পোস্ট বার দেখা হয়েছে
নীলনদের তীরে পিরামিডের দেশে
( পর্ব-৫)
জাহাজ ভেসে চলেছে নীলনদের ওপর দিয়ে। দুই তীরে গাছপালা, পিছনে বালিয়াড়ি, মাঝে কোথাও কোথাও পুরোনো ভেঙেচুরে যাওয়া স্থাপত্যের চিহ্ন মন কে অতীতে ফেরায়..
কিছু দূর দিয়ে চলে আরো জাহাজ দর্শন পিপাসু ভ্রমনার্থীদের নিয়ে..এক জাহাজ অন্য জাহাজকে দেখে উৎসাহে হাত নাড়ে..একই পথের পথিক সব...
এসে পৌঁছালাম নদীর ধারে Kom ambo মন্দিরে।
এ সমস্ত মন্দির প্রায় ফিফটিনথ সেঞ্চুরি বি সি তে তৈরী হয়েছে।বহু পুরোনো শক্ত বেলে পাথরের রঙের পাথর দিয়ে তৈরী। কত দিন কেটে গেছে তবুও তাদের হাতের অপূর্ব অত্যাশ্চর্য নৈপুন্য এখন দেওয়ালের ছবিতে ধরা।
এই মন্দিরের বিশেষত্ব এই যে এখানে একই মন্দিরে দুই দেবতার প্রতিষ্ঠা করা হয়ছে। সৌন্দর্য্য এবং মাতৃত্বের দেবী আইসিস এর পুত্র হোরাস।
কুমিরের মস্তকে মানুষের শরীরের আর এক দেবতা, যার নাম সোপিরকা।এই মন্দিরে ইতিহাসের পাতা থেকে টলেমি ট্রেজান এসমস্ত চরিত্রও ধরা রয়েছে।
অপূর্ব সব হাতের কাজের নিদর্শন মন্দির গাত্রে পাথরের গায়ে খোদিত।মন্দির টি এক সময় চিকিৎসা বিজ্ঞানে ও শ্রেষ্ঠ স্থান নিয়েছিল।এখানে চিকিৎসা বিদ্যায় ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্রের ছবি দেখে বোঝা যায় আজ থেকে তিন হাজার বছর আগেও মানুষ চিকিৎসা বিজ্ঞানে কত অগ্রসর ছিল।
প্রায় একযুগ আগের কথা লিখতে বসেছি। ভ্রমনের ধারাবাহিকতা হয়ত ঠিক থাকবে না..কিন্ত দর্শনীয় স্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না... মনে যেমন আসছে সেই ভাবেই লিখে চলেছি...
এবার আসি আবুসিম্বেল এর কথায়। এটি সুদান বর্ডারের কাছে লেক নাসের এর পশ্চিম তীরে।
আবুসিম্বেলে যাওয়ার পথে সুদানের দিক থেকে অতর্কিত আক্রমনের ভয় থাকে। ঐ জন্য খুব ভোরবেলায় সমস্ত ট্যুরিস্ট বাস গুলে দল বেঁধে এক সাথে কনভয় করে যাত্রা করে। ফেরার সময় ও একই সাথে ফেরে। রুক্ষ জঙ্গলের মধ্য দিয়ে নিরালা পথ .. দূরে দূরে বালিয়াড়ি টিলা কেমন যেন গা ছমছম করা...হুহু করে বাস ছুটতে লাগলো.. ভাব টা এমনি যেন কতক্ষণে সেখানে পৌঁছে দেবে..যাই হোক তিন /চার ঘন্টা জার্নি শেষে পৌঁছলাম আবুসিম্বেল।
মরুভূমির মধ্য দাঁড়িয়ে বিশালকায় দুটি মন্দির পাশাপাশি।রাজা দ্বিতীয় রামোসিস্ এর আমলে তৈরী একটি তাঁর স্মৃতিতে এবং অপরটি তাঁর রানী নেফারতিতির স্মৃতি তে।
সামনে রামোসিস এর মূর্তিগুলি এত বিশালাকৃতি যে চোখ তুলে তাকাতে কেমন অস্বস্তি হয়..মানুষ যতই নিজেকে জোর করে ধরে রাখতে চায়.. তা কখনোই সম্ভব হয় না..
এই মন্দির এক সময় জলের তলায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল..অসোয়ান ড্যাম তৈরী হওয়ার সময় এটি পুনরাবিষ্কৃত হয় এবং পার্ট বাই পার্ট বসিয়ে নতুন ভাবে নির্মান করা হয়..
তাই নীলনদের তীরে জঙ্গলের মধ্যে ইতিহাস পড়ে রইলো.. কিন্তু সেই কবির কথায় "জীবনেরে কে রাখিতে পারে.." তাই জীবন কে ধরা গেল না ...
আবুসিম্বেল দর্শন শেষ..আমরা আবার অসোয়ানের পথে..
(ছবি-সংগৃহীত)
আরও পড়ুন ..
2 মন্তব্যসমূহ
কি দারুণ লেখা .... খুব ভালো লাগছে 👍👍
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগছে
উত্তরমুছুন