দৈনিক কবিতা গুচ্ছ | জয়তী দাস




পোস্ট বার দেখা হয়েছে
ছবি সংগৃহীত


সিলভিয়া প্লাথ 
       

একটি সহজ জীবন আঁকতে গিয়ে দেখি, 

কার্বন মনোক্সাইড তার জৈব শরীরটাকে গ্রানাইটের ফেনায় মুছে দিয়েছে জীবনের রঙ -

গাছের সঙ্গে ভাবুক আকাশের মিলনাত্মক ধ্বনি কর্কশ কান্নায় মিলিয়ে নিচ্ছে পার্থিব সুখ! 

এভাবে কখনও কোনো রাজগলি হারিয়েছে, বন্ধ্যা নক্ষত্রের ছায়াপথের দরজায়?
ঘেরা বারান্দা থেকে বেরিয়ে এসেছে আলো সবুজ রাতের শেষে? 

সেইসব বিষণ্ণ দিনগুলো নিয়ে আমার সামনে এসো না কখনও -
প্রতারক পুরুষের দেহ যদি ধুয়ে আসে কোনো ভোরের গান! 

আবার আমি পুনর্জন্ম নেবো -
দ্বিতীয়বার লিখে যাবো আত্মহত্যা পৃথিবীর প্রথম পরিণয়...

===

 নির্বাক চিত্র

  কলম ছিলোনা বলেই কবিতার সাথে সারারাত -
  কুঁজো সব ছবি, কুঁকড়ে যাওয়া মন রাতে- চলচ্চিত্র নির্বাক ! 

  হতবাক এক ডানা - কোথা থেকে উড়ে আসে! চোখ রাখে 
  চোখে-
  প্যারাসুট নামায়, ঠিক দেশ নামাঙ্কিত কবিতার মধ্যাক্ষরে-

  নীল- লাল সব প্রজাতি বিশেষ ভ্রুণ - অ্যাসিড ধরণ বৃষ্টি, 
  সারারাত জ্বলতে থাকে শহরের শিরায় শিরায়- নামাঙ্কিত 
  রঙ ! 

  সকলের ছায়া মারিয়ে- হারিয়ে ফেলছে পৃথিবীর ঊর্ধ্ব পৃষ্ঠ ;
  খুঁড়ে নেওয়া তেলের ডিপো, আমাজনের বুকে আগুনের 
  শ্বাস-

  সারারাত ওরা চিৎকার করে - সমস্ত আলো ওদের পরিহার্য 
  ধ্বংসের শিলালিপি এঁকে রাখে আগাম সন্তাপ -

  হলুদ পাকস্থলীর ভেতরে - ডাকঘরের ক্রেতা সুরক্ষার 
  সরজমিন তদন্ত ! 
  কতটা জমে আছে প্রেম ! ঠোঁট গিলে জিভ ঠেলে লুকানো 
  খাদ্যনালির হতাশায় -

  অমৃত সব স্বাদ- জীবন হেঁটে ফেরে বন্ধুর উপত্যকা ভূমি, 
  হাতবাড়িয়ে হ্রদের শীতল নিঃশ্বাসে - কয়েক ফোটা তরল 
  গড়িয়ে পায় --

===

ছবি সংগৃহীত 


অক্ষমতা আমার

কাল জেনেছিলাম অবসর মানুষকে কোথায় কোথায় পৌঁছে দেয়। 
সেই ঘন সাঁওতাল পল্লি, কালো রঙের পরিরা মাথায় গোঁজে বনফুল! 
আমি যদি কবিতা হতাম ওদের চোখে জ্যোৎস্না হয়ে যাবজ্জীবন কাটাতাম -

লোকালয় ছেড়ে মানুষের ঘনত্ব থেকে অন্য কোনো ভূখন্ডে চলে যেতে চাই -
নিজের গন্ধ যেন ওদের সাথে কেমন মিশে আছে! লাল দিঘি জলে আমরা'ই কেন! 
কেউ কেউ তো অন্য হতে পারতাম! 

কেন এই মিশে মিশে থাকা- নীল শ্বাসের মধ্যে লুকানো
নিষ্ঠুরতা! 
সহজ নয় বরং জটিল থেকে আরো জটিলতর মানুষের পাঁচ আঙুল, নাভি, চোখ -
পেচিয়ে রাখা আমাদের কুণ্ডলী-গাছ নয় ফুল নয় দুপেয়ে জীব;অদ্ভুত এক প্রাণ- মানুষ! 

কিছু কি হলো নেওয়া! জানতাম না -
দেওয়া হয়নি কিছুই, ভীষণ এক কালো পাথর আমার ঘরদোর
কৃপণ এক জানলা ; আলো নেই বাতাসও নেই-
তোমাদের ছিলো! বটগাছের মতো ছায়া, আকাশের মতো মন! 
নিতে পারলাম কই! তাই আজ থেকে দূরে দূরেই রই... 

====

সেলাই মেশিন

  বেশ কিছু সুতোর মধ্যে গুটিয়ে রয়েছে ডেলিভারি অর্ডার 
  যখন পাড়াগাঁ থেকে ওরা এসে খাটের ওপরে জড়ো হয়ে 
  বসে, 
  যন্ত্রের মতো তাদের যন্ত্রণা থেকে সারাঘরময় একটা উগ্র 
  গন্ধ ভাসে -
  হাতপাখারা নড়ে আজও, ইলেকট্রিকের হতাশ আশা ফেরত ! 
  ঘুটঘুটে সন্ধ্যায় চারপাশ মুড়ে যায়, একলা সাঁতারে ছিটের 
  কোমর বেঁকে যায় -
  তবুও সেলাই ওঠে -- 

  সেকেলে বাড়ির একাংশ, কালের বিধ্বংসী গল্পগাঁথায়
  উপোষী -
  ভাঙা যাঁতির টুকরোয় আমরা কখন মরে আবার ঘরে ফিরি ! 
  সময়ের গালিচায় সেই শালিকের বিবর্ণ পালকে, আবার 
  ফেরতের চিঠি লিখি -
  অসংখ্য পিঁপড়ের কামড়ে এক প্রান্তে পড়ে থাকা, 
  কাঠমল্লিকার ঠুকরানো চেহারায়, পূর্ণিমার বসত বাড়ি 
  ওরা লেখে কবিতা, উই মাটি, ডালপালার কুষ্ঠ রোগ -
  ঝুলে পড়া ডালে দু'একটা অসময়ী ফুলের কাতর নিবেদন -
  আমরা খুঁজি, খোঁজার ছল চলে দিনভর--

  জৈবিক যুদ্ধের বিকল্প যদি শান্তিচুক্তি হতো --
  এত মানুষের ভিড় ঠেলে কেউ একপাতাও ইতিহাস পড়তো 
  না -
  স্পার্টাকাসের নেতৃত্ব জড়ো করে শ্রমিকের চাহিদা প্রমাণ 
  দিতে হতো না -
  আলো আর জলের লাইনের কানেকশনের জন্য দুটাকা 
  বেশী দিতে হতোনা -
  কিন্তু এসব চমকদার, শরীর, দুর্নীতি,বিজ্ঞাপনী ব্যানারে
  আবেদন-
  সেই মাটির ভাঁড় ছুঁয়ে, তরলের মিশ্রিত ওজনে দুধ আর
  জলের চুমুক -
  সবমশলায় জেগে উঠছি সকল সময় -

  লাল নীল পর্দাটার পেছনে একটা কাঁইচি আর মেশিনের 
  ঘড়ঘড় শব্দে যান্ত্রিক সভ্যতাটা শেষ অবরোধে যেন আরো
  বুঝে নিতে চায় --
  তোমাকে আমাকে কড়ায়গণ্ডায় --

      
 
     

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ