার মেয়েটিকে । 


বিকেলের মধ্যে সুচেতার অপারেশন হয়ে যায় । সন্ধ্যের সময় ওকে বেডে দেয় । অর্ধ অচেতন অবস্থা । ভিজিটিং আওয়ার্সে সুচেতার কাকা আর বাবা আসে । ওর বাবা কেঁদে ওঠে মেয়েকে দেখে । নার্স এগিয়ে আসে ---©️

----- এটা  আই সি ইউ , অপারেশনের রোগীরা আছে । প্লিজ ডোন্ট সিন ক্রিয়েট । বাইরে যান আপনারা । এক্ষুনি ডক্টর চলে আসবেন । 

------  ও ভালো হয়্যে যাবে ত দিদি ? সুচেতার বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলে । 

----- আপাতত এটুকু বলতে পারি বিপদ কেটে গেছে ।  আপনার বাইরে যান । 

সুচেতার কাকা রিসেপশনে  গিয়ে বলেন অপারেশনের টাকা নিয়ে এসেছেন , কোথায় দিতে হবে ? 

রিসেপশনিস্ট উল্টোদিকের একটা কাউন্টার দেখিয়ে বলেন ওখানে কথা বলুন ।

------ স্যার ,আমি সুচেতা চক্রবর্তীর কাকা । ওর অপারেশনের টাকাটা নিয়ে এসেছি । একসঙ্গে জমলে আমাদের শোধ করতে অসুবিধা হবে । আজ যেটুকু জোগাড় করতে পেরেছি সেটুকুই রাখুন । আবার পরে দেবো । 

------ টাকা ? কিসের টাকা ? এখন পর্যন্ত যা বিল হয়েছে সব পে করা আছে । বরং কিছু এক্সট্রা পে করা আছে । 

----- কে দিল টাকা ? আমরা তো জানিনা । আমরা তো দিই নি 

----- কে দিল কি করে বলবো ? আমাদের টাকা পাওয়া নিয়ে কথা । দুপুরের দিকে দুটি ছেলে এসে পে করে দিয়ে গেলো ।

----- তাহলে কি কলেজ থেকে দিল ? আমরা যাতে এফ আই আর না করি । 

----- এফ আই আর  কি বটে ? উটা কইরলে কি হব্যে বুলো দিখি নিরঞ্জন ।

----- পরে বলবো , এখন ঘরে চলো । কিন্তু টাকাটা ????????


(চলবে)


আগের পর্ব পড়ুন.....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ