পোস্ট বার দেখা হয়েছে
উৎসব
সুশান্ত সেন
প্রতিদিন যন্ত্রণাতে মুক হয়ে থাকি
বিষণ্ণ নিয়ত থাকে একেলা হৃদয়,
তখন শরৎ আনে উৎসবের ছোঁয়া
জীবন আবার পায় প্রাণিত বিস্তার।
সেই তুমি মঞ্জুলিকা কোন গৃহকোণে
সঞ্চারিত করে দিলে দুরন্ত আবেগ
সংগ্রামের শক্তি দিলে উদ্দীপ্ত বিস্তার
দৃপ্ত হয়ে সম্মুখীন প্রকৃতি সন্তান।
====
মা হাসে
প্রণতি মণ্ডল
এইতো সেদিন দাওয়াই বসে
পাত পেড়ে ভাত খেলি
ক'টা দিন যেতে না যেতেই
আবার ফিরে এলি?
যা না বাপু অন্য ঘরে
এবার আমায় ছাড়
চলছে এখন চাঁদার হিড়িক
ভাঙছে সবাই ঘাড়।
তোবড়ানো গাল এক মা হাসে
ফাঁকা টিনের থালা
তিন চোখে 'উ' কানা বটে
নাইকো খিদের জ্বালা।
====
ফিরে পাওয়া
নয়ন মণি মিশ্র
সে খুব রেগে আছে
কথা বলে না!
সেদিন হঠাৎ তাকে নিয়ে
লিখতে বসলাম
কিন্তু
লিখতে পারি নি!
তার সাথে বহুবার স্বপ্নে পুজো পরিক্রমা করেছি
প্যান্ডেলে ঘুরে ঘুরে তার সাথে যেন
খুব জড়িয়ে গেছি!
চারদিকে হৈচৈ
তিনদিন পর সব ফাঁকা!
স্যার বলতেন, পুজো শেষ হলেই
শুরু হবে
পরীক্ষা নেয়ার পালা!
সেটা ছিল ছেলেবেলা
মনখারাপটা বেড়িয়ে যেত,
কিন্তু
এখন শত আনন্দে থেকেও যেন
আমার চেনা আমি'টা
কেমন যেন মনমরা!
পুজো মানেই তো
নতুন কাপড়, নতুনের সাথে
হারিয়ে যাওয়া।
তার জন্য আজও
অল্প কিছু ইচ্ছে সমেত
ক্লান্ত চোখেরা যেন পথ চেয়ে আছে।
নিশ্চুপ কবিতার বিষয় হোক
তাকে ফিরে পাওয়া।
====
খিদে..
শ্বেতা ব্যানার্জী
কু ঝিক্ ঝিক্ ঝিক্...
এগিয়ে চলেছে জীবন বেলার ট্রেন...।
দূর থেকে ভেসে আসে গান;
" জনম দুঃখী কপাল পোড়া গুরু আমি একজনা"
এত সুর এরা কোথা থেকে পায়!
পেটে খিদে থাকলে বুঝি এমনই গান গাওয়া যায়।
ছেঁড়া ফ্রক বাড়তে থাকে, অকুলান বেশভূষায়।
কারা যেন নিয়ে যায় সমুদ্র জলসায়---
ফুঁসতে থাকা ঢেউয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে রাত।
কানা থালা অনাদরে রাস্তায় ---
দিন গোণে তার ফিরে আসার।
ডাস্টবিন বুকে তুলে নেয় আর এক প্রতিভার।
====
'শরতের বুকে'
পাপু মজুমদার
শরতের বুকে
লিখেছি তার রূপকথা,
কেউ যেন খুবই সুন্দর
ঠিক যেমনটা
আমাদের মা!
তার হাসি স্বর্গীয়
চোখ দুটো মেঘ বরণ নয়না....
সে এসে যেন ছুয়ে গেল
এ মনের আঙ্গিনা!
তাকে কি নাম দিই?
সে যে সপ্তমীর মায়াবী সন্ধ্যা
অষ্টমীর আরাধনা,
নবমীর চাঞ্চল্য
বিজয়ার মেঘলা আনমনা,
তার নাম টা কি পাখি?
আমার স্বপ্নে আঁকা
হলদে পাখি.....
তাকে ভেবেই শারদীয়া
অতিক্রান্ত!
আজও তার স্মৃতিগুলো
মনের ডাকবাক্সে যেন
মনমরা কবিতা হয়ে আছে।
পুজো এলেই সে চুপটি করে
চলে আসে,
যাবার বেলায় রেখে যায়
এক বিকেল
কুয়াশা ভেজা নিশ্চুপ কান্না।
====
উপায় করো মা !
ইভা দাশগুপ্ত
মায়ের আঁচল আজও রাখে ঢেকে কোলে অন্তরে
কেউ জানে না কোন মায়েরা ফেরেনি গো আজ ঘরে,
আলোর সাজে শহর মাতে গ্রামেও কত আতস ফোটে
গা গতরের ব্যাথা নিয়েও কষ্টে যাদের ভাত জোটে
মাগো তুমি ত্রিনয়নী, দাও না নজর চারধারে
দেখছো নাকি ভুখার মিছিল গ্রাম শহরে রোজ বাড়ে
কাত্যায়নী অন্নপূর্ণা মা জননী কার্তিকের
কাজ দিও না ছেলেপুলের, প্রাণ বিনাশে আর্তিকের
চিরদিনের এই মহোল্লাসে কোটি কোটি অর্থ নাশ
কাজ নেই মা,এম এ পাশের,জঠর জ্বালায় হচ্ছে লাশ
জানি তুমি শুনবে ঠিকই এবার এসে বাংলাতে
তাই তো তোমায় লিখছি চিঠি, দিও সবার ভাত পাতে l
======
উৎসব যোগায় অক্সিজেন
সুব্রত সাহা
সামাজিক নিয়মে উৎসব আসে,,
চলে হই-হুল্লোড়, আবার থেমেও যায়,
মনে হয় যেন খুব তাড়াতাড়িই চলে গেলো!
এতে নতুনত্ব হয়তো তেমন কিছু নেই,,,
কিন্তু কিছু বিশেষত্ব তো অবশ্যই আছে!
কারণ, কথায় বলে ধর্ম নিজের নিজের,,,
কিন্তু উৎসব,,, সে তো সবার,,,
উৎসবের আনন্দ তাই সর্বজনীন!
তাই তো ধনী-নির্ধন, সুখী-দুখী আপামর জনগণ,,
বছরভর করি অপেক্ষা, আগমনীর দিন গুনি,
প্রস্তুতি নিই উৎসবের আনন্দে সামিল হওয়ার,,,
এই প্রস্তুতিপর্বটাই বুঝি বেশি আকর্ষণীয়, বেশি আনন্দের,,,
কারণ, উৎসব এসে গেলেই বড্ড তাড়াতাড়ি পালিয়ে যায়,
সকল প্রস্তুতির পালা সাঙ্গ করে সব আনন্দের ফানুস চুপসে যেতে থাকে,
আস্তে আস্তে বিদায়ের বেদনা ছেয়ে যায় সারা দেহমনে।
তবে সময়ের প্রলেপে সেও ক্ষণস্থায়ী, ধীরে ধীরে হতে থাকে ফিকে।
নব উৎসবের দামামা ফের বেজে ওঠে দিকে দিকে!
ভগ্নহৃদের ভিতর থেকে জেগে ওঠে নবীন আশার স্পন্দন ধ্বনি!
এভাবেই সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে আজও সমানে বহমান,
উৎসবপ্রিয় সমাজ খোঁজে আনন্দ, সুর,,আগমনী গান,,,
উৎসব আসে, ফের চলে যায়, কিছু স্মৃতি রেখে যায় বুকে;
তাই নিয়ে চলি জীবনের আঁকাবাঁকা পথ, বাঁচি সুখে-দুখে!
=====
দেবী দর্শন
স্বপন কুমার ধর
পুজোর ক'টা দিন আনন্দে কাটতো,
দেখা,কথা হত সবার সাথে,
যৌবনকালে করেছি কত ঘোরাফেরা,
এখন তো সব,স্মৃতির পাতায় ভরা।
মা আসবেন,পুজো পুজো ভাব,
শুরু হোত নানা পরিকল্পনা,
সাজ-পোশাক থেকে খাওয়া-দাওয়া সব,
ভেবে ভেবেই হতাম আনমনা।
দশমীর দিন রাবণ পোড়া দেখেই,
বিসর্জন ঘাটে গিয়ে আড্ডা জমানো,
চারটে দিন যে কিভাবে কাটতো,
টের পেতাম না কখনো।
এখন তো সব দূরদর্শনের পর্দায়,
কিংবা পি ডি এফ ফাইলে,
মা এর দর্শন হয় ঘরে বসেই,
বার্তালাপ হয় এস এম এস,হোয়াটসএপ, মোবাইলে।
=====
উৎসবের উপহার
সৌমিত্র চ্যাটার্জ্জী
মহাভারতের এই পুণ্যভূমিতে আছে নানা উৎসব,
সবার সেরা বাঙালির চার দিনের দুর্গোৎসব।
সপ্তমী অষ্টমী নবমী দশমী তিথি অনুযায়ী,
দুর্গাপূজার নির্ঘন্টের দিনক্ষণ হয় স্থায়ী।
পূজার আনন্দে ছেলে বুড়ো সবাই থাকে মেতে,
সামর্থ্য অনুযায়ী খাদ্য জোটে যে যেমন তার পাতে।
দুর্গাপূজার বোধন মহালয়া থেকে বিসর্জন,
সংগ্রহ করা হয় পূজার প্রয়োজনীয় উপকরণ।
বয়সের ভিত্তিতে যে বা যারা থাকে যেমন স্থানে,
সে বা তারা তেমনি আনন্দ উপভোগ করে মনে প্রাণে।
কচিকাঁচা থেকে শিশুরা নতুন পোশাকে আনন্দে মাতে,
কারো চঞ্চলতা দেখা যায় যারা পৌঁছেছে আঠারোতে।
কেউ কিছু না চাইতেই কিছু না কিছু পেয়েই যায়,
কারও সব কিছু থেকেও কেবলই হারিয়ে যায়।
কেউ আনন্দ তো দূরের কথা অভুক্তই থেকে যায়,
কেউ খাবার নষ্ট করে কেউ প্রয়োজনের অধিক খায়।
ঝলমলে দামি পোশাক থাকে অনেকেরই গায়,
অনেকে লজ্জা ঢাকার মতো পোশাক না পায়।
কালের নিয়মে নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব সংসার,
যা কিছু গ্ৰহণ-বর্জন সামাজিক অধিকার।
যুগ-যুগান্তর ধরে নিয়মের বেড়াজালে,
সামাজিক আচার অনুষ্ঠান আসছে চলে।
উৎসব আসে আবার চলেও যায়,
একে অপরের সম্পর্ক গড়ে আন্তরিকতায়।
কিছু স্মরণীয় ঘটনা রেখে য়ায় স্মৃতি,
মায়ার বাঁধনে থেকে যায় কারো প্রীতি।
যারা থাকে বিদেশে উৎসবে ফিরে নিজ দেশে,
শৈশবে ফেলে যাওয়া আত্মীয়ের সাথে যায় মিশে।
উৎসব আসছে আসছে করে নিয়ম মেনে আসে,
মহা সমারোহে উৎসব পালন হয় সকাশে।
বাদ বিবাদ ভুলে একত্রিত হয়ে সকলে আনন্দে হাসি,
উৎসব শেষ সব কিছু ম্লান-আগামী সকাল হয় বাসি।
=====
সমান্তরালে
সুহিনা বিশ্বাসমজুমদার
কোথায় যাবে
তখন
সামনের পুজোয়
বারবার
প্রতিবার অপেক্ষায় থাকি
তুমি চলো তোমার কর্তব্যের অজুহাতে দূর থেকে দূরে
আমার ইচ্ছেগুলো শরতের মেঘের মতো এলোমেলো ভেসে যায়
কোন কারণ ছাড়া কোন চলা ছাড়া
তুমি ভালো থাকো কি থাকো না
বোঝার আগেই কেটে যায় আর একটা শরৎ,
যেমন বলেছিলেন ,
তিনমাথা বৃদ্ধ,
ঠিক তেমনি তোমার বয়সে লেগেছে রুপালি চাঁদের কৃষ্ণপক্ষের নবমী,
ধীর থেকে ধীরে সময় গুলো বদলে যাচ্ছে ,
যদিও
আমার কাছে তেমনই আছো তুমি
যেমন ছিলে ,
আমার কাছে তেমনি আছি আমি।
যেমন ছিলাম।
কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী ধীরে ধীরে ছুঁয়েছে আমায়
নতুন আশা ফুটিয়ে
অমাবস্যার পূর্ণকলা এখন আমার মঞ্জিলে,
একফালি প্রতিপদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে
যে আসবে বলে অন্য পৃষ্ঠায় মুন নাইট হয়ে
স্বপ্নে শান দিচ্ছে
কে সে জানি না,
আমি তোমায় জানি,
জানি,
তোমার উপত্যকায় নেমেছে বিকেলের রং পাহাড়ের গায়ের ,যেমন বলতে তুমি, সময় আঁকে বিচিত্র রং
দিনের আট প্রহরে সাজায় নানা মাত্রায় পাহাড়
আর পাথুড়ে জীবনকে,
যখন চেনা মানুষ, ঠাকুরের ভাষায়, ধরা দেয় অচেনার গাম্ভীর্যে
তেমনই... এমনটাই তো ভালো লাগতো , বলতে
অথচ
তুমি তো তা নও
আমাজনের রহস্য চিরকাল তোমায় ঘিরে
দুর্ভেদ্য
অনিচ্ছাকৃত কি ইচ্ছাকৃত জানিনা
শূন্যতা কখনো শূন্যতা হয় না
পরিপূর্ণতার মধ্যেও এক স্থানাভাবের শূন্যতা বিরাজ করে ,
তাই অচেনা শব্দেও
পাই
চেনা অভিঘাতে,
কখনো মনে হয় না
দীর্ঘ সময় ধরে ছুটে গেছো
উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের দিকে
আমার বিপরীত অভিমুখে ,
নিশ্চল পাথরের মতো সর্বংসহা ধরিত্রী হয়ে অপেক্ষা করেছি
আমি
তোমার পাথরের মূর্তি হয়ে
আমি ঈশ্বর নই,
মাটির
সংসারে যে থাকে অচল হয়ে
তেমন ,
আছি,
অর্থ কামের পৃথিবীর এক প্রতীক !
এখানে মোক্ষ নেই।
মোক্ষের লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে
কে আর বিভাজনের পূজায় ডোবে
অবিকল
তোমার মতোই
পৃথিবী বাড়ে আয়তনে
দেবীপক্ষ আর পিতৃপক্ষের বিভেদ তখন মিশে যায়
মাঝে মাঝে মনে হয় ,
কে আমি তোমার
অথবা তুমি ?
কোন সংস্কারে ছুটে যাই ডোর বেলের চিৎকারে? বাকি কোথাও আছে কিছু ?
কাজ ও কাজের ভিড়ে বছরগুলো ধীরে ধীরে কমে আসে তোমার বিবর্ণ চুলের মতো,
চুমুগুলো একচুমুকে ফেনার সাথে গিলে নিলেও কোথাও যেন পিছুটান,
আসছে বছর আবার হবে
যখন ঢাকের কাঠি বলে,
প্রতীক্ষায় থাকি মহালয়ার,
এই আমি ।
তোমার অফিসের গল্প, কাজের দোহাই ফিকে হয়ে যায় পরের বিশ্বকর্মার কাটা ঘুড়ি হয়ে,
এসব কি চাওয়া পাওয়ার গল্প ?
বেশি চাওয়া ? একে লোভ বলে ?
দিনান্তের আশ্রয়ের মতো
আশ্বিনের শারদপ্রাতের আশ্রয় বাকি দিনগুলোর হারা-জেতাকে সইয়ে নেয়,
তুমি বোঝনা
অথবা
বুঝতে চাও না –জানা নেই,
মনেহয়
কে আমি..
কে তুমি...
সংসারে হিসেব মেটানো ব্যালেন্সসীটে
ট্রাফিক রুল মেনে
কে কোথায় !
অষ্টমীর অঞ্জলিতে সারা শহর তখন আর্জি জানায়
যশের ,জয়ের ,রূপের, ঈর্ষা জয়ের বাসনার সঙ্গে,
আমি থাকি
সন্ধিপূজার লগ্নের দিকে চেয়ে,
তোমার কাজ আর আমার হাসির মাঝের....
খুঁজতে চাই পরিচয়
শরতের নীল সাদা মেঘের শূণ্যতার মতো,
স্তোত্রপাঠের মাঝে পরিত্রাণের আর্তি ভাসে,
মুক্তির আকুলতা নিয়ে
সমাধি বৈশ্য কতদূরে দাঁড়িয়ে কতো যুগ ধরে,
জানি না
আমি তো মুক্তি চাই নি
অসংখ্য বন্ধনমাঝে বারবার বন্দী থাকার সুখস্বপ্ন কাজলে,
বিসর্জনের ঢাক
নিমজ্জনের শীতলতায় কাজের মোহরে পীতাভ প্রতিবিম্ব,
দর্পণে দেখায়
বিসর্জনে
আত্মপরিচয়,
সমান্তরালে দুই রেখা বয়ে যায়
সূত্রহীন
তুমি আমি হয়ে।
=====
মিথ্যে উৎসব
জয়তী মজুমদার
স্নেহ মায়া ভালোবাসার
বাঁধন বড় আলগা এখন,
একা একা বাঁচতে গিয়ে
পাল্টে গেছি সবাই কখন।
তাই মিথ্যে লাগে দীপাবলী
নববর্ষের ইচ্ছেগুলো,
মিথ্যে লাগে পুজোর ক'দিন
লাল নীল আর সবুজ কালো।
যদি পাই ভালোবাসা
স্নেহ মায়ার শক্ত বাঁধন,
নববর্ষের ইচ্ছেগুলো
আবার হবে আগের মতন।
দোলের সবুজ লাল নীলেতে
নতুন করে মন রাঙাবে,
দীপাবলির সত্যি আলোয়
নতুন জীবন ফিরে পাব।
=====
স্মৃতির বেদনায়
লালন চাঁদ
চারদিকে পূজো পূজো সুবাস
ঢাকের বাদ্যে বিদ্ধ হৃদয়
মন উন্মনা
ছায়া ছায়া কতো স্মৃতি ধরে রাখি রুক্ষ আস্তিনের ভেতর ।।
পূজো আসে
চলে যায়। রঙধনু মিশে যায়
ধূপের ধোঁয়ায় রেখে যায় পাতা খসা পড়ন্ত বেলা ।।
বুকের ভেতর উথলানো ক'টা দিন
নিষ্পৃহ উদাসীন
আমরা ফিরে আসি
পুরোনো উঠোনে সাজাই স্মৃতির লহরী ।।
মা আসে। উৎসব আসে
মা চলে যায়। হিমের পরশে ঢাকা পড়ে হৃদয়ের আনাগোনা ।।
====
জ্যোৎস্না প্লাবনে
সায়ন্তন ধর
ট্রাসের আড়ালে চলে গেছে ছায়াপথ
শহরতলী থেকে বিস্তীর্ণ আকাশ দেখার সুযোগ আর নেই
একচিলতে আকাশটাকেও ঢেকে দিয়েছে মেলিয়া অ্যাজেডারাক
শারদীয়ার আঘ্রাণ মেখে এগিয়ে আসে কোজাগরী রাকা।
মহাজাগতিক সমীকরণ আর আবহাওয়া পরিবর্তন
মিলিয়ে দেয় সেই আটষট্টি সালের দিন
প্রবল বর্ষণে তিস্তা ধারণ করে রুদ্রমূর্তি
সংকেতের রং হলুদ থেকে লাল হয়
সামাল সামাল আর্তনাদ ওঠে প্রতিটি চরভূমে
শীতল ঝড়ো হাওয়ায় বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক।
জরুরী সবকিছু অভিকর্ষের বিপরীতে টেনে
যখন হাপিয়ে পড়ি, তখন
শিরশিরে হাওয়া সঙ্গী করে
মেঘে ঢাকা কোজাগরীর রাতে
আকাশের দিকে চেয়ে থাকি
চাঁদের রামধনু বলয় দেখবো বলে।
সরে যায় মেঘ
চাঁদের আলো এসে পড়ে কার্ণিশে
জ্যোৎস্না প্লাবনে
স্বস্তির শ্বাস ফেলে অগুনতি মানুষ।
=====
পূজোর স্মৃতি
বিনিময় দাস
অধঃক্ৰমে দিন গোণা
শেষ হয় একদিন,
প্ৰকৃতি সবুজ মাঠে বিছিয়ে দেয় শিউলির কার্পেট অমলিন ।
শান্ত স্নিগ্ধ পদতালে,
হাসি নিয়ে দুগালে,
মা আসে সপরিবারে,
আমরা মেতে উঠি আনন্দের দুয়ারে ।
সময় বহমান---
সে তো আমাদের নেপথ্যে চলমান ।
হঠাৎ চলে আসে যাবার বেলা,
সিঁদুর খেলা ।
যে হৃদকক্ষ একদিন ভরা ছিলো আনন্দে,
খুশি করেছিলাম অৰ্জন,
আজ বিসৰ্জন ।
এরপর থেকে জীবন স্বাভাবিক,
দৈনন্দিন কাজ করে যাই ঠিক ।
পুনরায় চলে অধঃক্ৰমে দিন গোণা,
হিসাবেই জীবনের রসনা ।
শুধু দৈনন্দিন আসরে
অজান্তে ছুঁয়ে যাই হৃদয়,
সেখানে যা অক্ষয়
খুলে যায় তা---স্মৃতির খাম,
যা ছিলো এতদিন বন্ধ,
মনে পড়ে শুধু পূজোর কটা দিনের আনন্দ ।
0 মন্তব্যসমূহ