পোস্ট বার দেখা হয়েছে
গঙ্গা
যতটা মাটি মিশেছিল এঁটেলে
পলি হয়ে ফিরেছিল শেষ জোয়ারে।
মা গঙ্গা বিশ্বাস করেছিল যৌবনে,
চাঁদ ভেজা প্রেম খুলে ছিল দুচোখ, ভাঁটা দিল ফেরত বর্ষার দুচোখ; রাত্রি জেগে থাকুক, কামুক ফুলশয্যার শিহরণে!
মেঘের শাখানদী নেয়নি খোঁজ, ছুয়েছিল নারী প্রেমিকের ঠোঁট, মেয়ে শুয়েছিল মাথায় ঝর্নার স্রোত। বৃষ্টির মুখ মাটিতে প'ড়ে সমুদ্র হয়েছিল হৃৎপিণ্ড।
কেনো কাঁদো মা? তারা ভরা আকাশ, বিবর্ণ সম্পর্ক, নিশিদিন খুঁজে মা গঙ্গা আজ ক্লান্ত!
নোনা জলে বিকশিত বসন্ত!
গঙ্গা, ভলগা, আমাজনে পাঠ ছিল মনুষ্যত্ব,
ম্যানগ্রোভ খুঁড়ে আজ ভগীরথ বড় ক্লান্ত।
====
গণেশ ও উল্কাপাত
ড্রইংরুমে সোফার অন্ধকার কোনায় বসছি আজকাল, গণেশের মাথায় উল্কাপাত দেখব!
বাঁদিক থেকে পূর্বে, সমান্তরাল হয় না; দেখা।
অস্তিত্ব ঠিক মাথার ওপরে, নীচে আলো-আঁধার! স্পটলাইটের মতো আলোটা; গণেশের পিছনে দ্বিখন্ডিত। বিপ্রতীপ কোণ তৈরি করে উপরে কিছুটা ছড়িয়েছে, মিরর ইমেজ।
পুরোটা ডিসেম্বর এভাবে গেল, জানুয়ারি ২৬ নাগাদ এপাশ-ওপাশ শুরু করল মনটা।
যেভাবে বসছি তাতে উল্কাপাতের আশা নেই মনে হচ্ছে, নাছোড়বান্দা আমি!
ঘাড় কি সামান্য বাঁদিকে ঝুঁকছে? প্রশ্ন ছিল আগেই।
সূক্ষকোণের হেরফের হচ্ছে কি? যা শূন্যতা থেকে বড়! একটু উঁচু করা যাবে, মাথাটা? নব্বই ডিগ্রি থেকে ছোট হলেই দৃষ্টিকোণ বদল হতে পারে।
গণেশ অবশ্য ঠাকুরের মতোই, ঈশ্বরত্ব পরিপূর্ণ। বোঝার ছিল উল্কাপাত অবিরত কিনা।
দৃশ্যমান হতে গেলে কৌণিক দূরত্বের মূল্যমান অনুযায়ী তাকাতে হবে, তারপর সময় ধরা দিতে পারে। আবিষ্ট এইসময়ে উপনিষদের ঋষিতুল্য মনে হচ্ছিল নিজেকে! চিরকাল ইষ্টনাম জপেছি মহাজনের মতো, খেলা চলেছে, খেলনা গুলো পরিপাটি; পান্থবেশ ঠিকঠাক।
এই উল্কাপাতের বাসনাতেই গোলমাল বাঁধছে!
তেজোদীপ্ত জ্ঞানীর চড় খেয়ে ছুট-ছুট, গৃহস্থের আঁতিপাঁতি ঘুরলাম গুপ্তচরের মতো। কিছু অধরাই!
শৈশবের উড়ানো ঘুড়ি বাঁক খেয়ে লাগাম ছেঁড়া কবিতার মতো; সংসারের আঙিনায় কয়েকটা বিপজ্জনক ফুলগাছ পুঁতে গেছে, টের পাইনি।
সন্ধ্যা আহ্নিকের পর খুঁজি কাদাজলের আলপনা; ওখানে লেখা আছে-
ঘুমন্ত গোখরো কে বন্ধু ভেবে, চুমু খাওয়ার নাম জীবন।।
====
মৃত্যুর শিয়রে মন
কনকচাঁপার গন্ধ ভেজা গর্ভ থেকে উঠেছিল শিশু।
শিলার লিখন ভুলে ডানা মেলেছিল জীবন।
দুমুঠো ভাতের তাচ্ছিল্যে বেজেছিল বাঁশি, বেহায়া।
ক্লান্ত ঘুমের রেণু ঝরেছিল ক্ষমার প্রহরে।
একটু টেনে আর একটা হাত বাড়িয়ে তৈরি হল মানুষ।
আজলা ভর্তি ভালোবাসা নিংড়ে দিয়েছে বুক,
অবাধ্য শরীরকে বশে রাখতে পারেনি- দ্বিখন্ডিত মন।
কেউ জানেনা কতবার নিরুত্তর ছিল, কষ্ট হয়েছিল হাঁটতে।
শিশির ভেজা বীজ ধান ক্রমাগত বাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বাষ, হাতকড়া পরা কুয়াশা পাগল হয়েছে; ঠোঁট ছুঁতে।
যে যুগটা হেঁটে গেল, ভেবেছিল কেউ দেখছে না।
এখন চোখের ভিতর ডুব সাঁতার, দৃষ্টির বাইরে মানুষের মুখ।
যা অর্ন্তলীন তা অনির্দিষ্ট,
ধুলোর ঝড়ের পর থেকেই অস্পষ্ট পায়ের ছাপ, মৃত্যুর শিয়রে মন।
=====
মরা মাছের সাদা চোখ
খুঁটে বের করেছি, হাতের ওপর রেখেছি হাত।
অশৌচের শেষ তিন দিন মাথায় বেড়েছে রাত।
জরিপ করেছি বাসর জাগা চোখে,
ঘুমের কুলুঙ্গিতে নির্বাক শোক দেখে
জেগে উঠেছে মরা মাছের দুচোখ!
জ্যান্ত হয়ে খেতে আসবে দুর্মুখ,
আত্মীয়স্বজন সটান গিলেছে পিণ্ড
শ্মশানের জটায় পোড়া চিতা কাঠ; জ্বলছে হৃৎপিণ্ড।
খাসতালুকে হাতের ওপর চাপড়, শ্লোকে বিদ্ধ শোক; অস্থি ভাসিয়ে গঙ্গায় তুলে এনেছি, মরা মাছের সাদা দুচোখ।
1 মন্তব্যসমূহ
অনবদ্য উপস্থাপনা🌹
উত্তরমুছুন