পোস্ট বার দেখা হয়েছে
কংসাবতী
(পর্ব --৩)
মহুয়া
----- রামধন গাড়ি নিয়ে সোজা থানায় চলো । এককড়ি , ম্যাডামের কাছ থেকে যে জিনিসপত্রগুলো পেয়েছ সেগুলো একটা লিষ্ট করে আলমারির লকারে রেখে দিও । কোনো মোবাইল আছে কিনা ব্যাগে দেখতে হবে । থাকা তো উচিৎ । জ্ঞান আসলে দুজনের জবান বন্দী নিতে হবে । কাল তুমি একবার হাসপাতালে দেখে আসবে আর আসার পথে গাড়িটা চেক করে আসবে আর একবার । ©️
------ স্যার একটা কথা বলবো? মানে অনেকক্ষণ থেকে ভাবছি বলবো কি বলবো না ।
------ কি বলবে ভাবছো এককড়ি ? দেখো এই ঝামেলার মধ্যে তুমি ছুটি চেয়ে বোসো না আবার । থানায় এমনিতেই লোক কম । কাল আমাকে একবার টাউনে যেতে হবে ।
------ না স্যার ছুটি নয় , মানে আমি একটু অবাক হয়েছি । শুধু দেখলাম বলা ভুল হবে শুনলাম ও ।
------- আর এ বাবা হেঁয়ালি না করে বলে ফেলো তো , কি দেখলে , কি শুনলে ? রামধন থানায় গিয়ে কিছু খাবার এনে দিও , খুব খিদে পেয়েছে । হ্যাঁ বল এককড়ি ।
------ স্যার , হাসপাতাল থেকে আসবার আগে ম্যাডাম ওই দুজনকে দেখতে গিয়েছিল মনে আছে? দেরি হচ্ছিল দেখে আপনি আমাকে ডাকতে বললেন ।আমি ডাকতে গিয়ে দেখি , ম্যাডাম ভদ্রলোকের কপালে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন ,"খুব যন্ত্রণা হচ্ছে ?"
সেটা দেখে আমি একটু অবাক হলাম । অ্যাক্সিডেন্ট হলেও উনি তো ম্যাডামের অচেনা , তখন থেকে এই একটা কথা ভেবে যাচ্ছি ।শুধু তাইই না , ম্যাডামের মোবাইলে একটা ফোন এসেছিল , ম্যাডাম চাপা গলায় বলল, পয়সা পেয়ে যাবেন । ©️
-------- কি বলছ ? তুমি ঠিক দেখেছ ? ঠিক শুনেছ ? ম্যাডাম তো বললেন উনি ওদের চেনেন না।
------ হ্যাঁ স্যার ঠিক দেখেছি ,শুনেছি ও ।
---- ওটা হয়তো সিম্প্যাথিটিক্যালি বলেছেন ।
গাড়ি থানায় ঢুকলো । ইন্সপেক্টর সুজয় ঘোষ নিজের টেবিলে বসে হেলপার ছেলেটিকে বললেন গাড়ি থেকে ব্যাগ পত্র নামিয়ে নিয়ে আসতে ।
------ শ্যাম ,চা আর চপ মুড়ি দে , খুব খিদে পেয়েছে। মাথা কাজ করছে না । ওই জন্যেই বুদ্ধদেব পায়েস খেয়ে বোধি লাভ করেছিল বুঝলি ? আমার জন্যে কোন বোধি অপেক্ষা করে আছে কে জানে ? হাহাহাহা হাহাহা। যাক জিনিসগুলো নিয়ে এসে টেবিলে রাখ । দেখা যাক । ©️
------ স্যার ,একটা জামাকাপড়ের ব্যাগ । আর এটা হলো লেডিস স্লিং ব্যাগ , এটা মনে হচ্ছে ক্যামেরার ব্যাগ কিন্তু ক্যামেরা তো নেই , আর এটা হলো ওয়ালেট ।
------- লেডিস ব্যাগটা দ্যাখ কি কি আছে ? একটা লিষ্ট কর ।
------- দুটো মোবাইল , তিন হাজার টাকা , দুটো রুমাল , একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজার , একটা সানগ্লাস ও আধার কার্ড ।
------- ওয়ালেট টা দ্যাখ
------- ছ হাজার টাকা , একটা ক্রেডিট ও তিনটে ডেবিট কার্ড , কিছু ক্যাশমেমো আর আধার কার্ড
-------- আধার কার্ডের নাম ঠিকানা গুলো রেজিস্টারে লিখে রাখ । ভদ্রমহিলার নাম মেরি ডিসুজা বসু, বয়েস বত্রিশ , বাবার নাম বব ডিসুজা, বাড়ি লিভারপুল। এত বিদেশি । ভদ্রলোকের নাম প্রতুল বসু , বয়েস ছত্রিশ , বাবার নাম পরিমল বসু , বাড়ি সল্টলেক বি ব্লক । মুশকিল হলো মোবাইলগুলো লকড নইলে এক্ষুনি ফোন করে কোনো আত্মীয়কে জানিয়ে দেওয়া যেত । কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই । এককড়ি কে ডেকে দে । ©️
সুচেতা মিনিট দশেক হেঁটে বাড়ি পৌঁছে গেলো । বৃদ্ধ বাবা আর একটা কাজের মেয়ে নিয়ে সুচেতার সংসার । দিদি একজন আছে তবে সে বহু বছর আগেই বিবাহিতা । সুচেতা অবিবাহিতা অনেকটা বাধ্য হয়েই । জীবনে প্রেম এসেছিল কিন্তু পরিণতি পায়নি । জীবনযুদ্ধ টা শুরু হয়েছিল চিন্তা মনি টুডু থেকে সুচেতা চক্রবর্তী তে উত্তরণের পথে হাঁটতে হাঁটতে ।
------- এই যে শুনছো , আমার লাইনটা রেখো তো ।
------ আচ্ছা ,রাখবো কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবে ।
------ এই যাবো আর আসবো । আমার নাম প্রতুল । আমি কেমিক্যাল ইঞ্জিনি়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র । তুমি ?
------- আমি সুচেতা চক্রবর্তী , কেমিস্ট্রি অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী । ©️
------- তুমি কলকাতার নও ? তোমার কথা শুনে বললাম । কোথায় তোমার বাড়ি ?
------- আমার বাড়ি বাঁকুড়ায় । রানী বাঁধ হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে এখানে ভর্তি হয়েছি । থাকি ফুলবাগান বস্তিতে আমার কাকার বাড়ি ।
------- বস্তি তে থাকো ? আবার কেমিস্ট্রিতে অনার্স ? বাঃ বেশ লাগলো । আসছি একটু দাঁড়াও।
দিদি চা যে জুড়ায়ে গেলো । কনকের ডাকে সুচেতা চমকে ওঠে ।
------ হ্যাঁ রে , আর একবার গরম করে দে না । কটা বাজে রে ?
একবার হাসপাতালে ফোন করলে হতো না ? কেমন আছে প্রতুল ? হ্যালো আমি সুচেতা বলছি , অ্যাকসিডেন্ট এর পেশেন্ট দুজন কেমন আছেন ? কি বলছেন !! ওনার স্ত্রীর অবস্থা ভালো নয় ? ©️
(চলবে)
0 মন্তব্যসমূহ