পোস্ট বার দেখা হয়েছে
ছবি সংগৃহীত |
বাংলার দুর্গাপুজোর কথা বলতে গেলে সবার প্রথমেই যাঁর নাম উঠে আসে তিনিই তাহিরপুরের কংসনারায়ণ। এই বাংলায় একচালা মূর্তিতে প্রথম দুর্গামূর্তি বানিয়ে সাড়ম্বরে দুর্গোৎসব পালন করেন তিনিই। এদিকে বাঁকুড়াতে মল্লরাজবংশে দেবী মৃন্ময়ীর কথা আমরা জানি। দশম শতাব্দীতে ঊনিশতম মল্লরাজা জগৎমল্লের হাত ধরে তৎকালীন বন বিষ্ণুপুরে (বর্তমান বিষ্ণুপুর) প্রথম অনুষ্ঠিত হয় দেবী দুর্গার সাড়ম্বরে পুজো। কিন্তু সেই পুজো পদ্ধতি আজকের বাঙালীর দুর্গোৎসবের সাথে মেলে না। বরং রমেশ শাস্ত্রী প্রণীত কংসনারায়ণের দুর্গাপুজো পদ্ধতি ও প্রতিমার ধরণ আজও ভক্তিভরে পালন হয়ে আসছে বাংলার ঘরে ঘরে। কংসনারায়ণ রায় তাই দুর্গাপুজোর হাত ধরে আজকের বাঙালীর কাছে অতিমাত্রায় আপন। বাংলায় আজও যে দুটি ঘরানায় দুর্গাপ্রতিমা নির্মিত হয় তার অলিখিত কপিরাইট যায় বিষ্ণুপুর মল্লরাজাদের ও তাহিরপুরের কংসনারায়ণের দিকে। যদিও বাংলায় দুর্গামূর্তির ভিত্তিতে কংসনারায়ণ নবীন হলেও অনেক আগেই বেশ গোহারান হারিয়ে দিয়েছেন মল্লরাজাকে। আজ কংসনারায়ণ ঘরানার একচালির প্রতিমাই পূজিত হন বেশিরভাগ বাড়িতে। দুর্গার টানা টানা চোখ ও টিকলো নাক। উপরে লক্ষ্মী সরস্বতী এবং নীচে কার্তিক গণেশ। পিছনে অর্ধগোলাকৃতি চালচিত্র। প্রসঙ্গত বলে রাখি, বিষ্ণুপুরে মৃন্ময়ী দেবীর দুপাশে দেবীর পরিবার থাকলেও তা কংসনারায়ণের মূর্তির থেকে কিছুটা আলাদা (সঙ্গে ছবি দেওয়া হল)। এখানে কার্তিক গণেশ উপরে ও লক্ষ্মী সরস্বতী নীচে অবস্থান করেন। যাই হোক, এরপরেই বাংলায় বিভিন্ন ঘরে ঘরে শুরু হয় এই মৃন্ময়ী দেবী দুর্গার আবাহন। কলকাতায় দুর্গাপুজোর গোড়াপত্তন হয় এর বেশ কিছু পরে ১৬১০ সালে। বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের হাত ধরে দেবী দুর্গা পা রাখেন কলকাতায়। যদিও সেই কলকাতা আজকের মতো ঝাঁ চকচকে মহানগরী নয়। সে এক অজ পাড়াগাঁ। কিন্তু তামাম বঙ্গদেশে প্রথম দুর্গাপুজোর আয়োজন করে অমরত্ব পেলেন রাজা কংসনারায়ণ। বাংলার ঘরে ঘরে ঢুকে পড়লেন তিনি। পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের জয়লাভের বছর ১৭৫৭ সালে শোভাবাজার রাজবাড়িতে রাজা নবকৃষ্ণ দেবের পুজোর হাত ধরে শহর কলকাতাতেও রমরম করে শুরু হয়ে গেল দুর্গাপুজো। প্রায় তখনকার প্রতিটি বাঙালী ধনাঢ্য বাড়িতেই শুরু হল দুর্গোৎসব। এরপর ভাগীরথীর স্রোতে গড়িয়ে গেছে অনেক জল। বারোয়ারী পুজো, পাড়া, ক্লাবের পুজো, থিম পুজোর সাথে সাথে বাংলা কাটিয়ে ফেলেছে অনেকগুলো শরৎ। আজও তাহিরপুর চুপিচুপি সাক্ষী দেয় প্রতিটি বাঙলীর কানে কানে।
( সমাপ্ত)
1 মন্তব্যসমূহ
অসাধারন লেখা। এই ঘটনার উপর কোনো authentic বই suggest যদি করেন, খুব ভালো হয়
উত্তরমুছুন