শারদ সংখ্যা ২০২০ || গল্প || সুকুমার রুজ




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

খেলনা 
সুকুমার রুজ

 ডাক্তার সান্যাল অবসর সময়ে ওর অফিস-চেম্বারে বসে কম্পিউটারে গেম খেলছেন। মনিটরে দেখা  যাচ্ছে একটা অর্ধনগ্ন পুরুষ মানুষ। মাউস  আর আঙুলের কারসাজিতে মানুষটার হাত পা নাড়াচাড়া করানো যাচ্ছে, চোখের পাতা খোলা বন্ধ করা যাচ্ছে, এমনকি দাঁত বের করে হাসানোও যাচ্ছে।  স্ক্রিনে হেল্প অপশন-এ কারসার নিয়ে গিয়ে মাউস ক্লিক করলেন ডাক্তার সান্যাল। স্ক্রিনে বাম পাশে ফুটে উঠল টুলস টেবিল। সে টেবিলে 'রেজর' অপশনে ক্লিক করতেই স্ক্রিনে একটা সেফটি-রেজর। মাউস আর আঙুলের সহযোগিতায় রেজরখানা ঠিকঠাক ধরলেন মানুষটার রোমশ বুকে। মাউস কুট কুট শব্দ তুলে খেয়ে ফেলল বুকের সমস্ত রোমরাজি। বুকখানা এখন হাওয়াইন গিটার-এর তলদেশের মত দেখতে লাগছে। ডাক্তার এবার কারসার সরিয়ে আনলেন স্ক্রিনে টুলস টেবিলে 'অ্যানাস্থেসিয়া' অপশনে। ক্লিক করতেই মানুষটার নাকের ওপর চেপে বসল একটা গ্যাস-মাস্ক। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অর্ধনগ্ন মানুষটার চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেল। হাত-পা হয়ে গেল শিথিল। এরপর ডাক্তার 'স্ক্যালপেল' অপশনে গিয়ে মাউস ক্লিক করলেন। ন্যাড়া বুকের ওপর ফুটে উঠল একখানা ধারালো ডাক্তারি ছুরি। খুব মনোযোগ ও সাবধানতার সঙ্গে মাউস অপারেট করতেই ছুরিখানা কামড় বসালো বুকের চামড়ায়। ডাক্তার সান্যাল খুব সন্তর্পনে মাউস ক্লিক করছেন, আর মনিটরে মানুষটার বুকের চামড়া কেটে হা হয়ে যাচ্ছে। রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে ছুরি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকা বাতাবিলেবুর কোয়ার রংয়ের মাংসপেশি স্ক্রিন জুড়ে। এবার 'ফরসেপ' 'সিজার' 'স্ক্যালপেল' এসব অপশনের সাহায্যে ডাক্তার সান্যাল স্ক্রিনের মানুষটার বুকের মাংশপেশি কেটে সেফটি-ক্লিপ দিয়ে এঁটে দিলেন বুকের দু'পাশে। এখন মাখন-রংয়ের খাঁচার মধ্যে খয়েরি রঙের হৃদপিণ্ডটা ঠিক যেন একটা টুনটুনি পাখি! তিড়িক তিড়িক করে নেচেই চলেছে।   
কি-বোর্ড-এর বাটন আর মাউসের যুগলবন্দিতে একে একে বুকের পাঁজর সরিয়ে খাঁচা থেকে টুনটুনিটাকে অক্ষত অবস্থায় বের করে আনতে পারলেই ভিকট্রি। স্ক্রিনে ফুটে উঠবে টোটাল স্কোর। সেইসঙ্গে কমপ্লিমেন্ট -- সাকসেসফুলি অপারেটেড। থ্যাঙ্কস আ লট, এইসব।     
ছবি সহযোগিতায় : উষসী রায়
  ডাক্তার সান্যাল সবে মানুষটার বুকের দুপাশে দুটো রিব সরিয়েছেন, এমন সময় ঘরে ঢোকেন ডাক্তার মৈত্র। চট করে মৈত্রকে এক ঝলক দেখে নিয়ে আবার চোখ ফেরান মনিটরে। তার প্রিয় গেম 'হার্ট-এক্সটারপেশন'-এর সবচেয়ে উত্তেজনা দায়ক মুহূর্ত চলছে এখন। একটু অন্যমনস্ক হলেই হার্ট জখম হতে পারে, গেম ওভার হয়ে যেতে পারে। তখন পর্দায় ফুটে উঠবে -- ফেইলড, ট্রাই এগেইন! সে ভারি এম্ব্যারাসিং। তাই ডাক্তার সান্যাল ইশারায় ডাক্তার মৈত্রকে বসতে বললেন। পাশের রিভলভিং চেয়ারে শরীরটাকে ঠিকঠাক বসিয়ে উসখুস করতে থাকলেন। ওঁর চোখেমুখে উত্তেজনার ছাপ। কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে, উত্তেজনা চাপতে না পেরে বললেন -- এক্সাইটিং নিউজটা শুনেছেন স্যার! 
   ডাক্তার সান্যাল অবাক হয়ে একবার ডাক্তার মৈত্রর দিকে তাকান। মৈত্র বলে ওঠেন -- শুনলে এতক্ষণ আনন্দে শ্যাম্পেনের বোতল খুলে ফেলতেন স্যার। 
   সান্যাল এবার গেম শেষ না করে স্ট্যান্ড-বাই মোডে মাউস ক্লিক করেন। দু'পায়ের কৌশলে চেয়ার ঘুরিয়ে নেন মৈত্রর দিকে। মালিক-সুলভ গলায় গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলেন -- কোন কথা বলছেন?      
   ডাক্তার মৈত্র এবার ছিপিখোলা সোডা-বোতলের মত ভুরভুরিয়ে ওঠেন -- স্টেম সেল টেকনোলজি ব্যান হয়ে যাওয়ার খবরটা শোনেননি নাকি? 'সিগমা ক্যাপিটালিস্ট কাউন্সিল' সরকারে এসে তিনমাসের মধ্যে বিল পাস করে দিল। আপনি তো জানেন, 'হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফোরাম', 'মিডল ক্লাস কনজিউমার ফোরাম' এসব সংগঠন আগের সরকারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল স্টেম সেল টেকনোলজি ব্যান করার জন্য। ওদের আন্দোলন করা এতদিনে সার্থক হলো স্যার। অবশ্য আজ হোক কাল হোক, এ সরকারকে এটা করতেই হতো। কারণ এই সংগঠনগুলোর সাহায্য নিয়ে আগের সরকারি দলের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে সিগমা দল এবং ভোটে জিতেছে। এখন আখেরে লাভ আমাদেরই।
   ডাক্তার সান্যাল এবার একটু নড়েচড়ে বসেন -- ওই আন্দোলনের ব্যাপারে একটু আধটু শুনেছি। তবে, ডিটেলস জানি না। ব্যাপারটা একটু ক্লিয়ার করুন তো! ওই ফোরামগুলো আন্দোলন করছিলই  বা কেন?  আর এই বিল পাস হওয়াতে আমাদের এত খুশি হওয়ারই বা কী আছে?
   ডাক্তার মৈত্র একপলক সান্যালের দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু হেসে বলেন -- আপনি স্যার অভিনয় জগতে গেলেও সাইন করতেন। এত বড় এক কন্সার্ন 'হিউম্যান লিম্ব সাপ্লাইয়ার্স'-এর কর্ণধার হয়ে এমন ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করছেন, যেন এসবের কিছুই আপনি জানেন না। অথচ ইলেকশনের আগেই আপনি সরকারি দল 'ওমেগা ক্যাপিটালিস্ট কাউন্সিল' থেকে বেরিয়ে এসে, সিগমা'-তে যোগ দিলেন দশ কোটি টাকা ডিপোজিট মানি দিয়ে।   
   সান্যাল-এর ভ্রু-তে বিরক্তি -- ও হো! সে তো অন্য কারণে। 'ওমেগা কাউন্সিল' ক্ষমতায় থাকাকালীন ক্লোন বেবি নিষিদ্ধ করল। রমরমিয়ে চলতে থাকা আমার 'অ্যাডাম ক্লোনিং সেন্টার' বন্ধ করে দিতে হল। তাই রেগেমেগে...। তাছাড়া বুঝতে পারছিলাম, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা  ওমেগা সরকার এবারের ইলেকশনে গণেশ ওলটাবে। যাক সে কথা! এখন আপনি বলুন আপনার এত পুলকিত হওয়ার কারণটা কী? 
  আপনি তাহলে স্যার এসবের কিছুই  জানেন না! অথচ এ-বিল পাস হওয়াতে আপনার এই লিম্ব  সাপ্লাইয়ের ব্যবসার রমরমা হবে। 
ছবি সহযোগিতায় : উষসী রায়
  তাই নাকি! বলুন বলুন! আমাকে একটু বুঝিয়ে বলুন তো! 
   শুনুন! স্টেম সেল টেকনোলজির দ্বারা অকেজো হওয়া হার্ট, কিডনি, স্পাইন, এসব রিপেয়ার করা যায়, তা তো আপনি জানেন! অ্যাজ এ ডক্টর এটাও নিশ্চয় জানেন যে, স্টেম সেল টেকনোলজি অ্যাপ্লাই করতে গেলে 'আম্বিলিকাল কর্ড ব্লাড' অর্থাৎ  কিনা মাতৃ-জঠর ও জঠরস্থ  শিশুর নাভির সঙ্গে যুক্ত নারীর রক্তের প্রয়োজন হয়। ওই ব্লাড সংগ্রহ করতে গিয়ে কিছু ডাক্তার বিপথগামী হচ্ছে। প্রসূতির গর্ভস্থ শিশু মারা পড়ছে। সংগৃহীত আম্বিলিকাল কর্ড ব্লাড চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সে কারণেই ওই ফোরামগুলো আন্দোলন করছিল। এখন ঘটনাটা হলো, স্টেম সেল টেকনোলজি ব্যান হওয়াতে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আর মেরামত করা সম্ভব হবে না। লিম্ব রিপ্লেস করতে হবে। অর্থাৎ লিম্বের চাহিদা বাড়বে। এবার বুঝতে পারছেন আমার পুলকিত হওয়ার কারণটা!
   ডাক্তার সান্যাল আনন্দে চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে ওঠেন -- থ্রি- চিয়ার্স ফর 'সিগমা কাউন্সিল'। সত্যিই আপনি একটা দারুন নিউজ দিলেন। উঠুন, চলুন! ভেরি ভেরি গুড নিউজটা সেলিব্রেট করা যাক।
   কোথায় যাব! আমাকে এখন ও-টি তে ঢুকতে হবে যে! কসমিক নার্সিংহোম-এর অর্ডার আছে তিনখানা হার্টের। ফার্ম হাউস থেকে কিডি এসে যাবে এখুনি। হার্ট এক্সটারপেট করে সেফটি-বক্সে রেডি করতে হবে তো! 
  আমি ডক্টরস রুমে ফোন করে দিচ্ছি অন্য কেউ করবে। আপনি হলেন আমার কোম্পানির ভেটেরন ডক্টর এবং কোম্পানির একজন সত্যিকারের ওয়েল উইশার। আপনার সঙ্গে আমার জরুরী কাজ থাকতেই পারে। চলুন তো! 
  ডক্টর মৈত্র গদগদ হয়ে বলে ওঠেন -- ওসব ব'লে কেন লজ্জা দিচ্ছেন? আপনি হলেন আমার বস। আপনার কথাই আমার কাছে আদেশ। তা পালন করতেই হবে।  চলুন কোথায় নিয়ে যাবেন!
   দূরে কোথাও নয়, এই কাছেই 'নাইটিঙ্গেল ফ্রেশ পার্লার'-এ যাব দু'জনে। সেই সকাল থেকে আপনি ও-টিতে রয়েছেন, একটানা কাজ করে নিশ্চয় বোর ফিল করছেন। চলুন একটু ফ্রেশ হয়ে আসা যাক। এসে একটা কনফিডেনসিয়াল আলোচনা করব আপনার সঙ্গে। ব্যবসার ব্যাপারে একটা দারুন  আইডিয়া এসেছে মাথায়। সেটা নিয়েই আপনার সঙ্গে...। 
  আপনি না স্যার ডাক্তার হয়েও বিজনেসটা দারুন বোঝেন। ডাক্তারি পড়েছেন কেন কে জানে!
   খ্যাক খ্যাক করে হাসেন ডাক্তার সান্যাল -- বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে ডাক্তার হবে, তাই পড়েছি। প্রাক্টিক্যালি ওসব স্টেথোস্কোপ, সিজার, স্ক্যালপেল ধরতে আমার ভালো লাগে না। ওতে আর কত টাকা রোজগার হয় বলুন তো! নিজের চেম্বারে বসে মাছি তাড়ানো কিংবা সরকারি হাসপাতালের আউটডোর-এ বসে গরু ছাগলদের নাড়ি টেপা আমার ধাতে সয় না। সে জন্যেই তো নিজের নার্সিংহোম খুলেছি। আপনার মত কিছু ভাল ডাক্তারকে রিক্রুট করতে পেরেছি। সেই 'জুপিটার নার্সিংহোম' থেকে ব্যবসা বেড়ে সিস্টার কনসার্ন এই 'ভেনাস লিম্ব সাপ্লায়ার্স। এরপর হয়তো আরও কিছু....।  
  সাপ্লাই বিজনেস-এর আইডিয়াটা কিন্তু আমিই দিয়েছিলাম স্যার!   
আই অ্যাকনলেজ ইট। সেজন্যেই তো আপনি আমার কন্সার্ন-এর সবচেয়ে বেশি বেতনভোগী ডাক্তার। আপনাকে আমি একটু অন্য চোখে দেখি। 
ছবি সহযোগিতায় : উষসী রায়
 সেটা আমার সৌভাগ্য স্যার! আপনি আমাকে রিলাই করেন আমিও হার্ট-এন-সোল চেষ্টা করি আপনাকে এ-ওয়ান সার্ভিস দিতে। এনি ওয়ে, চলুন স্যার! ফিরে এসে আপনার আইডিয়াটা শুনবো।
   সান্যাল মোবাইল-ফোনের বোতাম টিপতে টিপতে বলেন -- হ্যাঁ চলুন। এই বিক্রম, গাড়ি মেন গেটের সামনে নিয়ে এসো।
                            ।।দুই ।।
  গাড়ি থেকে নেমে কয়েক-পা এগিয়ে ডাক্তার সান্যাল উচ্ছ্বসিত -- দেখছেন, ভেতরে ঢুকতে না ঢুকতেই শরীর কেমন জুড়িয়ে গেল! এ-চত্বরে এই 'নাইটিঙ্গল' ইজ দা বেস্ট পার্লার। সেন্ট্রালি এয়ার কনডিশনড, ফ্লাওয়ার গার্ডেন। এছাড়া শরীর ও মন ফ্রেশ করে নেওয়ার জন্য ভ্যারাইটিজ আইটেম আছে। আপনি নিশ্চয়ই এখানে আসেন। আপনাকে আর এসব কেন বলছি!      
  ডাক্তার মৈত্র প্রতিবাদী -- না স্যার! আমি এ পার্লারে আসিনি কখনো। শুনেছি খুব কস্টলি। আমার ফিনান্স পারমিট করে না।  
   এই তো আপনি নাকে কান্না শুরু করলেন! ঠিক আছে, নিউ আইডিয়াটা ম্যাচিওর করাতে পারলে টুয়েনটি পার্সেন্ট স্যালারি বাড়িয়ে দেওয়া যাবে।  ঠিক আছে?
   ডাক্তার মৈত্র চোখে-মুখে ফুটে ওঠা খুশি আড়াল করার জন্য ফুলের বাগানের দিকে মুখ ফেরান। হঠাৎ ডাক্তার সান্যাল কথা থামিয়ে বলে ওঠেন -- ও মাই গড! কথায় কথায় কেবিন বুক করতেই ভুলে গেছি। জেনারেলি আমি অফিসে বসেই এখানে ফোনে বুক করে রাখি। এনিওয়ে, এখনই করে দিচ্ছি। বলুন, আপনি কোন আইটেম পছন্দ করেন?
  অ্যাজ ইউ লাইক। 
   আমার তো পছন্দ মাসাজ উইথ হট মুভি, তারপর আইস-বাথ উইথ ওডিকোলন। সব শেষে হট কফি।  
  তাহলে আমার জন্য ওটাই নিন স্যার! এক যাত্রায় পৃথক ফল আর কেন হবে! নিউ এক্সপেরিয়েন্স গ্যাদার করা যাক। 
   মোবাইল ফোন থেকে দুজনের জন্য দুটো কেবিন বুক ক'রে আইটেম কোড বলে দেন ডঃ সান্যাল। তারপর মৃদু হেসে মৈত্রকে বলেন -- সত্যিই যদি এটা আপনার নিউ এক্সপেরিয়েন্স হয়, তাহলে আপনাকে বলি, এই আইটেমটা-তে কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সিমেন লস হয়। আপনার আপত্তি নেই তো?  
 কেন! সিমেন লস হয় কেন?   
   মাই গড! আপনি যে এত ল্যাদারুস মার্কা, তা জানতাম না! এ আইটেমটা-তে আপনি উপুড় হয়ে শোবেন। কেবিনের ভিডিওতে বিএফ চলবে। আপনার বডির উপর সাইম্যালটেনিয়াসলি হট এন্ড কুল এয়ার ব্লো চলতে থাকবে। সেই সঙ্গে চলতে থাকবে মাসাজ। মাসাজিং মেশিনারি এক্সেসরিজ দিয়ে নয়, ব্রা-প্যান্টি পরা ইয়ং লেডি আপনার শরীরের টপ টু বটম মাসাজ করবে উইথ বডি মাসাজ অয়েল। এতে শরীর এক্সাইটেড হতেই পারে। কন্ট্রোল না থাকলে ডিসচার্জ হবে। বাট আই থিংক ইটস ন্যাচারাল। অনেকে বলেন, সিমেন লস হলে ফ্রেশ হওয়া দূরের কথা, শরীর আরও  ম্যাজম্যাজ  করে। বাট আই ডিফার। প্রচন্ড এক্সাইটেড হওয়ার পর ডিসচার্জ হতেই শরীরটা কেমন জুড়িয়ে যায়। তারপর ওডিকোলন সহ আইস-বাথ নিলেই দারুন ফ্রেশ মনে হয়। মনের চঞ্চলতা চলে যায়। কাজে একাগ্রতা আসে। আইস-বাথ-এর পর হট কফি পান করলে শরীরের ঝিমুনিটা কেটে যায়। 
ছবি সহযোগিতায় : উষসী রায়
আচ্ছা স্যার খুব জানতে ইচ্ছা করে সব আইটেমই কি এরকম?
   না না, তা কেনো হবে! সব মানুষের পছন্দ তো এক রকম নয়। যারা প্রকৃতিপ্রেমী, তারা চুজ করে 'চারপিং মেলোডি উইথ নেচার'। কেউ নেয় 'ডেজার্ট এন্ড ওয়েসিস উইথ ড্রম। কেউ বা আবার অনলি বডি মাসাজ উইথ পাউডার। যার যেমন রুচি। 
   বুকিং অফিসের কাছাকাছি হতেই অফিসের ভেতর থেকে একজন উর্দি-পরা কর্মী বেরিয়ে আসে। হাতে একটা খাম আর মুখে হাসি নিয়ে ডাক্তার সান্যাল-এর সামনে দাঁড়িয়ে বলে -- গুড আফটার নুন স্যার! এই নিন স্যার, আপনার দুটো এন্ট্রি-কার্ড।  
  কার্ড দু'খানা নিয়ে ঠোঁটে হালকা হাসি ফোটান ডক্টর সান্যাল। তারপর কর্মীটার হাতে পঞ্চাশ টাকা টিপস দিয়ে কেবিনের দিকে এগোন। কিছুটা এগোতেই সারি সারি কেবিন। ছয় নম্বর কেবিনের সামনে পৌঁছে ডাক্তার সান্যাল বলেন -- আমার কেবিনের সামনে এসে গেছি। এই নিন আপনার এন্ট্রি কার্ড। আপনার কেবিন নাম্বার এইট।
  ডাক্তার মৈত্র কৌতূহল বশত বলেন -- কেবিন সিরিয়ালি নয় কেন! 
  সাত নম্বর কেবিন বুকড হয়ে গেছে বোধহয়! আমি রেগুলার কাস্টমার তো! কেবিন নাম্বার সিক্স-টা আমার খুব পছন্দ, তাই রেখে দেয়। ওরা বলে, 'ওটা  সিক্স নয়, সেক্স-কেবিন।  হা হা হা!
হাঁ করে দেখছেন কী? নিন, ধরুন এন্ট্রি কার্ডখানা। কেবিন-গেটের পাশেই ইলেকট্রনিক পাঞ্চ মেশিন। কার্ড পাঞ্চ হলেই স্লাইডিং ডোর খুলে যাবে। আফটার ওয়ান আওয়ার বেরিয়ে মিট করছি কফি-বার-এ। ওকে! 
   ওকে স্যার!
                                   
                     ।।  তিন ।।
 বুঝলেন, তখন কম্পিউটারে আমার প্রিয় গেম 'হার্ট-এক্সটারপেশন' খেলতে খেলতে আইডিয়াটা মাথায় এলো। তারপর আপনার মুখ থেকে ওই এক্সাইটিং নিউজ ও তার বেনিফিট সম্পর্কে শোনার পর সিদ্ধান্ত নিলাম, আইডিয়াকে মেটিরিয়ালাইজ করতে হবে। আর তা করতে হলে আপনার হেল্প জরুরি। প্র্যাকটিক্যালি আপনাকেই পুরো ব্যাপারটার দায়িত্ব নিতে হবে। 
   ডাক্তার মৈত্র অনেকক্ষণ থেকেই ভাবছিলেন, আজ হঠাৎ সান্যাল এত দিলদরিয়া হয়ে উঠল কেন! এককথায় টুয়েনটি পার্সেন্ট স্যালারি বাড়াবে বললো! পার্লারে নিয়ে গিয়ে এতগুলো টাকা বাড়তি খরচ করল! এর কারণটা কী? এবারে মোটামুটি কারণটা বুঝতে পেরে ডাক্তার মৈত্র মিটিমিটি হেসে বলেন -- দায়িত্ব না হয় নেওয়া যাবে। তার আগে বলুন আইডিয়াটা কী? আমার দ্বারা সম্ভব হবে কিনা!
   হবে হবে, আপনি পারবেন। আপনি আমার টিম অফ ডক্টরস এর মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ হার্ট স্পেশালিস্ট। আমি যা বলছি শুনুন মন দিয়ে। আপনাকে আর আমার 'জুপিটার নার্সিংহোম'-এ মাঝে মাঝে হার্ট অপারেশনের জন্য যেতে হবে না। আপনি ওখানেই চিফ অফ ডক্টরস হয়ে জয়েন করবেন। এখানে অন্যকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নেব।
  ডাক্তার মৈত্র অবাক হন। পরিকল্পনাটা বোঝার চেষ্টা করেন। না পেরে বলেন -- সে না হয় হবে। তারপর?  
   বলছি বলছি, এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন! আপনি তো জানালেন, সরকার আইন করে স্টেম সেল টেকনোলজি বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই হিউম্যান লিম্বের চাহিদা বাড়বে। লিম্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রফিট হয় হার্ট বিক্রি করলে। তাই হার্টের জোগানটা আমাদের বাড়াতে হবে।  
ছবি সহযোগিতায় : উষসী রায়
 হ্যাঁ স্যার, সে তো বাড়াতেই হবে। তার জন্য তো আমাদের 'লাইভ কালেক্টর' রিক্রুট করা হয়েছে। প্রয়োজনে কালেক্টর আরো বাড়াতে হবে। যারা অরফ্যানেজ, পাগলা গারদ, ভ্যাগাবন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, এমনকি স্লাম-এরিয়া থেকে টোপ দিয়ে লাইভ কালেক্ট করবে...।  
   আরে ব্রাদার! সেসব তো ফ্রী অফ কস্ট-এ কালেক্ট হয় না। প্রচুর টাকা খরচ হয়। আমি চাইছি, নো ইনভেষ্টমেন্ট, মোর প্রফিট। আমার আইডিয়াটা শুনুন ভালো করে! 
   মৈত্র একটু নড়েচড়ে বসেন। ডাক্তার সান্যাল গলাটা একটু ঝেড়ে নেন। তারপর চাপা গলায় বলেন -- আমাদের নার্সিংহোমে যত হার্ট পেশেন্ট আসে, সকলে তো সার্ভাইভ করে না। যে পেশেন্ট সারভাইভ করবে না ব'লে মনে হবে, সেই পেশেন্ট-পার্টিকে জানালেন, পেশেন্ট বাঁচার চান্স খুব কম। তবুও আপনাদের পারমিশন পেলে একটা অপারেশন করে দেখতে পারি। যদি পেশেন্ট-পার্টি রাজি হয়, তাহলে অপারেশন করলেন। আর ...। 
  এমন সময় ডাক্তার সান্যাল-এর মোবাইল বেজে ওঠে। স্ক্রিনে দেখেন, জুপিটার নার্সিংহোমের ম্যানেজার দত্তবাবুর নাম ফুটে উঠেছে। সান্যাল বিরক্ত হন। এখনই ফোন করার সময় হল! খুব বেশি কথা বলেন ওই দত্তবাবু। তাই সান্যাল ফোন রিসিভ করে বলেন -- দত্তবাবু, জরুরী মিটিং-এ আছি পাঁচ মিনিট পরে ফোন করুন।  
   ডাক্তার মৈত্র উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন। সান্যাল আবার কথায় ফিরে আসেন -- হ্যাঁ, যে কথা বলছিলাম, অপারেশন করলেন। অপারেশন সাকসেসফুল হলেই নো ইনভেষ্টমেন্ট ফুল প্রফিট।
   কিন্তু স্যার! অপারেশনটা কী করবো?
   কী অপারেশন করবেন, মুখে বলছি না। দেখুন!   
   এই কথা ব'লে সান্যাল কম্পিউটারে স্ট্যান্ড-বাই মোডে রাখা গেম সচল করেন। দুখানা রিব সরানো হয়েছিল। মাউস টিপে আরো কয়েকখানা রিব সরান ডাক্তার সান্যাল। তারপর ফরসেপ অপশনে গিয়ে ফরসেপ এনে স্ক্রিনে তিড়িক তিড়িক করে নাচতে থাকা টুনটুনিটা ধরে বের করে নিয়ে এসে সেফটি-বক্সে রাখতেই ভেসে ওঠে-- ভিকট্রি ...! স্কোর অবটেনড থাউজেন্ড। সাকসেসফুলি অপারেটেড। থ্যাঙ্কস আ লট!  
   ডাক্তার মৈত্র ভ্রু কুঁচকে হাসতে হাসতে ঘাড় নাড়েন -- স্যার বুঝলাম। বাট ইট ইজ টু মাচ রিস্কি জব! 
   এমন সময় আবার সান্যাল-এর মোবাইল বেজে ওঠে। সান্যাল বিরক্তির সঙ্গে ফোন ধরেন -- বলুন দত্তবাবু!
   দত্তবাবুর উদ্বিগ্ন গলা -- স্যার! শিগগির নার্সিংহোমে আসুন! তার আগে পুলিশ ও ফায়ার ব্রিগেডকে খবর দিন। তা নাহলে নার্সিংহোম ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে। 
  কেন হয়েছেটা কী? 
   নার্সিংহোমে ভাঙচুর চলছে স্যার। ওরা বলছে পেট্রোল ছিটিয়ে নার্সিংহোমে আগুন ধরিয়ে দেবে।
   সে কী! কেন?  
   ওদের অভিযোগ, গতকাল কোন এক হার্ট-পেশেন্ট-এর অপারেশনের নাম করে হার্ট কেটে বের করে নেওয়া হয়েছে। তারপর তাকে ডেড ঘোষণা করা হয়েছে। ওই পেশেন্টের ছেলে একজন ডাক্তার। তার সন্দেহ হওয়ায় পুলিশের সাহায্য নিয়ে বডির পোস্টমর্টেম করতেই ধরা পড়েছে ব্যাপারটা।
   ও মাই গড! কোন ডাক্তার অপারেশন করেছিলেন?
   ডাক্তার মৈত্র স্যার।
   ডাক্তার সান্যাল মৈত্রর দিকে ভয়ঙ্কর চোখে তাকিয়ে শুধু বলতে পারেন -- আপনি...!
   মৈত্র এতক্ষণ মোবাইলে কথা বলতে থাকা সান্যাল-এর মুখের অভিব্যক্তি লক্ষ্য করছিলেন। এখন ওর নিজের মুখখানা পাকা পাতিলেবুর রং ধারণ করেছে। তা কিন্তু সান্যাল-এর নজর এড়ায় না।   

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ


  1. ভিকট্রি!!!!!!

    কিছুক্ষণ ঘুরলাম অন্যজগতে
    তারপর সেই চেনা কথা
    লোভে পাপ পাপে মৃৃৃৃৃত্যু

    দুর্ধর্ষ ভাবনার অনবদ্য প্রকাশ


    শুভ শারদীয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা

    উত্তরমুছুন