কবিতা গুচ্ছ ~ বাসুদেব সেন




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

এ তনু তোমার


চাও যদি ভাঙা কুলোয় ধানের আলো 

ছড়িয়ে দিতে পারো

বারবার বারবার ।

নগ্ন হাতের কম্পন কাকে করে ঘরছাড়া 

কাকে করে

সমাজের বাহির ?

দিঘল কালো চোখে আশ্বাস ছিল 

নবাগত দিনের,

আজ নেই ।

আজ ভগ্ন ঘরে দূষিত বাতাস শুধু শ্বাস ফেলে যায় !


কে ? কে অকৃতজ্ঞ তবে ?

সন্তান ?

না পিতা !

যার মাথার ওপরে থাকে ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌চাঁদোয়া জরির কাজ

ভরপুর আলো অবয়ব

সেই আশ্রয়-ই শ্রেয় ।

এটি না দিলে কে তুমি পরদেশী  পরজীবি...

সবুজ গন্ধে মাতোয়ারা হলে আর

ঘরেতে নৈরাশ্য ,

আঁধার !

শিশুমুখে রাঙানদী বকুল পথ

নরম পাদানি আর এখনো

ভরা জ্যোৎস্নার স্মৃতি ।

====

আকাশের স্বরলিপি


স্বরবিতানে জেগে উঠছে নীল ঢেউ

শূন্যতায় বিষাদের পাখি

সমুদ্রে ডুবে যায় হতাশার শামুক

প্রকৃত গাভীদের কোন চারণভূমি নেই


অত বড় দিগন্ত জুড়ে তবুও আলোছায়া

তবুও প্রেম

তবুও যশোরাজ খাঁন

তবুও নরহরি , ঘনশ্যাম দাস ।

===                   

কল্পনা দিদি

 

 শিরদাঁড়াগুলো  বেঁকে যায় -

 শীতল  স্রোতে,

 বিশ্বভারতী  ক্যাম্পাসে । 


  উপাসনা গৃহে  এখনো দিদিকে দেখি


  দশটা বছর  তিনিই তো শেখালেন 

  'সাত আটটে সাতাশ ' , 

  অথচ এখন

  তিনি  যেন  উদাসী স্মৃতি 

  হারানো  অতীত । 


 আমার  শৈশবের সেই অতৃপ্ত দিদি

 এখন আর ক্ষমা করেন না , 

 বলেন,  এ বয়সে যেন ভুল না বলি । 


প্রান্তিক স্টেশন ছাড়িয়ে ষাট ছুঁই ছুঁই আমি

হাউ হাউ করে কাঁদলাম 

কঙ্কালীতলায় । 

কত যে ভুল হল ভুল , 

অভিমান হল প্রচুর । 


মৃত মা এসে দাঁড়ালেন কোপাইয়ের ঘাটে 

শ্মশান তলায় । 

বললেন  দিদিকে , 

' বালাই ষাট ,  ওকে এত বকছিস কেন কল্পনা ? '

====

মন্দিরে অন্ধ দাহ


ঘুমোতে চাই

আশ্চর্য তোমার হৃদয়ে ,

অন্ধকারে

কারবালায় ।

               মৃত্যু পেয়ালার স্বাদ পাই

               নিঃশ্বাসে

               কন্ঠে

               শিরায়

               রক্তস্রোত পাহাড়ে ।

নদীপ্রাণে  তুফান উঠেছে !


গভীর জ্বলাভূমি তোমার

আহ্বান করে

নিয়ত ।


যদি আঘাতে আঘাতে ছিন্ন করি

 মুখোশ,

কালো অহংকার !

দাবানল হয়ে দাউদাউ করে জ্বলে উঠি যদি ,

একরাশ

উপহার দিও মা ! জন্মভূমি আমার !

তোমার ভালবাসা মুঠি মুঠি করে ছড়িয়ে দিও আমার

এই মন্দিরে

অন্ধ দাহে !!

====

নারী জীবন


তোমার সজীব পাতার মতো ঠোঁট 

গাছের গুঁড়ি থেকে নেমে আসা নাক

আর

পাঁপড়ির মতো ভেজা মায়াবী চোখ 

কবে কোন সুদূর থেকে আজো

বৃষ্টি স্নাত তৃপ্ত রাতে

শুধু ভাবায় , কাছে পেতে চায় ।

একেকটা জীবনের ধাপ

একেকটা অভিশাপের জীবন্ত রূপ ।

তোমার দিঘল হাত বেয়ে

শিরা উপশিরা, শুভ্র জীবনের রোম

আমি সেই রোম খুঁজেছি ।

একটা মৌসুমী বায়ু 

স্রোতের মতো......

তোমার সারাটা তনুতে

শুধু তাপ আর তাপ ।

শৈত্যময় বেঁচে থাকা থেকে যেন বেরিয়ে আসা

স্বেদ........

দু ফোঁটা জল ।

কত কোমল নির্ভর 

তোমার স্তন পাহাড় ,

আদিম জীবনের ছায়া নীচে...... নরকে।

সেই  নরক জঞ্জাল  

আলাদা পৃথিবীর স্বাদ

সে সব পেয়েছি । অথচ রয়েছি 

সংগ্রামে, জ্বালায় আর এই

প্রত্যাশার তীব্র প্রদাহে ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ