চাঁদের বুড়ির ব্যস্ততা ~ সুমা গোস্বামী




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

 

' এসে পড়েছি গো দিদুন ' ।


' কে রে , বিক্কম নাকি ' ?


' আরে ধুর , বিক্কম না গো  , বিক্রম  ' ।


' বুঝেছি রে বুঝেছি , বয়েস হয়েছে তো ।

তাই ফোকলা দাঁতের কথা একটু উল্টো পাল্টা হয়ে যায় ' ।


' কি যে বলো দিদুন । তোমার আবার বয়স ! 

বয়স যদি হবে , তবে এতো চরকা কাটো কি করে ' ?


' রাখ বাপু আমার কথা । তোর দাদা প্রজ্ঞান কোথায় ' ?


' আসছে আসছে , একটু সবুর করো । চাঁদমামা কোথায় গো ? দেখতে পাচ্ছি না তো ' ?


' কোথায় আবার যাবে , ঘরে ঘরে বাতি দিতে গেছে ' ।


' এ আবার কি কথা বলেছো গো দিদুন ' ? প্রজ্ঞানের চিৎকারে চাঁদের বুড়ি খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে ।


' ওরে তোরা কি ভুলে গেলি ! সন্ধ্যে হলেই তো তোদের চাঁদমামা তোদের ঘরে ঘরে আলো পৌঁছে দেয় । না হলে তো অন্ধকারে তোরা হোচট খাবি । এখন অবশ্য তোদের ঘরে ঘরে ইলেকট্রিকের বাতি এসেছে । কিন্তু আগে তো এসব ছিল না , তখন চাঁদমামার আলোই তোদের ভরসা ছিল ' ।


' চাঁদমামাকে বারণ করে দিও আর আলো দিতে হবে না আমাদের ' । দুই ভাই একসঙ্গে বলে ওঠে ।


' সেসব কি আর তোদের মামা শুনবে ? অভ্যাস হয়ে গেছে তো । এখন এসব কথা থাক , তোরা অনেক দূর থেকে এসেছিস । চল একটু বিশ্রাম করবি জলখাবার খাবি ' ।


' না দিদুন আমার সময় নেই । তোমার বাড়ির চারপাশ এখন আমার ঘুরে ঘুরে দেখতে হবে । অনেক অনেক ছবি তুলতে হবে ' । প্রজ্ঞানের কথার উত্তরে চাঁদের বুড়ি বলে ওঠে ,' আমার বাড়ির যা ছিরি , ছবি তুলে কি হবে রে , সে ছবি কে দেখবে ' ?


' দেখবে গো দিদুন , দেখবে । অনেক অনেক মানুষ দেখবে। শুধু তাই নয় , এরপরে দেখবে আমাদের কত কত পাড়া-প্রতিবেশী তোমার বাড়ি ঘুরতে আসবে । তোমাকে তখন আর একা থাকতে হবে না ' ।


' সেটা হলে তো ভালোই হয় রে । একা একা আর ভালো লাগেনা । কিন্তু একটা হইচই এর আওয়াজ পাচ্ছি । ব্যাপারটা কি রে ? কোথাও মারদাঙ্গা শুরু হলো নাকি ' ?


' না গো দিদুন । তোমার বাড়ি আমরা ঠিক মতো পৌঁছে গেছি তো , তাই আমাদের বন্ধু বান্ধব হৈ হুল্লোর করছে ' ।


' এর মধ্যে আবার হৈ হুল্লোর করার কি হলো ' ?


' সে বড়ো দুঃখের কথা গো দিদুন । গতবার তো আমরা একটু ঝামেলা হয়ে গেল বলে আসতে পারলাম না । এবার সবকিছু একদম ঠিকঠাক হয়েছে বলে আমরা চলে এসেছি তোমার বাড়ি । তাই আমাদের বন্ধু-বান্ধব একটু হৈ হুল্লোড় করছে । আসলে ওরা একটু বল ভরসা পেল । এরপর ওরাও তোমার বাড়ি মাঝে মাঝেই চলে আসবে ' ।


' তাহলে আমি তাড়াতাড়ি চরকা কাটা শুরু করে দিই । অনেক অনেক সুতো কাটতে হবে । সেই সুতো দিয়ে আমার বাড়ির দরজা-জানলায় পর্দা টানাতে হবে । আর আমার উঠোনটাও ভালো করে ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার করে রাখবো । বাচ্চারা আসবে , এই উঠোনেই তো ওরা হেঁটে বেড়াবে ' ।


শুরু হয়ে গেল চাঁদের বুড়ির ব্যস্ততা ।


আর প্রজ্ঞান শুরু করে দিলো চাঁদের বুড়ির বাড়ির আশেপাশে ঘুরে ঘুরে ছবি তোলা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ