দর্পণ || হোয়াটস এপ সাহিত্য




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

রথ সম্পর্কিত জানা অজানা তথ্য

কাকলী দাশগুপ্ত



(১) জগন্নাথ প্রতিবছর নব রথে উঠে। নব মানে নতুন আবার নব মানে নববিধা ভক্তি। মানে ভক্তির রথে জগন্নাথ উঠে। ভক্তি দিয়ে গড়া রথ।

(২) রথের দড়ি বা রশি – বাসুকি। সেজন্যে বলা হয়, রথের দড়ি ধরলে পুণ্য হয়। মূলত, বাসুকির কৃপা লাভ হয়।

(৩) পুরীর রথের ৪২ টি চাকা। (বলদেবের রথের ১৪ টি, জগন্নাথের রথের ১৬ টি, সুভদ্রাদেবীর ১২ টি)।

(৪) পুরীর রথ চলার সময় রাস্তায় চাকার তিনটি দাগ পড়ে – তা হল গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী। যারা বার্ধক্যজনিত কারণে বা অন্যান্য কারণে রথের দড়ি ধরতে পারেন না, তারা যদি চাকার এই তিনটি দাগের ধুলি গ্রহণ করেন, এই ত্রিদাগে গড়াগড়ি দেন, তাহলে গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীতে অবগাহনের ফল লাভ করেন।

(৫) জগন্নাথের রথের নাম নন্দীঘোষ বা কপিধ্বজ। এই রথের ১৬টি চাকা। রথের রঙ পীত। ষোল চাকা মানে দশ ইন্দ্রিয় আর ছয় রিপূ। যা থাকে ভগবানের নীচে।

(৬) বলভদ্রের রথের নাম হল তালধ্বজ বা হলধ্বজ। ১৪টি চাকা আছে। ১৪টি চাকা মানে ১৪টি ভুবন। বলভদ্র হল গুরুতত্ত্ব। গুরুতত্ত্বের অধীন ১৪টি ভূবন।

(৭) দেবতাদের দ্বারা প্রদত্ত সুভদ্রা দেবীর রথের নাম ‘দর্পদলন’ বা ‘পদ্মধ্বজ’। রথের উচ্চতা ৩১ হাত। এই রথে ১২ টি চাকা আছে। এর অর্থ ভজনের সময় বার মাস। প্রতিদিন ভক্তিঙ্গ যাজন করতে হবে।

(৮) সম্পূর্ণ রথ শুধুমাত্র কাঠের তৈরি, ফলে রথ চলার সময় কাঠের কড়কড় শব্দ হয়, এটিকে বলা হয় বেদ।

(৯) ২০৬ টি কাঠ দিয়ে জগন্নাথের রথ হয়। ঠিক আমাদের দেহেও ২০৬ টি হাড়।

(১০) রথ যখন চলে প্রথমে থাকে বলদেবের রথ। কারণ বলদেব দাদা। আবার জগত গুরুতত্ত্ব। তিনিই তো নিত্যানন্দ। সবার জীবনে আগে গুরুকৃপা আসতে হবে। 

তারপর চলে সুভদ্রার রথ। সুভদ্রা হল ভক্তি তত্ত্ব। গুরুকৃপার পর আসে ভক্তিমহারাণী। কারণ ভক্তির ঠিকানা শ্রীগুরুপদে। “শ্রীগুরুচরণপদ্ম কেবল ভকতিসদ্ম। বন্দো মুই সাবধান মতে।” 

গুরুদেব হল ভগবানের করুণার মুর্তি।

তারপর যায় জগন্নাথের রথ।

প্রথমে গুরুদেব, তারপর ভক্তি, তারপর ভগবান জগন্নাথ।

(১১) রথের দর্শনে শ্রী চৈতন্যমহাপ্রভু নৃত্য করছেন। অপলক নয়নে দর্শন করছেন জগন্নাথ। রথ চলতে চলতে মাঝে মাঝে থেমে যায়।

এর কারন রাধা ভাবে বিভোর মহাপ্রভুকে ভাল করে দেখার জন্য রথ একটু থামে আবার চলে। অনেক ভক্তের মাঝে মহাপ্রভুকে না দেখে জগন্নাথ থেমে যায়। 

রথ অপ্রকৃতি কারণ তা প্রভু জগন্নাথের ইচ্ছা শক্তিতে রথ চলে। আজও রথে অচল জগন্নাথকে দেখে রাধা ভাবে বিভোর মহাপ্রভু আনন্দে নেচে নেচে যায়। 

******************

যত্ন করেই সাজিয়ে রাখো

মনোজ কুমার রথ ( শ্রীমান অকুলীন )


একান্ত নিজের ভাবো বলেই 

আজ এতোটা একাত্ম হতে পেরেছি,

বিপুল আগ্রহে মনোনয়নের কারণেই

জিতে নিয়েছো এ অজেয় হৃদয়...


ভয় নেই হারাবার,

সুযোগ নেই হাত ছাড়াবার,

সম্ভাবনা নেই কারুর ভুল বোঝাবার...

প্রেম অকুল,

প্রেম অথৈ,

প্রেম সত্যিই অনন্ত... 

যদি বিশ্বাস আর ভরসার পুকুরটি থাকে টইটম্বুর।


সোনারপুরে মালঞ্চ,

শোভাবাজারে রাজবাড়ি,

রূপনগরে মাটির গন্ধমাখা কৃষাণীর সারল্য!

তোমার সারা শরীর জুড়ে কখনও একটা প্রাসাদ,

কখনও একটা ফুলের বাগান,

কখনও রক্তক্ষয়ী লড়াই বা পাশবিক হিংস্রতাহীন 

এক একটা শহর কিংবা গ্রাম...


দেখি,

আঁকি,

লিখি,

তাকিয়েই থাকি অসংজ্ঞাত মাধুর্যমন্ডিত রূপের দিকে...

ভাবি তুমি যে কী!!


ভাবতে ভাবতে...... ভাবতে ভাবতেই...

কবেই যে নেমে পড়েছি ওই নীল সায়রের জলে!

হাত দিয়ে জল ছুঁতে গিয়ে,

পুরো শরীর ভিজিয়ে ফেলেছি আজ...

বিক্রমপুর এখন কত শান্ত,

পুরুষসিংহ কী দারুণ বশ মেনেছে তোমার,

সাঁতরে অথৈ সরোবর থেকে তুলে আনে পুণ্ডরীক!

যত্ন করেই সাজিয়ে রাখো

তোমার সোনারপুর,

তোমার শোভাবাজার,

তোমার রূপনগর...

******************

গভীর থেকে গভীরতর

 অনিরুদ্ধ দত্ত

              

রাত এগারোটা, অস্থিরভাবে পায়চারি করছে অর্ণব,

একজন নামজাদা জেলা শাসক হিসেবে প্রচুর

খ্যাতি অর্জন করেছে সে। না, এখানে থামলে চলবে না; তাকে আরও বড় হতে হবে। অস্থিরতা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। খাটের উপর বসে এসব কিছু লক্ষ্য করছিলো তার স্ত্রী শকুন্তলা। বেশ কয়েকদিন ধরেই সে তার স্বামীর মধ্যে এই অস্থিরতা লক্ষ্য করছে। জিজ্ঞাসা করাতে, অর্ণবের উত্তর ছিল,'আমাকে আরও বড় হতে হবে'। শকুন্তলা বলেছিলো, 'তোমার এই অস্থিরতা তো তোমাকে বড় হতে বাধা দেবে'। অর্ণব,শকুন্তলাকে বলেছিলো, 'তুমি বেশি জ্ঞান দিতে এসো না'। স্কুল শিক্ষিকা শকুন্তলা চুপ করে গিয়েছিলো। আজ তার স্বামীর অস্থিরতা দেখে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আজ আর চুপ করে না থাকতে পেরে সে অর্ণবকে  বললো,' আমার একটা কথা শুনবে?'অর্ণব একটু বিরক্ত হয়ে‌‌ই বললো, 'কি?'শকুন্তলা বললো,'এমন কিছু নয়, একটা ছোটো কথোপকথন; একটু শোনো, ভালো লাগবে'। অর্ণব বেশ বিরক্তি প্রকাশ করে বললো, 'আচ্ছা বলো'। শকুন্তলা, অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,'জানো, একবার উত্তাল অশান্ত সমুদ্র, শান্ত নদীকে প্রশ্ন করেছিলো, ''তুমি এত শান্ত কেন?''উত্তরে নদী স্মিত হেসে বলেছিলো,''আসলে কি জানো? আমার সমস্ত পাপ- পুণ্য, জ্ঞান-অজ্ঞান, বোধ-বুদ্ধি সমস্ত কিছুই প্রবাহিত হয়ে তোমার মধ্যে মিলিত হচ্ছে, তাই আমি শান্ত। তুমিও, তোমার সমস্ত কিছু সমর্পণ করো''। উত্তরে সমুদ্র বললো, ''কিন্তু,কাকে?''নদী বললো, ''তোমার অনন্ত জ্ঞানের কাছে আমি তো তুচ্ছ, সেটা তুমিই ভাবো''--'।এই বলে শকুন্তলা চুপ করে গেল। অর্ণব, তার অস্থিরতা সত্ত্বেও এতক্ষণ শকুন্তলার কথাগুলো শুনছিল। অর্ণব এবার বললো,'তাহলে, তুমি কি বলতে চাও? আমি সমুদ্র আর তুমি নদী?'শকুন্তলা বললো,'আর আমি কিছু বলবো না, এবার তুমি ভাবো'।অর্ণব এবার ধীরে ধীরে শকুন্তলার কাছে এগিয়ে এলো, শকুন্তলার পাশে বসলো। অর্ণব একদৃষ্টে শকুন্তলার দিকে তাকিয়ে রইলো! শকুন্তলা বললো, 'কি দেখছো?'অর্ণব কোনো উত্তর দিল না। তার দৃষ্টি গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগলো! রাতের গভীরতাও বাড়তে লাগলো।

**********************

 আজ নিশায় 

বিরহী  নীহার রঞ্জন দেবনাথ 



ফুলে ফুলে হবে মিলন বসে নদীর কূলে 


কাশফুলের গন্ধে মেতে খেলবো দুজন মিলে ।


ময়না কোকিল টিয়ার সাথে গাহিব দুজনে গান 


হৃদয় বীণার সুরে ভরে উঠবে দুটি প্রাণ ।।



কাল বৈশাখীর ঝড় বা শরতের সন্ধ্যায় 


তটিনীতে নৌকা নিয়ে মাঝি চলছে মাঝ দরিয়ায় ।


আমরা দুজন নৌকা দিয়ে ফিরবো নিজ ঘরে 


ভালোবাসা উজাড় করে সপেছি তোমার তরে ।।



উতাল হাওয়ায় মিশে যাবে নির্মল দুটি প্রাণ 


নেচে নেচে পাখিরা দেখি গাইছে মধুর গান  ।


সুরের তালে  সুর মিলিয়ে আমরা ভাসমান 


ক্ষনিকের এই জীবন খেলায় ভরে যায় মন ।।



ভাঙা মনের কপাট খোলে গেলো তোমায় কাছে পেয়ে ।


খেলবো দুজন আপন মনে তোমায় কোলে নিয়ে ।


স্বপ্ন আজ পূরণ হলো তোমার ভালোবাসায় 


ফুলে ফুলে হবে মিলন , খেলবো আজ নিশায় ।।

************************

যশোদার শঙ্কা

কে দেব দাস


কানহা রে, কানহা-আজ যাসনে ঘরের বাহিরে।

হিয়া মোরা কাঁপে থর থর, তোরা-বিহনে রে, 

তোরা বিহনে।

কানহা রে, কানহা-আজ যাসনে ঘরের বাহিরে।


শুনা শুনা লাগে মোরা জিয়া রে, তোরা-বিহনে রে, 

তোরা বিহনে,

কানহা রে আজ-যাসনে ঘরের বাহিরে।


গরজিয়া উঠিছে মেঘ-বিদ্যুৎ বরিষণে,কানহা রে, 

তুই আজ-যাসনে ঘরের বাহিরে, ওরে যাসনে-ঘন ঘোড়ে রে,ওরে যাসনে-ঘন ঘোড়ে।


দরদিয়া হিয়া মোরা কাঁপে-থর থর রে,

বরিষণ রাতে রে, ওরে-বরিষণ রাতে,

ওরে কানহা, আজ-যাসনে ঘরের বাহিরে।


চাঁন্দা মামা ডুবেছে ঐ কালো-আঁধারে রে,

হিয়া মোরা কাঁপে-তুহার লাগিয়া রে, তুহার লাগিয়া।


কানহা রে, কানহা তুই আজ-যাসনে ঘরের বাহিরে...

বরিষণ রাতে রে, ওরে-বরিষণ রাতে,

কানহা রে কানহা, তুই আজ-যাসনে  ঘরের বাহিরে।

****************************

আমরা বিদূষক

সুদীপ বিশ্বাস 



           মুষ্ঠি এলোমেলো বিষাক্ত  হাওয়া;

   অস্পষ্ট হস্তরেখায় আগামী ভবিতব্যের নির্ঘন্ট।

        হস্তরেখা বিশারদগণের কাল কুঠুরিতে 

                          দ্রষ্টার দর্শনে,

           রূপক প্রেক্ষাপটে রচনার গাম্ভীর্য।

    গণতান্ত্রিক সাম্রাজ্যে জাতিতত্ত্বের পরাকাষ্ঠা 

          কুষ্টি বিচারে গাণিতিক সংখ্যাতত্ত্বে 

        মর্যাদা-অমর্যাদার গুরুত্বের নির্ভরতা। 

     উল্টাই পাল্টাই, নির্বাণ অস্তিত্বে যুক্তিবাদী 

                    প্রশ্নে নিজেকে হারায়...

       কাল কুঠুরিতে আবদ্ধ আগামী ভবিষ্যৎ,

                   তোমার আমার ভবিষ্যৎ---

              চার্বাক দর্শন পুষ্ট বিষাক্ত হাওয়া

                    লিপ্ত সামাজিক প্রজ্ঞায়!

                আমরা বন্ধ কুঠুরির বিদূষক.....

                আমরা বন্ধ কুঠুরির বিদূষক.....

************************



পরশে সরসের গান 

স্বপন শাহ্ শ্যামলাপুরী


যেই দেয়ালের পরশ পাইয়া, হইলিনা তুই সরস।।

সেই দয়ালের ক্বলবে কি, নাই আল্লাহর আরশ রে,,,

নাই আল্লাহর আরশ।।


শুনি দয়াল হয়রে পরশ পাথর, লোহারে বানায় কাঞ্চা সোনা।।

সেই পরশ পাথরের পরশ পাইয়া, কেনো তুই ঠিক হইলিনারে,,,

ক্যান তুই ঠিক হইলিনা।।

তাইলে কি পরশ পাথর ঠিকনা।। নাকি ঠিক হয় নাই পরশ।


ওরে, তারে যদি বিদ্যুৎ থাকে, ধরলেই সর্ট মারে।।

হাই ভোল্টেজ থাকলে পড়ে, যখন তখন মরেরে,,,,

তখন যায় মরে।।

ঘষা খাইলি কোন পাথরে।। ক্যান হইলিনা সরস।


নাকি নিয়ত নিরিখ ঠিক নাই তোর, ঠিক নাই পরশ পাথর।। 

পরম স্রষ্টায় মাইরা দিছে, তোদের বুকে মোহররে,,,,

তোদের বুকে মোহর।।

পাপে ভরা মন আর অন্তর।।  কেমনে হইবি সরস।


কামেল পীরের সঙ্গ করে, আগে ঠিক কর মন।।

কয় স্বপন শাহ্ শ্যামলাপুরী, বিবেক করে চেতনরে,,,,

বিবেক কর চেতন।।

শুদ্ধ হইলে দেহ চিত্ত মন।। হইবিরে তুই সরস।

***********************

জীবনদান

জয়ন্ত


“…..সত্য ঘটনা অবলম্বনে….”


এতক্ষন ধরে কি করছে ডক্টর সানার সাথে? প্রায় আধ ঘন্টা হয়ে গেলো ! সোহিনীর বুকের ভেতরটা কিরকম কেঁপে উঠলো, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ।সেটা হসপিটালের ভেতরের প্রচন্ড ঠান্ডায় নাকি একটা অজানা আশঙ্কাতে বুঝতে পারছে না সোহিনী।



করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে সোহিনী , একটু দূরে চিন্তিত মুখে রানা দাঁড়িয়ে। পাশে ওর রানার দাদা গোলক , গোলকের স্ত্রী মেঘা আর ওদের ছেলে সুহান। সুহান বেচারা খুব ভয় পেয়ে গেছে, কিন্তু ওর তো কোনো দোষ নেই।



আজ ছিল রাখী , সেই দিন, যেদিন বোনেরা তাদের ভাইদের হাতে রাখী পরায় ; সেই রাখী পালন করার জন্য আজ সকালেই রানা, সোহিনী আর সানা , সবাই স্নান করে বেরিয়ে এসেছিলো বাড়ি থেকে। দু বছরের সানা, চার বছরের সুহান কে রাখী পরাবে ! কি আনন্দ , কি মজা , সকালে বেরোনোর সময়ে , গাড়িতে উঠে কি খিলখিল করে হাসছিলো ফুলের মতো ছোট্ট মেয়েটা ; সোহিনী আজ ওকে সাজিয়েও ছিলো খুব সুন্দর করে। মনে হচ্ছিলো যেন ছোট্ট একটা পরী , এক্ষুনি উড়ে যাবে আকাশে।



রানার দাদা গোলক, একই শহরের অন্য আরেকটা প্রান্তে থাকে ওর পরিবারের সাথে, মানে স্ত্রী মেঘা আর ওদের একমাত্র ছেলে সুহান কে নিয়ে। গতকাল থেকে কতবার যে ওদের ফোন করেছে আসার জন্য, সানা , সুহান কে রাখী পরাবে , তারপর খাওয়া দাওয়া করে বেরোবে ঘুরতে একসাথে সবাই মিলে, খুব আনন্দ করবে সারাদিন ধরে। সকালে সাড়ে আটটার মধ্যে ওরা চলে আসে গোলক এর ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দেয় মেঘা , পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল সুহান ; সুহান নিজেও স্নান সেরে পাজামা পাঞ্জাবী পরে একদম রেডি বোনুর হাত থেকে রাখী পরবে বলে। সোহিনী হাসতে হাসতে সানা কে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। ভেতরে সবাই ঢোকার পরে, মেঘা ওদেরকে বসিয়ে সুহানকে ডেকে বলে ,"সাবধানে সুহান, ঘরের ভেতরে দৌড়বি না, একটু আগেই মেঝে মোছা হয়েছে জল দিয়ে, পড়ে যেতে পারিস ! আর বোনুর হাত ধরে থাকবি কিন্তু। "



বাচ্চারা কি কারোর কথা শোনে ? একটু পরেই ওরা খেলতে খেলতে দৌড়োতে শুরু করে ঘরের মধ্যে। হঠাৎ জোরে একটা শব্দ , ভারী কিছু পড়ার আওয়াজে সোহিনী, মেঘা দৌড়ে যায়। দেখে মেঝেতে পড়ে আছে সানা, সুহান একটু দূরেই দাঁড়িয়ে। সানা প্রায় স্থির হয়ে আছে, মাথার একটা কোণ দিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করেছে। ওকে ধরে সোহিনী ওঠাতে যায়, জোরে জোরে কেঁপে ওঠে ওর ছোট্ট শরীরটা। বারবার কাঁপুনি দেয় ছোট্ট মেয়েটার। তাড়াতাড়ি করে সবাই মিলে চলে এসেছে হসপিটালে। স্থানীয় ডক্টর, ডক্টর সেনশর্মা ওকে দেখছেন ভেতরে। মাঝে মাঝে নার্স ভেতর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসছে, আবার কিছু নিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে ভেতরে। আরো দুজন ডক্টর দৌড়োতে দৌড়োতে ঢুকে গেলো ভেতরে , কোনো দিকে না তাকিয়ে।



মিনিট পাঁচেক পরে ডক্টর সেনশর্মা ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে রানাকে ডাকলেন , সোহিনী আর রানা দুজনেই ছুটে গেলো ওনার কাছে। পেছনে গোলক আর মেঘাও এসে দাঁড়িয়েছে। ডক্টর ওদের সবার দিকে তাকিয়ে বললেন , " আমি, আমরা আমাদের দিক থেকে সব কিছুই করেছি। আপনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে শহরে নিয়ে যান ; ওর মনে হয় ইন্টারনাল হেমারেজ হয়েছে। সেটার যত তাড়াতড়ি সম্ভব ট্রিটমেন্ট করতে হবে। আমরাই এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। "



একটু পরেই সবাই এম্বুলেন্সে উঠে পড়ে , প্রায় দেড় ঘন্টা পরে সবাই চলে আসে শহরে। কারোর মুখে ছিলো না কোনো কথা। একটা সুন্দর সকাল কিভাবে হঠাৎ যেন বিভীষকাময় হয়ে ওঠে সবার জন্য। মেয়েটা সারা রাস্তা ঘুমিয়েই ছিলো ওষুধের জেরে। শহরের সবথেকে বড় হসপিটালে এসে সানাকে ভর্তি করানো হয়। ও এখন আই সি ইউ তে, কেটে গেছে প্রায় পাঁচ ঘন্টা। ডক্টর মুকুন্দ ওর চিকিৎসা করছে, শহরের অন্যতম নামী শিশু বিশেষজ্ঞ ! ডক্টর মুকুন্দ এসে বললেন , "আমরা চেষ্টা করছি ওকে ফিরিয়ে আনার ! আপনারা ভাববেন না। একটু কিছু খেয়ে নিন আপনারা , আমাদের নার্স সারাক্ষন আছে ওর সাথে। সানাকে চব্বিশ ঘন্টা অব্জার্ভেশনে রাখবো আমরা। "



রাত দুটো , সোহিনী হসপিটালের করিডোরে বসে আছে, জেগে থাকা আর ঘুমিয়ে পড়ার মাঝের কোনো এক অবস্থার মধ্যে। সব কিরকম যেন ঘোলাটে, একটা ঘোরের মধ্যে ও রয়েছে। গোলক আর মেঘাও থেকে গেছে ওদের সাথে। সুহান ঘুমিয়ে পড়েছে , ওকে কোলে করে নিয়ে অন্যদিকে বসে রয়েছে রানা। হঠাৎ করে করিডোরে ছোটাছুটি শুরু , তিনজন নার্স তাড়াতাড়ি ছুটে ভেতরে গেলো, একজন বাইরে এসে কাউকে ফোন করছে ব্যস্ত হয়ে , দুজন জুনিয়র ডক্টর ছুটে ঢুকে গেলো ভেতরে। একটু পরেই ডক্টর মুকুন্দ ছুটতে ছুটতে ভেতরে চলে গেলেন। সোহিনী, রানা , মেঘা , গোলক সবাই ভয় পেয়ে উঠে আসে। দেখার চেষ্টা করে দরজার গ্লাস দিয়ে ভেতরে। একজন নার্স এসে পর্দা টেনে দেয় ভেতর থেকে।



একটু পরে ডক্টর মুকুন্দ বেরিয়ে আসে বাইরে , মাথা নিচু করে মেঝের দিকে তাকান একবার, তারপরে অনেক চেষ্টা করে সোহিনী , রানার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন ," পারলাম না , কিছুতেই পারলাম না আমরা। সানা এখন ব্রেন ডেড ! আমাদের আর কিছুই করার নেই। সরি। "



সবার মুখ থেকে কথা গেছে হারিয়ে , পুরো করিডোরে নেমে আসে এক নিস্তব্ধতা। চুপ করে সোহিনী ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে বসে করিডোরে রাখা চেয়ারের ওপরে। রানা ওকে সামলানোর জন্য তাড়াতাড়ি ওর পেছনে এসে ওর পাশে বসে। রানার দু চোখ দিয়ে জল ঝরছে, মুখে কোনো শব্দ নেই,ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে , জমছে কান্না গলার কাছে ! সোহিনীর হাতের ওপরে নিজের হাত রাখে রানা , সোহিনী তাকায় ওর দিকে , দু চোখে শুধু একরাশ ক্লান্তি, বেদনা, হতাশা , হারানোর আর্তি....



সোহিনী ধীরে ধীরে বলে ওঠে , " আমার সানাকে আমি মরতে দেবো না রানা ; ও পারে না আমাদের এভাবে ছেড়ে যেতে। ও পারে না ! "



দৌড়োতে শুরু করে সোহিনী করিডোর ধরে , ডক্টর মুকুন্দ একটু দূরেই এক কোণে দাঁড়িয়ে। ছুটে আসা সোহিনীকে দেখে অবাক হয়ে যায় ডক্টর মুকুন্দ। সোহিনী এসে ডক্টর মুকুন্দ কে বলে ওঠে চেঁচিয়ে ,"ডক্টর , সানা, সানাকে বাঁচাতেই হবে। প্লিজ। আমি, আমি শুনেছি অঙ্গদান এর কথা। ওর, চোখ, ওর কিডনি, ওর লিভার , আর যা কিছু আছে, সব নিয়ে অন্য কাউকে জীবনদান করুন ডক্টর। ওদের মধ্যে দিয়েই বেঁচে থাকবে আমাদের সানা , বেঁচে থাকবে ও। "



কাঁদতে শুরু করে সোহিনী , কাঁদতে কাঁদতে রানার বুকে আছড়ে পড়ে ও। রানার বুকে হাতের মুঠো দিয়ে মারতে মারতে, কাঁদতে কাঁদতে, অজ্ঞান হয়ে যায় ! রানা ওকে জড়িয়ে বলে ওঠে ডক্টর মুকুন্দের উদ্দেশ্যে ," ডক্টর , আমাদের সানা , আমাদের সানা এইভাবে বেঁচে থাকবে , তাই না ? ও, ও আমাদের সাথে নেই তো কি হয়েছে , আমরা ওর স্মৃতি নিয়ে থাকবো। কিন্তু ও যে মরেও বেঁচে থাকবে অন্যের মধ্যে। প্লিজ, আপনি ব্যবস্থা করুন , আমি একটু সোহিনীকে নিয়ে বসছি এখানে। কোথায় কি সই করতে হবে দিয়ে দিন আমাকে। "



ডক্টর মুকুন্দ বলে ওঠে ,"আপনারা যে কি করলেন, নিজেরাও জানেন না বোধহয় ! সানা সত্যি খুব ভালো মা বাবা পেয়েছিলো , সানা সত্যিই একটা এঞ্জেল , ঈশ্বরের দূত ! নার্স, নার্স ...."



ডক্টর ছুটে চলে গেলেন ভেতরে।


****************************


অমানুষ 

নীলাঞ্জনা ভৌমিক


কে তুমি কবি ?

কালের আধারে ফুটিয়ে তোলো

পদ্মফুলের ছবি ! 


ছোট ছোট কুসুমকলি ,

ফুল হয়ে ছড়ায় রূপ - যৌবন

কে তুমি এলে অলি ? 


এবার তুমি গাও গান -

পাঁপড়ি খসার আকুল - রাগে 

কর তাদের সুধা পান। 


ওগো কবি ! সুন্দর তোমার ধর্ম

ঘোচাও তাদের দুঃখ - বেদন,

হয়ে ওঠো তাদের বর্ম। 


আরো কিছুদিন থাকুক তারা

হেসে উঠুক প্রাণ খুলে

ছিঁড়তে ওদের চায় যারা ! 


তাদের তুমি আছড়ে ফেলো-

ভাষায় তোমার আগুন জ্বালো

ধর্ষকদের পুড়িয়ে মারো। 


যতই হোক তারা অধ্যাপক 

সমাজে অনেক নাম- ডাক

তবুওতো তারা মেয়ের বাপ। 


সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর নয়

কলিও ঘৃণায় মুখ ফেরায়

মানুষ এতো নির্মম হয় !! 

***************************

রাখব মনে ভুলব না

অসীম দাস 


লক্ষ কথা কথার কথা যাচ্ছে ভেসে 

যাক সাগরে ফসিল-টোলায় ঘর বানিয়ে 

থাক না সুখে হাজার বছর ।

একটি কথা 'রাখব মনে ভুলব না ' 

আটকে থাকুক তোমার ঠোঁটের লালকুঠিতে 

বসত গেড়ে বছর বছর-- তুলব না ।


ভিন্ন কথার বাহুল্য শব পাক সমাধি 

বীজের উপর পান্থছায়া শান্তি দেবে 

ঘাসের আগায় ফড়িং ডানায় ।

একটি কথার গোড়ায় ঢালি জলদ-নাড়ির 

ছিন্ন-বারি নিত্য দিনের সালতামামি পদ্য পাতায় ।

ভাটার টানে ভূকম্পনে গ্রহণ-লাগা সন্ধিক্ষণে 

না যায় দূরে শেকড় সমেত আঁকড়ে রাখি 

---'রাখব মনে ভুলব না '।


কথার পৃষ্ঠে কথার দানা ফুটতে ফুটতে 

সমাস ফটাস্ বিন্নি খই এর উড়ন্ত ঝাঁক 

দিন ঘুমোলে রাতের কোলে ভোঁসর ভোঁসর 

সুখের কবর ফাটল ফুঁড়ে পাচ্ছে তো পাক 

নীল জোনাকি---বাঁধব না । 


একটি কথার কোলবালিশে ভরছে তুলো আস্ত শিমূল ।

একটি কথার শব্দভান্ড অপরিসীম প্রতীক্ষাতে 

আনছে মধু কল্কে -ফুলের-প্রজাপতি খুঁজছে মুকুল ।

একটি কথা পরশপাথর শ্রাবণ শীষে স্বর্ণগোলা ।

যায় না ভুলে প্রতিজ্ঞা সেই 

রাখব মনে , ভুলব না ।

****************************

 নামকরণ

 অজিত কুমার দে 

নামকরণ বিষয় টি বড়ই জটিল,ভাবুনতো একবার মন প্রাণ খুলে।বাড়িতে আসছে নুতন অতিথি,তার নাম কি হবে ,ছেলে হলে,বা মেয়ে হলে কি নাম রাখা হবে,বিষয় টা অতি চিন্তার।

বউ বলল সব তো দুই মাস আগে পৃথিবীর আলোটা দেখুক।স্বামী সেতো পুরুষ ভবিষৎ ভেবে কাজ করে,তখন অত সময় পাওয়া না যেতেও পারে। তাই আগে থেকেই একটা নাম ঠিক করে রাখা হোক।তবে আগে ডাক নামটা ভেবে রাখ বলল জোরে স্ত্রী। মেয়ে হলে নাম হবে মেনি,ওকে মেনি বলে ডাকবো,স্ত্রী রেগে

উঠলো চেঁচিয়ে বলো কি আমার মেয়ের নাম মেনি, সেতো আমরা বেড়াল কে ডাকি মেনি বলে,তোমার কোনো আক্কেল নাই, নাই ভালো মন্দ জ্ঞান, সংসার হলো রণ ক্ষেত্র এই নিয়ে পুরুষ নারী চরম সংঘাত, অবশেষে দশ দুর্গার কাছে পুরুষের আত্মসমর্পণ। আমার ভুল হয়েছে,মেয়ে হলে ডাকনাম রাখবো রানী ।

কি ঠিক বলিনি,তুমি হলে একটা বে আক্কেলে মানুষ,বাবা কি দেখে যে তোমাকে আমার ঘাড়ে চাপালো,তোমার সাথে সংসার করা দায়,পুরুষ ভাবলো আবার কি ভুল করলাম রে বাবা।

মেয়ের ডাকনাম রানী রাখলে বউ আমার খুশি হবে, তানা উনি রেগে লাল,যা নয় তাই বলছে,

বলি আমি ভুলটা কি করেছি, স্ত্রী রেগে ভুল করনি মানে,বিরাট ভুল আমার পোষা কুকুরের নাম রানী ,শেষে তুমি কিনা আমার মেয়ে কে কুকুরের দলে ফেললে,তোমার সাথে আর ঘর করা যাবে না। যার কোনো সাধারণ জ্ঞান নাই,

মেয়ের নাম আর কুকুরের নাম এক হয় কখনো কেউ বাপের জন্মে শুনেছে।তোমাকে আর নাম রাখতে হবে না ,আমি না হয় তখন আমার মা কে,বা আমার পছন্দের মানুষ কে দিয়ে নাম নাম রাখবো। চলবে,,,,,,,

***********************

 চোখের পট্টি

  অরবিন্দ সরকার

           

পলশীপুর গ্রামে প্রায় সকলেই গরীব।গরীবের আবার পেট, যা পায় তাতেই পেট পূর্ণ হলে আনন্দ। গ্রীষ্মের দুপুর, চলছে তাপপ্রবাহ। গ্রামে প্রচুর তালগাছ,সব গাছেই চার পাঁচটা হাঁড়ি ঝুলোনো। তালের রস থেকে তৈরি হয় তাড়ি।অল্প চালভাজা ছোলা ভাজা মুখে দিয়ে হাঁড়ি হাঁড়ি তাড়ি সকাল থেকে রাত অবধি খেয়ে গড়াগড়ি। তাপপ্রবাহ হোক বা অনাসৃষ্টি হোক এ খাদ্য খেয়ে সবাই ভুলে থাকে। ধনী লোকেদের জমিতে এরা চাষবাস করে ভাগে যা পায় তাতেই সংসার প্রতিপালন করে। শিশুকালে হাতে খড়ি রাখাল, তারপর মাহিনাদার, তারপর ভাগচাষী। শিশু থেকে খেটে বড়ো হওয়া শ্রীনিবাস অপভ্রংশে নাম চিনিবাস "যাদব মোড়লের" বাড়িতে কাজ করে। চৈত্র, বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য এই তিনমাস মোড়ল যাদব মণ্ডল, গামছায় মুড়ি,ডালসেদ্ধ বেঁধে গায়ে তেল মেখে চিনিবাসের বাড়িতে ওঠে। গ্রামের অন্যান্য মোড়লেরা তারাও তাদের চাষীদের বাড়িতে এই সময়ে তাড়ি খেতে যায়। যাদব মোড়ল সেদিন বুদ্ধপূর্ণিমা সকালেই হাজির।কারণ পাশের গ্রামে ধর্মরাজ পূজো ঘিরে মেলা বসে।আর ধর্মরাজকে মাথায় কলসীতে ভরে ভক্তেরা নাচানাচি করে।তাই দুপুরে সকলেই ওখানে হাজির হয়। মোড়ল চুপিসারে চিনিবাসের বাড়িতে ঢুকলো। চিনিবাস মাঠের দিকে জমি দেখতে বেরিয়েছে। ঠিক সময়ে মোড়ল এলেই আসবে এই তার ইচ্ছা। মোড়ল দেখলো ঘরে হাঁড়িতে তাড়ি ভুটভুট শব্দ করে ফেনা তুলছে!মোড়ল গামছাটা হাঁড়ির মুখে ছাকনা করে মুখ লাগিয়ে টান মেরে শেষ করে দিলো। আরও তিনটি হাঁড়ি অবশিষ্ট আছে। এবার মোড়ল দেখলো যাদবের বৌ খালি গায়ে কাপড় জড়িয়ে রান্না করছে! তার আর সবুর সয়না। একেবারে হেঁসেলে ঢুকতেই চিনিবাসের বৌ ছায়া আঁৎকে উঠেছে। বললো কি হয়েছে মোড়ল? তুমি আগুন নেবে কি? মোড়ল বললো হ্যাঁ! তা মোড়ল তুমি কখন এলে আমাদের বাড়িতে? ও তো মাঠে গেছে কাজ করতে!  ছায়া মোড়লকে কোলাঙি থেকে একটা বিড়ি নিয়ে আগুন ধরিয়ে মোড়লকে দিলো? মোড়লকে বললো টানো টানো মোড়ল, নইলে বিড়ি নিভিয়ে যাবে। মোড়ল বললো আমার আগুন জ্বলছে তুমি একটু নিভিয়ে দাও তো? ছায়া চিন্তায় পড়লো আর ওর আসার অপেক্ষায় চেয়ে রইলো। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা। ছায়া মোড়লের বাড়িতে কাজহারা হবে ভেবে বাধ্য হয়ে কুকাজে লিপ্ত হলো!   চিনিবাসের মা বেঁচে আছে, বয়স প্রায় নব্বইয়ের ঘরে। সে চোখ বুজে আর মেলে দেখে। মোড়লকে বলে চোখের পট্টি নাই তোমার? লজ্জা করেনা বৌমার কাছে যেতে? তোমাদের বাড়িতে গেলে ছোঁবে না আমাদের,আর এখানে ছুঁলে দোষ নাই বলো? মোড়ল বললো বুড়িমা নেশায় এসব হয়েছে।নেশা ছুটে গেলে আবার পুরোনো মোড়ল হয়ে যাবো। তুমি এসব ভুলে যাও আর পাঁচ কান করিও না বেশ। বুড়ি তার বৌমাকে বললো পুকুর থেকে চান করে রান্না করবে বেশ। বৌমা ছায়া- পুকুরে চান করে আসতেই সামনে তার চিনিবাস পড়ে গেলো। চিনিবাস বললো এখনও চান করোনি। রান্না হবে কখন? মাকে খাইয়ে আমরা মেলায় যাবো। মোড়ল  কিন্তু ঘরেই বসে আছে। পালিয়ে গেলে তার লোকসান। হাতে পায়ে ধরে একটা আপোষ করতে হবে। কাজের লোক ও তাড়ির জন্য তাকে  এখানে আসতেই হবে। চিনিবাস বাড়ি ঢুকতেই তার মা চেঁচিয়ে বললো- চিনিরে তোর বৌকে হায়নায় খেয়েছে? এই তো ছায়া আমার কাছেই আছে? ও চান করতে গেছিল আমার সঙ্গেই এলো! 

চিনিবাসের মা- না রে চিনি! আমি দেখলাম রান্নাঘরে তোর মোড়ল বৌমাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। আমি দেখতে পারছিলাম না। কখনো চোখ বুজে কখনো তাকিয়ে লজ্জা ঢাকি। 

চিনিবাস - মা মোড়লের ছোঁয়া লেগেছে তো? ও চান করে শুদ্ধ হয়ে গেছে! আর চেঁচামেচি করিও না মা!  যদি আমার ঘরে একটা মোড়ল জন্মায় তাহলে ছেলেটি মোড়ল হবে তাই নয় মা? আমি মোড়লের বাড়ি নিয়ে গিয়ে বলবো এলে মোড়ল তোর ছেলে! ও মোড়লের ছেলেদের সাথে খেলবে,ভাই হবে। আর আমাদের দুর্দশা ঘুচবে।

মোড়ল এবার বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে বললো-- সে গুড়ে বালি? ছোটো লোকের ছেলে কিভাবে মোড়লের ঘরে ঢুকবে? 

চিনিবাস - ছোটোলোকের ঘরে যদি মোড়লের বাচ্চা হয় তাহলে বাচ্চা ছোটলোক না বড়োলোক হবে?

চিনিবাসের বৌ- "কুপুত্র সদায় হয় কুমাতা কখনোই নয়" জানো। তাই বলছি পেটের ছেলে মোড়লের মতো জানোয়ার হলেও আমাকে তো ওই ঘরেই থাকতে হবে। ঠিক কিনা?

মোড়লের দুশ্চিন্তা বেড়ে গেলো। বললো যদি আমার সন্তান হয় তাহলে ওকে পাঁচ বিঘা জমি দেবো। তাহলে আসি এখন,তোমরা বিচার বিবেচনা করে দেখো আমি ঠিক বলেছি কিনা?

চিনিবাসের বৌ- ওগো "জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো"! যেখান থেকেই জন্ম হোক আমি তো তার মা!

চিনিবাস- তাহলে আমি?

ছায়া বৌ-- কেন তুমি তো আমার স্বামী? তাহলে আমার ছেলেও যা তোমার ছেলেও তা! শুধু কাকের ঘরে কোকিলের বাসা। দেখো আবার পাঁচ বিঘা জমি যেন হাতছাড়া না হয়? মোড়লের চোখের পট্টি নাই। কাল তাড়ি খেতে এলে সব বলে শহরে গিয়ে রেজেষ্টারি করবে বলে দিলাম। শুধু "তা" দিয়েছে, ডিম ফুটুক তারপর দেখাচ্ছি মোড়লকে। চোখের পট্টি আমার আছে বলেই পাঁচ কান করে ওর বাড়িতে উঠছি না! এই হাঁড়ি হাটেই ভেঙে দেবো! তখন চোখের পট্টি খুলে যাবে, চোখের কোন দিয়ে ঝড়ঝড় করে তাড়ি বের হবে। ভাবিয়া করিও কাজ,না ভাবিলে সর্বনাশ!!

       

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ