শারদ সংখ্যা ২০২০ || শ্রদ্ধাঞ্জলি ও উৎসর্গ || অঞ্জন চক্রবর্তী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

অচলায়তন 


একটু পিছিয়ে গেলে  চাতালটি বিশ্রাম দেবে,

ভাবনার অবকাশ নেই ওটাই ছিল জন্ম-বোধের আঁতুরঘর।

ঘর পাল্টানো হচ্ছে 

চিরাচরিত গন্ডিতে আবদ্ধ ঋতুটি ক্রমবর্ধমান।


পাথরে পাথরে ঠোকাঠুকিতে ছিটকে আসে কিছু স্ফুলিঙ্গ, 

মাঝ-বয়েসি হাওয়ায় মিলিয়ে যায় সাংবাদিকের চোখ এড়িয়ে! 

কান্নাগুলো ঘড়ির কাঁটার সাথে পা মেলায়নি কখনো-

দশদিকে ছোটাছুটি, পরিচিতি পায় বেওয়ারিশ লাশের।


কাটা ছেঁড়া হয়েছে চোখ কান হাড় মজ্জা সবশেষে 

অবস্থানগত সিদ্ধান্ত, গন্ডিরই বাসিন্দা এই সব,

আশঙ্কার কারণ অনুপস্থিত । ধূপ জ্বলে শঙ্খও বাজে জন্মলগ্নে ,কান্না থামে না ।


উদয়ের কথা ওঠে বারবার নিষেধের অভিধানে

ঋতু পরিবর্তনের ধাপটি দেখা গেলেও স্পষ্ট হয় না,

হিজিবিজি অঙ্ক কষা হয় অস্থির ব্ল্যাকবোর্ডে 

নিয়ত আকার নেয় না জ্যামিতিক রেখাগুলি ।

উড়তে থাকে নীল প্রজাপতির ঝাঁক।


কথা

কথা বলতে বলতে অনেকদিন পর

মনে হল,বলাই হলো না

বাদ চলে গেছে অনেক পৃষ্ঠা ছায়ার আড়ালে

সেখানে ছিল কিছু ছবি।

কথা তো পারে না শব্দের থেকে তুলে আনতে

অভিমানী ডুবন্ত চাঁদ;

নিঃশ্চুপ জলে স্নান ক'রে প্রতিদিন 

তার চাতালে গল্প জমা করে গোপন হাওয়া।


দেরাজে রাখা সাক্ষরহীন বোতাম,

কথা বলি তার সাথে,

তার চোখে চোখ রাখি

হারানো পৃষ্ঠায় ফুটে ওঠে ছবি।


কি কথা বলি কাকে বলি জানি না তা

তবু বলে যেতে হয়---

নিজের সাথেই হয়তো বা.......


নুড়ি-পাথরের নামতা


আপ্লুত হয়েছি!

পরপর সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ায়

চোখ, জিজ্ঞাসু....বিস্ময়....আনন্দ....শঙ্কা....


এইমাত্র আমাকে ছুঁয়ে চলে গেল যে সব গল্প 

সেই সব পাড়ায় হেঁটে চলে বেড়িয়েছি এতদিন----

আশ্রয় আহার কিছুই মেলেনি! 


সাজানো গোছানো শব্দরা পড়শী হতেই 

স্বাস্থ্যের সংবাদ নিতে সাংবাদিকের ঢল!


এলোমেলো পথচারীদের কোনো শব্দ নেই 

নেই কোনো অক্ষর সঞ্জীবনী ।


আছে শুধু পথ চলা আর নুড়ি-পাথর গোনার নামতা।

চেনা পথে

যে পথটুকু চিনি সে পথেই যাওয়া আসা 

ক্লান্ত হতে হতে বিন্দু 


গাছের পাতারা কাঁপে 

হাওয়া যেন বলে যায় কিছু 

কার কথা?


ওড়ে ধুলোবালি, মর্মে তার অশেষ কাহিনি।


আকাশে জমছে মেঘ

তারও আছে চেনাপথে বৃষ্টি নামানো সংকেত।


('কবয়ঃ' পত্রিকায় প্রকাশিত। )


ঠিকানা 


আমার ঠিকানা কি? হ্যাঁ আমার একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই আছে, কিন্তু সেই ঠাঁইয়ের মধ্যেও আমি এখনও খুঁজে চলেছি,কে দেবে তার উত্তর! আমি যদি আকাশ হতে চাই তখন আকাশ বলে ওঠে, ওরে বাপু আগে তোমার পোশাক আশাক ঠিক ঠাক করে নাও , আয়নাতে দেখে নাও তোমায় কেমন লাগছে, তুমি আমার মানানসই হবে কিনা তারপরে চিন্তা ক'রো তুমি  আকাশ হবে কি না, আমার সহ্য ক্ষমতা তো দেখছ, যখন সূর্যদেব তাঁর আগুন ঝরান তখনও আমি আমিই থাকি, মাঝে মাঝে যখন দুঃখ হয় তখন মেঘ-চাদরে ঢেকে দিই সমস্ত শরীর কেউ দেখতে পায় না, আবার ফুটিফাটা মাঠ যখন কষ্ট নিয়ে ডাকে, তখন আমি মেঘকে বৃষ্টি হয়ে ঝরতে দিই, তুমি কি তা পারবে আমার মতো উদার হতে!


না পারবো না, আমি অত ভালমানুষ নই যে সমস্ত কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে সন্ন্যাস হয়ে যাব, আমার দরকারই নেই আকাশ হওয়ার, দেখ তুমি আছ তোমার ঠিকানা নিয়ে আমি আছি আমাতে, পারবো না।


দেখি অন্য কোথাও যাওয়া যায় কি না, আমি যদি পাহাড় হই! পাহাড় বলল তুমি আসতে পার কিন্তু তুমি যেমন চঞ্চল ছটফটে পারবে! দেখছতো আমার বিশালত্ব  এই বিশাল মন ভাব কি তোমার আছে? তুমি তো আকাশকে বুঝিয়ে দিয়েছো তোমার মনটা কি! তাছাড়া দেখ আমি মৌন থেকে চারিদিক দেখতে পারি সে জন্যই আমি মৌন-মহান রূপে আখ্যাত।


না আমি কি করে পারব তোমার মতো চুপচাপ থেকে বকবক না করে কথার ফুলঝুরি না ছুটিয়ে অন্যদের আমার কাছে টানতে ! না পারবো না তোমার মতো মৌন থেকে তোমার সমান বিশাল হতে পারব না ।ভাবছ আমার তাহলে আর ঠিকানা নেই! আছে আছে, ঠিক আছে আমি এবার নদীর ঠিকানায় থাকতে পারি কিনা দেখি।

নদীর কাছে যেতেই বলল তুমি সারা জীবন আমার মতো স্বাধীন ভাবে চলতে পারবে, পারবে তুমি পাথর নুড়িতে হোঁচট খেতে খেতে আপনবেগে চলতে, পারবে বিশাল হৃদয়কে খুঁজে নিতে? আমি যেমন সমুদ্রের বুকে

মিশে যাই, তোমার হৃদয় কি পারবে বিশাল জনসমুদ্রে নিজেকে মিশিয়ে দিতে?

আচ্ছা তোমরা কেউ বুঝছনা কেন আমি তো একটা মানুষ, আমার তো চাহিদা থাকবে সে তো শুধু আমার জন্য অন্যদের জন্য নয়,আর স্বাধীনতার কথা বলছো? না আমি স্বাধীনভাবে চলতে পারব না , কারো না কারোর মুখাপেক্ষি থাকতেই হবে, পারব না 


বাতাস তুমি কি আমাকে তোমার ঠিকানা দেবে? বাতাস বলল তুমি যা বিশ্বাস কর, তুমি যা উপলব্ধি কর, তার জন্য তুমি তো নিরলস কর্মী হতে পারবে না, আমি তো সারাক্ষণ কাজ করে যাই নিরন্তর, আমি সারাক্ষণের কর্মী ।


এতক্ষণ তো আমি অনেকের কাছেই গেলাম কিন্তু ঠিকানা পেলাম না, এবার নিজের কাছেই ফিরে এলাম আমার সত্তা বলে উঠল, হাঁপিয়ে গেলে !একবারও ভাবলে না তুমি যা চাইছে তা তুমি নিজেই পার।একবার ভাবে তো তোমার তো জীবন ধারন করার মতো যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে তবে কেন তুমি পারছনা উদার হতে, উদ্বৃত্ত উপকরণগুলি বিলিয়ে দিতে যাদের সেটা প্রয়োজন তাদের মধ্যে? কেন তুমি পারছনা সত্যের পথ অবলম্বন ক'রে পাহাড়ের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে, মৌনতায় মহান হতে? সে উপাদান তোমার মধ্যেই আছে । তোমার তো একটা মন আছে সেখানে স্বচ্ছ নির্মল নদীটাকে বইতে দিচ্ছনা কেন,কেন আটকে রেখেছ তাকে, তাকে বইতে দাও স্বাধীনভাবে তাহলেই তো কোনও বাধা বাধাই থাকবে না, জনসমুদ্রে মিশে যাবে তোমার হৃদয় ।আর মনে রাখো তুমি যা বিশ্বাস করো  তাকে প্রতিপলে প্রতিক্ষণে লালন করো যত্নে,তবেই তোমাকে আর ঠিকানা খুঁজতে হবে  না মানুষের মাঝেই তোমার বাস, তাদের মধ্যেই তোমার ঠিকানা, তোমার বসত। অরণ্যের বৃক্ষের মতো ঋজুতা বড় প্রয়োজন ।


তুমি হতে পার আকাশের মত উদার প্রাণ

তুমি হতে পার পাহাড়ের মতো উচ্চ মহান,

তোমার আছে নদীর মত স্বাধীন বহতা

তোমার আছে কর্মী হবার বায়ুর ক্ষমতা, 

তোমার তোমাতেই আছে তোমার ঠিকানা ।


(ঋণ স্বীকার : একটি সঙ্গীত )

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ



  1. অঞ্জন দা ভালো থেকো ৷
    আমাদের সবার লেখা পড়ে দেখো কেমন হয়েছে ৷

    উত্তরমুছুন
  2. অপূর্ব কবিতাগুচ্ছ । শ্রদ্ধা ও প্রণাম কবি 🙏 ।ভালো থাকুন অমৃতলোকে।

    উত্তরমুছুন