মহাবলেশ্বর || ক্যামেরা ও কলমে : সুজিত চক্রবর্তী || পর্ব -২




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 ভ্রমণ ও ফটোগ্রাফি 

মহাবলেশ্বর ( দ্বিতীয় পর্ব ) 

ক্যামেরা ও কলমে  : সুজিত চক্রবর্তী  

   
প্রথম দফায় যেখানে শেষ হয়েছিল, তারপর থেকে  এখানে শুরু করা যাক : মহাবলেশ্বর ( দ্বিতীয় ভাগ )।


এখানে এসে শ্রীক্ষেত্র মহাবলেশ্বরে ( মহাদেবের মন্দির) না গেলে ভ্রমণ যে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। 

তাছাড়া , অতিমারীর কারণে সব মন্দিরই দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল । এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর মন্দির খুলে গেলেও , বহু মন্দিরে দেখেছি গর্ভগৃহে ভক্তদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছিল। এখন আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন মন্দিরে ভক্তসমাগম হচ্ছে আগের মতোই ।এখানেও একই চিত্র।  


     আগেই বলেছি এই ক্যাম্পাসে আছে শ্রীপঞ্চগঙ্গা মন্দির । ভক্তদের কাছে তার আকর্ষণও কম নয় ।

 এই পর্বে দেওয়া সব ছবি  আমার মোবাইলে তোলা 

  Device  : Samsung Galaxy M20.


এরপর যাওয়া যাক ভেন্না লেকে। এখানে উৎসাহী পর্যটকের ভীড় জমেছে ভালোই। সামনেই চোখে  পড়বে হরেক রকমের পসরা সাজিয়ে বসে আছে অনেকেই । আছে স্ট্রবেরি , মালবেরি , গাজর , পেয়ারা ইত্যাদি প্রভৃতি। তার পেছনে সারিবদ্ধ ঘোড়া খরিদ্দারের অপেক্ষায় আছে। ধবধবে সাদা ঘোড়া দেখে তো পক্ষীরাজের গল্প মনে পড়ে গেল।  


          ঠিক তখনই দেখি , এক সুন্দরী তরুণী  দুধসাদা পক্ষীরাজের সওয়ার হয়ে টগবগ করে বেশ খুশি মনে এগিয়ে চলেছে !


           আমরা মধ্যিখানের রাস্তায় এগিয়ে চললাম লেকের দিকে । উদ্দেশ্য বোটিং।

 সাতারার রাজা,  শ্রী আপ্পা সাহেব মহারাজ 1842 খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করিয়েছিলেন এই ভেন্না লেক ।  ঘোড়ায় চড়া এবং নৌকো চড়ে জলপথে ভ্রমণ , দুটোই এখানে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। 


          জানা গেল দু'রকম বোট ভাড়া নেওয়া যায় এখানে। পেডাল বোট নিলে নিজেরা পেডাল করে যেতে হবে । আর রোয়িং বোটে মাঝি থাকবে বোটে এবং অবশ্যই সে দাঁড় টেনে নিয়ে যাবে নৌকোটি । 


              আমরা একটি রোয়িং বোট ভাড়া  নিয়েছিলাম আধঘণ্টার জন্যে।

 আমরা জানতাম , ভেন্না লেকে বোটিং-এর জন্যে সূর্যাস্তের সময়টাই সেরা সময়। কিন্তু , আমরা এসেছিলাম দুপুরবেলায় । কারণটা বলেছি প্রথম পর্বে । জুন মাসে মহাবলেশ্বরের আকাশে সূর্যদেবই যখন অনুপস্থিত , অস্তাচলে কে যাবে  ! 


        তবে ঠান্ডা হাওয়া আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মন ভরে গেছিল সেদিন , তাতে সন্দেহ নেই!

 মাঝির সাথে অনেক সুখদুঃখের কথা বলে কেটে গেল সময় । অতিমারীর সময় ট্যুরিস্ট ছিল না কোথাও । তাই যাদের রুটি-রুজি জড়িয়ে আছে বহিরাগত পর্যটকের সাথে , তাদের কী অবস্থায়  দিন কেটেছে সেই সময় তা সহজেই অনুমান করা যায়।

 ভেন্না লেকে বোটিং বেশ মজার একটা অভিজ্ঞতা বটে । সমগ্র লেকটিকে ঘিরে রেখেছে সবুজ রোদ্দুর মাখা গাছগাছালি।  দেখা যায় পাড়ের কিছু মন্দিরও ।

 "এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না ..... "

এ গান মনে আসতেই পারে এই পরিবেশে । 


    সদা কর্মব্যস্ত এই জীবন থেকে ছুটি চায় মন , এমন জায়গায় যেতে চায় যেখানে 

আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়ায় গান ,  যেখানে tension নেই , ....

বা বলা যায় .... চাপ নেই বস্ !

 পরবর্তী গন্তব্য ছিল মহাবালেশ্বরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিন্দুগুলির দিকে । সেখানে পৌঁছে দেখা মিলল বাঁদরের । উৎসাহী পর্যটকদের হাত থেকে খাবার নিতে তারা ব্যস্ত। একটি বাচ্চা ছেলে তার বাবাকে প্রশ্ন করল , " এটা কি মাংকি পয়েন্ট?"

 পৌঁছে গেছি আর্থার সীট পয়েন্টে। এখানে পাথরের ফলকে লেখা আছে: এই বিন্দুর নামকরণ করা হয়েছে স্যার জর্জ আর্থারের নামানুসারে , যিনি 1841 থেকে 1846 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বোম্বে প্রেসিডেন্সির গভর্নর ছিলেন।  এই বিন্দুকে সব বিন্দুর রাজা বলা হয় ।

 ভুট্টা , কোল্ড ড্রিঙ্কস খেয়ে এগিয়ে চললে  Castle rock point এর পরে দেখা যায় ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমে গেছে অনেক নীচে, এক  কিলোমিটার দীর্ঘ পথে। রাস্তার পাশে দেখা যায় সহাদ্রি (রেঞ্জ ) পাহাড়ের নানা আকৃতির সাজসজ্জা। নীচে নেমে গেলে দেখা যাবে এখানে  অনেক বিন্দুতে সাজানো আছে পর্বতমালা।

 এরপর ধাপে ধাপে নেমে এসেছে পর্যটকদের ভীড়।

 পাহাড়ের ওপর প্রকৃতির রূপ দেখতে দেখতে মন উদাস হয়ে যায় নিজের অজান্তেই। মনে মনে খবর পাই , অসুখ-বিসুখ , মহামারী-অতিমারীর সীমান্তে আমাদের জন্যে যেন অপেক্ষা করে আছে কারও  আশীর্বাদ ! জীবনের হাসি কান্না নিয়ে কোন প্রতিভাধর শিল্পী রচনা করে চলেছেন এপিসোডের পর এপিসোড।  


         কে সেই শিল্পী ? আমি জানি না। তবে,  আমি রবি ঠাকুরের গান শুনেছি। 

কিছু বুঝেছি নিজের মতো করে ,বাকিটা রয়ে গেছে  রহস্যময়।  

 " তিনি যখন সন্ধ্যা-কাছে দাঁড়ান ঊর্ধ্ব করে ,

                                         তখন স্তরে স্তরে 

  ফুটে ওঠে অন্ধকারের আপন প্রাণের ধন ---

   মুকুটে তাঁর পরেন সে রতন  ।। " 

তখন সময়টা ছিল সন্ধ্যা হব-হব !


 ম্যালকম বিন্দু থেকে ফিরে তাকাতে হবে আর্থার সীট পয়েন্ট দেখতে।  দেখা যাবে আরও কয়েকটি দ্রষ্টব্য স্থান  --- তোরানাগড় ও প্রতাপগড় দুর্গ এবং সাবিত্রী উপত্যকা।

 তখন মেঘমুলুকে কিছু ব্যস্ততা নজরে পড়ল। মেঘ আর পাহাড়ের বন্ধুত্ব নিয়ে কবিতা পড়েছি অনেক।  এর বেশি কিছু আমি তো জানি না বা জানার চেষ্টা করি নি কখনও।

 সবচেয়ে interesting point মনে হয় Echo  Point  !!!

এখানে দাঁড়িয়ে  ' I love you  ' 

বললে পাহাড়ের গায়ে সেই কথা প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে ঘোষণাকারীর কাছে। শুধু কি এইটুকুই ? 


    আশেপাশের লোকজনও তো শুনবে । শুধুই  মানুষ ? অরণ্য , পাহাড়, প্রকৃতির কোলে ছড়িয়ে থাকা জীবজগত ---তারাও শুনবে।  ভালবাসার কথা বললে , প্রকৃতিও তোমাকে ভালবাসি বলবে। 


এমনি করেই তো অচেনা অজানা জনও কত সহজে একদিন আপন হয়ে যায়। গড়ে ওঠে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের রূপকথা । 


                মনে পড়ে গেল আশা ভোঁসলের গাওয়া হারানো দিনের সেই গানটি  : 


   "  আমি খাতার পাতায় চেয়েছিলাম 

       শুধু  একটি তোমার সই গো , 

        তুমি চোখের পাতায় লিখে দিলে 

          :::::::::::::::::::::::::::::::::::::

        আমি হলাম তোমার , সই গো । "

 


 পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে এরপর পৌঁছে গেলাম এই পথের শেষে। ওপরে রাস্তায় যেখানে অপেক্ষায় আছে আমাদের বাহন , মানে ট্যুরিস্ট কার । 


       মহাবলেশ্বর , দ্বিতীয় পর্বের এখানেই ইতি টানলাম।আপনাদের কেমন লাগল জানাবেন।


________

আগের পর্ব পড়ুন .....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ