দর্পণ || ধারাবাহিক উপন্যাস || এক সমুদ্র অনেক নদী ~ প্রদীপ গুপ্ত || পর্ব -- আট




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 

আগের পর্ব পড়ুন .....


সেদিনের কথাটা শ্রেয়ান কোনোদিনই ভুলবে না। পত্রালী চলে যাওয়ার পর খুব স্বাভাবিকভাবেই শ্রেয়ান ওর ভাড়া করা ঘর ছেড়ে দিয়ে নিজেদের বাড়িতে ফিরে এসেছে। ওর বাবার চাকরী চলে যাওয়ার পর এমনিতেই ওদের সংসারের হাল খুব খারাপ হয়ে পড়েছিলো, ওদের পরিবারের পক্ষে পত্রালীর চলে যাওয়াটা যেন শাপে বর হয়েছিলো। শ্রেয়ানের একার ঘাড়ে সমস্ত সংসারের ভার। ওদিকে বোন শ্রেয়সীও বড় হয়েছে। হায়ার সেকেন্ডারির পর ওকে আর কলেজে পাঠানো যায়নি, যদিও শ্রেয়ান বারবার করে শ্রেয়সীকে বলেছিলো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে কিন্তু শ্রেয়সী কিছুতেই রাজী হয় নি। চারপাঁচটা নীচু ক্লাসের টিউশনি আর সেলাই ফোঁড়াই করে শ্রেয়সীও সমানে ওর দাদার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো।

সেদিনটা ছিলো রবিবার। শ্রেয়ানের দুচোখ থেকে  রবিবারের সকালে যেন ঘুম লেপ্টে থাকে। ততক্ষণ পর্যন্ত ওর চোখের পাতা খুলবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না শ্রেয়সী ওর টেবিলে চা রেখে যাবে। কিন্তু সেদিন অনেকটা বেলা হয়ে গেলেও চা এসে পৌঁছুলো না। হঠাৎ করে একটা গলার স্বর শুনে শ্রেয়ান তড়াক করে খাটের ওপর উঠে বসলো। গলাটা যেন কার ঠিকমতো মনে করতে পারছে না ও। অথচ গলাটা ওর কাছে ভীষণ পরিচিত। একবার ভাবলো --

বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দেখবে যে কার গলা ওটা? কিন্তু একটু স্বভাবলাজুক শ্রেয়ান কিছুতেই বিছানা ছাড়তে পারছে না। বিছানায় বসেই গলাটাকে তুলে শ্রেয়সীকে ডাক দিলো ---- আর কত বেলায় চা দিবিরে বোন?

ঘরের ভেতর থেকে শ্রেয়সীর গলা ভেসে আসে --  দাদা, আজ আর একটু সময় ঘাপটি মেরে বিছানায় শুয়ে থাকো প্লিজ, আমার এক প্রিয় বন্ধু এসেছে ওর সাথে একটু গল্প করছি।

-- বেশ, তাহলে না হয় আজকের দিনটা আমিই করে নিচ্ছি।

বলে খাট থেকে মাটিতে পা রাখে শ্রেয়ান। রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়েই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। এ কে? কাকে দেখছে শ্রেয়ান? ওর সাথে শ্রেয়সীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে বলে তো শ্রেয়ান জানতো না!

শ্রেয়ানের সারা সত্ত্বা জুড়ে তখন অনুরণিত হচ্ছে একটা সুর --

--" ইয়ে মেরে বতন কি লোগো / যারা আঁখ মে ভরলো পানি / যো শহীদ হুয়ে হ্যায় উনকি / যারা ইয়াদ করো কুরবানি ---


( ক্রমশ )

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ